ঢাকা ০৮:১৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যেভাবে নিবন্ধন হবে ১৩ কোটি সিমের

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৩৮:৪৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫
  • ৩১৭ বার

ফের সিমকার্ডের নিবন্ধন করতে হবে দেশের প্রায় ১৩ কোটি মোবাইল ফোন গ্রাহককে। আগামী তিন মাসের মধ্যে এটি সম্পন্ন করা হবে।

পাশাপাশি প্রথমবারের মতো মোবাইল সিমকার্ড বিক্রির সঙ্গে জড়িত ডিলার ও খুচরা বিক্রেতাদেরও তালিকা তৈরি করা হবে। এ তালিকা অনুযায়ী বিক্রেতারাও নিবন্ধিত হবেন। নতুন সিমকার্ড বিক্রির ক্ষেত্রে গ্রাহক নিবন্ধনের সময় বিক্রেতার নাম-ঠিকানাও সংরক্ষণ করতে হবে অপারেটরদের।

নিবন্ধনবিহীন সিমকার্ড ও ভুয়া নিবন্ধনসম্পন্ন সিমকার্ড বিক্রি বন্ধেই এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। রোববার সকালে সচিবালয়ে সিমকার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধ এবং এর প্রতিকার বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রতিমন্ত্রী। বৈঠকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব এবং বিটিআরসির চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকেই ১২ কোটি ৮৭ লাখ ৬৯ হাজার মোবাইল ফোন গ্রাহককে আবার নিবন্ধনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

আগামী দু’একদিনের মধ্যে এ সিদ্ধান্ত সম্পর্কে নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট সব দপ্তর এবং মোবাইল অপারেটরদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। এছাড়া এখন থেকে কোনো অজুহাতেই আর সিমকার্ড ফ্রি দেওয়া যাবে না।

যেভাবে সিমকার্ড নিবন্ধন
বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সব মোবাইল ফোন গ্রাহক অর্থাৎ প্রতিটি সিমকার্ড যথাযথ নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এ জন্য আবারও নির্ধারিত ফরমে গ্রাহকদের নিবন্ধন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে যেন কোনো ধরনের অনিয়ম ও ফাঁকির সুযোগ না থাকে সে জন্য বিশেষভাবে তদারকি করা হবে। নিবন্ধিত গ্রাহকদের প্রদত্ত তথ্য যাচাইয়ের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে তা মিলিয়ে দেখা হবে। এ জন্য জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) সার্ভারে মোবাইল ফোন অপারেটরদের প্রবেশের সুযোগ দেওয়ার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে চুক্তি করা হবে। এ চুক্তির ব্যাপারে প্রক্রিয়া শুরু করতে খুব শিগগির মন্ত্রণালয় থেকে বিটিআরসিকে চিঠি দেওয়া হবে। বিটিআরসি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবে।

তারানা হালিম জানান, গ্রাহকদের নিবন্ধনে উৎসাহিত করার জন্য মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোকে সব গ্রাহককে এসএমএসের মাধ্যমে নিবন্ধনের সুফল এবং নিবন্ধন না করার ঝুঁকি সম্পর্কে অবহিত করার ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হবে। এ ছাড়া মোবাইল ফোন অপারেটরদের বিজ্ঞাপনেও সিমকার্ড নিবন্ধন সংক্রান্ত বার্তা প্রচার বাধ্যতামূলক করা হবে, যেমন সিগারেটের প্যাকেটে স্বাস্থ্যের ক্ষতি সম্পর্কিত সতর্কবার্তা থাকে। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি গণমাধ্যমেও এ ব্যাপারে বিশেষভাবে প্রচার চালানো হবে।

আইন অনুযায়ী নতুন সিমকার্ড কেনার ক্ষেত্রে গ্রাহক তথ্য ফরম পূরণ বাধ্যতামূলক। এ ফরমেই গ্রাহক নিবন্ধন হিসেবে বিবেচিত হয়। কিন্তু ২০০৮ সালের পূর্ব পর্যন্ত বিপুল পরিমাণ সিমকার্ড বিক্রি হয় গ্রাহক নিবন্ধন ছাড়াই। যে কারণে অনিবন্ধিত সিমকার্ড ব্যবহার করে মোবাইল ফোনে হুমকি দিয়ে চাঁদাবাজি, ব্ল্যাক মেইলিংয়ের পাশাপাশি অবৈধ আন্তর্জাতিক কল আদান-প্রদানও চলে অবাধে। এ কারণে ২০০৮ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সব মোবাইল গ্রাহকের পুনঃনিবন্ধন করা হয়।

কিন্তু সেই নিবন্ধন নিয়েও পরবর্তী সময়ে নানা অনিয়ম ও ভুলের অভিযোগ ওঠে। জাতীয় পরিচয় পত্রের সার্ভারে মোবাইল ফোন অপারেটরদের প্রবেশাধিকার না থাকার কারণে গ্রাহকের সঠিক তথ্য যাচাইয়ের ক্ষেত্রেও সমস্যার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে আবারও বিক্রেতাদের পাশাপাশি রাস্তা-ঘাটে ফেরিওয়ালার কাছেও অনিবন্ধিত সিমকার্ড বিক্রি শুরু হয়। আবারও এসব সিমকার্ড ব্যবহার করে হুমকি, চাঁদাবাজি, প্রতারণা বেড়ে যায়। পাশাপাশি অবৈধ আন্তর্জাতিক কল আদান-প্রদানেও ব্যবহৃত হতে থাকে অনিবন্ধিত সিমকার্ড। বিটিআরসি গত কয়েক বছরে এ ধরনের প্রায় ৭১ লাখ সিমকার্ড বন্ধ করে দেয়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

যেভাবে নিবন্ধন হবে ১৩ কোটি সিমের

আপডেট টাইম : ১০:৩৮:৪৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫

ফের সিমকার্ডের নিবন্ধন করতে হবে দেশের প্রায় ১৩ কোটি মোবাইল ফোন গ্রাহককে। আগামী তিন মাসের মধ্যে এটি সম্পন্ন করা হবে।

পাশাপাশি প্রথমবারের মতো মোবাইল সিমকার্ড বিক্রির সঙ্গে জড়িত ডিলার ও খুচরা বিক্রেতাদেরও তালিকা তৈরি করা হবে। এ তালিকা অনুযায়ী বিক্রেতারাও নিবন্ধিত হবেন। নতুন সিমকার্ড বিক্রির ক্ষেত্রে গ্রাহক নিবন্ধনের সময় বিক্রেতার নাম-ঠিকানাও সংরক্ষণ করতে হবে অপারেটরদের।

নিবন্ধনবিহীন সিমকার্ড ও ভুয়া নিবন্ধনসম্পন্ন সিমকার্ড বিক্রি বন্ধেই এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। রোববার সকালে সচিবালয়ে সিমকার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধ এবং এর প্রতিকার বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রতিমন্ত্রী। বৈঠকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব এবং বিটিআরসির চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকেই ১২ কোটি ৮৭ লাখ ৬৯ হাজার মোবাইল ফোন গ্রাহককে আবার নিবন্ধনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

আগামী দু’একদিনের মধ্যে এ সিদ্ধান্ত সম্পর্কে নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট সব দপ্তর এবং মোবাইল অপারেটরদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। এছাড়া এখন থেকে কোনো অজুহাতেই আর সিমকার্ড ফ্রি দেওয়া যাবে না।

যেভাবে সিমকার্ড নিবন্ধন
বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সব মোবাইল ফোন গ্রাহক অর্থাৎ প্রতিটি সিমকার্ড যথাযথ নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এ জন্য আবারও নির্ধারিত ফরমে গ্রাহকদের নিবন্ধন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে যেন কোনো ধরনের অনিয়ম ও ফাঁকির সুযোগ না থাকে সে জন্য বিশেষভাবে তদারকি করা হবে। নিবন্ধিত গ্রাহকদের প্রদত্ত তথ্য যাচাইয়ের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে তা মিলিয়ে দেখা হবে। এ জন্য জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) সার্ভারে মোবাইল ফোন অপারেটরদের প্রবেশের সুযোগ দেওয়ার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে চুক্তি করা হবে। এ চুক্তির ব্যাপারে প্রক্রিয়া শুরু করতে খুব শিগগির মন্ত্রণালয় থেকে বিটিআরসিকে চিঠি দেওয়া হবে। বিটিআরসি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবে।

তারানা হালিম জানান, গ্রাহকদের নিবন্ধনে উৎসাহিত করার জন্য মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোকে সব গ্রাহককে এসএমএসের মাধ্যমে নিবন্ধনের সুফল এবং নিবন্ধন না করার ঝুঁকি সম্পর্কে অবহিত করার ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হবে। এ ছাড়া মোবাইল ফোন অপারেটরদের বিজ্ঞাপনেও সিমকার্ড নিবন্ধন সংক্রান্ত বার্তা প্রচার বাধ্যতামূলক করা হবে, যেমন সিগারেটের প্যাকেটে স্বাস্থ্যের ক্ষতি সম্পর্কিত সতর্কবার্তা থাকে। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি গণমাধ্যমেও এ ব্যাপারে বিশেষভাবে প্রচার চালানো হবে।

আইন অনুযায়ী নতুন সিমকার্ড কেনার ক্ষেত্রে গ্রাহক তথ্য ফরম পূরণ বাধ্যতামূলক। এ ফরমেই গ্রাহক নিবন্ধন হিসেবে বিবেচিত হয়। কিন্তু ২০০৮ সালের পূর্ব পর্যন্ত বিপুল পরিমাণ সিমকার্ড বিক্রি হয় গ্রাহক নিবন্ধন ছাড়াই। যে কারণে অনিবন্ধিত সিমকার্ড ব্যবহার করে মোবাইল ফোনে হুমকি দিয়ে চাঁদাবাজি, ব্ল্যাক মেইলিংয়ের পাশাপাশি অবৈধ আন্তর্জাতিক কল আদান-প্রদানও চলে অবাধে। এ কারণে ২০০৮ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সব মোবাইল গ্রাহকের পুনঃনিবন্ধন করা হয়।

কিন্তু সেই নিবন্ধন নিয়েও পরবর্তী সময়ে নানা অনিয়ম ও ভুলের অভিযোগ ওঠে। জাতীয় পরিচয় পত্রের সার্ভারে মোবাইল ফোন অপারেটরদের প্রবেশাধিকার না থাকার কারণে গ্রাহকের সঠিক তথ্য যাচাইয়ের ক্ষেত্রেও সমস্যার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে আবারও বিক্রেতাদের পাশাপাশি রাস্তা-ঘাটে ফেরিওয়ালার কাছেও অনিবন্ধিত সিমকার্ড বিক্রি শুরু হয়। আবারও এসব সিমকার্ড ব্যবহার করে হুমকি, চাঁদাবাজি, প্রতারণা বেড়ে যায়। পাশাপাশি অবৈধ আন্তর্জাতিক কল আদান-প্রদানেও ব্যবহৃত হতে থাকে অনিবন্ধিত সিমকার্ড। বিটিআরসি গত কয়েক বছরে এ ধরনের প্রায় ৭১ লাখ সিমকার্ড বন্ধ করে দেয়।