ঢাকা ০২:১৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী এই একতলা ও দোতলা মাটির বাড়ি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:১৭:৩৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ জানুয়ারী ২০১৮
  • ৫২১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বেশিদিনের কথা নয়, বাংলার প্রতিটি গ্রামে নজরে পড়তো এই মাটির বাড়ি। ঝড়-বৃষ্টি থেকে বাঁচার পাশাপাশি প্রচুর গরম ও শীতে বসবাস উপযোগী মাটির তৈরি এসব বাড়ি এখন আর তেমন একটা নজরে পড়ে না। আধুনিকতার ছোঁয়ায় ও কালের পরিক্রমায় বাংলাদেশে ঐতিহ্যবাহী মাটির তৈরি বাড়ি-ঘর হারিয়ে যেতে বসলেও গফরগাঁওয়ে এখনো চোখে পড়ে হাজার হাজার মাটির ঘর। উপজেলার টাঙ্গাব ইউনিয়নের ১৩ গ্রামের সব বাড়িতেই মাটির ঘর রয়েছে। ইটের তৈরি দালান দেখা মিললেও মাটির ঘরের তুলনায় খুবই নগন্য।

এখানকার গ্রামের মানুষের কাছে মাটির ঘর গরীবের ‘এসি’ বাড়ি হিসেবে খ্যাত। টাঙ্গাব ইউনিয়নের মানুষের কাছে সবুজ শ্যামল ছায়া ঘেরা ‘মাটির বাড়ি’ শান্তির নীড়। বিজ্ঞান অগ্রসর হচ্ছে দ্রুত। ডিজিটালের আলোকবর্তিকা গ্রাম জনপদকেও প্রায় ছোঁয় ছোঁয়।

পরিবর্তনশীল এই সময়ের বাস্তবতাকে স্বীকার করেও একথা দ্বিধাহীন বলা যায়, আমাদের ঐতিহ্যর অন্যতম নিদর্শন মাটির বাড়ি-ঘরের আবেদন এখনো এতটুকু ফুরিয়ে যায়নি।

মাটির বাড়ি শীত ও গরম মৌসুমে আরামদায়ক বলে টাঙ্গাব ইউনিয়নের দরিদ্র মানুষের পাশাপাশি বিত্তবানরাও এই মাটির দ্বিতল বাড়ি তৈরি করেছেন। এখানকার বাসিন্দারা মাটির ঘরে বসবাস করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।

এক সময় মাটির বাড়ির প্রচলন ছিল এদেশের গ্রাম-গঞ্জে। গ্রামের মানুষের কাছে মাটির বাড়ি ঐতিহ্যর প্রতীক ছিল। গ্রামের বিত্তশালীরা অনেক অর্থ ব্যয় করে মাটির দোতলা মজবুত বাড়ি তৈরি করতেন। যা এখনো কিছু কিছু এলাকায় চোখে পড়ে। গফরগাঁওয়ের টাঙ্গাব ইউনিয়নের সব গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে একটি করে একতলা ও দোতলা মাটির ঘর রয়েছে। ইউনিয়নটির সব বাড়িতেই সারিবদ্ধ মাটির ঘর দেখা মেলে।

এটেল বা আঠালো মাটি কাঁদায় পরিণত করে ৩ থেকে ৪ ফুট চওড়া করে দেয়াল তৈরি করা হয়। একতলা মাটির বাড়ির জন্য ১২ থেকে ১৪ ফুট উচু দেয়ালে কাঠ-বাঁশ অথবা লোহার এঙ্গেল দিয়ে সিলিং তৈরি করে তার উপর টিনের ছাউনি দেয়া হয়।

দোতলা বাড়ির জন্য ১৩ থেকে অন্তত ২৫ ফুট উচু দেয়াল তৈরি করে ১৩ ফুটের মাঝে তালের গাছের ফালি দিয়ে পাটাতন তৈরি করে ২ থেকে ৩ ইঞ্চি মোটা কাঠের ছাউনি দেয়া হয়। আর ২৫ ফুটের মাথায় একতলা বাড়ির ন্যায় টিনের ছাউনি দেয়া হয়।

কোন কোন বাড়ির এসব মাটির ঘরে বিভিন্ন রকমের আল্পনা এঁকে ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। এটেল বা আঠালো মাটি কাঁদায় পরিণত করে ৩-৪ ফুট চওড়া করে দেয়াল তৈরি করা হয়।

এলাকাবাসীর ভাষ্য, ভূমিকম্পে মাটির ঘরের খুব বেশি ক্ষতি হয় না। একেকটি মাটির ঘর এক থেকে দেড়শ বছরেরও বেশি স্থায়ী হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমান সময়ে আধুনিকতার ছোঁয়ায় আর কালের পরিক্রমায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এসব মাটির বাড়ি ইট বালির দালান কোঠা আর বড় বড় অট্টালিকার কাছে হার মানছে।

টাঙ্গাব ইউনিয়নের পাঁচাহার গ্রামের বাসিন্দা, জাকির হোসেন খান, জালাল উদ্দিন খান, আবুল কাশেম খান, বজলুর রহমান, কালাম খানসহ আরো অনেকে জানান, তারা প্রত্যকেই পৈত্রিকসূত্রে মাটির তৈরি বাড়ি পাওয়ার পরেও নতুন করে একটি একতলা ও একটি দোতলা মাটির ঘর তৈরি করেছেন। তাদের পূর্ব পুরুষরা মাটির তৈরি বাড়িতে জীবন কাটিয়ে গেছেন। মাটির তৈরি বাড়ি বসবাসের জন্য বেশ আরামদায়ক।

তারা জানান, এ ইউনিয়নের প্রতিটি বাড়িতেই দোতলা ঘরের পাশাপাশি প্রত্যেকেরই একটি করে একতলা মাটির ঘর রয়েছে। কেউ কেউ দোতলায় বসবাস করেন আবার কেউবা দোতলায় ধান সংরক্ষন করেন।

এছাড়াও আরেকটি কারণে এ এলাকায় মাটির দোতলা ঘর তৈরি করা হতো। এর কারণ হলো, এ ইউনিয়নে এক সময় খুব বেশি ডাকাতি হতো বলে বিত্তশালীরা প্রচুর অর্থ ব্যয় করে মাটির তৈরি দোতলা ঘর তৈরি করে দ্বিতীয় তলায় তারা বসবাস করতেন।

টাঙ্গাব ইউপি চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন সাগর জানান, ইউনিয়নটির ১৩টি গ্রামের সকল বাড়িতেই মাটির তৈরি একতলা ও দোতলা ঘর রয়েছে। সম্প্রতি সময়ে যেসব বাড়িতে ইটের ঘর নির্মাণ করা হয়েছে সেসব বাড়িতে একাধিক মাটির ঘর রয়েছে। সুতরাং নিসন্দেহে এ ইউনিয়নকে মাটির বাড়ির ইউনিয়ন বলা যেতে পারে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী এই একতলা ও দোতলা মাটির বাড়ি

আপডেট টাইম : ০৪:১৭:৩৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ জানুয়ারী ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বেশিদিনের কথা নয়, বাংলার প্রতিটি গ্রামে নজরে পড়তো এই মাটির বাড়ি। ঝড়-বৃষ্টি থেকে বাঁচার পাশাপাশি প্রচুর গরম ও শীতে বসবাস উপযোগী মাটির তৈরি এসব বাড়ি এখন আর তেমন একটা নজরে পড়ে না। আধুনিকতার ছোঁয়ায় ও কালের পরিক্রমায় বাংলাদেশে ঐতিহ্যবাহী মাটির তৈরি বাড়ি-ঘর হারিয়ে যেতে বসলেও গফরগাঁওয়ে এখনো চোখে পড়ে হাজার হাজার মাটির ঘর। উপজেলার টাঙ্গাব ইউনিয়নের ১৩ গ্রামের সব বাড়িতেই মাটির ঘর রয়েছে। ইটের তৈরি দালান দেখা মিললেও মাটির ঘরের তুলনায় খুবই নগন্য।

এখানকার গ্রামের মানুষের কাছে মাটির ঘর গরীবের ‘এসি’ বাড়ি হিসেবে খ্যাত। টাঙ্গাব ইউনিয়নের মানুষের কাছে সবুজ শ্যামল ছায়া ঘেরা ‘মাটির বাড়ি’ শান্তির নীড়। বিজ্ঞান অগ্রসর হচ্ছে দ্রুত। ডিজিটালের আলোকবর্তিকা গ্রাম জনপদকেও প্রায় ছোঁয় ছোঁয়।

পরিবর্তনশীল এই সময়ের বাস্তবতাকে স্বীকার করেও একথা দ্বিধাহীন বলা যায়, আমাদের ঐতিহ্যর অন্যতম নিদর্শন মাটির বাড়ি-ঘরের আবেদন এখনো এতটুকু ফুরিয়ে যায়নি।

মাটির বাড়ি শীত ও গরম মৌসুমে আরামদায়ক বলে টাঙ্গাব ইউনিয়নের দরিদ্র মানুষের পাশাপাশি বিত্তবানরাও এই মাটির দ্বিতল বাড়ি তৈরি করেছেন। এখানকার বাসিন্দারা মাটির ঘরে বসবাস করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।

এক সময় মাটির বাড়ির প্রচলন ছিল এদেশের গ্রাম-গঞ্জে। গ্রামের মানুষের কাছে মাটির বাড়ি ঐতিহ্যর প্রতীক ছিল। গ্রামের বিত্তশালীরা অনেক অর্থ ব্যয় করে মাটির দোতলা মজবুত বাড়ি তৈরি করতেন। যা এখনো কিছু কিছু এলাকায় চোখে পড়ে। গফরগাঁওয়ের টাঙ্গাব ইউনিয়নের সব গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে একটি করে একতলা ও দোতলা মাটির ঘর রয়েছে। ইউনিয়নটির সব বাড়িতেই সারিবদ্ধ মাটির ঘর দেখা মেলে।

এটেল বা আঠালো মাটি কাঁদায় পরিণত করে ৩ থেকে ৪ ফুট চওড়া করে দেয়াল তৈরি করা হয়। একতলা মাটির বাড়ির জন্য ১২ থেকে ১৪ ফুট উচু দেয়ালে কাঠ-বাঁশ অথবা লোহার এঙ্গেল দিয়ে সিলিং তৈরি করে তার উপর টিনের ছাউনি দেয়া হয়।

দোতলা বাড়ির জন্য ১৩ থেকে অন্তত ২৫ ফুট উচু দেয়াল তৈরি করে ১৩ ফুটের মাঝে তালের গাছের ফালি দিয়ে পাটাতন তৈরি করে ২ থেকে ৩ ইঞ্চি মোটা কাঠের ছাউনি দেয়া হয়। আর ২৫ ফুটের মাথায় একতলা বাড়ির ন্যায় টিনের ছাউনি দেয়া হয়।

কোন কোন বাড়ির এসব মাটির ঘরে বিভিন্ন রকমের আল্পনা এঁকে ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। এটেল বা আঠালো মাটি কাঁদায় পরিণত করে ৩-৪ ফুট চওড়া করে দেয়াল তৈরি করা হয়।

এলাকাবাসীর ভাষ্য, ভূমিকম্পে মাটির ঘরের খুব বেশি ক্ষতি হয় না। একেকটি মাটির ঘর এক থেকে দেড়শ বছরেরও বেশি স্থায়ী হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমান সময়ে আধুনিকতার ছোঁয়ায় আর কালের পরিক্রমায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এসব মাটির বাড়ি ইট বালির দালান কোঠা আর বড় বড় অট্টালিকার কাছে হার মানছে।

টাঙ্গাব ইউনিয়নের পাঁচাহার গ্রামের বাসিন্দা, জাকির হোসেন খান, জালাল উদ্দিন খান, আবুল কাশেম খান, বজলুর রহমান, কালাম খানসহ আরো অনেকে জানান, তারা প্রত্যকেই পৈত্রিকসূত্রে মাটির তৈরি বাড়ি পাওয়ার পরেও নতুন করে একটি একতলা ও একটি দোতলা মাটির ঘর তৈরি করেছেন। তাদের পূর্ব পুরুষরা মাটির তৈরি বাড়িতে জীবন কাটিয়ে গেছেন। মাটির তৈরি বাড়ি বসবাসের জন্য বেশ আরামদায়ক।

তারা জানান, এ ইউনিয়নের প্রতিটি বাড়িতেই দোতলা ঘরের পাশাপাশি প্রত্যেকেরই একটি করে একতলা মাটির ঘর রয়েছে। কেউ কেউ দোতলায় বসবাস করেন আবার কেউবা দোতলায় ধান সংরক্ষন করেন।

এছাড়াও আরেকটি কারণে এ এলাকায় মাটির দোতলা ঘর তৈরি করা হতো। এর কারণ হলো, এ ইউনিয়নে এক সময় খুব বেশি ডাকাতি হতো বলে বিত্তশালীরা প্রচুর অর্থ ব্যয় করে মাটির তৈরি দোতলা ঘর তৈরি করে দ্বিতীয় তলায় তারা বসবাস করতেন।

টাঙ্গাব ইউপি চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন সাগর জানান, ইউনিয়নটির ১৩টি গ্রামের সকল বাড়িতেই মাটির তৈরি একতলা ও দোতলা ঘর রয়েছে। সম্প্রতি সময়ে যেসব বাড়িতে ইটের ঘর নির্মাণ করা হয়েছে সেসব বাড়িতে একাধিক মাটির ঘর রয়েছে। সুতরাং নিসন্দেহে এ ইউনিয়নকে মাটির বাড়ির ইউনিয়ন বলা যেতে পারে।