হাওর বার্তা ডেস্কঃ কৃষি নির্ভর বাংলাদেশের সার্বিক কৃষি উন্নয়ন এবং খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে বাস্তবমুখী নানা পদক্ষেপ নিলেও নানা সময় বীজ ও চারা সংকটরের কারনে কৃষক নানা সমস্যায় পড়েন। এ সমস্যা সমাধানের জন্য কৃষি ব্যবস্থায় যুক্ত হয়েছে কমিউনিটি (আদর্শ) বীজতলা। এ পদ্ধতিতে খরচ কম। সুস্থ চারা উৎপাদন ও কোল্ড ইনজুরির ঝুঁকি কম। এই বীজতলা তৈরী ও চাষে কৃষকের মাঝে ব্যাপক সাড়া মিলছে। এ বার যশোর জেলায় ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে বীজ তলা তৈরির লক্ষমাত্র নির্ধারণ করছে কৃষি বিভাগ। ইতোমধ্যে ১৩ হাজার হেক্টও জমিতে বীজ তলা করা হয়েছে।
ঝিকরগাছার মাগুরা গ্রামের কৃষক জানায়, আগের পদ্ধতির চেয়ে কমিউনিটি পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি করলে বীজ, শ্রম, সার, জায়গা, সেচ খরচ অনেকাংশে কম লাগে কিন্তু চারা ভালো পাওয়া যায়।
কৃষক আব্দুল হাই বলেন সনাতন পদ্ধতিতে যে জায়গায় ৫০ কেজি বীজ প্রয়োজন হত সেখানে কমিউনিটি পদ্ধতিতে ৩৫ কেজি. বীজ লাগে। ফলে বীজতলা তৈরীতে মিলে এক হাজার ২০০ টাকা খরচ কম হয়েছে।
ঝিকরগাছর মাগুরা ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার শ্যামল কুমার নাথ জানান, উপজেলায় কমিউনিটি বীজতলা তৈরীতে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে। দিনদিন এ পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরী জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কমিউনিটি (আদর্শ) বীজতলা তৈরী করায় কৃষকের ধান উৎপাদন খরচ ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ কম লাগছে। সনাতন ভাবে সমস্ত জমি জুড়ে চাষ দিয়ে বীজতলায় বীজ বপন করলে দূর থেকে ছিটিয়ে বীজ বোনার ফলে সমান দূরত্বে বীজ পড়েনা। এ করে চারা ভাল হয় না বীজ বেশি লাগে। তিনি বলেন আদর্শ বীজতলায় সুস্থ চারা উৎপাদন হয়। কোল্ড ইনজুরির ঝুঁকি কম।
ঝিকরগাছা পৌরসভা ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার শ্যামল কুমার দাশ জানান, কমিউনিটি (আদর্শ) পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি করতে কৃষককে হাতে কলমে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। বীজতলা তৈরির মৌসুমে মাঠে ঘুরে কৃষকদের পরামর্শ দেন তারা।
ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি অফিসার দীপঙ্কর দাশ জানান, আগে ৫০ কেজি বীজের চারা দিয়ে ২.৫ একর জমি রোপন করা যেতো, আর কমিউনিটি বীজতলার ৩৫ কেজি বীজের চারা দিয়েও একই পরিমান জমি রোপন করা সম্ভব। তাছাড়া আগের চেয়ে ফলন ভালো হয়, সেবা যত্ন নেওয়া সহজ হয়।
তিনি আরো জানান, কৃষকদের কমিউনিটি বীজতলা তৈরি করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এতে তারা লাভবান হয়েছেন। এই পদ্ধতিতে লাভ দেখে অন্যান্য কৃষকরা নিজ উদ্যোগে কমিউনিটি পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি করছেন।
জেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ যশোর অঞ্চল অতিরিক্ত পরিচালক চন্ডী দাস কুন্ডু জানান, চলতি বোরো মৌসুমে যশোর জেলায় ১৮ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরির লক্ষমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতো মধ্যে ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরির কাজ শেষ হয়েছে।
কৃষি কর্মকতা আর বলেন বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ন্যাশনাল এগ্রিকালচার টেকনোলজি প্রোগ্রাম ফেজ প্রজেক্ট (এনএটিপি-২)’র আওতায় প্রদর্শনী প্লাটের মাধ্যমে ধানের বীজ কমিউনিটি (আদর্শ) পদ্ধতিতে বপন করা হয়েছে। তিনিও মনে করেন, কয়েক বছরের মধ্যে উপজেলার সব বীজতলা এই পদ্ধতিতে করা হবে বলে তিনি আশা করছেন। তাতে কৃষি অর্থনীতি আরও সচল হবে।
কৃষি বিভাগের মতে আদর্শ বীজতলা তৈরীর পদ্ধিতি:
(ক) চারিদিকে খোলা, রৌদ্র ও সেচসুবিধাযুক্ত জমিতে বীজতলা তৈরী করা উচিৎ। কারণ ছায়াযুক্ত বীজতলায় ধানের চারা লম্বা ও লিকলিকে হয়ে যায় এবং চারা রোগাক্রান্ত হতে পারে।
(খ) প্রযোজনীয় মত সার দিয়ে ভালোমত চাষ-মই দিয়ে, জমি থকথকে কাদাময় তৈরী করে, তাতে ১.০-১.৫ মিটার প্রস্থ বিশিষ্ট প্রয়োজন মত লম্বা একাধিক বীজতলা তেরী করা যেতে পারে।
(গ) প্রতি দুই বীজতলার মাঝে ৩০ সেমি নালা/ ড্রেন করতে হবে। যাতে চারা গজানোর পর বীজতলার মাঝখান দিয়ে হাঁটাচলা করা, চারায় পানি সেচ ও অন্তবর্তীকালীন পরিচর্যা করা সহজতর হয়।
(ঘ) প্রতি বর্গমিটার বীজতলায় ৮০-১০০ গ্রাম হারে সমানদূরত্বে বীজ বপন করা উচিৎ। এরূপ এক বর্গ মিটার বীজতলার চারা দিয়ে ২৫-৩০ বর্গমিটার জমিতে রোপণ করা যাবে।
(ঙ) বীজতলা থেকে চারা তোলার ৭ (সাত) দিন পূর্বে প্রতি বর্গ মিটার বীজতলার জন্য ৭ (সাত) গ্রাম হারে ইউরিয়া সার ছিটিয়ে তাতে হালকা করে পানি সেচ দেয়া যেতে পারে। মনে রাখতে হবে চারা পাঁচ পাতা হলে তা রোপনের উপযুক্ত।