ঢাকা ০৬:১১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খালি হাতে স্কুলে এসে ঘরে ফিরে গেল নতুন বই নিয়ে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:০৪:১৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ জানুয়ারী ২০১৮
  • ৩৩২ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ গতকালের সকালটা ছিল শীতের কুয়াশায় মোড়ানো। তাতে কী শিশু শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাসের কমতি ছিল না। প্রত্যেকের চোখেমুখে খুশির ঝিলিক। তার একটাই কারণ, ‘নতুন বই’। খালি হাতে স্কুলে এসে ঘরে ফিরে গেল নতুন বই নিয়ে। মাতোয়ারা হলো নতুন বইয়ের গন্ধে। এদিন সকাল ৯টার আগেই তারা হাজির হয় স্কুলে। কোথাও মাঠে, কোথাও ক্লাসরুম সাজিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেয়া হয়। গতকাল নতুন বছরের প্রথম দিনে সারাদেশেই এ ‘বই উৎসবের’ মাতোয়ারা হলো শিশুরা।

প্রাথমিক স্তরের বেশির ভাগ শিশুই প্রথম দিনে এসেছিল বাবা-মায়ের সাথে। গতকাল প্রথম দিনে ক্লাস না হলেও শিক্ষার্থীরা বই নিয়ে নতুন ক্লাসে যায়। সহপাঠীদের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গতকাল সোমবার রাজধানীর আজিমপুর গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে কেন্দীয় ভাবে পাঠ্যপুস্তক উৎসবের আয়োজন করেন। আশপাশের স্কুলের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত হয় স্কুলের মাঠে।

স্কুলের মাঠে উপস্থিত শিশু শিক্ষার্থী সায়লা বলে, ‘নতুন বইয়ের জন্য এসেছি। মাও সাথে এসেছে। আহা কী যে আনন্দ লাগছে।’ সায়লার মা বলেন, ‘ নতুন বই পাবে এ কারণে সে অস্থির হয়ে আছে। ক্যালেন্ডারের পাতায় দাগ দিয়ে রেখেছিল গত ৩১ ডিসেম্বর কবে শেষ হবে।’

গতকাল আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে পাঠ্যপুস্তক উৎসবে রাজধানীর ২৫টি স্কুলের প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়। স্কুল গেটে একটি করে বই দেয়া হয় শিক্ষার্থীদের হাতে। আর সে সব বই নিয়ে ছাত্রছাত্রীরা উল্লাস করে। অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বছরের প্রথমদিনেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের হাতে  বই তুলে দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। এত বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর মাঝে বই বিতরণ বিশ্বে বিরল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর ২০১০ সাল থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ শুরু হয়। এ কার্যক্রম সারা পৃথিবীতে প্রশংসিত হয়েছে।

অনুষ্ঠানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসেন, কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর হোসেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ওয়াহিদুজ্জামান, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মাহাবুবুর রহমান, জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান নারায়ণ সাহা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ শিক্ষাবর্ষে ৪ কোটি ৩৭ লাখ ৬ হাজার ৮৯৫ জন শিক্ষার্থীর মাঝে ৩৫ কোটি ৪২ লাখ ৯০ হাজার ১৬২টি বই বিতরণ করা হচ্ছে। এই বিপুল পরিমাণ বই ছাপা ও স্কুলে পৌঁছে দেয়ার জন্য প্রায় ৯৮ হাজার জনবল কাজ করেছে।

মোট বইয়ের মধ্যে মাধ্যমিক স্তরের এক কোটি ৩০ লাখ ৩৫ হাজার ৫৭৪ জন শিক্ষার্থীর জন্য ১৮ কোটি ৭৩ লাখ ৮৫ হাজার ৯২১টি বই বিতরণ করা হচ্ছে। প্রাথমিক স্তরে ২ কোটি ১৭ লাখ ২১ হাজার ১২৯ জন শিক্ষার্থীর জন্য ১০ কোটি ৩৬ লাখ ২৪ হাজার ৪০৫টি বই বিতরণ করা হচ্ছে। এ ছাড়াও প্রাক-প্রাথমিকের ৩৪ লাখ ১১ হাজার ১৪ জন শিক্ষার্থীর জন্য ৬৮ লাখ ২৩ হাজার ৬৪৮টি বই ছাপা হয়েছে। প্রাক-প্রাথমিকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ৫৮ হাজার ২৫৫ জন শিক্ষার্থীর জন্য পাঁচটি ভাষায় এক লাখ ৪৯ হাজার ২৭৬টি বই ছাপা হয়েছে। এ ছাড়াও ৯৬৩ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর জন্য ৮ হাজার ৪০৫টি ব্রেইল বই বিতরণ করা হবে ।

অন্যদিকে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে সকালে পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তক উৎসবের উদ্বোধন করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান। এ সময় মন্ত্রী কয়েকজন শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দেন। উদ্বোধনের পর মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রতিবছরের মতো এ দিনটা সবার কাছেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার উন্নয়নে নানা পদক্ষেপের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, বর্তমানে সবার জন্য উপবৃত্তির দ্বার খুলে দেয়া হয়েছে। এখন সব শিশুই স্কুলে যাচ্ছে। তাদের বিস্কুট দেয়া হচ্ছে।

এ সময় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’র উপস্থাপক হানিফ সংকেত বলেন, আজকের দিনটা তোমাদের জন্য সত্যিই খুব আনন্দের। আমাদের সময় বছরের প্রথম দিন বিনামূল্যে হাতে বই পাওয়ার কথা চিন্তাই করতে পারতাম না। শুধু বই নিলে চলবে না, বই পড়ে তোমাদের জীবনকে আলোকিত করতে হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

খালি হাতে স্কুলে এসে ঘরে ফিরে গেল নতুন বই নিয়ে

আপডেট টাইম : ১১:০৪:১৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ জানুয়ারী ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ গতকালের সকালটা ছিল শীতের কুয়াশায় মোড়ানো। তাতে কী শিশু শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাসের কমতি ছিল না। প্রত্যেকের চোখেমুখে খুশির ঝিলিক। তার একটাই কারণ, ‘নতুন বই’। খালি হাতে স্কুলে এসে ঘরে ফিরে গেল নতুন বই নিয়ে। মাতোয়ারা হলো নতুন বইয়ের গন্ধে। এদিন সকাল ৯টার আগেই তারা হাজির হয় স্কুলে। কোথাও মাঠে, কোথাও ক্লাসরুম সাজিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেয়া হয়। গতকাল নতুন বছরের প্রথম দিনে সারাদেশেই এ ‘বই উৎসবের’ মাতোয়ারা হলো শিশুরা।

প্রাথমিক স্তরের বেশির ভাগ শিশুই প্রথম দিনে এসেছিল বাবা-মায়ের সাথে। গতকাল প্রথম দিনে ক্লাস না হলেও শিক্ষার্থীরা বই নিয়ে নতুন ক্লাসে যায়। সহপাঠীদের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গতকাল সোমবার রাজধানীর আজিমপুর গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে কেন্দীয় ভাবে পাঠ্যপুস্তক উৎসবের আয়োজন করেন। আশপাশের স্কুলের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত হয় স্কুলের মাঠে।

স্কুলের মাঠে উপস্থিত শিশু শিক্ষার্থী সায়লা বলে, ‘নতুন বইয়ের জন্য এসেছি। মাও সাথে এসেছে। আহা কী যে আনন্দ লাগছে।’ সায়লার মা বলেন, ‘ নতুন বই পাবে এ কারণে সে অস্থির হয়ে আছে। ক্যালেন্ডারের পাতায় দাগ দিয়ে রেখেছিল গত ৩১ ডিসেম্বর কবে শেষ হবে।’

গতকাল আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে পাঠ্যপুস্তক উৎসবে রাজধানীর ২৫টি স্কুলের প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়। স্কুল গেটে একটি করে বই দেয়া হয় শিক্ষার্থীদের হাতে। আর সে সব বই নিয়ে ছাত্রছাত্রীরা উল্লাস করে। অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বছরের প্রথমদিনেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের হাতে  বই তুলে দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। এত বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর মাঝে বই বিতরণ বিশ্বে বিরল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর ২০১০ সাল থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ শুরু হয়। এ কার্যক্রম সারা পৃথিবীতে প্রশংসিত হয়েছে।

অনুষ্ঠানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসেন, কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর হোসেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ওয়াহিদুজ্জামান, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মাহাবুবুর রহমান, জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান নারায়ণ সাহা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ শিক্ষাবর্ষে ৪ কোটি ৩৭ লাখ ৬ হাজার ৮৯৫ জন শিক্ষার্থীর মাঝে ৩৫ কোটি ৪২ লাখ ৯০ হাজার ১৬২টি বই বিতরণ করা হচ্ছে। এই বিপুল পরিমাণ বই ছাপা ও স্কুলে পৌঁছে দেয়ার জন্য প্রায় ৯৮ হাজার জনবল কাজ করেছে।

মোট বইয়ের মধ্যে মাধ্যমিক স্তরের এক কোটি ৩০ লাখ ৩৫ হাজার ৫৭৪ জন শিক্ষার্থীর জন্য ১৮ কোটি ৭৩ লাখ ৮৫ হাজার ৯২১টি বই বিতরণ করা হচ্ছে। প্রাথমিক স্তরে ২ কোটি ১৭ লাখ ২১ হাজার ১২৯ জন শিক্ষার্থীর জন্য ১০ কোটি ৩৬ লাখ ২৪ হাজার ৪০৫টি বই বিতরণ করা হচ্ছে। এ ছাড়াও প্রাক-প্রাথমিকের ৩৪ লাখ ১১ হাজার ১৪ জন শিক্ষার্থীর জন্য ৬৮ লাখ ২৩ হাজার ৬৪৮টি বই ছাপা হয়েছে। প্রাক-প্রাথমিকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ৫৮ হাজার ২৫৫ জন শিক্ষার্থীর জন্য পাঁচটি ভাষায় এক লাখ ৪৯ হাজার ২৭৬টি বই ছাপা হয়েছে। এ ছাড়াও ৯৬৩ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর জন্য ৮ হাজার ৪০৫টি ব্রেইল বই বিতরণ করা হবে ।

অন্যদিকে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে সকালে পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তক উৎসবের উদ্বোধন করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান। এ সময় মন্ত্রী কয়েকজন শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দেন। উদ্বোধনের পর মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রতিবছরের মতো এ দিনটা সবার কাছেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার উন্নয়নে নানা পদক্ষেপের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, বর্তমানে সবার জন্য উপবৃত্তির দ্বার খুলে দেয়া হয়েছে। এখন সব শিশুই স্কুলে যাচ্ছে। তাদের বিস্কুট দেয়া হচ্ছে।

এ সময় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’র উপস্থাপক হানিফ সংকেত বলেন, আজকের দিনটা তোমাদের জন্য সত্যিই খুব আনন্দের। আমাদের সময় বছরের প্রথম দিন বিনামূল্যে হাতে বই পাওয়ার কথা চিন্তাই করতে পারতাম না। শুধু বই নিলে চলবে না, বই পড়ে তোমাদের জীবনকে আলোকিত করতে হবে।