ঢাকা ০৪:৪২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উপকূলের ছয় লাখ কৃষক এবার লোকসান মাথায় নিয়ে বোরো আবাদে নেমেছে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০২:৪৯:৪৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭
  • ৩২৪ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কৃষির প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে এ মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকদের লোকসান গুণতে হয়েছে। পাট, আলু, ও আমনের নেয্য দাম পায়নি। বোরো মৌসুমের আগেই বীজ, বিদ্যুৎ ও কৃষি শ্রমিকের মূল্য বেড়েছে। উপকরণ আবাদ ও মাড়াই দিয়ে একর প্রতি এবারের উৎপাদন খরচ ৫৫ হাজার টাকা। ২০১০ সালে একর প্রতি খরচ হয়েছে ৪২ হাজার টাকা। আমনের দর পতন। এসব কিছু ভেবেই লোকসান মাথায় নিয়ে বোরো আবাদে নেমেছে উপকুলের ছয় লাখ কৃষক।

মৌসুমের শুরুতেই বোরো বীজের মূল্য দ্বিগুণ, সেচ যন্ত্রের জন্য বিদ্যুতের মূল্য ইউনিট প্রতি ৩৫ পয়সা বৃদ্ধি এবং কৃষি শ্রমিকদের প্রতিদিনের পারিশ্রমিক বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১০-১১ সালে হেক্টর প্রতি উৎপাদন খরচ ছিল ৪২ হাজার ২শ’ ৭৯ টাকা। এবার উৎপাদন খরচ দাঁড়াবে ৫৫ হাজার টাকা। এমন ঝুঁকি নিয়ে উপকূলবর্তী এলাকার চার জেলায় ৬ লাখ চাষি ২ লাখ ২৮ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদে নেমেছে।

বিএডিসি (বীজ) এর সূত্র জানায়, উচ্চ ফলনশীল জাতের বীজের মূল্য কেজি প্রতি ৩৫ টাকার স্থলে ৫০-৫৮ টাকা, বিআর-৫০ বীজ কেজি প্রতি ৪৫ টাকার স্থলে ৬৫-৭০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। কর্পোরেশনের উপ-পরিচালক মোঃ লিয়াকত আলী এ প্রতিবেদককে জানান, সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাটে ১ হাজার ৭শ’ ৭০ মেট্রিক টন বীজ সরবরাহ করা হয়েছে। স্থানীয়ভাবে পর্যাপ্ত বীজ মজুদ রয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ আব্দুল লতিফ জানান, বীজ ও কৃষি শ্রমিক এর মূল্য বেড়েছে। সেচের ক্ষেত্রে বিদ্যুতের বর্ধিত মূল্য প্রভাব পড়বে কিনা এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি। তার দেয়া তথ্য মতে, এ পর্যন্ত ৮৩ শতাংশ বীজতলা সম্পন্ন হয়েছে। সবচেয়ে বেশি আবাদ হবে ডুমুরিয়া উপজেলায়। এখানে আবাদের পরিমাণ ২১ হাজার হেক্টর।

ডুমুরিয়া উপজেলায় শোভনা গ্রামের কৃষক মিলন মল্লিক জানান, কৃষি শ্রমিকের দৈনিক মুজুরি ৪শ’ টাকার পরিবর্তে এবার ৫শ’ টাকা। বৃষ্টিতে আমন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কৃষক কাঙ্খিত ফসল পায়নি। তিনি বলেন, জানুয়ারির মাঝামাঝি নাগাদ কৃষি শ্রমিকের মূল্য আরও বাড়তে পারে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক নিত্যরঞ্জন বিশ্বাস এর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বোরো আবাদের উৎপাদন খরচ বাড়বে। কৃষি শ্রমিকের মূল্য বেড়েছে। তিনি জানান, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও নড়াইল জেলায় ২ লাখ ২৮ হাজার ৩৮১ হেক্টর জমিতে এবারে আবাদ হচ্ছে।

৬ লাখ কৃষক পরিবার এর সাথে সংশ্লিষ্ট। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রো টেকনোলোজি ডিসিপ্লিনের সহযোগী অধ্যাপক ড. মতিউল ইসলাম জানিয়েছেন উৎপাদন খরচ বাড়বে। এ অঞ্চলে বোরো আবাদ লাভজনক নয়। তারপরেও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মত ঝুঁকি রয়েছে।

রোগ বালাই দেখা দিলে কীটনাশক বিক্রেতা বা ডিলারের কাছ থেকে পরামর্শ না নিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নির্দেশনা মানার জন্য তিনি কৃষকদের অনুরোধ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

উপকূলের ছয় লাখ কৃষক এবার লোকসান মাথায় নিয়ে বোরো আবাদে নেমেছে

আপডেট টাইম : ০২:৪৯:৪৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কৃষির প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে এ মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকদের লোকসান গুণতে হয়েছে। পাট, আলু, ও আমনের নেয্য দাম পায়নি। বোরো মৌসুমের আগেই বীজ, বিদ্যুৎ ও কৃষি শ্রমিকের মূল্য বেড়েছে। উপকরণ আবাদ ও মাড়াই দিয়ে একর প্রতি এবারের উৎপাদন খরচ ৫৫ হাজার টাকা। ২০১০ সালে একর প্রতি খরচ হয়েছে ৪২ হাজার টাকা। আমনের দর পতন। এসব কিছু ভেবেই লোকসান মাথায় নিয়ে বোরো আবাদে নেমেছে উপকুলের ছয় লাখ কৃষক।

মৌসুমের শুরুতেই বোরো বীজের মূল্য দ্বিগুণ, সেচ যন্ত্রের জন্য বিদ্যুতের মূল্য ইউনিট প্রতি ৩৫ পয়সা বৃদ্ধি এবং কৃষি শ্রমিকদের প্রতিদিনের পারিশ্রমিক বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১০-১১ সালে হেক্টর প্রতি উৎপাদন খরচ ছিল ৪২ হাজার ২শ’ ৭৯ টাকা। এবার উৎপাদন খরচ দাঁড়াবে ৫৫ হাজার টাকা। এমন ঝুঁকি নিয়ে উপকূলবর্তী এলাকার চার জেলায় ৬ লাখ চাষি ২ লাখ ২৮ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদে নেমেছে।

বিএডিসি (বীজ) এর সূত্র জানায়, উচ্চ ফলনশীল জাতের বীজের মূল্য কেজি প্রতি ৩৫ টাকার স্থলে ৫০-৫৮ টাকা, বিআর-৫০ বীজ কেজি প্রতি ৪৫ টাকার স্থলে ৬৫-৭০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। কর্পোরেশনের উপ-পরিচালক মোঃ লিয়াকত আলী এ প্রতিবেদককে জানান, সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাটে ১ হাজার ৭শ’ ৭০ মেট্রিক টন বীজ সরবরাহ করা হয়েছে। স্থানীয়ভাবে পর্যাপ্ত বীজ মজুদ রয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ আব্দুল লতিফ জানান, বীজ ও কৃষি শ্রমিক এর মূল্য বেড়েছে। সেচের ক্ষেত্রে বিদ্যুতের বর্ধিত মূল্য প্রভাব পড়বে কিনা এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি। তার দেয়া তথ্য মতে, এ পর্যন্ত ৮৩ শতাংশ বীজতলা সম্পন্ন হয়েছে। সবচেয়ে বেশি আবাদ হবে ডুমুরিয়া উপজেলায়। এখানে আবাদের পরিমাণ ২১ হাজার হেক্টর।

ডুমুরিয়া উপজেলায় শোভনা গ্রামের কৃষক মিলন মল্লিক জানান, কৃষি শ্রমিকের দৈনিক মুজুরি ৪শ’ টাকার পরিবর্তে এবার ৫শ’ টাকা। বৃষ্টিতে আমন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কৃষক কাঙ্খিত ফসল পায়নি। তিনি বলেন, জানুয়ারির মাঝামাঝি নাগাদ কৃষি শ্রমিকের মূল্য আরও বাড়তে পারে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক নিত্যরঞ্জন বিশ্বাস এর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বোরো আবাদের উৎপাদন খরচ বাড়বে। কৃষি শ্রমিকের মূল্য বেড়েছে। তিনি জানান, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও নড়াইল জেলায় ২ লাখ ২৮ হাজার ৩৮১ হেক্টর জমিতে এবারে আবাদ হচ্ছে।

৬ লাখ কৃষক পরিবার এর সাথে সংশ্লিষ্ট। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রো টেকনোলোজি ডিসিপ্লিনের সহযোগী অধ্যাপক ড. মতিউল ইসলাম জানিয়েছেন উৎপাদন খরচ বাড়বে। এ অঞ্চলে বোরো আবাদ লাভজনক নয়। তারপরেও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মত ঝুঁকি রয়েছে।

রোগ বালাই দেখা দিলে কীটনাশক বিক্রেতা বা ডিলারের কাছ থেকে পরামর্শ না নিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নির্দেশনা মানার জন্য তিনি কৃষকদের অনুরোধ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক।