হাওর বার্তা ডেস্কঃ মহাদেবপুরে ১০৮ কক্ষের মাটির বাড়ি এলাকার ঐতিহ্যের এক অন্যতম বিরল দৃষ্টান্ত। নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলায় ২১বিঘা জমির উপর ২২৫ফিট লম্বা ২০০ বান টিন দ্বারা নির্মিত দোতলা মাটির বাড়ি যার ১০৮টি কক্ষ রয়েছে। ১০৮ কক্ষের এই মাটির বাড়িটি দেখতে অনেকটা প্রাশাদের মতো। বিশাল এই বাড়িটির নির্মাতা সমশের আলী মন্ডল ও তাহের আলী মন্ডল।
এরা আপন দুই জন সহোদর ভাই । বাড়িটির দেখা মিলবে মহাদেবপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১১কিলোমিটার দক্ষিন-পূর্বে চেরাগপুর ইউনিয়নের আলিপুর গ্রামে। এছাড়াও নওগাঁ জেলা সদর থেকে মহাদেবপুর আসার পথে আন্তজেলা মহাসড়কের তের মাইল নামক মোড় থেকে উত্তর দিকে প্রায় ৫কিলোমিটার দূরে পাকা রাস্তার পার্শ্বে রাজপ্রাসাদের মত বাড়িটি অবস্থিত। আজ থেকে প্রায় ৩০ বছর আগে মাটির এই দোতলা বাড়িটি নির্মিত হয়েছে।
মাটি, পানি,খড় দিয়ে ভিজিয়ে কাদায় পরিণত করে সেই কাদা ২০-৩০ ইঞ্চি চওড়া করে দেয়াল তৈরী করা হয়। এ দেয়াল তৈরি করতে বেশ সময় লাগে। কারণ একসাথে বেশি উঁচু করে তৈরি করা যায় না। প্রতিবার এক থেকে দেড় ফুট উঁচু করে দেয়াল তৈরি করা হয়। কয়েকদিন পর শুকিয়ে গেলে আবার তার উপর একই উচ্চতার দেয়াল তৈরি করা হয়।
এভাবে দোতলা দেয়াল ১৮-২০ ফুট উঁচু বাড়িটি নির্মাণ কাজটি মহাযোগ্যের মতো নির্মিত হয়েছিল। সাভাবিক ভাবে মাটির দোতলা বাড়ি নির্মাণ করতে ৪ থেকে ৫মাস সময় লাগলে। তবে এই দোতলা বাড়িটি নির্মাণ করতে সময় লেগেছিল প্রায় এক বছর। ২১ বিঘা জমির উপর প্রতিষ্ঠিত ২২৫ফিট লম্বা বাড়িটি নির্মান করতে বাড়ির পিছনে একটি বিশাল পুকুর খনন করতে হয়েছে।
আর বাড়িটির ছাউনিতে টিন লেগেছে প্রায় ২০০ বান। কথিত আছে সেইসময় একই দোকান থেকে ২০০বান টিন ক্রয় করার জন্য দোকানদার একটি চায়না ফোনেক্স বাইসাইকেল উপহার দেন। ২০০বান টিন সংগ্রহ করতে দিকানী সময় নিয়েছিল ৭ দিন। বর্তমানে এক বার বাড়িটি পায়ে হেটে চার ধার চক্ররদিতে সময় লাগে ৫মিটিটেরও অধিক ।
১০৮ খোপের এই বিশাল বাড়িটির প্রবেশের দরজা ১১টি, তবে প্রতিটি ঘরে রয়েছে একাধিক দরজা। কোন কোন কক্ষে ৪ থেকে ৫টি দরজা রয়েছে। দোতলায় উঠার শিড়িঁ রয়েছে ১৩টি । তবে যে কোন একটি দিয়ে যাওয়া যাবে ১০৮টি কক্ষে। বিশাল আকারের এই বাড়িটি ৩ ভাগে বিভক্ত হয়ে এখন ৩৫ থেকে ৪০জন লোক বসবাস করে। সবমিলে বসবাসের জন্য ৩০ থেকে ৩৫টি কক্ষ ব্যবহার হয় বলে জানাগেছে। আলিপুর গ্রামের সমশের আলী মন্ডল ও তাহের আলী মন্ডল নামের সহোদর দুই ভাই শখের বসে তৈরি করেছিলেন এই বাড়িটি।
বর্তমানে মাটির ঘরের স্থান দখল করে নিয়েছে ইট, সিমেন্ট, বালি ও রডের তৈরি পাকা ঘরগুলো। মাটির ঘরগুলো বন্যা, ঝড়, জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দূযোর্গে বিশেষ ক্ষতি সাধন হয় বলেই মানুষ ইট সিমেন্টের ঘর-বাড়ি নির্মাণে আগ্রহী হচ্ছেন । তবে সরকারী বা বেসরকারী ভাবে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে পারলে বাড়িটি হয়ে উঠতে পারে গ্রাম বাংলার প্রাচিন ইতিহাস ঐতিহ্যের ধারক বাহক হিসাবে পর্যটকদের জন্য দৃষ্টিনন্দন দর্শনীয় স্থান।