হাওর বার্তা ডেস্কঃ কোমরের নিচে পায়ের কোনও অস্তিত্ব নেই। যা আছে তা হুবহু মাছের লেজের মতো দেখতে।
ফ্লোরিডা, পেরুর পর কলকাতা। ফের মাতৃজঠরে জন্ম নিল মৎস্যকন্যার মতো মাছ-মানুষ। বিরলের মধ্যে বিরলতম। এই ধরনের শিশুরা বেশিক্ষণ বাঁচে না। এই শিশুটি অবশ্য চারঘণ্টা বিশ মিনিট বেঁচেছে। হাজরার চিত্তরঞ্জন সেবাসদনে গত বুধবার বেলা দশটা দশ মিনিটে জন্ম নেয় এই বিস্ময়-শিশু। তৈরি হয় এক ইতিহাস। ‘মারেমড বেবি’-র অভিধানে ঢুকে পড়ে কলকাতা।
শিশুটিকে দেখে চিকিৎসক-নার্স সবাই চমকে যান।
রূপকথার মৎস্যকন্যা ওটির সবুজ চাদরে হাত-পা ছুড়ছে। দু’টি পা জেড়া লেগে। পায়ের পাতাদু’টি মাছের পাখনার মতো ডানা মেলেছে। অনেকেরই বিশ্বাস হচ্ছিল না। চিকিৎসকরা শিশুটিকে এসএনসিইউতে পাঠান। আপ্রাণ চেষ্টা করেন বাঁচানোর। সেখানেই দুপুর আড়াইটে নাগাদ মৃত্যু হয় ‘মারমেড বেবি’-র।
মা মুসকুরা বিবি। বাবা বেলাল হোসেন। মেটিয়াবুরুজের রাজাবাগান থানা এলাকার কারবালার বাসিন্দা মুসকুরা গত মঙ্গলবার চিত্তরঞ্জন সেবাসদনে ভর্তি হন। বেলাল জানিয়েছেন, স্ত্রীর মধ্যে কোনও অস্বাভাবিকতা ছিল না। ইউএসজিতেও কিছু ধরা পড়েনি। তবু কেন এমন হল বুঝতে পারছি না। গত বুধবারই মুসকুরার সন্তানকে সমাধিস্থ করা হয়েছে। সেবাসদনের শিশু বিভাগের প্রধান ডা. সুদীপ সাহা জানিয়েছেন, শিশুটি সিরনোমেলিয়া বা মারমেড সিনড্রোমে আক্রান্ত ছিল। এক লাখ শিশু জন্মালে একজনের এমন রোগ হয়। বিশ্বে এখনও পর্যন্ত পাঁচজন শিশু এমন শরীরী গঠন নিয়ে জন্মেছে।
অ্যাম্বিলিক্যাল কর্ড দু’টির বদলে একটি ধমনি তৈরি করলে মায়ের শরীর থেকে ভ্রূণ যথেষ্ট রক্ত ও পুষ্টি পায় না। ফলে দু’টো পায়ের বদলে শরীরের নিম্নাঙ্গ মাছের আকার নেয়। অনেকগুলি কারণের মধ্যে এটা একটা। এমনটাই জানালেন রাজ্যে স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. দেবাশিস ভট্টাচার্য। এই ধরনের শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর কিডনি ও মূত্রথলির সমস্যায় ভুগতে থাকে। মুসকুরার সন্তানের ক্ষেত্রেও এমন নানা সমস্যা ছিল। সুস্পষ্ট রেচনাঙ্গ বা জননাঙ্গও ছিল না। ফলে অনেক চেষ্টাতেও মারমেড বেবি-কে সাড়ে চার ঘণ্টার বেশি বাঁচানো যায়নি। হলে হয়তো ফ্লোরিডার মতো কলকাতাও মৎস্যকন্যার রূপকথা লিখত।
কেন হয় তার ব্যাখ্যা অবশ্য মিলল। চিকিৎসকরা জানালেন, অ্যাম্বিলক্যাল কর্ড যখন দু’টি ধমনি তৈরি করতে ব্যর্থ হয় তখনই এই জটিলতা তৈরি হয় ভ্রূণের মধ্যে। আসলে একটা ধমনি হওয়ায় মায়ের শরীর থেকে ভ্রূণের মধ্যে যথেষ্ট রক্ত সংবাহিত হয় না। একমুখী রক্তপ্রবাহের জন্য ভ্রূণ যথেষ্ট পুষ্টি পায় না। তার জেরেই মাছের লেজের মতো হয় যায় শরীরের নিম্নভাগ। এই শিশুরা জন্মের পর থেকেই কিডনি ও মূত্রথলির সমস্যায় ভুগতে থাকে। বেশিরভাগ সুস্পষ্ট কোনও রেচনাঙ্গ বা জননাঙ্গ থাকে না। ফলে, শিশুর লিঙ্গ নির্ধারনেও সমস্যা হয়। সেবাসদনের শিশুটিরও লিঙ্গ নির্ধারণ করা যায়নি। গবেষণা বলছে, গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরে অত্যধিক ওষুধ প্রবেশ করলে, ভিটামিনের অভাব হলে কিংবা মা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে এই সমস্যা তৈরি হতে পারে। এই ব্যাখ্যা চূড়ান্ত নয়।