হাওর বার্তা ডেস্কঃ পৃথিবীর বিভিন্ন হিসাবের যোগফলে কয়েক বছর ধরে এটা স্পষ্টভাবেই দেখা গেছে, বাংলাদেশের উন্নয়নের সূচকগুলো এমনভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, শিগগিরই বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশে এখন আর কেউ না খেয়ে মরে না। এ দেশটি পৃথিবীর সবাইকে অবাক করে দিয়ে ক্রমে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের কৃষি খাত, প্রবাসী আয়ের খাত এবং পোশাক শিল্পের আয়ের খাত দেশের পুরো চেহারা বদলে দিচ্ছে।
প্রতিটি দেশের উন্নয়ন সে দেশের রাজনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত। বাংলাদেশেই এর ব্যতিক্রম হয়েছে। রাজনৈতিক সংস্কৃতি উন্নত না হলেও বাংলাদেশের অর্থনীতি উন্নতির দিকে ধাবিত হয়েছে। উন্নয়নের সবচেয়ে প্রধান খাতটি কৃষি খাত। কৃষি বিপ্লবে ছেয়ে গেছে বাংলাদেশ। আর কৃষি খাত থেকে যখন ভাত-ডালের বন্দোবস্ত হয়েছে, তখন সামনে এগিয়ে এসেছে আরও একটি খাত, তা হলো প্রবাসী আয়। দরিদ্র মানুষের বিদেশে প্রবাসী হিসেবে সামান্য আয়কে পুঁজি করে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি পোশাক শ্রমিকের ঘামঝরা শ্রমের ফসল আমাদের পোশাক শিল্প উন্নয়নের ধারাকে আরও বেগবান করেছে।
বাংলাদেশ যে হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে, অর্থনীতি যেভাবে এগিয়েছে, দেশ যেভাবে বিশ্বমন্দা ও রাজনৈতিক অস্থিরতা মোকাবিলা করেছে, তার দ্বারাই বোঝা যায়, এ দেশের মানুষ অপরিসীম ক্ষমতার অধিকারী। অপরিসীম তাদের ধৈর্য, সৃজনশীলতা এবং সংগ্রাম করার মনোবল ও উদ্যম। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবেই, কেউ আমাদের আটকাতে পারবে না। বাংলাদেশকে নিয়ে আমরা স্বপ্ন দেখি। ২০২১ সালের মধ্যে এ দেশ একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে।
সত্তর দশকের ‘ষড়যন্ত্রমূলক’ তলাবিহীন ঝুড়ি, নব্বই দশকের তুলনামূলক অচেনা বাংলাদেশ এখন বিশ্বব্যাপী এক বিস্ময়ের নাম। উন্নয়ন নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করা মানুষের কপালে ভাঁজ ফেলে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও বাংলাদেশ আজ প্রায় মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে। সম্ভাবনার দিগন্তে পতপত করে উড়ছে পতাকা। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জঙ্গি-সন্ত্রাস-জটিলতার মধ্যেই পাল্টে যাচ্ছে এ দেশের চিত্র।
চার লেন মহাসড়ক, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পানগাঁও নৌ-টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প, গ্যাস সংকট নিরসনে এলএনজি টার্মিনাল প্রকল্প, মেট্রোরেল প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্প, পায়রা সমুদ্রবন্দর, রাজধানীর চারপাশে স্যুয়ারেজ ট্যানেল নির্মাণের মতো অবকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে। সম্প্রতি উন্নয়নের এ কর্মযজ্ঞে যোগ হয়েছে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প এবং দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার-ঘুনধুম প্রকল্প। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের কাজ চলছে। এরই মধ্যে কয়েকটি অঞ্চলের কাজের উদ্বোধনও করা হয়েছে। চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনও বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ নিরাপদ এবং পণ্য পরিবহন ও খালাস সহজীকরণ করতে নেয়া আরও কিছু অবকাঠামোর সংস্কার হচ্ছে। একই সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি খাতেও এগিয়েছে দেশ। ১৬ কোটি মানুষের এ দেশে কয়েক বছরে সক্রিয় মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ কোটি, আর ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সম্ভাবনার নবদিগন্তে সংখ্যা সাড়ে ৫ কোটি। দেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ মহাকাশে উৎক্ষেপণের কাজ এগিয়ে চলছে- আগামী বছর যা উৎক্ষেপণ করা হবে। এর মাধ্যমে দেশের সব মানুষকে যোগাযোগ ও সম্প্রচার সুবিধার আওতায় আনার পাশাপাশি দুর্যোগপ্রবণ বাংলাদেশে নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ সেবা নিশ্চিত হবে। এমনকি স্যাটেলাইটের বর্ধিত ফ্রিকোয়েন্সি ভাড়া দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রাও উপার্জন করা যাবে।
সম্প্রতি আবারও বাংলাদেশ সম্পর্কে আশার কথা শুনিয়েছে আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিএমআই রিসার্চ। এ গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, বাংলাদেশসহ ১০টি দেশ আগামী ১০ বছরে বিশ্বের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নতুন চালিকাশক্তি হয়ে উঠবে। গবেষণা অনুযায়ী, বাকি ৯টি দেশ হচ্ছে মিসর, ইথিওপিয়া, ইন্দোনেশিয়া, কেনিয়া, মিয়ানমার, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, ফিলিপাইনস ও ভিয়েতনাম।
বিএমআই রিসার্চ মনে করছে, ২০২৫ সালের মধ্যে এ ১০টি দেশ সম্মিলিতভাবে বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ৪ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন অর্থাৎ ৪ লাখ ৩ হাজার কোটি ডলার যোগ করবে, যা বিনিয়োগকারীদের বড় সুযোগ এনে দেবে। উল্লিখিত অর্থ জাপানের বর্তমান অর্থনীতির সমান।
স্মর্তব্য, ফিচ রেটিংস বিশ্বের সবচেয়ে বড় তিন ঋণমান কোম্পানির একটি। নিউইয়র্কভিত্তিক এ কোম্পানির সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিএমআই রিসার্চ। তারা ২০০ দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও ঝুঁঁকি এবং ২০ ধরনের শিল্প নিয়ে নিয়মিত গবেষণা করে থাকে। ৬ জুলাই বিএমআই রিসার্চের ‘টেন ইমার্জিং মার্কেট অব দ্য ফিউচার’ নামের একটি রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার যে সম্ভাবনা বাংলাদেশের সামনে হাতছানি দিচ্ছে, তাকে কাজে লাগাতে জঙ্গিবাদের শেকড় উৎপাটন করতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে সম্ভাবনাময় দেশের বদলে ব্যর্থ রাষ্ট্রের অভিশাপ যে জাতির জন্য অনিবার্য হয়ে উঠবে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। এ বিপদ ঠেকাতে পেশাদারিত্বের মনোভাব দিয়ে জঙ্গিবাদ দমনের প্রয়াস চালাতে হবে। বাংলাদেশকে এ অঞ্চলের অন্যতম উৎপাদন কেন্দ্রে পরিণত করতে চাইলে আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নে হতে হবে আপসহীন।
বাংলাদেশের মানুষ কয়েকবার এভারেস্ট বিজয় করেছে, শান্তি মিশনে বিশ্বে কত সুনাম কুড়িয়েছে, বাংলাদেশের ক্রীড়াজগৎ, বিশেষ করে ক্রিকেট কত উন্নত হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, এ সবকিছুই সম্ভব বাংলাদেশের জনগণের দ্বারা। এ জনগণ দিয়ে সবকিছুই সম্ভব। হ
ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রাইম অ্যাসেট গ্রুপ এবং তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক কৃষক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটি