ঢাকা ০৬:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গ্রাম বাংলার জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী খেলা লাঠিখেলা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:১৫:০৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর ২০১৭
  • ৩৮২ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ গ্রাম বাংলার জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী খেলা লাঠিখেলা। লাঠি হাতে বর্ণিল সেজে লাঠির নৈপুণ্যতা দেখায় লাঠিয়াল। লাঠি খেলায় খেলোয়ারদের লাঠিয়াল বলা হয়। এক সময় লাঠিয়ালদের অনুষ্ঠিত দুই লাঠি, চার লাঠি, শরকি, তলোয়ার ও ছুরি খেলা দেখতে খেলাস্থলে জমায়েত হতো হাজার হাজার মানুষ। এ উপজেলার বিখ্যাত দর্শক প্রিয় খেলা ছিল লাঠি খেলা।

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী এ লাঠি খেলা। খেলোয়াররা আগে যেমন নবান্ন উৎসব, ঈদ, মহররম ও পূজাসহ বিভিন্ন ধর্মানুষ্ঠান এলেই গ্রামে গ্রামে ঘুরে লাঠি খেলা দেখাতো এখন আর সচরাচর তেমনটি দেখা যায় না। বর্তমান সময়ে গ্রামে গ্রামে আয়োজিত বিভিন্ন মেলায় আগের মতো আর নিয়ে আসা হয় না লাঠি খেলার দলকে।

জানা যায়, উপজেলার রাজিবপুর ও উচাখিলা ইউনিয়নের চরাঞ্চলে পাড়ায় পাড়ায় লাঠি খেলার দল ছিল। এখন লাঠি খেলার সঙ্গে জড়িত অনেকেই জীবন-জীবিকার তাগিদে খেলা ছেড়ে অন্য পেশায় যোগ দিতে বাধ্য হয়েছেন। এক সময় বিভিন্ন মেলা ও গ্রাম্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে খুবই কদর ছিল এই লাঠি খেলার। কিন্তু কালের পরিবর্তনে এ খেলা আজ বিলুপ্ত হতে চলেছে। এক সময় দম ফেলার ফুসরত ছিল না লাঠি খেলার খেলোয়াড়দের। লাঠি খেলার সঙ্গে জড়িত পুরাতন শক্তিশালী খেলোয়াড়রা আজ অনেকেই নেই। তবুও ওস্তাদদের দেয়া শিক্ষা নিয়ে কিছু শিষ্য আজও ধরে রেখেছেন এই খেলা।

লাঠি খেলার অসাধারণ ইতিহাস আছে। বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে লাঠি খেলা খেলতে হয়। এই লাঠি খেলার মধ্যে দুই লাঠি, চার লাঠি, শরকি খেলা, তলোয়াড় খেলা, ছুরি খেলাসহ আরো অনেক খেলা রয়েছে। ঐতিহাসিক বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্রের ইতিহাস লাঠির নৈপুণ্যতায় বেশ ভালোভাবে উপস্থাপন করেন লাঠিয়ালরা।

উপজেলার উজানচর গ্রামের লাঠি খেলার সর্দার হাসিম উদ্দিন জানান, ‘জীবিকার তাগিদে লাঠি খেলার অনেক খেলোয়াড় আজ অন্য পেশায় চলে গেছে। কিছু লোক শখের বসে কিংবা বাপদার ঐতিহ্য রক্ষার্থে এখনো এটি চালু রেখেছি। এটি ঠিকিয়ে রাখার জন্যে সরকারের সহযোগিতা চাই।’

রাজিবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোদাব্বিরুল ইসলাম বলেন, সরকারি কিংবা কোনো ব্যক্তি বা মহল যদি এই খেলাটি রক্ষার্থে পৃষ্ঠপোষকতায় এগিয়ে আসেন তাহলে গ্রামবাংলার এই ঐতিহ্য ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য যুগ যুগ ঠিকে থাকবে।

ঈশ্বরগঞ্জে বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদ আব্দুল হালিম বলেন, লাঠি খেলা গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী একটি খেলা। ফুটবলের মতো এটা এ উপজেলায় এক সময় জনপ্রিয় ছিল। পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আজ এ খেলাটি বিলুপ্তের পথে। আমার বিশেষ অনুরোধ থাকবে সরকারের প্রতি গ্রামবাংলার অন্যান্য ঐতিহ্য যেভাবে রক্ষার চেষ্টা চলছে লাঠিখেলাটিও যেন সেভাবে রক্ষা করা হয়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

গ্রাম বাংলার জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী খেলা লাঠিখেলা

আপডেট টাইম : ০৪:১৫:০৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ গ্রাম বাংলার জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী খেলা লাঠিখেলা। লাঠি হাতে বর্ণিল সেজে লাঠির নৈপুণ্যতা দেখায় লাঠিয়াল। লাঠি খেলায় খেলোয়ারদের লাঠিয়াল বলা হয়। এক সময় লাঠিয়ালদের অনুষ্ঠিত দুই লাঠি, চার লাঠি, শরকি, তলোয়ার ও ছুরি খেলা দেখতে খেলাস্থলে জমায়েত হতো হাজার হাজার মানুষ। এ উপজেলার বিখ্যাত দর্শক প্রিয় খেলা ছিল লাঠি খেলা।

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী এ লাঠি খেলা। খেলোয়াররা আগে যেমন নবান্ন উৎসব, ঈদ, মহররম ও পূজাসহ বিভিন্ন ধর্মানুষ্ঠান এলেই গ্রামে গ্রামে ঘুরে লাঠি খেলা দেখাতো এখন আর সচরাচর তেমনটি দেখা যায় না। বর্তমান সময়ে গ্রামে গ্রামে আয়োজিত বিভিন্ন মেলায় আগের মতো আর নিয়ে আসা হয় না লাঠি খেলার দলকে।

জানা যায়, উপজেলার রাজিবপুর ও উচাখিলা ইউনিয়নের চরাঞ্চলে পাড়ায় পাড়ায় লাঠি খেলার দল ছিল। এখন লাঠি খেলার সঙ্গে জড়িত অনেকেই জীবন-জীবিকার তাগিদে খেলা ছেড়ে অন্য পেশায় যোগ দিতে বাধ্য হয়েছেন। এক সময় বিভিন্ন মেলা ও গ্রাম্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে খুবই কদর ছিল এই লাঠি খেলার। কিন্তু কালের পরিবর্তনে এ খেলা আজ বিলুপ্ত হতে চলেছে। এক সময় দম ফেলার ফুসরত ছিল না লাঠি খেলার খেলোয়াড়দের। লাঠি খেলার সঙ্গে জড়িত পুরাতন শক্তিশালী খেলোয়াড়রা আজ অনেকেই নেই। তবুও ওস্তাদদের দেয়া শিক্ষা নিয়ে কিছু শিষ্য আজও ধরে রেখেছেন এই খেলা।

লাঠি খেলার অসাধারণ ইতিহাস আছে। বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে লাঠি খেলা খেলতে হয়। এই লাঠি খেলার মধ্যে দুই লাঠি, চার লাঠি, শরকি খেলা, তলোয়াড় খেলা, ছুরি খেলাসহ আরো অনেক খেলা রয়েছে। ঐতিহাসিক বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্রের ইতিহাস লাঠির নৈপুণ্যতায় বেশ ভালোভাবে উপস্থাপন করেন লাঠিয়ালরা।

উপজেলার উজানচর গ্রামের লাঠি খেলার সর্দার হাসিম উদ্দিন জানান, ‘জীবিকার তাগিদে লাঠি খেলার অনেক খেলোয়াড় আজ অন্য পেশায় চলে গেছে। কিছু লোক শখের বসে কিংবা বাপদার ঐতিহ্য রক্ষার্থে এখনো এটি চালু রেখেছি। এটি ঠিকিয়ে রাখার জন্যে সরকারের সহযোগিতা চাই।’

রাজিবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোদাব্বিরুল ইসলাম বলেন, সরকারি কিংবা কোনো ব্যক্তি বা মহল যদি এই খেলাটি রক্ষার্থে পৃষ্ঠপোষকতায় এগিয়ে আসেন তাহলে গ্রামবাংলার এই ঐতিহ্য ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য যুগ যুগ ঠিকে থাকবে।

ঈশ্বরগঞ্জে বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদ আব্দুল হালিম বলেন, লাঠি খেলা গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী একটি খেলা। ফুটবলের মতো এটা এ উপজেলায় এক সময় জনপ্রিয় ছিল। পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আজ এ খেলাটি বিলুপ্তের পথে। আমার বিশেষ অনুরোধ থাকবে সরকারের প্রতি গ্রামবাংলার অন্যান্য ঐতিহ্য যেভাবে রক্ষার চেষ্টা চলছে লাঠিখেলাটিও যেন সেভাবে রক্ষা করা হয়।