ঢাকা ১০:০৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আওয়ামী লীগে বর্তমান এমপিতেই আস্থা কোন্দলই বড় বাধা বিএনপির

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৩:৪০:১৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০১৭
  • ২৯১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজবাড়ী-২ আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি জিল্লুল হাকিম মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন। তবে মনোনয়ন পেতে তিন কেন্দ্রীয় নেতাও বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে কোন্দল আর বিভেদে জর্জরিত বিএনপিতে মনোনয়ন পেতে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন তিনজন। শেষ পর্যন্ত জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ হারুন ও সাবেক এমপি নাসিরুল হক সাবুর মধ্যে যে কোনো একজন মনোনয়ন পাবেন- এমন ধারণা স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে। বর্তমানে এ আসনে আওয়ামী লীগ আর বিনএনপির আধিক্য। অতীতে জাসদ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামী থেকেও এমপি নির্বাচিত হলেও এখনো তাদের সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পার্টি অফিসে সীমাবদ্ধ।

রাজবাড়ী জেলার পাংশা-বালিয়াকান্দি-কালুখালী উপজেলা নিয়ে রাজবাড়ী-২ আসন। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৩৬ হাজার ৩৯২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ২১ হাজার ২৭৯ জন এবং নারী ভোটারের সংখ্যা ২ লাখ ১৫ হাজার ১১৩ জন। সাবেক সিইসি আবু হেনা, সাহিত্যিক কাজী মোতাহার হোসেন, বিখ্যাত চিত্রশিল্পী রশিদ চৌধুরী, বিষাদ সিন্ধু রচয়িতা মীর মশাররফ হোসেন, ইয়াকুব আলী চৌধুরীসহ বহু গুণী ব্যক্তি এ এলাকার কৃতী সন্তান। এ সংসদীয় আসনে কোনো শিল্পকারখানা নেই। ফলে তিন উপজেলার মানুষের প্রধান জীবিকা কৃষি। পেঁয়াজ ও পাট এ এলাকার প্রধান অর্থকরি ফসল।

১৯৭৩ সালের প্রথম সংসদ নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের খোন্দকার নুরুল ইসলাম। ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে জাসদের আবদুল মতিন মিয়া, ১৯৮৬ সালে তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে নাজির হোসেন চৌধুরী, ১৯৮৮ সালের চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে জাসদের মোসলেম উদ্দিন মোমেন এমপি নির্বাচিত হন। নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর ৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ডা. একেএম আসজাদ। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বর্তমান এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিল্লুল হাকিমের বিজয়ের মাধ্যমে দীর্ঘদিন পর আসনটি পুনরুদ্ধার করে আওয়ামী লীগ। ২০০১ সালের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো বিএনপির কোনো প্রার্থী জয়লাভ করেন। এ নির্বাচনে নাসিরুল হক সাবু জয়ী হন। পরাজিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী জিল্লুল হাকিম। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করেন জিল্লুল হাকিম। ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আবারো নির্বাচিত হন জিল্লুল হাকিম।

আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি জিল্লুল হাকিম এবারো মনোনয়ন চাইবেন। এ ছাড়া মনোনয়নের জন্য জোর চেষ্টা চালাবেন তিন কেন্দ্রীয় নেতা। এই তিন কেন্দ্রীয় নেতা হলেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা. ইকবাল আর্সনাল, এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ সোহেল রানা টিপু এবং কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নুরে আলম সিদ্দিকী হক ।

বর্তমান এমপি জিল্লুল হাকিম জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিন তিনবারের নির্বাচিত এমপি তিনি। নিজ আসনে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য যথেষ্ট সুনাম আছে। ছাত্র জীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। মুক্তিযুদ্ধের সময় ছিলেন যুদ্ধকালীন কমান্ডার। বর্তমানে দলে প্রকাশ্য কোনো কোন্দল বা গ্রুপিং নেই। কিন্তু তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে পাওয়া না পাওয়ার ক্ষোভ আছে। তৃণমূল নেতাকর্মীরা বলছেন, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর যারা আশায় বুক বেঁধেছিল তাদের সে আশা ভেস্তে গেছে। আওয়ামী লীগের দুর্দিনে যারা রাজপথে ছিলেন, প্রতিপক্ষের অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন, সেসব ত্যাগী পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করা হয়নি।

এমপি জিল্লুল হাকিম হাওর বার্তাকে বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বড় দল। সবাইকে সমানভাবে সুযোগ দেয়া সম্ভব নয়। আর সাধারণ নেতাকর্মীদের মাঝে কোনো ক্ষোভ নেই। যারা রাজনীতি নিয়ে ব্যবসা করেন তাদের মধ্যে এই ক্ষোভ। এলাকার উন্নয়নে বিশ্বাস করি। সে জন্য এই গ্রামীণ এলাকার রাস্তা, ব্রিজ, বিদ্যুৎ এগুলো গ্রামে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করেছি। আমার নির্বাচনী এলাকার সাধারণ মানুষের সুখে-দুঃখে সব সময় পাশে থাকি। অপর প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, নির্বাচন এলেই এ এলাকায় ঢাকা থাকা কিছু নেতার ছবি পোস্টার গাছে গাছে দেখা যায়। তাদের সাধারণ মানুষের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে তিনি জানান, দলের জন্য কাজ করি। আমি শুধু এমপি না জেলার সভাপতিও। তাই দলের যে কোনো সিদ্ধান্ত মেনে নেব। তবে মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আমি আশাবাদী।

মনোনয়নপ্রত্যাশী ডা. ইকবাল আর্সনাল পেশাগত কারণে ঢাকায় অবস্থান করেন। তিনি স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি। দীর্ঘদিন ধরেই এলাকায় পোস্টার, ব্যানার দিয়ে আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস দিয়েছেন। তিনিও আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে।

আওয়ামী লীগের আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও স্থানীয় দৈনিক জনতার আদালত পত্রিকার সম্পাদক নুরে আলম সিদ্দিকী হক। অনেকদিন ধরেই মাঠে তিনি। ২০১৪ সালে কালুখালী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সামান্য ভোটে পরাজিত হন। তবে সে সময় তিনি ভোটারদের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছিলেন। আগামী সংসদ নির্বাচনে তিনিও মনোনয়ন চাইবেন। ব্যানার, ফেস্টুন দিয়ে ভোটারদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। নুরে আলম সিদ্দিকী হক বলেন, আমি দলের দুর্দিনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একজন সৈনিক হিসেবে কাজ করেছি। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সুখে-দুঃখে পাশে থেকেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন বাস্তবায়নের জন্য সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। তাই আমি সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চাই। সে জন্য আগামী নির্বাচনে দলের কাছে মনোনয়ন চাইব।

আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী তরুণ নেতা শেখ সোহেল রানা টিপু। তিনি স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক। তার আগে ছিলেন ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি। ওয়ান-ইলেভেনের সময় দলের দুর্দিনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন তিনি।

শেখ সোহেল রানা টিপু জানান, ছাত্রজীবন থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে রাজনীতি করছি। দলের দুর্দিনে পাশে থেকেছি। দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষের পাশে আছি। দলের নীতি আদর্শ থেকে কখনো বিচ্যুত হইনি। সব সময় নেত্রীর নির্দেশ মেনে চলেছি। অবশ্যই আমি আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন চাইব।

বিএনপির জন্য আসনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিগত ১০টি সংসদ নির্বাচনের মধ্যে ১৫ ফেব্রুয়ারির ‘বিতর্কিত’ নির্বাচন বাদ দিলে মাত্র একবার এ আসন থেকে জয়লাভ করতে পেরেছে তারা। রাজবাড়ীতে বিএনপি দলীয় কোন্দলে জর্জরিত। স্পষ্ট দুই ভাগে বিভক্ত জেলা বিএনপি। দীর্ঘদিন ধরে খৈয়ম গ্রুপ এবং হারুন গ্রুপ পৃথক পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করে আসছে। সাবেক এমপি নাসিরুল হক সাবুর সঙ্গে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদের দ্বন্দ্বটাও দীর্ঘদিনের। বিএনপির মধ্যেকার কোন্দল নিরসন না হলে এ আসন পুনরুদ্ধার করা কঠিন হয়ে পড়বে। মনোনয়নপ্রত্যাশী নাসিরুল হক সাবু জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি। ২০০১ সালের নির্বাচনে চারদলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েছিলেন। এবারো মনোনয়নের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাবেন। যদিও পাংশায় বিএনপির কার্যক্রম অনেকটাই ঢিলেঢালাভাবে চলছে। কর্মসূচির বিষয়টি আমলে নিতে চাইছেন না তৃণমূলের নেতারা। তারা মনে করছেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিএনপিই জিতবে এখানে। তবে তার আগে দলীয় কোন্দল অবশ্যই নিরসন করতে হবে।

মনোনয়নের অন্যতম দাবিদার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ। তরুণ এই নেতা ইতোমধ্যেই নেতাকর্মীদের মন জয় করে নিতে সক্ষম হয়েছেন। অনেক আগে থেকেই শুরু করেছেন গণসংযোগ। ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান বা যে কোনো উপলক্ষে সব শ্রেণি পেশার মানুষের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে তিনিও বেশ আশাবাদী।

হারুন অর রশীদ হাওর বার্তাকে বলেন, নির্বাচনে গেলে আর আমাকে মনোনয়ন দিলে অবশ্যই আমি ভালো কিছু উপহার দেব। আমি এগিয়ে যাচ্ছি। বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা আমি তৃণমূলের নেতাকর্মীদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। রাজবাড়ী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর আমি ইমানি দায়িত্ব পালন করেছি। কেন্দ্রের নির্দেশ শতভাগ পালন করেছি। তৃণমূল নেতাকর্মীদের সেন্টিমেন্টকে প্রাধান্য দিয়ে সেভাবে চলার চেষ্টা করেছি। আমার কোনো দুর্বলতা নেই। আমি মনোনয়ন পাব বলেই আশা করি। তারপরও অন্য কাউকে যদি দল মনোনয়ন দেয় তাহলে ধানের শীষ প্রতীককে বিজয়ী করার জন্য আমি তার পক্ষে কাজ করব।

নাসিরুল হক সাবু। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতিও। মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে তিনিও আশাবাদী।

নাসিরুল হক সাবু হাওর বার্তাকে জানান, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আমি মাঠে আছি। প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাব বলে আশা রাখছি। অন্য প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি বড় দল এখানে মান-অভিমান থাকতেই পারে নেতাকর্মীদের। দল নির্বাচনে গেলে এসব থাকবে না।

কালুখালী উপজেলা বিএনপির সভাপতি লায়ন আব্দুর রাজ্জাক ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। ইতোমধ্যে পোস্টার-ব্যানার করে শুভেচ্ছা জানিয়ে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। শোনা যায় মনোনয়ন চাইবেন তিনিও।

মানবকণ্ঠ

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

আওয়ামী লীগে বর্তমান এমপিতেই আস্থা কোন্দলই বড় বাধা বিএনপির

আপডেট টাইম : ০৩:৪০:১৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজবাড়ী-২ আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি জিল্লুল হাকিম মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন। তবে মনোনয়ন পেতে তিন কেন্দ্রীয় নেতাও বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে কোন্দল আর বিভেদে জর্জরিত বিএনপিতে মনোনয়ন পেতে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন তিনজন। শেষ পর্যন্ত জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ হারুন ও সাবেক এমপি নাসিরুল হক সাবুর মধ্যে যে কোনো একজন মনোনয়ন পাবেন- এমন ধারণা স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে। বর্তমানে এ আসনে আওয়ামী লীগ আর বিনএনপির আধিক্য। অতীতে জাসদ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামী থেকেও এমপি নির্বাচিত হলেও এখনো তাদের সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পার্টি অফিসে সীমাবদ্ধ।

রাজবাড়ী জেলার পাংশা-বালিয়াকান্দি-কালুখালী উপজেলা নিয়ে রাজবাড়ী-২ আসন। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৩৬ হাজার ৩৯২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ২১ হাজার ২৭৯ জন এবং নারী ভোটারের সংখ্যা ২ লাখ ১৫ হাজার ১১৩ জন। সাবেক সিইসি আবু হেনা, সাহিত্যিক কাজী মোতাহার হোসেন, বিখ্যাত চিত্রশিল্পী রশিদ চৌধুরী, বিষাদ সিন্ধু রচয়িতা মীর মশাররফ হোসেন, ইয়াকুব আলী চৌধুরীসহ বহু গুণী ব্যক্তি এ এলাকার কৃতী সন্তান। এ সংসদীয় আসনে কোনো শিল্পকারখানা নেই। ফলে তিন উপজেলার মানুষের প্রধান জীবিকা কৃষি। পেঁয়াজ ও পাট এ এলাকার প্রধান অর্থকরি ফসল।

১৯৭৩ সালের প্রথম সংসদ নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের খোন্দকার নুরুল ইসলাম। ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে জাসদের আবদুল মতিন মিয়া, ১৯৮৬ সালে তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে নাজির হোসেন চৌধুরী, ১৯৮৮ সালের চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে জাসদের মোসলেম উদ্দিন মোমেন এমপি নির্বাচিত হন। নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর ৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী ডা. একেএম আসজাদ। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বর্তমান এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিল্লুল হাকিমের বিজয়ের মাধ্যমে দীর্ঘদিন পর আসনটি পুনরুদ্ধার করে আওয়ামী লীগ। ২০০১ সালের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো বিএনপির কোনো প্রার্থী জয়লাভ করেন। এ নির্বাচনে নাসিরুল হক সাবু জয়ী হন। পরাজিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী জিল্লুল হাকিম। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করেন জিল্লুল হাকিম। ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আবারো নির্বাচিত হন জিল্লুল হাকিম।

আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি জিল্লুল হাকিম এবারো মনোনয়ন চাইবেন। এ ছাড়া মনোনয়নের জন্য জোর চেষ্টা চালাবেন তিন কেন্দ্রীয় নেতা। এই তিন কেন্দ্রীয় নেতা হলেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা. ইকবাল আর্সনাল, এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ সোহেল রানা টিপু এবং কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নুরে আলম সিদ্দিকী হক ।

বর্তমান এমপি জিল্লুল হাকিম জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিন তিনবারের নির্বাচিত এমপি তিনি। নিজ আসনে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য যথেষ্ট সুনাম আছে। ছাত্র জীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। মুক্তিযুদ্ধের সময় ছিলেন যুদ্ধকালীন কমান্ডার। বর্তমানে দলে প্রকাশ্য কোনো কোন্দল বা গ্রুপিং নেই। কিন্তু তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে পাওয়া না পাওয়ার ক্ষোভ আছে। তৃণমূল নেতাকর্মীরা বলছেন, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর যারা আশায় বুক বেঁধেছিল তাদের সে আশা ভেস্তে গেছে। আওয়ামী লীগের দুর্দিনে যারা রাজপথে ছিলেন, প্রতিপক্ষের অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন, সেসব ত্যাগী পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করা হয়নি।

এমপি জিল্লুল হাকিম হাওর বার্তাকে বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বড় দল। সবাইকে সমানভাবে সুযোগ দেয়া সম্ভব নয়। আর সাধারণ নেতাকর্মীদের মাঝে কোনো ক্ষোভ নেই। যারা রাজনীতি নিয়ে ব্যবসা করেন তাদের মধ্যে এই ক্ষোভ। এলাকার উন্নয়নে বিশ্বাস করি। সে জন্য এই গ্রামীণ এলাকার রাস্তা, ব্রিজ, বিদ্যুৎ এগুলো গ্রামে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করেছি। আমার নির্বাচনী এলাকার সাধারণ মানুষের সুখে-দুঃখে সব সময় পাশে থাকি। অপর প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, নির্বাচন এলেই এ এলাকায় ঢাকা থাকা কিছু নেতার ছবি পোস্টার গাছে গাছে দেখা যায়। তাদের সাধারণ মানুষের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে তিনি জানান, দলের জন্য কাজ করি। আমি শুধু এমপি না জেলার সভাপতিও। তাই দলের যে কোনো সিদ্ধান্ত মেনে নেব। তবে মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আমি আশাবাদী।

মনোনয়নপ্রত্যাশী ডা. ইকবাল আর্সনাল পেশাগত কারণে ঢাকায় অবস্থান করেন। তিনি স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি। দীর্ঘদিন ধরেই এলাকায় পোস্টার, ব্যানার দিয়ে আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস দিয়েছেন। তিনিও আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে।

আওয়ামী লীগের আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও স্থানীয় দৈনিক জনতার আদালত পত্রিকার সম্পাদক নুরে আলম সিদ্দিকী হক। অনেকদিন ধরেই মাঠে তিনি। ২০১৪ সালে কালুখালী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সামান্য ভোটে পরাজিত হন। তবে সে সময় তিনি ভোটারদের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছিলেন। আগামী সংসদ নির্বাচনে তিনিও মনোনয়ন চাইবেন। ব্যানার, ফেস্টুন দিয়ে ভোটারদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। নুরে আলম সিদ্দিকী হক বলেন, আমি দলের দুর্দিনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একজন সৈনিক হিসেবে কাজ করেছি। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সুখে-দুঃখে পাশে থেকেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন বাস্তবায়নের জন্য সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। তাই আমি সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চাই। সে জন্য আগামী নির্বাচনে দলের কাছে মনোনয়ন চাইব।

আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী তরুণ নেতা শেখ সোহেল রানা টিপু। তিনি স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক। তার আগে ছিলেন ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি। ওয়ান-ইলেভেনের সময় দলের দুর্দিনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন তিনি।

শেখ সোহেল রানা টিপু জানান, ছাত্রজীবন থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে রাজনীতি করছি। দলের দুর্দিনে পাশে থেকেছি। দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষের পাশে আছি। দলের নীতি আদর্শ থেকে কখনো বিচ্যুত হইনি। সব সময় নেত্রীর নির্দেশ মেনে চলেছি। অবশ্যই আমি আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন চাইব।

বিএনপির জন্য আসনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিগত ১০টি সংসদ নির্বাচনের মধ্যে ১৫ ফেব্রুয়ারির ‘বিতর্কিত’ নির্বাচন বাদ দিলে মাত্র একবার এ আসন থেকে জয়লাভ করতে পেরেছে তারা। রাজবাড়ীতে বিএনপি দলীয় কোন্দলে জর্জরিত। স্পষ্ট দুই ভাগে বিভক্ত জেলা বিএনপি। দীর্ঘদিন ধরে খৈয়ম গ্রুপ এবং হারুন গ্রুপ পৃথক পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করে আসছে। সাবেক এমপি নাসিরুল হক সাবুর সঙ্গে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদের দ্বন্দ্বটাও দীর্ঘদিনের। বিএনপির মধ্যেকার কোন্দল নিরসন না হলে এ আসন পুনরুদ্ধার করা কঠিন হয়ে পড়বে। মনোনয়নপ্রত্যাশী নাসিরুল হক সাবু জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি। ২০০১ সালের নির্বাচনে চারদলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েছিলেন। এবারো মনোনয়নের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাবেন। যদিও পাংশায় বিএনপির কার্যক্রম অনেকটাই ঢিলেঢালাভাবে চলছে। কর্মসূচির বিষয়টি আমলে নিতে চাইছেন না তৃণমূলের নেতারা। তারা মনে করছেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিএনপিই জিতবে এখানে। তবে তার আগে দলীয় কোন্দল অবশ্যই নিরসন করতে হবে।

মনোনয়নের অন্যতম দাবিদার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ। তরুণ এই নেতা ইতোমধ্যেই নেতাকর্মীদের মন জয় করে নিতে সক্ষম হয়েছেন। অনেক আগে থেকেই শুরু করেছেন গণসংযোগ। ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান বা যে কোনো উপলক্ষে সব শ্রেণি পেশার মানুষের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে তিনিও বেশ আশাবাদী।

হারুন অর রশীদ হাওর বার্তাকে বলেন, নির্বাচনে গেলে আর আমাকে মনোনয়ন দিলে অবশ্যই আমি ভালো কিছু উপহার দেব। আমি এগিয়ে যাচ্ছি। বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা আমি তৃণমূলের নেতাকর্মীদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। রাজবাড়ী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর আমি ইমানি দায়িত্ব পালন করেছি। কেন্দ্রের নির্দেশ শতভাগ পালন করেছি। তৃণমূল নেতাকর্মীদের সেন্টিমেন্টকে প্রাধান্য দিয়ে সেভাবে চলার চেষ্টা করেছি। আমার কোনো দুর্বলতা নেই। আমি মনোনয়ন পাব বলেই আশা করি। তারপরও অন্য কাউকে যদি দল মনোনয়ন দেয় তাহলে ধানের শীষ প্রতীককে বিজয়ী করার জন্য আমি তার পক্ষে কাজ করব।

নাসিরুল হক সাবু। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতিও। মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে তিনিও আশাবাদী।

নাসিরুল হক সাবু হাওর বার্তাকে জানান, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আমি মাঠে আছি। প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাব বলে আশা রাখছি। অন্য প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি বড় দল এখানে মান-অভিমান থাকতেই পারে নেতাকর্মীদের। দল নির্বাচনে গেলে এসব থাকবে না।

কালুখালী উপজেলা বিএনপির সভাপতি লায়ন আব্দুর রাজ্জাক ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। ইতোমধ্যে পোস্টার-ব্যানার করে শুভেচ্ছা জানিয়ে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। শোনা যায় মনোনয়ন চাইবেন তিনিও।

মানবকণ্ঠ