হাওর বার্তা ডেস্কঃ বিডিআর বিদ্রোহের মামলায় হাইকোর্টের রায়ে আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীকে খালাস দেয়ার সমালোচনা করেছে বিএনপি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দলীয় স্বার্থে সরকার রাষ্ট্রীয় স্বার্থ বিসর্জন দিয়েছে। আজ রাজধানীতে ২০ দলীয় জোটের শরিক জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি জাপগার বিশেষ কাউন্সিলে এ প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি মহাসচিব।
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর সদরদপ্তর পিলখানায় বিদ্রোহে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যার মামলায় হাইকোর্ট ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে রবিবার। এই মামলায় বিচারিক আদালত স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিলেও হাইকোর্ট তাকে বেকসুর খালাস দিয়েছে।
মির্জ ফখরুল বলেন, ‘রায়ে দেখলাম তোরাব আলীকে খালাস দেয়া হলো। যার নেতৃত্বে স্থানীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে দাবি দাওয়া নিয়ে বৈঠক হলো, যার বাসা ব্যবহার করা হলো। তাকেই খালাস দেয়া হলো।’
এই মামলায় বিএনপি নেতা নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিণ্টুরও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ এসেছিল বিচারিক আদালতের রায়ে। তবে হাইকোর্টে আপিল চলাকালে তিনি মারা যান।
ফখরুলের দাবি, পিণ্টুর মৃত্যু স্বাভাবিক অবস্থায় হয়নি। তাকে হত্যা করেছে সরকার। তিনি বলেন, ‘আমাদের নাসির উদ্দিন পিন্টু যে কদিন আগেও জেলে ছিলেন। জেল থেকে বের হলেন পরে তাকে নতুন করে মামলায় জড়িয়ে জেলে নেয়া হলো, সেখানেই হত্যা করা হলো।’
পিলখানায় বিদ্রোহের ঘটনায় ‘গোয়েন্দা ব্যর্থতার’ বিষয়টি তদন্ত করার বিষয়ে তাগিদ এসেছে হাইকোর্টের রায়ে। এই বিষয়ে একমত হওয়ার কথাও বলেন ফখরুল। বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর গতকাল বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার মামলায় উচ্চ আদালতের রায় হয়েছে। আমি রায় নিয়ে কিছু করতে চাই না। তবে যে পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়েছে তাতে গোয়েন্দা ব্যর্থতার কথা বলা হয়েছে। আমরাও জানতে চাই কেন গোয়েন্দা সংস্থা আগাম তথ্য দিতে ব্যর্থ হলো? বিষয়গুলো আমাদের জানতে হবে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছে। কখন ঘটেছে এই ঘটনা যখন একটি নতুন সরকার ক্ষমতায় বসেছে মাত্র। উদ্দেশ্যটা কী ছিল তাদের? তারা যেটা বলেছেন, শুধু সরকারকে ব্যর্থ করার চেষ্টা সেটা নাকি বাংলাদেশকে ব্যর্থ করে দেয়ার চেষ্টা। ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা যা আমাদের মুক্তিযুদ্ধেও হারাতে হয়নি। তাদের হত্যা করে কে বেশি লাভবান হলো? কারা লাভবান হলো?’।
‘যারা বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে দিতে চায় তারা? যারা বাংলাদেশের গর্ব সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙে দিতে চেয়েছিল। কে লাভবান হলো? এই বিষয়টির জন্য অবশ্যই একটা সুষ্ঠু, নির্মোহ ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে বের করতে হবে।’
বিদ্রোহের পর পর পিলখানার সামনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল। তবে তারা কোনো অভিযানে যায়নি। আর বিডিআরের সেনারা পরদিন অস্ত্র সমর্পণ করলে পিলখানার নিয়ন্ত্রণ নেয় সেনাবাহিনী। এরপরই সেখানে মাটি খুঁড়ে মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কেন সেদিন বিদ্রোহ দমন করতে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হলো না? কেন সেই সিদ্ধান্ত নিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময়ক্ষেপন করা হয়েছিল?’।
আমি কাউকে দোষারোপ করতে চাই না মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘কিন্তু এটার তো নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত হয়নি। সেনাবাহিনীর যে তদন্ত প্রতিবেদন সেটা কেন প্রকাশ করা হয়নি। কেন এখন পর্যন্ত তদন্ত কমিটির পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়নি সেটা আমাদের এটা জানতে হবে। প্রত্যেকটি নাগরিকের এটা জানার অধিকার আছে।’
বিডিআর বিদ্রোহের পেছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র পরিণত করতে সুপরিকল্পিতভাবে, সচেতনভাবে কাজ চলছে।’
বিডিআর বিদ্রোহের পর বাহিনীতে সংস্কার এবং নাম বদলানোরও সমালোচনা করেন বিএনপি নেতা। বলেন, ‘২০০ বছরের একটি প্রতিষ্ঠান যারা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে, সীমান্তকে রক্ষা করতে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছিল, ভেঙে ফেলা হলো তাদের। নামটা পর্যন্ত পরিবর্তন করা হলো।’
দীর্ঘ বক্তব্যে আগামী নির্বাচন নিয়ে সংলাপে বসতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান ফখরুল। সরকারি দলের নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতিরও অভিযোগ তুলেন তিনি। প্রধান বিচারপতির পদ থেকে সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে পদত্যাগে বাধ্য করার অভিযোগও করেন ফখরুল।