ঢাকা ০৮:৪৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রধানমন্ত্রী কঠোর বার্তা দিয়ে মুরাদকে সতর্ক করলেন ওবায়দুল

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:৪৫:০৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ নভেম্বর ২০১৭
  • ২৪৪ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাজধানীর লালবাগে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সংঘর্ষের ঘটনায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর বার্তা জানিয়ে দিয়ে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদকে সতর্ক করলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর ধানম-িতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে ওবায়দুল কাদের মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক মুরাদকে এ ব্যাপারে সতর্ক করেন। এর ধারাবাহিকতায় সন্ধ্যায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহ-সভাপতি আবু আহম্মেদ মান্নাফির সঙ্গেও বৈঠক করেন ওবায়দুল কাদের। দলীয় হাওর বার্তাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

দলীয় সূত্র জানান, ওবায়দুল কাদের দুপুরে ধানমিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আসেন। তার কিছুক্ষণ পরেই মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক মুরাদ সভাপতির কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। এরপর ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে শাহে আলম মুরাদের বৈঠক হয়। শাহে আলম মুরাদ বৈঠকে সেই দিনের ঘটনার বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকে অবহিত করেন। তার জবাবে ওবায়দুল কাদের মুরাদের উদ্দেশে বলেন, ‘নেত্রী (আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা) সব জানেন। তোমার ব্যাপারে নেত্রীর কাছে ইতোমধ্যে বিভিন্ন অভিযোগ গেছে। তুমি মহসীন গ্রুপের (মোস্তফা মহসিন মন্টু) লোকজনকে গুরুত্ব দিচ্ছ, নেত্রীর কাছে এমন অভিযোগ আছে। এছাড়াও ওবায়দুল কাদের ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু আহম্মেদ মান্নাফিকে লাঞ্ছিত করার ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, ‘মান্নাফির মতো মহানগর সিনিয়র নেতাকে লাঞ্ছিত করে সেদিন কেন মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল? নেত্রী কিন্তু সব জানেন। তোমারও বুঝতে হবে, ওনার ছেলে (মান্নাফি) নেত্রীর নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য হিসেবে দায়িত্বরত আছে। নেত্রী সবার ব্যাপারে অবগত আছেন। সামনে জাতীয় নির্বাচন, সরকারবিরোধীরা সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছে, নেত্রী কোনভাবেই মহানগর আওয়ামী লীগের ব্যাক্তিকেন্দ্রিক দ্বন্দ্ব-কোন্দল বরদাশত করবেন না, এটা আমাকে বলে দিয়েছেন। তাই দ্রুত মহানগরের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বসে নিজেদের মধ্যে গ্রুপিং নিরসন করে ফেল।’

এছাড়াও আজ শহীদ ডা. শামসুল আলম খান মিলন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের শ্রদ্ধা নিবেদনের কর্মসূচিতে যাতে কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা না ঘটে সে বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশনাও দেন কাদের । আজ শহীদ ডা. শামসুল আলম খান মিলন দিবস উপলক্ষে সকাল ৮টায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে ডা. শামসুল আলম খান মিলনের সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, ফাতেহা পাঠ ও বিশেষ মোনাজাতের কর্মসূচি পালন করবে।

এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।

আজিমপুরে ঘটনার দিন গত (১৬ নভেম্বর) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে মহিলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনায় সভায় ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, লালবাগের ঘটনায় দলের অভ্যন্তরে শৃংখলা বিষয়ক ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশন নেওয়া হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণকে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের দলিল হিসাবে স্বীকৃতি দান উপলক্ষ্যে মহিলা আওয়ামী লীগ এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।

সভায় ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মত বড় একটি সংগঠন, বিশাল প্রতিষ্ঠান, এখানে আদর্শিক আওয়ামী লীগের বাইরে ক্ষমতাসীন দলে কিছু কিছু পরগাছা রয়ে গেছে। আমরা এই পরগাছা থেকে অনেক মুক্ত করেছি দলকে। কারণ, আমরা কাউকে শাস্তি ছাড়া পার পেতে দিচ্ছি না। অতীতে কোন সরকারের আমলে দলীয় নেতা, দলীয় ক্যাডারদের কারো বিচার হয়েছে, শাস্তি হয়েছে, কারো বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, এমন নজির এদেশে নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগে এই পর্যন্ত শৃংখলা যারা ভঙ্গ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে শুধু সাংগঠনিক ব্যবস্থাই নয় প্রশাসনিক ব্যবস্থাও নিয়েছি।’

সংঘর্ষের ঘটনায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘যারাই শৃংখলা নষ্ট করেছে তাদেরকে অ্যারেস্ট করার জন্য হোম মিনিস্টার ও মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারকে বলা হয়েছে। যারাই শৃংখলা নষ্ট করেছেন তাদের বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকশন নিতে হবে। অনেককে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। কোন ছাড় নেই। যেখানেই যারা শৃংখলা নষ্ট করবে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা যথাসময়ে নেওয়া হবে।

২০১৬ সালের শেষের দিক থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণার পরয়ুযুদ্ধে আভ্যন্তরীণ কোন্দলে জড়িয়ে পড়েন ঢাকা সিটি করেপারেশন দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন এবং মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ। তবে বিষয়টি নিজেদের মধ্যে এতদিন উপরে উপরে সীমাবদ্ধ থাকলেও গত ১৬ নভেম্বর আজিমপুরে সংঘর্ষে রূপ নেয়। তার আগে সিটি কর্পোরেশনের গুলিস্তান এলাকা থেকে হকার উচ্ছেদ, থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে নিজেদের লোক ঢোকানো নিয়ে উভয় গ্রুপের মধ্যে ক্ষোভ ও দুরত্ব বাড়তে থাকে। আর মুরাদ ও খোকনের দ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটে গত আগস্টে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের শোক দিবসের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে। মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের কর্মসূচি ঘোষণার পর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকেও কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। আর দ্বন্দ্বের প্রকাশ ঘটে গত ২৬ অক্টোবর মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার উদ্বোধনের সময়। প্রধানমন্ত্রী টেলি কনফারেন্সে থাকাকালেই মারামারি ও ভাঙচুরে জড়ায় দুই পক্ষ। এর জের ধরে বর্ধিত সভায় কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনেই হাতাহাতি ও ভাঙচুরে লিপ্ত হন তারা। তবে দুই গ্রুপের বিরোধ আজিমপুরে ধ্বংসাত্মক রূপ ধারণ করে। সেদিন শাহে আলম মুরাদের সভাস্থলের সামনে আবর্জনার স্তুপ, খোকন ও মুরাদের বহিষ্কারের দাবিতে পাল্টাপল্টি বিক্ষোভ মিছিল, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, গাড়ি ভাঙচুর, মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটে। এতে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রণক্ষেত্রে পরিণত হয় রাজধানীর আজিমপুর-লালবাগ এলাকা। সংঘর্ষের ঘটনায় সভায় যোগ না দিয়ে ফিরে আসেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি। সেদিন আজিমপুর রোডের পার্ল হারবার কমিউনিটি সেন্টারে কামরাঙ্গীর চর, লালবাগ ও কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগের সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচির আয়োজন করেছিলেন শাহে আলম মুরাদ। অন্যদিকে দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকনের সমর্থক হিসেবে পরিচিত মহানগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফিকে ‘লাঞ্ছিত’ করার প্রতিবাদে তার অনুসারীরা একই সময়ে আজিমপুর রোডে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু ওইদিন সকালে এলাকাবাসী ঘুম থেকে উঠে দেখতে পান কমিউনিটি সেন্টারের সামনে জমে আছে ময়লার স্তুপ। মুরাদের সমর্থকরা সকালে সেখানে এসে ময়লার স্তুপ দেখে দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকনের পদত্যাগের দাবিতে সোগান দিতে শুরু করেন। খবর পেয়ে পুলিশও ঘটনাস্থলে যায়, পুরো এলাকায় নেওয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা ব্যাবস্থা। কিন্তু বেলা ১১টার দিকে মেয়রপন্থীরা পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে আজিমপুর রোডে ঢুকতে চাইলে গ-গোল শুরু হয়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

প্রধানমন্ত্রী কঠোর বার্তা দিয়ে মুরাদকে সতর্ক করলেন ওবায়দুল

আপডেট টাইম : ০৪:৪৫:০৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ নভেম্বর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাজধানীর লালবাগে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সংঘর্ষের ঘটনায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর বার্তা জানিয়ে দিয়ে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদকে সতর্ক করলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর ধানম-িতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে ওবায়দুল কাদের মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক মুরাদকে এ ব্যাপারে সতর্ক করেন। এর ধারাবাহিকতায় সন্ধ্যায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহ-সভাপতি আবু আহম্মেদ মান্নাফির সঙ্গেও বৈঠক করেন ওবায়দুল কাদের। দলীয় হাওর বার্তাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

দলীয় সূত্র জানান, ওবায়দুল কাদের দুপুরে ধানমিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আসেন। তার কিছুক্ষণ পরেই মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক মুরাদ সভাপতির কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। এরপর ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে শাহে আলম মুরাদের বৈঠক হয়। শাহে আলম মুরাদ বৈঠকে সেই দিনের ঘটনার বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকে অবহিত করেন। তার জবাবে ওবায়দুল কাদের মুরাদের উদ্দেশে বলেন, ‘নেত্রী (আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা) সব জানেন। তোমার ব্যাপারে নেত্রীর কাছে ইতোমধ্যে বিভিন্ন অভিযোগ গেছে। তুমি মহসীন গ্রুপের (মোস্তফা মহসিন মন্টু) লোকজনকে গুরুত্ব দিচ্ছ, নেত্রীর কাছে এমন অভিযোগ আছে। এছাড়াও ওবায়দুল কাদের ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু আহম্মেদ মান্নাফিকে লাঞ্ছিত করার ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, ‘মান্নাফির মতো মহানগর সিনিয়র নেতাকে লাঞ্ছিত করে সেদিন কেন মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল? নেত্রী কিন্তু সব জানেন। তোমারও বুঝতে হবে, ওনার ছেলে (মান্নাফি) নেত্রীর নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য হিসেবে দায়িত্বরত আছে। নেত্রী সবার ব্যাপারে অবগত আছেন। সামনে জাতীয় নির্বাচন, সরকারবিরোধীরা সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছে, নেত্রী কোনভাবেই মহানগর আওয়ামী লীগের ব্যাক্তিকেন্দ্রিক দ্বন্দ্ব-কোন্দল বরদাশত করবেন না, এটা আমাকে বলে দিয়েছেন। তাই দ্রুত মহানগরের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বসে নিজেদের মধ্যে গ্রুপিং নিরসন করে ফেল।’

এছাড়াও আজ শহীদ ডা. শামসুল আলম খান মিলন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের শ্রদ্ধা নিবেদনের কর্মসূচিতে যাতে কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা না ঘটে সে বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশনাও দেন কাদের । আজ শহীদ ডা. শামসুল আলম খান মিলন দিবস উপলক্ষে সকাল ৮টায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে ডা. শামসুল আলম খান মিলনের সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, ফাতেহা পাঠ ও বিশেষ মোনাজাতের কর্মসূচি পালন করবে।

এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।

আজিমপুরে ঘটনার দিন গত (১৬ নভেম্বর) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে মহিলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনায় সভায় ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, লালবাগের ঘটনায় দলের অভ্যন্তরে শৃংখলা বিষয়ক ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশন নেওয়া হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণকে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের দলিল হিসাবে স্বীকৃতি দান উপলক্ষ্যে মহিলা আওয়ামী লীগ এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।

সভায় ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মত বড় একটি সংগঠন, বিশাল প্রতিষ্ঠান, এখানে আদর্শিক আওয়ামী লীগের বাইরে ক্ষমতাসীন দলে কিছু কিছু পরগাছা রয়ে গেছে। আমরা এই পরগাছা থেকে অনেক মুক্ত করেছি দলকে। কারণ, আমরা কাউকে শাস্তি ছাড়া পার পেতে দিচ্ছি না। অতীতে কোন সরকারের আমলে দলীয় নেতা, দলীয় ক্যাডারদের কারো বিচার হয়েছে, শাস্তি হয়েছে, কারো বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, এমন নজির এদেশে নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগে এই পর্যন্ত শৃংখলা যারা ভঙ্গ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে শুধু সাংগঠনিক ব্যবস্থাই নয় প্রশাসনিক ব্যবস্থাও নিয়েছি।’

সংঘর্ষের ঘটনায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘যারাই শৃংখলা নষ্ট করেছে তাদেরকে অ্যারেস্ট করার জন্য হোম মিনিস্টার ও মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারকে বলা হয়েছে। যারাই শৃংখলা নষ্ট করেছেন তাদের বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকশন নিতে হবে। অনেককে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। কোন ছাড় নেই। যেখানেই যারা শৃংখলা নষ্ট করবে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা যথাসময়ে নেওয়া হবে।

২০১৬ সালের শেষের দিক থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণার পরয়ুযুদ্ধে আভ্যন্তরীণ কোন্দলে জড়িয়ে পড়েন ঢাকা সিটি করেপারেশন দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন এবং মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ। তবে বিষয়টি নিজেদের মধ্যে এতদিন উপরে উপরে সীমাবদ্ধ থাকলেও গত ১৬ নভেম্বর আজিমপুরে সংঘর্ষে রূপ নেয়। তার আগে সিটি কর্পোরেশনের গুলিস্তান এলাকা থেকে হকার উচ্ছেদ, থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে নিজেদের লোক ঢোকানো নিয়ে উভয় গ্রুপের মধ্যে ক্ষোভ ও দুরত্ব বাড়তে থাকে। আর মুরাদ ও খোকনের দ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটে গত আগস্টে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের শোক দিবসের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে। মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের কর্মসূচি ঘোষণার পর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকেও কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। আর দ্বন্দ্বের প্রকাশ ঘটে গত ২৬ অক্টোবর মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার উদ্বোধনের সময়। প্রধানমন্ত্রী টেলি কনফারেন্সে থাকাকালেই মারামারি ও ভাঙচুরে জড়ায় দুই পক্ষ। এর জের ধরে বর্ধিত সভায় কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনেই হাতাহাতি ও ভাঙচুরে লিপ্ত হন তারা। তবে দুই গ্রুপের বিরোধ আজিমপুরে ধ্বংসাত্মক রূপ ধারণ করে। সেদিন শাহে আলম মুরাদের সভাস্থলের সামনে আবর্জনার স্তুপ, খোকন ও মুরাদের বহিষ্কারের দাবিতে পাল্টাপল্টি বিক্ষোভ মিছিল, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, গাড়ি ভাঙচুর, মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটে। এতে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রণক্ষেত্রে পরিণত হয় রাজধানীর আজিমপুর-লালবাগ এলাকা। সংঘর্ষের ঘটনায় সভায় যোগ না দিয়ে ফিরে আসেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি। সেদিন আজিমপুর রোডের পার্ল হারবার কমিউনিটি সেন্টারে কামরাঙ্গীর চর, লালবাগ ও কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগের সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচির আয়োজন করেছিলেন শাহে আলম মুরাদ। অন্যদিকে দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকনের সমর্থক হিসেবে পরিচিত মহানগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফিকে ‘লাঞ্ছিত’ করার প্রতিবাদে তার অনুসারীরা একই সময়ে আজিমপুর রোডে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু ওইদিন সকালে এলাকাবাসী ঘুম থেকে উঠে দেখতে পান কমিউনিটি সেন্টারের সামনে জমে আছে ময়লার স্তুপ। মুরাদের সমর্থকরা সকালে সেখানে এসে ময়লার স্তুপ দেখে দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকনের পদত্যাগের দাবিতে সোগান দিতে শুরু করেন। খবর পেয়ে পুলিশও ঘটনাস্থলে যায়, পুরো এলাকায় নেওয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা ব্যাবস্থা। কিন্তু বেলা ১১টার দিকে মেয়রপন্থীরা পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে আজিমপুর রোডে ঢুকতে চাইলে গ-গোল শুরু হয়।