ঢাকা ০১:৫৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
ভারতে ১৩ বাংলাদেশি নাগরিক গ্রেপ্তার কবরের পাশে দিন-রাত বসে থাকি, ছেলে ফিরে আসে না সংস্কার না করলে শহীদদের রক্তের সঙ্গে অন্যায় করা হবে : উপদেষ্টা সাখাওয়াত কাকে ‘ননসেন্স’ বললেন বুবলী ভোটার হওয়ার ন্যূনতম বয়সসীমা প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে আপত্তি বিএনপি মহাসচিবের সচিবালয়ে প্রবেশে অস্থায়ী পাসের ব্যাপারে বিশেষ সেল গঠন জর্জিনাকে ‘স্ত্রী’ সম্বোধন, তবে কি বিয়েটা সেরেই ফেলেছেন রোনালদো ৩১ ডিসেম্বর আসছে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণা মহাখালীতে আবাসিক ভবনে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ২ ইউনিট ভোটার হওয়ার ন্যূনতম বয়সসীমা প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে আপত্তি বিএনপি মহাসচিবের

ওজোন-সহনীয় ধান

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৩৫:৫৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৫
  • ৪২৩ বার

বায়ু দূষণের ফলে শুধু মানুষ নয়, উদ্ভিদও ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ যেমন ওজোন গ্যাস ধানগাছের ফলন কমিয়ে দেয়৷ জার্মান বিজ্ঞানীরা ক্রস-ব্রিডিংয়ের মাধ্যমে এই সমস্যার এক সাময়িক সমাধান খুঁজে পেয়েছেন৷

এশিয়ার অনেক দেশে জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানি ব্যবহারের কারণে বায়ু দূষণ বেড়ে চলেছে৷ বিশেষ করে ওজোন একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ চীন ও ভারতে এই সমস্যা এতো বেড়ে গেছে যে, ধান উৎপাদনের উপর তার কুপ্রভাব পড়ছে৷ এক্ষেত্রে আয় প্রায় ৫০ শতাংশ কমে গেছে৷ কোটি কোটি মানুষের জন্য এটা মারাত্মক এক সমস্যা৷

বন বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিবিজ্ঞানীরা কয়েক’শ ধানের প্রজাতির উপর ওজোনের প্রভাব নিয়ে পরীক্ষা চালিয়েছেন৷ গোটা বিশ্বে এর আগে এতো বড় উদ্যোগ নেয়া হয়নি৷ অধ্যাপক মিশায়েল ফ্রাই বললেন, ‘‘গত বছর আমরা গোটা বিশ্বের ৩২৮টি প্রজাতির ধান পরীক্ষা করেছি৷ তাদের ওজোন সহ্য করার ক্ষমতায় বিস্তর ফারাক লক্ষ্য করা গেছে৷ কয়েকটি প্রজাতি কোনো প্রতিক্রিয়াই দেখায়নি৷ কয়েকটির ক্ষেত্রে উৎপাদন প্রায় ৫০ শতাংশ কমে গেছে৷”

ওজোন রঙহীন, আগ্রাসী গ্যাস৷ গাড়ির ধোঁয়া সহ নানা কারণে তা সৃষ্টি হয়৷ এর মাত্রা বেশি হলে তা মানুষ, জীবজন্তু ও উদ্ভিদের জন্য বিষাক্ত হয়ে ওঠে৷ বন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মিশায়েল ফ্রাই বলেন, ‘‘উদ্ভিদের টিস্যু ভেঙে এমন অণু তৈরি হয়, যার মধ্যে একটি ইলেকট্রনের অভাব রয়েছে৷ তখন সেই অণু অন্য অণু থেকে ইলেকট্রন টেনে নেয়৷ ফলে তন্তুর ক্ষতি হয় – যেমন মেমব্রেন, প্রোটিন, ডিএনএ৷ ফলে উদ্ভিদের টিস্যুর অপূরণীয় ক্ষতি হয়৷”

বন শহরের গ্রিনহাউসে এই পরীক্ষামূলক উদ্ভিদগুলোর জন্য এশিয়ার উন্মুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে৷ ধান চাষ করতে হলে উত্তাপ ও আর্দ্রতার প্রয়োজন৷ ওজোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায়৷ ওজোনের ওজন যেহেতু বাতাসের চেয়ে বেশি, তাই বাক্সের উপর দিক খোলা থাকতে পারে৷ ক্ষতিগ্রস্ত উদ্ভিদের কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে৷ অধ্যাপক ফ্রাই বলেন, ‘‘এখানে ওজোনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত একটি ধানের গাছ দেখা যাচ্ছে৷ হালকা সবুজ রঙয়ের পাতা ক্ষতির মাত্রা দেখিয়ে দিচ্ছে৷ একে ক্লোরোসেন বলা হয়৷ ওজোনের চাপে ক্লোরোফিল বা পাতার সবুজ অংশ নষ্ট হয়ে গেলে এমন লক্ষণ দেখা যায়৷ এটা উদ্ভিদের জন্য ক্ষতিকর, কারণ সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার জন্য ক্লোরোফিল প্রয়োজন হয়৷ ফলে উদ্ভিদের শক্তি কমে যায়৷ সেটি আরও কম পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড কার্বোহাইড্রেটে পরিণত করতে পারে৷”

মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণ ওজোন শুধু ধান উৎপাদন কমিয়ে দেয় না, চালের মানেরও অবনতি ঘটায়৷ কার্বোহাইড্রেটের অভাবের ফলে ধানের চেহারাও খারাপ হয়৷ অধ্যাপক ফ্রাই বলেন, ‘‘বিশেষ করে এশিয়ার মানুষ স্বচ্ছ চাল পছন্দ করেন, যা দেখতেও সুন্দর৷ কিন্তু কার্বোহাইড্রেটের অভাবে ওজোন বিশ্রী সাদা দাগ সৃষ্টি করে৷ ফলে সেই চাল কেউ কেনে না অথবা অনেক কম দামে তা বিক্রি করতে হয়৷”

বন শহরের বিজ্ঞানীরা ধানের জিনোমের মধ্যে এমন জিন খুঁজছিলেন, যা ওজোনের বিরুদ্ধে সহিষ্ণুতা বাড়াতে পারে৷ তারা এ কাজে সফল হয়েছেন৷ তারপর তারা সুপরিকল্পিতভাবে সেই জিন উৎপাদনশীল অথচ ওজোনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়– এমন ধানের গাছে ‘ক্রস-ব্রিড’ করে দেন৷ ফলে সেই ধানের বীজ অনেক ভালোভাবে ওজোনের প্রভাব সামলাতে পারছে৷ দেখতেও অনেক ভালো লাগছে৷

অধ্যাপক ফ্রাই বলেন, ‘‘এখানে হালকা সবুজ ক্লোরোটিক পাতা কম দেখা যাচ্ছে৷ এক্ষেত্রে সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার মাত্রাও তুলনামূলকভাবে বেশি৷ তাছাড়া আমরা দেখেছি যে, এই প্রজাতির ক্ষেত্রে জিনের ক্রস-ব্রিডিং করার ফলে ক্ষতির মাত্রা প্রায় অর্ধেকে কমিয়ে আনা সম্ভব৷ওজোন সহ্য করতে পারে, ধানের এমন প্রজাতি কিছুকালের জন্য ভালো ফসল দিতে পারে বটে, কিন্তু ব্রিডিংয়ের মাধ্যমে নতুন প্রজাতির ধান তৈরি করা এই সমস্যা সমাধানের আদর্শ উপায় হতে পারে না৷ দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে এশিয়ায় বায়ু দূষণের মোকাবিলা করতে হবে, যাতে ওজোনের ঘনত্বও কমে যায়৷ তখন কোটি কোটি মানুষের খাদ্যসংস্থান নিরাপদ হয়ে যাবে৷

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ভারতে ১৩ বাংলাদেশি নাগরিক গ্রেপ্তার

ওজোন-সহনীয় ধান

আপডেট টাইম : ১২:৩৫:৫৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৫

বায়ু দূষণের ফলে শুধু মানুষ নয়, উদ্ভিদও ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ যেমন ওজোন গ্যাস ধানগাছের ফলন কমিয়ে দেয়৷ জার্মান বিজ্ঞানীরা ক্রস-ব্রিডিংয়ের মাধ্যমে এই সমস্যার এক সাময়িক সমাধান খুঁজে পেয়েছেন৷

এশিয়ার অনেক দেশে জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানি ব্যবহারের কারণে বায়ু দূষণ বেড়ে চলেছে৷ বিশেষ করে ওজোন একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ চীন ও ভারতে এই সমস্যা এতো বেড়ে গেছে যে, ধান উৎপাদনের উপর তার কুপ্রভাব পড়ছে৷ এক্ষেত্রে আয় প্রায় ৫০ শতাংশ কমে গেছে৷ কোটি কোটি মানুষের জন্য এটা মারাত্মক এক সমস্যা৷

বন বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিবিজ্ঞানীরা কয়েক’শ ধানের প্রজাতির উপর ওজোনের প্রভাব নিয়ে পরীক্ষা চালিয়েছেন৷ গোটা বিশ্বে এর আগে এতো বড় উদ্যোগ নেয়া হয়নি৷ অধ্যাপক মিশায়েল ফ্রাই বললেন, ‘‘গত বছর আমরা গোটা বিশ্বের ৩২৮টি প্রজাতির ধান পরীক্ষা করেছি৷ তাদের ওজোন সহ্য করার ক্ষমতায় বিস্তর ফারাক লক্ষ্য করা গেছে৷ কয়েকটি প্রজাতি কোনো প্রতিক্রিয়াই দেখায়নি৷ কয়েকটির ক্ষেত্রে উৎপাদন প্রায় ৫০ শতাংশ কমে গেছে৷”

ওজোন রঙহীন, আগ্রাসী গ্যাস৷ গাড়ির ধোঁয়া সহ নানা কারণে তা সৃষ্টি হয়৷ এর মাত্রা বেশি হলে তা মানুষ, জীবজন্তু ও উদ্ভিদের জন্য বিষাক্ত হয়ে ওঠে৷ বন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মিশায়েল ফ্রাই বলেন, ‘‘উদ্ভিদের টিস্যু ভেঙে এমন অণু তৈরি হয়, যার মধ্যে একটি ইলেকট্রনের অভাব রয়েছে৷ তখন সেই অণু অন্য অণু থেকে ইলেকট্রন টেনে নেয়৷ ফলে তন্তুর ক্ষতি হয় – যেমন মেমব্রেন, প্রোটিন, ডিএনএ৷ ফলে উদ্ভিদের টিস্যুর অপূরণীয় ক্ষতি হয়৷”

বন শহরের গ্রিনহাউসে এই পরীক্ষামূলক উদ্ভিদগুলোর জন্য এশিয়ার উন্মুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে৷ ধান চাষ করতে হলে উত্তাপ ও আর্দ্রতার প্রয়োজন৷ ওজোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায়৷ ওজোনের ওজন যেহেতু বাতাসের চেয়ে বেশি, তাই বাক্সের উপর দিক খোলা থাকতে পারে৷ ক্ষতিগ্রস্ত উদ্ভিদের কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে৷ অধ্যাপক ফ্রাই বলেন, ‘‘এখানে ওজোনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত একটি ধানের গাছ দেখা যাচ্ছে৷ হালকা সবুজ রঙয়ের পাতা ক্ষতির মাত্রা দেখিয়ে দিচ্ছে৷ একে ক্লোরোসেন বলা হয়৷ ওজোনের চাপে ক্লোরোফিল বা পাতার সবুজ অংশ নষ্ট হয়ে গেলে এমন লক্ষণ দেখা যায়৷ এটা উদ্ভিদের জন্য ক্ষতিকর, কারণ সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার জন্য ক্লোরোফিল প্রয়োজন হয়৷ ফলে উদ্ভিদের শক্তি কমে যায়৷ সেটি আরও কম পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড কার্বোহাইড্রেটে পরিণত করতে পারে৷”

মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণ ওজোন শুধু ধান উৎপাদন কমিয়ে দেয় না, চালের মানেরও অবনতি ঘটায়৷ কার্বোহাইড্রেটের অভাবের ফলে ধানের চেহারাও খারাপ হয়৷ অধ্যাপক ফ্রাই বলেন, ‘‘বিশেষ করে এশিয়ার মানুষ স্বচ্ছ চাল পছন্দ করেন, যা দেখতেও সুন্দর৷ কিন্তু কার্বোহাইড্রেটের অভাবে ওজোন বিশ্রী সাদা দাগ সৃষ্টি করে৷ ফলে সেই চাল কেউ কেনে না অথবা অনেক কম দামে তা বিক্রি করতে হয়৷”

বন শহরের বিজ্ঞানীরা ধানের জিনোমের মধ্যে এমন জিন খুঁজছিলেন, যা ওজোনের বিরুদ্ধে সহিষ্ণুতা বাড়াতে পারে৷ তারা এ কাজে সফল হয়েছেন৷ তারপর তারা সুপরিকল্পিতভাবে সেই জিন উৎপাদনশীল অথচ ওজোনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়– এমন ধানের গাছে ‘ক্রস-ব্রিড’ করে দেন৷ ফলে সেই ধানের বীজ অনেক ভালোভাবে ওজোনের প্রভাব সামলাতে পারছে৷ দেখতেও অনেক ভালো লাগছে৷

অধ্যাপক ফ্রাই বলেন, ‘‘এখানে হালকা সবুজ ক্লোরোটিক পাতা কম দেখা যাচ্ছে৷ এক্ষেত্রে সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার মাত্রাও তুলনামূলকভাবে বেশি৷ তাছাড়া আমরা দেখেছি যে, এই প্রজাতির ক্ষেত্রে জিনের ক্রস-ব্রিডিং করার ফলে ক্ষতির মাত্রা প্রায় অর্ধেকে কমিয়ে আনা সম্ভব৷ওজোন সহ্য করতে পারে, ধানের এমন প্রজাতি কিছুকালের জন্য ভালো ফসল দিতে পারে বটে, কিন্তু ব্রিডিংয়ের মাধ্যমে নতুন প্রজাতির ধান তৈরি করা এই সমস্যা সমাধানের আদর্শ উপায় হতে পারে না৷ দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে এশিয়ায় বায়ু দূষণের মোকাবিলা করতে হবে, যাতে ওজোনের ঘনত্বও কমে যায়৷ তখন কোটি কোটি মানুষের খাদ্যসংস্থান নিরাপদ হয়ে যাবে৷