ঢাকা ১১:৪৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফুলে ফলে ভরে গেছে আশ্বিনা শিমের মাচা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৪৩:১৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর ২০১৭
  • ২৪৮ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নরসিংদীর বাজারে উঁকি দিতে শুরু করেছে শীতের অন্যতম জনপ্রিয় সবজি আশ্বিনা সীম। কার্তিকের হালকা কুয়াশা ভেজা এক কেজি আশ্বিনা সীম বিক্রি হচ্ছে ২শত থেকে ৩শত টাকা কেজি দরে। তবে নতুন মাচা হিসেবে উৎপাদন খুবই কম। চাষীরা জানিয়েছে, এই সময়ে সারা মাচা থেকে বড়জোর ২ থেকে ৩ কেজি সীম তোলা যায় প্রতিদিন।

১০ থেকে ১৫ দিন পরই তোলা যাবে ১০ থেকে ২০ কেজি করে প্রতিদিন। চাষীরা আশা করছে এবছর সীম চাষ করে তারা অতীতের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে। শিবপুর উপজেলার দক্ষিণ সাধারচর গ্রামের কৃষক আব্দুল বাছেদ দুই বিঘা জমিতে আশ্বিনা সীমের চাষাবাদ করেছেন। ইতোমধ্যেই তার সীমের বাগান থেকে সীম তুলে বাজারে বিক্রি করেছেন। প্রতিদিন ২ থেকে ৩ কেজি সীম বিক্রি করে উপার্জন করছেন ৭ শ’ থেকে ১ হাজার টাকা।

অনেক আশা নিয়ে এই চাষী তার সীম ক্ষেত পরিচর্যা করে চলছেন। একইভাবে পরিচর্যা চলছে শীতের অন্যান্য সবজি ক্ষেতেও। ফুলকপি, বাধাকপি, মুলা, লাউ, গাজর, উচ্ছে, টমেটো, আলু, বেগুন, স্কোয়াশ, লাল শাক, পালং শাক, সরিষা শাক, বাটি শাক, মটরশুটি, বথুয়া ইত্যাদি শাক-সবজির ক্ষেতও ফলনোন্মুখ হয়ে উঠেছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এসব শাকসবজি বাজারে আসতে শুরু করবে।

শাক-সবজির জন্য বিখ্যাত নরসিংদী জেলার চাষীরা প্রতিবছরই শীতকালীন সবজির আগাম চাষাবাদ করে নগদ টাকা উপার্জন করে থাকে। দেশের প্রধান অর্থকরী ফসল পাট চাষ কমে যাবার পর এ এলাকার চাষীরা শাকসবজি চাষাবাদের দিকে ঝুঁকে পড়ে। এ বছরও শ্রাবন মাসের মধ্যভাগ থেকেই শীতকালীন সবজি আগাম চাষাবাদ করেছিল চাষীরা।

কিন্তু অতি বৃষ্টির কারনে কয়েক দফা শাকসবজি আবাদ করেও তারা সফল হতে পারেনি। যার জন্যে এ বছর শীতের সবজি বাজারে আমদানী হতে দেরি হয়েছে কমবেশী এক মাস। এরপর চাষীরা হাল ছাড়েনি। মার খাওয়া আগাম সবজি ক্ষেতগুলোকে নতুন করে তৈরি করতে শুরু করেছে। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নরসিংদী জেলার ৬টি উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল সমূহ কমবেশী ১০ হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন শাকসবজি চাষাবাদ হয়ে থাকে।

এ বছর আগাম চাষাবাদে মার খাওয়ায় ফলনের এরিয়া এখনো ২ হাজার হেক্টর পিছিয়ে গেলেও আমন ধান কাটার পর তা পুরন হয়ে যাবে। নরসিংদী জেলায় উৎপাদিত শাকসবজি রাজধানী ঢাকাসহ দেশে বিভিন্ন অঞ্চলে কমবেশী ৪০ ভাগ চাহিদা পুরণ করে। এর মধ্যে বেশীরভাগই হয়ে থাকে আশ্বিনা সীম। আঞ্চলিক ভাষায় এ সীমকে বলা হয় কাতিমারা সীম। এই সীমের বৈশিষ্ট হলো আশ্বিন মাস ছাড়া কোনো সময়ই এই সীম আগাম উৎপাদিত হয় না।

কৃষিবিধরা জানিয়েছে, সীম আগাম রোপন করলে লতাপাতায় মাচা ভরে যায়। কিন্তু ফলন হয়না। আশ্বিন মাস না এলে এই সীমের ফলন দেখা যায় না। কৃষি বিজ্ঞানীরা বহু চেষ্টা করেও এই সীমের আগাম ফলন ঘটাতে পারেনি। আশ্বিনা সীম আশ্বিন মাসেই ফলে। শিবপুর, রায়পুরা, বেলাব ও মনোহরদী উপজেলায় প্রত্যন্ত অঞ্চলসমূহে বিস্ত্রীর্ণ এলাকাজুড়ে দেখা যায় বিশাল বিশাল সীম ক্ষেত।

এসব ক্ষেতে উৎপাদিত সীম আশ্বিন মাস থেকে শুরু করে চৈত্র-বৈশাখ মাস পর্যন্ত মানুষের সবজি চাহিদা পূরণ করে। আশ্বিনা সীম বাজারে প্রথম আমদানীর সময় তা হয় ধনীদের সবজি। অগাহায়ন মাসে সীমের দাম কমলে তা সাধারণ মানুষের নাগালে চলে আসে। সাধারণ মানুষ বিভিন্নভাবে এই সীম খেয়ে থাকে। নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিচিওয়ালা আশ্বিনা সীম খুব জনপ্রিয় হয়ে থাকে। সাধারণ মানুষ এই আশ্বিনা সীম শুটকি দিয়ে রান্না করে খেয়ে থাকে।

বিচিওয়ালা আশ্বিনা সীম নিরামিশ রান্নাও খুবই জনপ্রিয়। ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা সীমের বিচি খুবই পছন্দ করে। সীমের বিচিতে উচ্চ মানের প্রোটিন থাকায় বাবা-মারা শিশুদেরকে এই সীমের বিচি খাইয়ে থাকে। এছাড়া যে কোনো মাছের তরকারীর সাথে সীম সংমিশ্রনে তরকারী রান্না করা নরসিংদীসহ দেশের একটি পুরনো সংস্কৃতি। শীতের সকালে আদা দিয়ে আশ্বিনা সীমের ভর্তা একটি মুখরোচক খাবার। বাঙালীরা যুগযুগ ধরে গরম ভাতের সাথে আশ্বিনা সীমের ভর্তা খেয়ে রসনা তৃপ্ত করে আসছে।

যেসব চাষী আশ্বিনা সীম চাষাবাদ করে তাদের বাড়ীর উঠানেও এই সীমের চাষাবাদ করে থাকে। কৃষকদের অধিকাংশই শীতের প্রায় প্রতিদিন টাকি মাছ, শোল মাছ, গজার মাছ, শিং মাছ, মাগুর মাছ, চিংড়ি মাছ, ও বড় মাছের মাথা ভেঙ্গে সীমের লাড়া রান্না করে খেয়ে থাকে। শুধু তাই নয় নরসিংদীতে উৎপাদিত এই আশ্বিনা সীম মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রফতানী হয়ে থাকে। আশ্বিনা সীম বিক্রি করে নরসিংদীর কৃষকরা তাদের সারা বছরের নগদ অর্থের চাহিদা পুরন করে থাকে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ফুলে ফলে ভরে গেছে আশ্বিনা শিমের মাচা

আপডেট টাইম : ১১:৪৩:১৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নরসিংদীর বাজারে উঁকি দিতে শুরু করেছে শীতের অন্যতম জনপ্রিয় সবজি আশ্বিনা সীম। কার্তিকের হালকা কুয়াশা ভেজা এক কেজি আশ্বিনা সীম বিক্রি হচ্ছে ২শত থেকে ৩শত টাকা কেজি দরে। তবে নতুন মাচা হিসেবে উৎপাদন খুবই কম। চাষীরা জানিয়েছে, এই সময়ে সারা মাচা থেকে বড়জোর ২ থেকে ৩ কেজি সীম তোলা যায় প্রতিদিন।

১০ থেকে ১৫ দিন পরই তোলা যাবে ১০ থেকে ২০ কেজি করে প্রতিদিন। চাষীরা আশা করছে এবছর সীম চাষ করে তারা অতীতের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে। শিবপুর উপজেলার দক্ষিণ সাধারচর গ্রামের কৃষক আব্দুল বাছেদ দুই বিঘা জমিতে আশ্বিনা সীমের চাষাবাদ করেছেন। ইতোমধ্যেই তার সীমের বাগান থেকে সীম তুলে বাজারে বিক্রি করেছেন। প্রতিদিন ২ থেকে ৩ কেজি সীম বিক্রি করে উপার্জন করছেন ৭ শ’ থেকে ১ হাজার টাকা।

অনেক আশা নিয়ে এই চাষী তার সীম ক্ষেত পরিচর্যা করে চলছেন। একইভাবে পরিচর্যা চলছে শীতের অন্যান্য সবজি ক্ষেতেও। ফুলকপি, বাধাকপি, মুলা, লাউ, গাজর, উচ্ছে, টমেটো, আলু, বেগুন, স্কোয়াশ, লাল শাক, পালং শাক, সরিষা শাক, বাটি শাক, মটরশুটি, বথুয়া ইত্যাদি শাক-সবজির ক্ষেতও ফলনোন্মুখ হয়ে উঠেছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এসব শাকসবজি বাজারে আসতে শুরু করবে।

শাক-সবজির জন্য বিখ্যাত নরসিংদী জেলার চাষীরা প্রতিবছরই শীতকালীন সবজির আগাম চাষাবাদ করে নগদ টাকা উপার্জন করে থাকে। দেশের প্রধান অর্থকরী ফসল পাট চাষ কমে যাবার পর এ এলাকার চাষীরা শাকসবজি চাষাবাদের দিকে ঝুঁকে পড়ে। এ বছরও শ্রাবন মাসের মধ্যভাগ থেকেই শীতকালীন সবজি আগাম চাষাবাদ করেছিল চাষীরা।

কিন্তু অতি বৃষ্টির কারনে কয়েক দফা শাকসবজি আবাদ করেও তারা সফল হতে পারেনি। যার জন্যে এ বছর শীতের সবজি বাজারে আমদানী হতে দেরি হয়েছে কমবেশী এক মাস। এরপর চাষীরা হাল ছাড়েনি। মার খাওয়া আগাম সবজি ক্ষেতগুলোকে নতুন করে তৈরি করতে শুরু করেছে। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নরসিংদী জেলার ৬টি উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল সমূহ কমবেশী ১০ হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন শাকসবজি চাষাবাদ হয়ে থাকে।

এ বছর আগাম চাষাবাদে মার খাওয়ায় ফলনের এরিয়া এখনো ২ হাজার হেক্টর পিছিয়ে গেলেও আমন ধান কাটার পর তা পুরন হয়ে যাবে। নরসিংদী জেলায় উৎপাদিত শাকসবজি রাজধানী ঢাকাসহ দেশে বিভিন্ন অঞ্চলে কমবেশী ৪০ ভাগ চাহিদা পুরণ করে। এর মধ্যে বেশীরভাগই হয়ে থাকে আশ্বিনা সীম। আঞ্চলিক ভাষায় এ সীমকে বলা হয় কাতিমারা সীম। এই সীমের বৈশিষ্ট হলো আশ্বিন মাস ছাড়া কোনো সময়ই এই সীম আগাম উৎপাদিত হয় না।

কৃষিবিধরা জানিয়েছে, সীম আগাম রোপন করলে লতাপাতায় মাচা ভরে যায়। কিন্তু ফলন হয়না। আশ্বিন মাস না এলে এই সীমের ফলন দেখা যায় না। কৃষি বিজ্ঞানীরা বহু চেষ্টা করেও এই সীমের আগাম ফলন ঘটাতে পারেনি। আশ্বিনা সীম আশ্বিন মাসেই ফলে। শিবপুর, রায়পুরা, বেলাব ও মনোহরদী উপজেলায় প্রত্যন্ত অঞ্চলসমূহে বিস্ত্রীর্ণ এলাকাজুড়ে দেখা যায় বিশাল বিশাল সীম ক্ষেত।

এসব ক্ষেতে উৎপাদিত সীম আশ্বিন মাস থেকে শুরু করে চৈত্র-বৈশাখ মাস পর্যন্ত মানুষের সবজি চাহিদা পূরণ করে। আশ্বিনা সীম বাজারে প্রথম আমদানীর সময় তা হয় ধনীদের সবজি। অগাহায়ন মাসে সীমের দাম কমলে তা সাধারণ মানুষের নাগালে চলে আসে। সাধারণ মানুষ বিভিন্নভাবে এই সীম খেয়ে থাকে। নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিচিওয়ালা আশ্বিনা সীম খুব জনপ্রিয় হয়ে থাকে। সাধারণ মানুষ এই আশ্বিনা সীম শুটকি দিয়ে রান্না করে খেয়ে থাকে।

বিচিওয়ালা আশ্বিনা সীম নিরামিশ রান্নাও খুবই জনপ্রিয়। ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা সীমের বিচি খুবই পছন্দ করে। সীমের বিচিতে উচ্চ মানের প্রোটিন থাকায় বাবা-মারা শিশুদেরকে এই সীমের বিচি খাইয়ে থাকে। এছাড়া যে কোনো মাছের তরকারীর সাথে সীম সংমিশ্রনে তরকারী রান্না করা নরসিংদীসহ দেশের একটি পুরনো সংস্কৃতি। শীতের সকালে আদা দিয়ে আশ্বিনা সীমের ভর্তা একটি মুখরোচক খাবার। বাঙালীরা যুগযুগ ধরে গরম ভাতের সাথে আশ্বিনা সীমের ভর্তা খেয়ে রসনা তৃপ্ত করে আসছে।

যেসব চাষী আশ্বিনা সীম চাষাবাদ করে তাদের বাড়ীর উঠানেও এই সীমের চাষাবাদ করে থাকে। কৃষকদের অধিকাংশই শীতের প্রায় প্রতিদিন টাকি মাছ, শোল মাছ, গজার মাছ, শিং মাছ, মাগুর মাছ, চিংড়ি মাছ, ও বড় মাছের মাথা ভেঙ্গে সীমের লাড়া রান্না করে খেয়ে থাকে। শুধু তাই নয় নরসিংদীতে উৎপাদিত এই আশ্বিনা সীম মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রফতানী হয়ে থাকে। আশ্বিনা সীম বিক্রি করে নরসিংদীর কৃষকরা তাদের সারা বছরের নগদ অর্থের চাহিদা পুরন করে থাকে।