সিনহাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে হিন্দু মহাজোট

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে প্রধান বিচারপতি থেকে পদত্যাগে সরকার বাধ্য করেছে বলে অভিযোগ করেছে জাতীয় হিন্দু মহাজোট। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বলেছেন, ‘আমাদের প্রধান বিচারপতিকে যেভাবে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে তা ইতিহাসে নজিরবিহীন। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানাই। আজ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে হিন্দু সম্প্রদায়ের এই নেতা এ অভিযোগ করেন। সম্প্রতি রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার তারাগঞ্জ ঠাকুরপাড়া গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ এবং প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জাতীয় হিন্দু মহাজোট।

গত ১৩ অক্টোবর এক মাসের ছুটি নিয়ে দেশের বাইরে যাওয়া সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ছুটি শেষে দেশে না ফিরে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন সিঙ্গাপুর দূতাবাসের মাধ্যমে। রাষ্ট্রপতির কাছে লেখা এই পত্র এরই মধ্যে বঙ্গভবনে পৌঁছেছে।

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী মামলার রায়ে সংসদ, শাসনব্যবস্থা ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি নিয়ে নানা মন্তব্যের কারণে প্রধান বিচারপতির তীব্র সমালোচনা করে আসছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। এই অবস্থায় সিনহার ছুটি নিয়ে বিদেশ যাওয়ার আগে থেকেই বিএনপি নেতারা অভিযোগ করে আসছিলেন প্রধান বিচারপতির ওপর চাপ প্রয়োগের।

আর সিনহার প্রধান বিচারপতির পদ ছাড়ার পর বিএনপির পক্ষ থেকেও অভিযোগ করা হচ্ছে সরকার তাকে পদত্যাগে বাধ্য করেছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এক্ষেত্রে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই। তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে হিন্দু মহাজোটের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্যে গোবিন্দ চন্দ্র প্রামণিক বলেন, ‘সারাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হচ্ছে, কিন্তু তাদের রক্ষায় সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর ভূমিকা নেয়া হয়নি। এদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব রক্ষায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘ জাতীয় সংসদ নির্বাচন চলাকালে এবং নির্বাচন পরবর্তী হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা ও নির্যাতন নিরোধ কল্পে এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে জাতীয় সংসদে ৬০টি সংরক্ষিত আসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’

গোবিন্দ চন্দ্র বলেন, ‘পাশাপাশি আগামী ১৬ নভেম্বরের মধ্যে চট্টগ্রামের হাটহাজারী, কক্সবাজারের রামু, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর, রংপুরের ঠাকুরপাড়ায় হামলাকারী ও অগ্নিসংযোগকারীদের মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের ঘোষণা দিতে হবে।’

বিভিন্ন সময়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের বিষয় উল্লেখ করে হিন্দু মহাজোটের এই নেতা বলেন, ‘প্রতিটি ঘটনার সঙ্গেই সরকারি দলের নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও ঘটনাটিকে সরকার বিরোধী পক্ষের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দায় এড়িয়ে যাচ্ছে। ফলে অপরাধীরা বারবারই রেহাই পেয়ে যাচ্ছে। একই কারণে বিশ্বজিতের হত্যাকারীরা খালাস পেয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. দুর্গা দাস ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সংবিধানকে সাম্প্রদায়িক করা হয়েছে, আজ সংবিধানের সবকিছু বিঘ্নিত। অথচ মুক্তিযুদ্ধে সব ধর্মের লোকেরা অংশগ্রহণ করে এই দেশটাকে স্বাধীন করেছে।’

সাংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের উপদেষ্টা ঝুমুর গাঙ্গুলী, মনিক চন্দ্র সরকার, মৃত্যুঞ্জয় রায় প্রমুখ।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর