ঢাকা ০৮:০৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অতিথি পাখির কলরবে মুখর শাপলার জল

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৭:১১:১২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ নভেম্বর ২০১৭
  • ৪১৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঋতুর পালাক্রমে হেমন্তের বিদায় নেওয়ার সময় ঘনিয়ে এসেছে। দরজায় কড়া নাড়ছে শীত। ইতোমধ্যে হালকা কুয়াশা পড়তে শুরু করেছে। প্রকৃতির এমন অবস্থায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ আঙ্গিনার লেকগুলোতে আসতে শুরু করেছে অতিথি পাখি। পাখিদের কলরবে ইতোমধ্যে মুখর হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকগুলো। এসব পাখি লাল শাপলার জলে কিচিরমিচির ডাকছে, আবার ডুব দিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে শাপলার মাঝে। অতিথি পাখিদের এমন খুনসুঁটি আর ছোটাছুটি যে কারো মনকে মোহনীয় করে তুলেছে । ষড়ঋতুর এই দেশে শীত উৎসবটা অন্য যেকোনো জায়গার চেয়ে জাবি ক্যাম্পাসে একটু বেশিই। কারণ, শীতের সময়ে যেখানে পাখির কিচির-মিচির আওয়াজের সাথে বসবাসের দুর্লভ সুযোগ মেলে ক্যাম্পাসবাসীর। লাল শাপলার মাঝে দূর থেকে আসা বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখির বাহারি খেলায় মেতে ওঠার দৃশ্যে লেকগুলো এখন জানান দিচ্ছে গ্রাম বাংলার চিরচেনা সেই মনোরম পরিবেশ।

শহরের ব্যস্ত জীবনের যান্ত্রিকতা আর ধুলাবালি থেকে মুক্ত এই ক্যাম্পাসটিতে পাখির ছোঁয়া পেতে প্রতিদিন শত-শত পাখিপ্রেমীরা ভিড় জমান। হাজারো অতিথি পাখির কলকাকলি, জলকেলী, খুনসুঁটিতে এক মনোরম পরিবেশের সৃষ্টি করে। এর সৌন্দর্য নিজ চোখে না দেখলে বোঝা যাবে না। লাল শাপলার মাঝে ধূসর রঙের হরেক প্রজাতির পাখি মেলে ধরেছে জাবি ক্যাম্পাসের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে।

সাধারণত এই সময়টাতে হিমালয়ের উত্তরের দেশ সাইবেরিয়া, চীন, মঙ্গোলিয়া ও নেপালে প্রচুর তুষারপাত হওয়ায় পাখিরা টিকতে না পেরে বাংলাদেশের মতো নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে চলে আসে। তাই দূর-দূরান্ত থেকে আসা নাম না জানা এসব পাখিকে স্বাগত জানায় জাবি ক্যাম্পাস। শীত চলে গেলে তারাও চলে যায় তাদের আপন ঠিকানায়। তাই এসব অতিথিকে স্বাগত জানাতে নতুন রূপে সেজেছে লেকগুলো।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ছোট-বড় ১০ থেকে ১২টি লেক থাকলেও পাখি আসে মূলত চারটি লেকে। এ বছর এখন পর্যন্ত রেজিস্ট্রার ভবনের সামনের লেক ও ট্রান্সপোর্ট সংলগ্ন লেকেই দেশীয় সরালি নামের হাঁসজাতীয় পাখির দেখা মিলেছে। বাকি লেকগুলোতে এখনো পাখি আসতে শুরু করেনি। এছাড়া বোটানিক্যাল গার্ডেনের পাশের লেকেও দেখতে পাবেন খুনসুঁটিতে ব্যস্ত অতিথি পাখিদের।

জাবির এই আঙিনায় অতিথি পাখিদের মধ্যে অন্যতম হলো, সরাল, পিচার্ড, গার্গেনি, মুরগ্যাধি, মানিকজোড়, কলাই, নাকতা, জলপিপি, ফ্লাইপেচার, কোম্বডাক, পাতারি, চিতাটুপি, লাল গুড়গুটি ইত্যাদি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের তথ্যমতে, ১৯৮৬ সালে সর্বপ্রথম এখানে অতিথি পাখি আসে। তখন ক্যাম্পাসে ৯৮ প্রজাতির পাখি দেখা যেত। বর্তমানে ১৯৫ প্রজাতির পাখির দেখা মেলে। এর মধ্যে ১২৬টি দেশীয় প্রজাতির এবং ৬৯টি বিদেশি। এদের বেশিরভাগই হাঁস জাতীয় পাখি। এ ক্যাম্পাসে যে সব পাখি আসে সেসবের মধ্যে ৯৮ শতাংশই ছোট সরালি। আর বাকি ২ শতাংশ অন্য প্রজাতির পাখি।

অন্যদিকে, জাবিতে তিন ধরনের শাপলার দেখা মেলে। সাদা, লাল এবং নীল। সাদা শাপলা সবখানে পাওয়া গেলেও লাল ও নীল শাপলা খুবই কমই দেখা যায়। কিন্তু জাবিতে প্রচুর লাল শাপলা ফোটে। এই শাপলার আরেক নাম রক্তকমল। এটি একটি জলজ উদ্ভিদ, যার পাতা এবং বোঁটা লালচে সবুজ। এই ফুল রাতে ফোটে। সেইসাথে সন্ধান মিলেছে নীল রঙের শাপলার। যার আরেক নাম শালুক বা নীলকমল।

দৃষ্টিনন্দন লেকে নানা জাতের শাপলা আর তার মাঝে অতিথি পাখির বাহারী রূপের খুনসুঁটি দেখতে আপনিও আসতে পারেন আর হারিয়ে যেতে পারেন কিছুক্ষণের জন্য। উপভোগ করতে পারেন রক্তকমল শাপলা শোভিত লেকের মাঝে অতিথি পাখির এক অনন্য প্রকৃতির ছোঁয়া।

প্রতিদিন রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে শুভযাত্রা, ডি-লিংক, ওয়েলকাম, ঠিকানা, সাভার পরিবহন, স্বজন, ইতিহাস, রাজধানী, লাব্বাইক, গ্রামীণ শুভেচ্ছাসহ বিভিন্ন পরিবহনের বাস ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে চলাচল করছে। এছাড়া গাবতলী থেকেও আরিচা ও মানিকগঞ্জের বেশ কয়েকটি পরিবহনের বাস চলাচল করে। এসব বাসে চড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরি গেট বা প্রান্তিক গেটে নেমে চলে আসতে পারেন অতিথি পাখির এই ক্যাম্পাসে।

ছবি: রফিকুল ইসলাম

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

অতিথি পাখির কলরবে মুখর শাপলার জল

আপডেট টাইম : ০৭:১১:১২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ নভেম্বর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঋতুর পালাক্রমে হেমন্তের বিদায় নেওয়ার সময় ঘনিয়ে এসেছে। দরজায় কড়া নাড়ছে শীত। ইতোমধ্যে হালকা কুয়াশা পড়তে শুরু করেছে। প্রকৃতির এমন অবস্থায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ আঙ্গিনার লেকগুলোতে আসতে শুরু করেছে অতিথি পাখি। পাখিদের কলরবে ইতোমধ্যে মুখর হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকগুলো। এসব পাখি লাল শাপলার জলে কিচিরমিচির ডাকছে, আবার ডুব দিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে শাপলার মাঝে। অতিথি পাখিদের এমন খুনসুঁটি আর ছোটাছুটি যে কারো মনকে মোহনীয় করে তুলেছে । ষড়ঋতুর এই দেশে শীত উৎসবটা অন্য যেকোনো জায়গার চেয়ে জাবি ক্যাম্পাসে একটু বেশিই। কারণ, শীতের সময়ে যেখানে পাখির কিচির-মিচির আওয়াজের সাথে বসবাসের দুর্লভ সুযোগ মেলে ক্যাম্পাসবাসীর। লাল শাপলার মাঝে দূর থেকে আসা বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখির বাহারি খেলায় মেতে ওঠার দৃশ্যে লেকগুলো এখন জানান দিচ্ছে গ্রাম বাংলার চিরচেনা সেই মনোরম পরিবেশ।

শহরের ব্যস্ত জীবনের যান্ত্রিকতা আর ধুলাবালি থেকে মুক্ত এই ক্যাম্পাসটিতে পাখির ছোঁয়া পেতে প্রতিদিন শত-শত পাখিপ্রেমীরা ভিড় জমান। হাজারো অতিথি পাখির কলকাকলি, জলকেলী, খুনসুঁটিতে এক মনোরম পরিবেশের সৃষ্টি করে। এর সৌন্দর্য নিজ চোখে না দেখলে বোঝা যাবে না। লাল শাপলার মাঝে ধূসর রঙের হরেক প্রজাতির পাখি মেলে ধরেছে জাবি ক্যাম্পাসের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে।

সাধারণত এই সময়টাতে হিমালয়ের উত্তরের দেশ সাইবেরিয়া, চীন, মঙ্গোলিয়া ও নেপালে প্রচুর তুষারপাত হওয়ায় পাখিরা টিকতে না পেরে বাংলাদেশের মতো নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে চলে আসে। তাই দূর-দূরান্ত থেকে আসা নাম না জানা এসব পাখিকে স্বাগত জানায় জাবি ক্যাম্পাস। শীত চলে গেলে তারাও চলে যায় তাদের আপন ঠিকানায়। তাই এসব অতিথিকে স্বাগত জানাতে নতুন রূপে সেজেছে লেকগুলো।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ছোট-বড় ১০ থেকে ১২টি লেক থাকলেও পাখি আসে মূলত চারটি লেকে। এ বছর এখন পর্যন্ত রেজিস্ট্রার ভবনের সামনের লেক ও ট্রান্সপোর্ট সংলগ্ন লেকেই দেশীয় সরালি নামের হাঁসজাতীয় পাখির দেখা মিলেছে। বাকি লেকগুলোতে এখনো পাখি আসতে শুরু করেনি। এছাড়া বোটানিক্যাল গার্ডেনের পাশের লেকেও দেখতে পাবেন খুনসুঁটিতে ব্যস্ত অতিথি পাখিদের।

জাবির এই আঙিনায় অতিথি পাখিদের মধ্যে অন্যতম হলো, সরাল, পিচার্ড, গার্গেনি, মুরগ্যাধি, মানিকজোড়, কলাই, নাকতা, জলপিপি, ফ্লাইপেচার, কোম্বডাক, পাতারি, চিতাটুপি, লাল গুড়গুটি ইত্যাদি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের তথ্যমতে, ১৯৮৬ সালে সর্বপ্রথম এখানে অতিথি পাখি আসে। তখন ক্যাম্পাসে ৯৮ প্রজাতির পাখি দেখা যেত। বর্তমানে ১৯৫ প্রজাতির পাখির দেখা মেলে। এর মধ্যে ১২৬টি দেশীয় প্রজাতির এবং ৬৯টি বিদেশি। এদের বেশিরভাগই হাঁস জাতীয় পাখি। এ ক্যাম্পাসে যে সব পাখি আসে সেসবের মধ্যে ৯৮ শতাংশই ছোট সরালি। আর বাকি ২ শতাংশ অন্য প্রজাতির পাখি।

অন্যদিকে, জাবিতে তিন ধরনের শাপলার দেখা মেলে। সাদা, লাল এবং নীল। সাদা শাপলা সবখানে পাওয়া গেলেও লাল ও নীল শাপলা খুবই কমই দেখা যায়। কিন্তু জাবিতে প্রচুর লাল শাপলা ফোটে। এই শাপলার আরেক নাম রক্তকমল। এটি একটি জলজ উদ্ভিদ, যার পাতা এবং বোঁটা লালচে সবুজ। এই ফুল রাতে ফোটে। সেইসাথে সন্ধান মিলেছে নীল রঙের শাপলার। যার আরেক নাম শালুক বা নীলকমল।

দৃষ্টিনন্দন লেকে নানা জাতের শাপলা আর তার মাঝে অতিথি পাখির বাহারী রূপের খুনসুঁটি দেখতে আপনিও আসতে পারেন আর হারিয়ে যেতে পারেন কিছুক্ষণের জন্য। উপভোগ করতে পারেন রক্তকমল শাপলা শোভিত লেকের মাঝে অতিথি পাখির এক অনন্য প্রকৃতির ছোঁয়া।

প্রতিদিন রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে শুভযাত্রা, ডি-লিংক, ওয়েলকাম, ঠিকানা, সাভার পরিবহন, স্বজন, ইতিহাস, রাজধানী, লাব্বাইক, গ্রামীণ শুভেচ্ছাসহ বিভিন্ন পরিবহনের বাস ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে চলাচল করছে। এছাড়া গাবতলী থেকেও আরিচা ও মানিকগঞ্জের বেশ কয়েকটি পরিবহনের বাস চলাচল করে। এসব বাসে চড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরি গেট বা প্রান্তিক গেটে নেমে চলে আসতে পারেন অতিথি পাখির এই ক্যাম্পাসে।

ছবি: রফিকুল ইসলাম