হাওর বার্তা ডেস্কঃ সিংগাইর, হরিরামপুর এবং সদর উপজেলার ১টি ইউনিয়নকে নিয়ে মানিকগঞ্জ-২ আসন। এ আসনের বর্তমান এমপি ফোক সম্রাজ্ঞী ও বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম। তাকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী করার আগে বিএনপির মঞ্চে গান পরিবেশন করার অভিযোগে মানিকগঞ্জ আওয়ামী লীগ অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে দলীয় টিকিট পেয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের এমপি নির্বাচিত হন তিনি। কিন্তু ২ বছর পার হলেও তিনি তার নির্বাচনী আসনের দলীয় কোন্দল মেটাতে পারেননি। বরং গত পৌর নির্বাচনে নিজ প্রভাব খাটিয়ে তার ছেলেকে মনোনয়ন দিয়ে সমালোচনায় আসেন এ এমপি। তাছাড়া মমতাজ বেগম আরো বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন ২০১৭ সালে দুটি বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় তাকে প্রধান অতিথি না করায় অনুষ্ঠান মঞ্চ ভাঙচুরের অভিযোগ থাকায়।
আগামী নির্বাচন সামনে রেখে মানিকগঞ্জ-২ (সিঙ্গাইর-হরিরামপুর) আসনে প্রধান দুই দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে এখন পর্যন্ত দু’জনকে দেখা যাচ্ছে জনসংযোগ চালাতে। নিজ দলের মনোনয়ন পেতে কোনো সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী আপাতত মাঠে না থাকায় একাই মাঠে বেড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগের এমপি কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম। অন্যদিকে পুলিশি গ্রেফতার ও সরকারি দলের নেতাকর্মীদের আক্রমণে কোণঠাসা বিএনপি মাঠছাড়া হলেও এর মধ্যেই ঘরোয়াভাবে গণসংযোগ করছেন সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার মাঈনুল ইসলাম খান শান্ত।
সরকারি অনুষ্ঠানসহ দলের সভা-সমাবেশে অংশ নিয়ে সরকারের উন্নয়নের চিত্র সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন গত নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম। তবে এই এমপির আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন থেকে নির্বাচন পর্যন্ত সবকিছু নির্বিঘ্ন হবে এমনটা নয়। দলে অন্তত পাঁচজন মনোনয়নপ্রত্যাশী আছেন। আছে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল। আর এসব সিঙ্গাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজের জন্য নির্বাচনকে কঠিন করে তুলবে বলে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের আশঙ্কা। মানিকগঞ্জ-২ আসনে মমতাজ ছাড়া আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশী অন্যরা হলেন সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা শামসুদ্দীন আহম্মেদ, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক ক্রীড়া ও যুববিষয়ক সম্পাদক দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুল, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও হাটিপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম মনির হোসাইন, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও জেলা পরিষদের নির্বাচিত সদস্য আব্দুস সালাম চৌধুরী।
মমতাজের জন্য সবচেয়ে অস্বস্তির বিষয় হলো তার নিজের সন্তানসহ অনুসারীদের নিয়ে এলাকায় নানা ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি হওয়া। দলের নেতাকর্মীরা এ বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, এলাকায় নিজ দলের মধ্যে কোন্দল থাকায় আগামী সংসদ নির্বাচন মমতাজের জন্য সহজ হবে না। সিঙ্গাইর ও হরিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের অভিযোগ, প্রয়োজনের সময় পাওয়া যায় না এই এমপিকে।
সব সময় এলাকায় না পাওয়ার অভিযোগ আছে বিএনপির সম্ভাব্য প্রধান মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মাঈনুল ইসলাম খান শান্তর বিরুদ্ধেও। মাসে দু’একদিন সিঙ্গাইর উপজেলার চারিগ্রাম এলাকায় নিজ বাড়িতে দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে ঘরোয়া কর্মসূচি পালন করলেও বেশিরভাগ সময় তিনি ঢাকায় অবস্থান করে নিজের ব্যবসা পরিচালনা করছেন।
গত দশম নির্বাচনের পর সরকারবিরোধী আন্দোলনে ব্যর্থ দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি এখনো নিজেদের গুছিয়ে উঠতে পারেনি। পুলিশি গ্রেফতার ও সরকারি দলের নেতাকর্মীদের আক্রমণের ভয়ে অনেকে এলাকাছাড়া। তবে বিএনপির জন্য এ মুহূর্তে স্বস্তির কথা দলে মনোনয়নপ্রত্যাশী মাত্র দু’জন। তাদের মধ্যে সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার মাঈনুল ইসলাম খান শান্তর মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে জানা গেছে। তিনি মাঝেমধ্যে ঘরোয়া অনুষ্ঠানে মতবিনিময় করছেন নেতাকর্মীদের সঙ্গে।
ইঞ্জিনিয়ার মঈনুল ইসলাম খান বলেন, ‘পুলিশের নগ্ন আচরণের কারণে আমরা কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারি না। পুলিশ মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের শত শত নেতাকর্মীকে হয়রানি করছে। এরপরও আমরা কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ঘরোয়াভাবে পালন করছি। আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে আমি দলের দিকনির্দেশনা মতো কাজ করে যাচ্ছি।’ সরকারি দলের নেতাকর্মীদের অত্যাচারে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ এবং এর প্রতিফলন আগামী সংসদ নির্বাচনের ভোটে পাওয়া যাবে বলে দাবি করেন তিনি। এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশী হলেন সিঙ্গাইর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবিদুর রহমান খান।
এদিকে শোনা যাচ্ছে ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে এই আসন ছেড়ে দেয়া জাতীয় পার্টি এবার প্রার্থী দেবে। এসএম আবদুল মান্নান হতে পারেন তাদের সম্ভাব্য প্রার্থী। তবে এখন পর্যন্ত মাঠে তার তৎপরতা দেখা যায়নি। সাবেক এমপি ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল মান্নান বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোটে থাকার কারণে গত নির্বাচনে নিজ দলের সিদ্ধান্তে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছি। এবার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নির্দেশে আমি নিজ এলাকায় প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জাতীয় পার্টির মানিকগঞ্জ জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন সম্মেলনের মাধ্যমে মানুষের কাছে ভোট প্রার্থনা করে যাচ্ছি।’ এরশাদের নির্দেশে মান্নান প্রচারণা চালাচ্ছেন দাবি করলেও এ আসনে জাতীয় পার্টির আরেকজন সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম শুনা যাচ্ছে। তিনি হলেন জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি গোলাম ছারোয়ার মিলন।
মানবকণ্ঠ