ঢাকা ০১:৩৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অপরাধীর পায়ের শিকল তৈরিতে ব্যস্ত

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:৪৭:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ নভেম্বর ২০১৭
  • ৫৭৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দিনে বারো ঘণ্টা কাজ করি আগুনের পাশে বসে। আট বছর বয়স থেকে শ্মশান ঘাটের এই কামার দোকানে মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করছি। গত দু’মাস থেকে জেলখানার অপরাধীদের পায়ের শিকল (ডাণ্ডাবেড়ি) তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছি।

গত মাসে কেরানীগঞ্জ জেলখানার ১১শ পিস শিকল ডেলিভারি দিয়েছি বর্তমানে পাঁচ হাজার শিকল বানানোর কাজে রাত-দিন সমানতালে কাজ করতে হচ্ছে।’

কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর পোস্তগোলার শ্মশান ঘাট লোহার মার্কেটের ভেতরে কামার দোকানের মিস্ত্রি মো. খাজা মিয়া (২৬)।

বৃহস্পতিবার শ্মশান ঘাটে খাজার কর্মস্থলে কাজের ফাঁকে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।

পোস্তগোলার শ্মশানঘাটের শতবর্ষের পুরাতন লোহার মার্কেট। এখানে রয়েছে চার থেকে পাঁচশ পুরনো জাহাজ কাটা লোহার দোকান। লোহার এই আদি মার্কেট ঘিরে এখানে গড়ে উঠেছে চারটি কামার দোকান। যে দোকানগুলোতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসে মানুষ পুরনো লোহা দিয়ে গৃহস্থালি সরঞ্জাম তৈরির জন্য।

কামার মিস্ত্রি খাজা মিয়ার গ্রামের বাড়ি জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ থানায়। মাত্র আট বছর বয়সে বাবার সাথে এই পেশায় কাজ শুরু করেন তিনি। সেই থেকে গত আঠারো বছর এ পেশায় খাজা মিয়া।

বর্তমানের ব্যস্ততা কী নিয়ে? জানতে চাইলে এই লৌহ মানব হাওর বার্তাকে বলেন, আমরা গৃহস্থালির ব্যবহারিক কাজের যেমন-দা, বটি, খুন্তি, ছেনি, হামার, কুড়াল, কাঁচি ইত্যাদি বানাই। এখানে জাহাজ কাটা লোহায় এসব জিনিস বানাতে দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন ছুটে আসে। তবে এই মুহূর্ত্বে আমরা জেলখানার অপরাধীদের পায়ের শিকল বানানোর কাজে ব্যস্ত।

খাজা জানালেন, গত মাসে ১১শ পিস শিকল ডেলিভারি দেয়া হয়েছে। এখন আরো পাঁচ হাজার পিসের অর্ডারের কাজে খুব ব্যস্ত সময় পার করছি। আমি ছাড়াও এখানে আমার চারজন সহকারী রয়েছে।

আগুনের সাথে যখন কর্মযজ্ঞ তখন শারীরিক কোনো সমস্যা হয় কিনা? জানতে চাইলে খাজা বলেন, আগুনের সঙ্গে থেকে আমার হাত ও পায়ের চামড়া কুঁচকে গেছে। এছাড়াও ভারী হাতুড়ি দিয়ে কাজ করায় শরীর অনেক শক্ত ও রোগ নেই বললেই চলে।

আপনার সন্তানও এই পেশায় আসুক আপনি চান কিনা? এমন প্রশ্নের উত্তরে এই লৌহশিল্পী বলেন, আমার এক ছেলে দুই মেয়ে। ওরা পড়াশোনা করছে। এই পেশায় অনেক কষ্ট, আমি চাই না আমার ছেলে এই পেশায় আসুক। ওদের আমি মানুষের মতো মানুষ করবো।

এই ডাণ্ডাবেড়ি অপরাধীর পায়ে পরানো হবে এতে আপনার অনুভূতি কী? জানতে চাইলে একগাল হাসিতে খাজা মিয়ার উত্তর, আসলে যখন ভাবি যে আমার বানানো বেড়ি অপরাধীর পায়ে পরানো হবে তখন কষ্টের যথার্থ মূল্যায়ন খুঁজে পাই। কারণ এই বেড়ি শাস্তি হিসেবে কারো পায়ে পরানো হলে তার ভেতর অপরাধ নামক পশুর মৃত্যু হবে।

কথা শেষে আবারো কাজে মনোযোগ দিলেন পোস্তগোলার শ্মশান ঘাট লোহার মার্কেটের এই লৌহশিল্পী।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

অপরাধীর পায়ের শিকল তৈরিতে ব্যস্ত

আপডেট টাইম : ০৬:৪৭:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ নভেম্বর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দিনে বারো ঘণ্টা কাজ করি আগুনের পাশে বসে। আট বছর বয়স থেকে শ্মশান ঘাটের এই কামার দোকানে মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করছি। গত দু’মাস থেকে জেলখানার অপরাধীদের পায়ের শিকল (ডাণ্ডাবেড়ি) তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছি।

গত মাসে কেরানীগঞ্জ জেলখানার ১১শ পিস শিকল ডেলিভারি দিয়েছি বর্তমানে পাঁচ হাজার শিকল বানানোর কাজে রাত-দিন সমানতালে কাজ করতে হচ্ছে।’

কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর পোস্তগোলার শ্মশান ঘাট লোহার মার্কেটের ভেতরে কামার দোকানের মিস্ত্রি মো. খাজা মিয়া (২৬)।

বৃহস্পতিবার শ্মশান ঘাটে খাজার কর্মস্থলে কাজের ফাঁকে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।

পোস্তগোলার শ্মশানঘাটের শতবর্ষের পুরাতন লোহার মার্কেট। এখানে রয়েছে চার থেকে পাঁচশ পুরনো জাহাজ কাটা লোহার দোকান। লোহার এই আদি মার্কেট ঘিরে এখানে গড়ে উঠেছে চারটি কামার দোকান। যে দোকানগুলোতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসে মানুষ পুরনো লোহা দিয়ে গৃহস্থালি সরঞ্জাম তৈরির জন্য।

কামার মিস্ত্রি খাজা মিয়ার গ্রামের বাড়ি জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ থানায়। মাত্র আট বছর বয়সে বাবার সাথে এই পেশায় কাজ শুরু করেন তিনি। সেই থেকে গত আঠারো বছর এ পেশায় খাজা মিয়া।

বর্তমানের ব্যস্ততা কী নিয়ে? জানতে চাইলে এই লৌহ মানব হাওর বার্তাকে বলেন, আমরা গৃহস্থালির ব্যবহারিক কাজের যেমন-দা, বটি, খুন্তি, ছেনি, হামার, কুড়াল, কাঁচি ইত্যাদি বানাই। এখানে জাহাজ কাটা লোহায় এসব জিনিস বানাতে দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন ছুটে আসে। তবে এই মুহূর্ত্বে আমরা জেলখানার অপরাধীদের পায়ের শিকল বানানোর কাজে ব্যস্ত।

খাজা জানালেন, গত মাসে ১১শ পিস শিকল ডেলিভারি দেয়া হয়েছে। এখন আরো পাঁচ হাজার পিসের অর্ডারের কাজে খুব ব্যস্ত সময় পার করছি। আমি ছাড়াও এখানে আমার চারজন সহকারী রয়েছে।

আগুনের সাথে যখন কর্মযজ্ঞ তখন শারীরিক কোনো সমস্যা হয় কিনা? জানতে চাইলে খাজা বলেন, আগুনের সঙ্গে থেকে আমার হাত ও পায়ের চামড়া কুঁচকে গেছে। এছাড়াও ভারী হাতুড়ি দিয়ে কাজ করায় শরীর অনেক শক্ত ও রোগ নেই বললেই চলে।

আপনার সন্তানও এই পেশায় আসুক আপনি চান কিনা? এমন প্রশ্নের উত্তরে এই লৌহশিল্পী বলেন, আমার এক ছেলে দুই মেয়ে। ওরা পড়াশোনা করছে। এই পেশায় অনেক কষ্ট, আমি চাই না আমার ছেলে এই পেশায় আসুক। ওদের আমি মানুষের মতো মানুষ করবো।

এই ডাণ্ডাবেড়ি অপরাধীর পায়ে পরানো হবে এতে আপনার অনুভূতি কী? জানতে চাইলে একগাল হাসিতে খাজা মিয়ার উত্তর, আসলে যখন ভাবি যে আমার বানানো বেড়ি অপরাধীর পায়ে পরানো হবে তখন কষ্টের যথার্থ মূল্যায়ন খুঁজে পাই। কারণ এই বেড়ি শাস্তি হিসেবে কারো পায়ে পরানো হলে তার ভেতর অপরাধ নামক পশুর মৃত্যু হবে।

কথা শেষে আবারো কাজে মনোযোগ দিলেন পোস্তগোলার শ্মশান ঘাট লোহার মার্কেটের এই লৌহশিল্পী।