ঢাকা ১০:১৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ধ্বংসের পথে অ্যান্টিবায়োটিক

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৩১:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ অগাস্ট ২০১৫
  • ৩৩৮ বার

শুধু মানুষের একটি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণার বশে ক্রমশ ধ্বংসের দিকে এগোচ্ছে আধুনিক অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ৷‌ অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ প্রতিরোধকারী জীবাণুই আধুনিক ওষুধের যম৷‌ অতি শিগগির মোকাবিলা না করা গেলে, ক্রমশ হারিয়ে যাবে এই ওষুধগুলো৷‌

সম্প্রতি বিবিসি চ্যানেলকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে ইংল্যান্ডের মেডিক্যাল অফিসার ডেম স্যালি ডেভিস আধুনিক ওষুধের ধ্বংসের ব্যাপারে গভীর আতঙ্ক প্রকাশ করেন৷‌ তাঁর মতে, এই মুহূর্তে অ্যান্টিবায়োটিক সহ্য করার ক্ষমতার ভুল ধারণাটি রোগীর মন থেকে দূর করতে না পারলে, আধুনিক ওষুধকে নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচানো অসম্ভব৷‌ যেকোনো সাধারণ রোগ প্রতিরোধে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের নির্দেশই এই সঙ্কট সূত্রপাতের মূলে৷‌ যেকোনো রোগেই অ্যান্টিবায়োটিক সহ্য করার ‘মিথ’ রোগীর মন থেকে দূর না করলে, এই সঙ্কট অবধারিত৷‌ ক্যান্সারের মতো দুরারোগ্য রোগে ব্যবহূত অ্যান্টিবায়োটিকগুলো মূলত রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা হ্রাস ও সংক্রমণ বৃদ্ধি করে৷‌

অফিসার ডেভিসের মতে, জীবাণুগুলো যদি অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধকারী হয়, তবে কোনওমতে ওষুধগুলো কাজ করবার মতো অবস্থায় থাকবে না৷‌ অতএব, অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার বৃথাই হবে৷‌ ওয়েলকাম ট্রাস্টের প্রকাশিত তথ্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করে তিনি আরও বলেন, অ্যান্টিবায়োটিক দ্রুত গ্রহণ করার ক্ষমতার ধারণা যেসব রোগীর মধ্যে রয়েছে, তাদের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় মনের অন্ধকার কাটাতে হবে৷‌ যেকোনো রোগে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারের প্রয়োজন নেই, তবে যখন তা নিতান্তই প্রয়োজনীয় হয়ে পড়বে তখন তার যথাযথ প্রয়োগ করা উচিত৷‌

লন্ডন, ম্যাঞ্চেস্টার এবং বার্মিংহামে চলা অনুষ্ঠান থেকে উঠে এসেছে কিছু চমকপ্রদ তথ্য৷‌ অনুসন্ধানকারী দলের পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বেশিরভাগ মানুষ যাঁরা অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ব্যবহার করেন, মনে করেন, কোনো ব্যাক্টেরিয়া নয় বরং তাঁদের শরীরই অ্যান্টিবায়োটিক সহ্য করার ক্ষমতা রাখে৷‌ ভুলবশত বেশি ডোজের অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার পর তাঁদের ধারণা, তাঁরা এই সব ওষুধ সহ্য করার যথেষ্ট ক্ষমতা রাখে৷‌ কখনও তারা অ্যান্টিবায়োটিকে দারুণ উপকার হচ্ছে ভেবে মাঝপথেই নির্ধারিত কোর্স করে দেন৷‌ ডাক্তার এবং সংবাদ মাধ্যমের কল্যাণে কিছুটা হলেও মানুষ অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধক জীবাণু সম্বন্ধে জানতে শুরু করেছে৷‌ কিছুটা হলেও তারা প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা থেকে বেরিয়ে আসছে৷‌ দেহকে রোগের প্রতিরোধক হিসেবে গড়ে তোলার ভুল ধারণাটি মন থেকে মুছে দিয়ে অ্যান্টিবায়োটিকের সঠিক ব্যবহার এবং কোর্স সম্পূর্ণ করার প্রয়োজনীয়তা বুঝতে হবে প্রত্যেক মানুষকেই৷‌ কোর্স সম্পূর্ণ না করার ফলস্বরূপ রোগীর শরীরে ড্রাগ প্রতিরোধক সংক্রমণ বেড়েছে, ফলে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধগুলিকে সহ্য করার ক্ষমতা বাড়িয়েছে জীবাণুগুলি কিন্তু রোগজীবাণু সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হতে পারেনি৷‌অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধক এই জীবাণুগুলি রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে৷‌মেথিসিলিন প্রতোরিধকারী স্টেফিলোকাস অরেয়াস জীবাণু ৬৪ শতাংশ মানুষের শরীরকে মৃত্যুপথে ঠেলে দিতে সক্ষম৷‌ এই সমস্ত রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসাও বেশ ব্যয়সাপেক্ষ৷‌

স্পোর বা বীজগুটি উৎপন্নকারী সি ডিফিসাইল ব্যাক্টেরিয়া উষ্ণ আবহাওয়ায় আরও ক্ষতিকর৷‌ রোগীর শরীরে দূষণ সৃষ্টি এবং বৃহদন্ত্রের ক্ষতিসাধন করে এরা৷‌ ৮০শতাংশ ম্যানিনজাইটিস রোগীর শরীরকে মৃত্যুপথে ঠেলে দিতে সক্ষম আরেক অতি পরিচিত অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধক ব্যাক্টেরিয়া হলো অ্যাসিনেটে৷‌

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

ধ্বংসের পথে অ্যান্টিবায়োটিক

আপডেট টাইম : ১০:৩১:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ অগাস্ট ২০১৫

শুধু মানুষের একটি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণার বশে ক্রমশ ধ্বংসের দিকে এগোচ্ছে আধুনিক অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ৷‌ অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ প্রতিরোধকারী জীবাণুই আধুনিক ওষুধের যম৷‌ অতি শিগগির মোকাবিলা না করা গেলে, ক্রমশ হারিয়ে যাবে এই ওষুধগুলো৷‌

সম্প্রতি বিবিসি চ্যানেলকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে ইংল্যান্ডের মেডিক্যাল অফিসার ডেম স্যালি ডেভিস আধুনিক ওষুধের ধ্বংসের ব্যাপারে গভীর আতঙ্ক প্রকাশ করেন৷‌ তাঁর মতে, এই মুহূর্তে অ্যান্টিবায়োটিক সহ্য করার ক্ষমতার ভুল ধারণাটি রোগীর মন থেকে দূর করতে না পারলে, আধুনিক ওষুধকে নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচানো অসম্ভব৷‌ যেকোনো সাধারণ রোগ প্রতিরোধে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের নির্দেশই এই সঙ্কট সূত্রপাতের মূলে৷‌ যেকোনো রোগেই অ্যান্টিবায়োটিক সহ্য করার ‘মিথ’ রোগীর মন থেকে দূর না করলে, এই সঙ্কট অবধারিত৷‌ ক্যান্সারের মতো দুরারোগ্য রোগে ব্যবহূত অ্যান্টিবায়োটিকগুলো মূলত রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা হ্রাস ও সংক্রমণ বৃদ্ধি করে৷‌

অফিসার ডেভিসের মতে, জীবাণুগুলো যদি অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধকারী হয়, তবে কোনওমতে ওষুধগুলো কাজ করবার মতো অবস্থায় থাকবে না৷‌ অতএব, অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার বৃথাই হবে৷‌ ওয়েলকাম ট্রাস্টের প্রকাশিত তথ্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করে তিনি আরও বলেন, অ্যান্টিবায়োটিক দ্রুত গ্রহণ করার ক্ষমতার ধারণা যেসব রোগীর মধ্যে রয়েছে, তাদের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় মনের অন্ধকার কাটাতে হবে৷‌ যেকোনো রোগে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারের প্রয়োজন নেই, তবে যখন তা নিতান্তই প্রয়োজনীয় হয়ে পড়বে তখন তার যথাযথ প্রয়োগ করা উচিত৷‌

লন্ডন, ম্যাঞ্চেস্টার এবং বার্মিংহামে চলা অনুষ্ঠান থেকে উঠে এসেছে কিছু চমকপ্রদ তথ্য৷‌ অনুসন্ধানকারী দলের পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বেশিরভাগ মানুষ যাঁরা অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ব্যবহার করেন, মনে করেন, কোনো ব্যাক্টেরিয়া নয় বরং তাঁদের শরীরই অ্যান্টিবায়োটিক সহ্য করার ক্ষমতা রাখে৷‌ ভুলবশত বেশি ডোজের অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার পর তাঁদের ধারণা, তাঁরা এই সব ওষুধ সহ্য করার যথেষ্ট ক্ষমতা রাখে৷‌ কখনও তারা অ্যান্টিবায়োটিকে দারুণ উপকার হচ্ছে ভেবে মাঝপথেই নির্ধারিত কোর্স করে দেন৷‌ ডাক্তার এবং সংবাদ মাধ্যমের কল্যাণে কিছুটা হলেও মানুষ অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধক জীবাণু সম্বন্ধে জানতে শুরু করেছে৷‌ কিছুটা হলেও তারা প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা থেকে বেরিয়ে আসছে৷‌ দেহকে রোগের প্রতিরোধক হিসেবে গড়ে তোলার ভুল ধারণাটি মন থেকে মুছে দিয়ে অ্যান্টিবায়োটিকের সঠিক ব্যবহার এবং কোর্স সম্পূর্ণ করার প্রয়োজনীয়তা বুঝতে হবে প্রত্যেক মানুষকেই৷‌ কোর্স সম্পূর্ণ না করার ফলস্বরূপ রোগীর শরীরে ড্রাগ প্রতিরোধক সংক্রমণ বেড়েছে, ফলে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধগুলিকে সহ্য করার ক্ষমতা বাড়িয়েছে জীবাণুগুলি কিন্তু রোগজীবাণু সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হতে পারেনি৷‌অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধক এই জীবাণুগুলি রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে৷‌মেথিসিলিন প্রতোরিধকারী স্টেফিলোকাস অরেয়াস জীবাণু ৬৪ শতাংশ মানুষের শরীরকে মৃত্যুপথে ঠেলে দিতে সক্ষম৷‌ এই সমস্ত রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসাও বেশ ব্যয়সাপেক্ষ৷‌

স্পোর বা বীজগুটি উৎপন্নকারী সি ডিফিসাইল ব্যাক্টেরিয়া উষ্ণ আবহাওয়ায় আরও ক্ষতিকর৷‌ রোগীর শরীরে দূষণ সৃষ্টি এবং বৃহদন্ত্রের ক্ষতিসাধন করে এরা৷‌ ৮০শতাংশ ম্যানিনজাইটিস রোগীর শরীরকে মৃত্যুপথে ঠেলে দিতে সক্ষম আরেক অতি পরিচিত অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধক ব্যাক্টেরিয়া হলো অ্যাসিনেটে৷‌