হাওর বার্তা ডেস্কঃ আগামী সংসদ নির্বাচনের এখনো অনেক সময় বাকি। তারপরও শুরু হয়ে গেছে রংপুর-৪ আসনের নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ। কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনটি নানা দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ আসনে লড়াইয়ের জন্য বড় তিনটি দলের প্রায় অর্ধডজন প্রার্থী লবিং করছেন। সাধারণ ভোটার থেকে শুরু করে সকলের মাঝে রয়েছে কৌতূহল। শেষ পর্যন্ত কে মনোনয়ন পাবেন সেই দিকেই তাকিয়ে আছেন ভোটাররা।
স্বাধীনতার পর থেকে এই আসনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করতে না পারলেও ২০০৮ সালের নির্বাচনে ইতিহাস গড়ে বিএনপি জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে হারিয়ে ছিনিয়ে নেয় বিশিষ্ট শিল্পপতি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা টিপু মুনশি।
এর ধারাবাহিকতা ২০১৪ সালেও বজায় থাকে। আসনটি ছিনিয়ে নিতে বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির হেভি ওয়েট ছয়জন শিল্পপতি মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের একমাত্র প্রার্থী বর্তমান এমপি টিপু মুনশি। তিনি দুই দুই বার এ আসনে নির্বাচিত হয়ে এলাকার রাস্তা ঘাট, ব্রিজ কালভার্ট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ, বিদ্যুৎ লাইন সম্প্রসারণের কাজসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করায় ভোটারদের নিকট জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। বর্তমানে এ আসন থেকে আগামী নির্বাচনের লড়ার জন্য আওয়ামী লীগ থেকে এখনো টিপু মুনশির বিকল্প প্রার্থী নেই।
বিগত নির্বাচনগুলোতে দুইবার জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত শিল্পপতি আলহাজ করিম উদ্দিন ভরসা এ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। বর্তমানে এ আসনটিতে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ করছেন করিম উদ্দিন ভরসার ছেলে যমুনা ব্যাংকের এমডি সিরাজুল ইসলাম ভরসা। সম্প্রতি যুবলীগ থেকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের হাতে ফুল দিয়ে দলে যোগদান করে শিল্প নগরী হারাগাছের সন্তান বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোস্তফা সেলিম বেঙ্গলও জাতীয় পার্টির টিকিট চাইবেন। এছাড়াও পীরগাছা উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবু নাসের শাহ মো. মাহবুবার রহমান এ আসনের মনোনয়ন পেতে জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে সিরাজুল ইসলাম ভরসা বা মাহবুবার রহমানকে মাঠে তেমন দেখা না গেলেও মোস্তফা সেলিম মাঝেমধ্যে এলাকায় এসে জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন।
অপর দিকে এ আসনটিতে বিএনপির অবস্থা আগে থেকেই কিছুটা নড়েবড়ে। বিগত দিনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক উপ-মন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু এই আসনে এসে সাংগঠনিক কাঠামোকে জোরদার করার জন্য বেশ কয়েকটি সভা-সমাবেশ করে নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করলেও প্রশাসনের চাপের মুখে বর্তমানে তাদের অবস্থা অনেকটা নাজুক। বিগত বছরগুলোতে তাদের কর্মকাণ্ড দলীয় কার্যালয়ে সীমাবদ্ধ থাকলে সম্প্রতি প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যার কারণে ত্রাণ বিতরণকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয়, জেলা এবং উপজেলার নেতাকর্মীদের কয়েকটি শোডাউন দেখা গেছে। এছাড়া নেতারা নীরবে বর্তমান সরকারের ব্যর্থতাগুলো সাধারণ ভোটার সামনে তুলে ধরছেন। বর্তমানে কাউনিয়া উপজেলা বিএনপিতে কোনো দ্বন্দ্ব পরিলক্ষিত না হলেও পীরগাছা বিএনপি দু’ভাগে বিভক্ত। দীর্ঘদিন ধরে এ উপজেলায় বিএনপির কোনো দলীয় কর্মসূচি পালন করছে না। এছাড়াও রংপুর জেলা বিএনপির কমিটি গঠন নিয়ে সিনিয়র এবং জুনিয়র মিলে দু’ভাগে বিভক্ত দলটি। উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ আফছার আলী ও সাধারণ সম্পাদক, সাবেক ছাত্রনেতা আলহাজ আমিনুল ইসলাম রাঙ্গার নেতৃত্বে সিনিয়র গ্রুপ এবং নবগঠিত জেলা বিএনপিতে যুগ্ম সম্পাদক পদে স্থান পাওয়া, উপজেলা যুবদলের সভাপতি শরীফুল ইসলাম ডালেজ-এর নেতৃত্বে চলছে জুনিয়র গ্রুপটি। এ আসনে মনোনয়নের জন্য প্রথম সারিতে আছেন শিল্পনগরী হারাগাছের আরেক শিল্পপতি সাবেক এমপি আলহাজ রহিম উদ্দিন ভরসার ছেলে সাবেক রংপুর জেলা বিএনপির সভাপতি এমদাদুল হক ভরসা এবং বিশিষ্ট শিল্পপতি, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাবেক চেয়ারম্যান, আলহাজ অ্যাডভোকেট ড. শাহেদ কামাল পাটোয়ারী।
বর্তমানে এ আসনটিতে লড়াইয়ের জন্য মনোনয়ন পেতে তদবিরে থাকা ছয় শিল্পপতির মধ্যে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা টিপু মুনশি এলাকায় ঘন ঘন আসা-যাওয়া করছেন। পাশে দাঁড়াচ্ছেন বন্যাদুর্গত মানুষগুলোর। তার সবচেয়ে প্লাস পয়েন্ট মানাষ নদীর বিভিন্ন জায়গায় সেতু নির্মাণ। এতে করে তিনি কাউনিয়া পীরগাছা এলাকার মানুষকে একটি বন্ধনে আবদ্ধ করেছেন। এছাড়াও তিনি এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড মানুষের মাঝে তুলে ধরতে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে অতিথি হয়ে সকলের প্রশংসা কুড়িয়েছেন। জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের মধ্যে পীরগাছা উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবু নাসের শাহ মো. মাহবুবার রহমান এবং সদ্য যোগদানকারী মোস্তফা সেলিম ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাসহ ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি গঠন করে নেতাকর্মীদের মন জয়ের চেষ্টা করছেন। অপরদিকে বিএনপি তাদের আগের অবস্থা থেকে ফিরে আসার জন্য গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের কৌশলকে কাজে লাগিয়ে সাবেক রংপুর জেলা বিএনপি’র সভাপতি এমদাদুল হক ভরসা মাঠ-ঘাট চষে বেড়াচ্ছেন। তিনি বন্যা দুর্গতদের পাশে থেকে সাহায্যে সহযোগিতা করছেন। সব মিলিয়ে রংপুর-৪ (কাউনিয়া-পীরগাছা) আসনে চলছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন নিয়ে জল্পনা-কল্পনা। কে পাবেন কোন দলের টিকিট এ নিয়ে চলছে আলোচনা। চলছে হিসাব-নিকাশ।