প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে ইঙ্গিত করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘হিংসা-বিদ্বেষের পথ ছেড়ে আসুন একটি টেকসই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য আমরা পূর্বের মতো একসঙ্গে কাজ করি। জনগণের রায়ের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা-আস্থা আছে। আপনাদের ভয় কিসের?’
‘হিংসাশ্রয়ী রাজনীতি দেশের মৃতপ্রায় গণতন্ত্রকে কফিনে পুরে ফেলবে একদিন’- এমন আশঙ্কা ব্যক্ত করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘সরকার যেন সেই কাজ করতেই বেশি তৎপর হয়ে উঠেছে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, আমরা এ জন্য দেশ স্বাধীন করিনি। এখন যে নীতিতে সরকার দেশ চালাচ্ছে তা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে বেইমানী ছাড়া কিছু নয়।’
দলটির মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে শুক্রবার বিকেলে এমন মন্তব্য করেন খালেদা জিয়া।
তিনি বলেন, ‘সারা পৃথিবীতে যখন কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার অবসান ঘটছে, একনায়কতান্ত্রিক স্বৈরশাসনের বিলোপ ঘটছে, তখন শেখ হাসিনার সরকার বিরোধী দলকে নির্মূল করার দিবাস্বপ্নে বিভোর।’
বিবৃতিতে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমরা এই বিনা ভোটের সরকারকে বলতে চাই, তারা এ সব কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে মূলত এক ধরনের একদলীয় শাসনব্যবস্থার দিকে হাঁটছে। আমরা হুঁশিয়ার করে দিতে চাই, গণতন্ত্রকে অবরুদ্ধ করে দীর্ঘ সময় দেশ শাসন করা যাবে না। আশা করি, সরকারের বোধোদয় ঘটবে।’
দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ও জয়পুরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি মোজাহার আলী প্রধানকে জামিনে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর আবারও আটক করায় গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করে সরকারের এই ভূমিকার তীব্র নিন্দা জানান খালেদা জিয়া।
বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান বিনা ভোটের সরকার তাদের অনৈতিক ক্ষমতা সংহত করতে সারাদেশে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর যে অত্যাচারের স্টিমরোলার চালাচ্ছে তা বর্ণনাতীত।’
‘সরকার দেশের আইন-কানুন ও বিচারিক রায় পর্যন্ত অশ্রদ্ধা করছে’- উল্লেখ করে বিএনপিপ্রধান বলেন, ‘উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পরও অনেক ক্ষেত্রে আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অনেক রাজনৈতিক বন্দীকে সময়মতো মুক্তি না দিয়ে নানা টালবাহানায় তাদের আটকে রাখছে। এর পরও কেউ জামিন নিয়ে মুক্তিলাভ করলে কারাফটক থেকে নিত্যনতুন সাজানো মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে পুনরায় আটক করে তাদের জেলে পুরছে।’
‘সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এ ধরনের তৎপরতা দেশের আইনের শাসনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন ছাড়া আর কিছুই নয়। আমরা এ ধরনের বেআইনী কর্মকাণ্ড থেকে সরকারকে সরে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। সরকারের এ ধরনের আচরণ মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকার হরণের প্রকৃষ্ট উদাহরণ’- বলেন বিএনপিপ্রধান।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যখন সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলো পালনের উদ্যোগ নিচ্ছি এবং আমাদের দলকে তৃণমূল পর্যায় থেকে পুনর্গঠনের মতো সাংগঠনিক কর্মসূচি নিয়ে এগোচ্ছি তখন সরকার দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দকে নিত্যনতুন মিথ্যা মামলায় আটক করছে, পুরনো মিথ্যা মামলায় চার্জ গঠন করে চার্জশিট প্রদান করছে। এর মূল লক্ষ্য হল বিরোধী দলকে কোনোভাবেই সাংগঠনিক কাজ করতে না দেওয়া।’
বিবৃতিতে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘সরকার বিরোধী নেতাকর্মীদের জেলে পুরে, নিত্যনতুন মিথ্যা মামলা দিয়ে বিরোধী দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত করে নিজেদের অগণতান্ত্রিক শক্তি হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত করছে মাত্র। সরকার যে ভয়াবহ ইমেজ সঙ্কটে নিপতিত তাতে সরকারের ফ্যাসিবাদী আচরণ তাদের ক্রমেই আরও জনবিচ্ছিন্ন করে তুলছে।’
‘সরকার এ সত্য যত দ্রুত অনুধাবন করতে সক্ষম হবে এবং সে অনুযায়ী সকল দলের অংশগ্রহণে দ্রুত একটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে এবং তা অবশ্যই সবার দাবি অনুযায়ী একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে, তাতেই তাদের মঙ্গল’- বলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী।