চলে গেলেন কাজী জাফর

বর্ষীয়ান রাজনীতিক, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির (একাংশ) চেয়ারম্যান কাজী জাফর আহমদ আর নেই। গতকাল সকাল সাড়ে ৭টায় তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি… রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। এর আগে সকাল ৭টায়
গুলশানের নিজ বাসভবনে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। সেখান থেকে তাকে দ্রুত রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে নেয়া হয়। এসময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি হৃদরোগ ও কিডনির সমস্যা ছাড়াও ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী মমতাজ বেগম, তিন মেয়ে কাজী জয়া আহমেদ, কাজী সোনিয়া আহমেদ, কাজী রুনা আহমেদ, ভাই কাজী হাবিবুর রহমান, কাজী ফারুক আহমদ, কাজী জয়নাল আহমদসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, রেলপথমন্ত্রী ও তার নির্বাচনী এলাকা চৌদ্দগ্রামের এমপি মুজিবুল হকসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। এছাড়া কাজী জাফর আহমদের মৃত্যুতে আজ সারা দেশে দোয়া মাহফিল কর্সসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। বাদ জুমা সারা দেশে মসজিদে মসজিদে বিশেষ দোয়া ও অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে গতকাল কাজী জাফরের মরদেহ ইউনাইটেড হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়। আজ সকাল ৮টায় টঙ্গীর মিলগেটে, ১১টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা, বাদ জুমা জাতীয় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে তিনদফা তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। তবে তার মরদেহ দাফনের বিষয়টি এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি। এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির (একাংশ) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার জানান, জাফর ভাইয়ের ছোট মেয়ে কাজী রুনা অস্ট্রেলিয়ায় আছেন। তিনি দেশে ফেরার চেষ্টা করছেন। তার দেশে ফেরার বিষয়টি নিশ্চিত হলেই দাফনের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
খালেদার শ্রদ্ধা
এদিকে দুপুর ১২টার দিকে কাজী জাফর আহমদের মরদেহ গোসল করিয়ে ইউনাউটেড হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শেষবারের মতো তার মরদেহ গুলশান-২ এর নিজ বাসভবনে (রোড নং-৬৮, বাসা নং-২) নেয়া হয়। এসময় তার মরদেহে দলের নেতাকর্মী ও আত্মীয়-স্বজন এবং শুভানুধ্যায়ীরা শেষ শ্রদ্ধা জানান। রাত সাড়ে ৮টার দিকে ২০ দলীয় জোটের শীর্ষনেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কাজী জাফর আহমদের বাসভবনে যান। এসময় মরহুমের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানান। রাতে তার মরদেহ লাশবাহী গাড়িতে বাসভবনে রাখা হয়।
হাসপাতালে রাজনৈতিক নেতা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা
এদিকে কাজী জাফর আহমদের মৃত্যুর খবরে ইউনাইটেড হাসপাতালে ছুটে যান বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। এসময় তার পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানান তারা। রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বিকল্পধারার সভাপতি প্রফেসর ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, নোবেল বিজয়ী ও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, আবদুল্লাহ আল নোমান, যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান, সহ-আইনবিষয়ক সম্পাদক নিতাই রায় চৌধুরী, সাবেক এমপি হাসানউদ্দিন সরকার, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ন্যাপের জেবেল রহমান গাণি, এনডিপির চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মুর্তজা, মুসলিম লীগের এএইচএম কামারুজ্জামান, ইসলামিক পার্টির ব্যারিস্টার সাইয়েদুল হাসান ইকবাল, এলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, ব্যবসায়ী নেতা মাহবুবুর রহমান, বিজেএমইএর সাবেক সভাপতি গোলাম কুদ্দুস, সাংবাদিক কাজী সিরাজ, জাপা (জাফর) নেতা টিআইএম ফজলে রাব্বী ও কণ্ঠশিল্পী ফকির আলমগীর হাসপাতালে আসেন। এদিকে কাজী জাফর আহমদের মরদেহ দেখতে যাননি তার একসময়ের রাজনৈতিক নেতা সাবেক প্রেসিডেন্ট ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
রাজনৈতিক সহকর্মীদের স্মৃতিচারণ
কাজী জাফর আহমদের মৃত্যুর খবর শুনে ইউনাউটেড হাসপাতালে যান সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বিকল্পধারার সভাপতি প্রফেসর বদরুদ্দোজা চৌধুরী। এসময় মরহুমের স্মৃতিচারণ করে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আমি যখন রাজনীতিতে আসিনি তার অনেক আগে কাজী জাফর আহমদের সঙ্গে আমার পরিচয়। আমার স্ত্রী হাসিনা ওয়ার্দা চৌধুরী যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন তখন কাজী জাফর তার সহপাঠী ছিলেন। সেই সূত্র ধরে তার সঙ্গে আমার পরিচয়। তিনি আমার খুব ভাল বন্ধু ছিলেন। যে কোন আন্দোলনে তার ভূমিকা ছিল দারুণ। যেখানে অন্যায় দেখেছেন সেখানেই তিনি প্রতিবাদ করেছেন। কাজী জাফর বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবেন। বন্ধুর স্মৃতিচারণ করে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ও নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, কাজী জাফর আহমদ আমার সমসাময়িক ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা একসঙ্গে পড়ালেখা করেছি। তিনি আমার খুব ভাল বন্ধু ছিলেন। তিনি রাজনীতি করতেন। আমি রাজনীতি করতাম না। কিন্তু তিনি যেখানে থাকতেন আমি সেখানে চলে যেতাম। আবার আমার কাছে তিনি চলে আসতেন। একের পর এক আমার সমসাময়িক বন্ধুরা চলে যাচ্ছে। এটা আমার জন্য খুবই বেদনাদায়ক। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে সব স্বাধিকার আন্দোলনে কাজী জাফর আহমদের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বন্ধুত্ব তৈরিতে তার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। দলের আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, স্বাধিকার আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের রাজনীতিতে কাজী জাফরের অবদান অনস্বীকার্য। তিনি একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ ছিলেন। তার মৃত্যু আমাদের ২০ দলীয় জোটের জন্য বেদনার। আমরা এরকম বড়মাপের একজন রাজনীতিবিদের মৃত্যুতে শোকহত। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, কাজী জাফর আমার বয়সে ছোট। তার চলে যাওয়াটা আমার জন্য বেদনার। বিভিন্ন সময়ে রাজনীতিতে মতভিন্নতা হয়েছে আমাদের মধ্যে। আবার এক সঙ্গে আমরা মন্ত্রিসভায়ও ছিলাম। কিন্তু গণমানুষের রাজনীতি থেকে কখন সে বিচ্যুত হয়নি- কাজী জাফর কাজী জাফরই ছিলেন। তার এই মৃত্যু রাজনীতির জন্য একটা শূন্যতার সৃষ্টি করবে। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, কাজী জাফর ভাই ও তার পরিবারের সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। একসঙ্গে অনেকদিনের রাজনীতির সম্পর্ক। তার এই মৃত্যু বেদনা ও যন্ত্রণার। আমি তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শোক
কাজী জাফর আহমদে মৃত্যুতে বিএনপির চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোটের শীর্ষনেতা খালেদা জিয়া শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা ই-মেইলে প্রয়াত নেতার প্রতি শোক জানিয়েছেন। পৃথক বার্তায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, তরিকুল ইসলাম, ঢাকার সাবেক মেয়র ব্যারিস্টার আবুল হাসনাত প্রয়াত নেতার প্রতি শোক প্রকাশ করেন। এছাড়া কাজী জাফরের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে বিকল্পধারা, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, ২০ দলীয় জোটের শরিক এলডিপি, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাপ, বাংলাদেশ কৃষক পরিষদ, বাংলাদেশ জনসেবা পার্টি, ছাত্রদল, জাসাস মহানগর দক্ষিণ শোক প্রকাশ করে।
‘বাবা-মার কবর জিয়ারত করতে পারলেন না’
গত কয়েকদিন ধরেই প্রয়াত বাবা-মাকে স্বপ্ন দেখছিলেন কাজী জাফর আহমদ। তারপরই তিনি সিদ্ধান্ত নেন- ২৭শে আগস্ট কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে গিয়ে বাবা-মায়ের কবর জিয়ারত করবেন। সেই অনুযায়ী ট্রেনের আগাম টিকিটও কেটেছিলেন। বৃহস্পতিবার ভোরে ঘুম থেকে উঠে সকল প্রস্তুতিও সারেন তিনি। কিন্তু যেতে পারলেন না বাবা-মায়ের কবর জিয়ারত করতে। না ফেরার দেশে চলে গেলেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। ইউনাইটেড হাসপাতালে স্বামীর মৃত্যুর পূর্বক্ষণের স্মৃতি বর্ণনা করে স্ত্রী মমতাজ বেগম বলেন, ৭টা ৪০ মিনিটে মহানগর প্রভাতী ট্রেন ধরার জন্য বৃহস্পতিবার ভোরে ঘুম থেকে উঠে বুলু (কাজী জাফর আহমদ)। ফ্রেস হয়ে নাস্তাও সারেন। কিন্তু সকাল ৭টার দিকে হঠাৎ বুলু বলেন, আমার বুকে ব্যথা করছে। এরপর স্বামীকে বিছানায় শুইয়ে দেন তিনি। কিছুক্ষণ পর দেখেন- স্বামীর কোন সাড়া-শব্দ নেই। এরপর দ্রুত তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে মমতাজ বেগম বলেন, গত কয়েকদিন ধরে বুলু আমাকে বলছিল- বাবা-মা আমাকে ডাকছে। এরপর বাবা-মায়ের কবর জিয়ারত করার সিদ্ধান্ত নেন। প্রেম করে বিয়ে হয়েছিল তাদের। ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতির প্রতি ছিল বুলুর প্রচণ্ড জোঁক। দীর্ঘ ৪০ বছরের দাম্পত্য জীবনে তাদের সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত মধুর। স্বামীর স্মৃতিচারণ করে মমতাজ বেগম বলেন, শুরু থেকেই আমি তাকে বলেছিলাম- তুমি দেশের জনগণের জন্য রাজনীতি করো। তুমি সেটাই করবে। আমি সংসার দেখবো। সংসারের কোন কিছুতেই তাকে আটকে রাখিনি। শেষ দিনটি পর্যন্ত পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। কিন্তু আজ সে আমাকে ছেড়ে চলে গেল। আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না। তিন কন্যা সন্তানের জনক কাজী জাফর-মমতাজ দম্পতি। বড় দুই মেয়ে কাজী জয়া আহমেদ ও কাজী সোনিয়া আহমেদ দেশেই থাকেন। ছোট মেয়ে কাজী রুনা আহমেদ স্বামীর সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করেন। বাবাকে শেষ বারের মতো দেখার জন্য তিনিও দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ভাতিজা কাজী মোহাম্মদ ইকবাল ইউনাইটেড হাসপাতালে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন। ট্রেনের টিকিট দেখিয়ে বলেন, আমার একটি কিডনি চাচার শরীরে ছিল। বাড়ি যাওয়ার জন্য আমিই সব কাজ করে দেই। চাচাকে সঙ্গে নিয়ে আমার বাড়ি ফেরার কথা ছিল। কিন্তু আমাদের রেখে একেবারেই বাড়ি চলে গেলেন।
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন
১৯৩৯ সালের ১লা জুলাই কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের চিওড়া কাজী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন কাজী জাফর আহমদ। মেধাবী ছাত্র হিসেবে তিনি খুলনা জেলা স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীকালে রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করার পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ অনার্স ও এমএ (ইতিহাস) পাস করেন। তিনি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে এমএ এবং এলএলবি কোর্স সম্পন্ন করা সত্ত্বেও কারাগারে চলে যাওয়ায় পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। কাজী জাফর আহমেদ ১৯৫৫ সালে সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে যোগদান করেন। রাজশাহী জেলা ছাত্র ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক এবং রাজশাহী কলেজ সাহিত্য মজলিশের মুখপাত্র, সাহিত্যিকীর সম্পাদক হিসেবে রাজনীতিতে পদচারণা শুরু করেন। তিনি ১৯৫৯-১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৬০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি ১৯৬২-১৯৬৩ সালে অবিভক্ত পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের (এপসু) সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৬২ সালে সামরিক শাসন ও শরীফ শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলনে কাজী জাফর আহমদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ছাত্র জীবন শেষে তিনি শ্রমিক রাজনীতির সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। ১৯৬৭ সাল থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলা শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি ছিলেন। ১৯৭২-১৯৭৪ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী তখন ছিলেন ন্যাপের চেয়ারম্যান। এরপর ১৯৭৪ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তিনি ইউনাইটেড পিপলস পার্টির (ইউপিপি) প্রথমে সাধারণ সম্পাদক ও পরে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৭৮ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিপরিষদের শিক্ষামন্ত্রী হন। ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির জন্মলগ্ন থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬-১৯৯০ সালে তিনি জাতীয় পার্টির সরকারে পর্যায়ক্রমে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বন্দর-জাহাজ ও নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৯-১৯৯০ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তিনবার কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম আসন থেকে জাতীয় পার্টির টিকিটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৩ সালের ২০শে ডিসেম্বর বিশেষ কাউন্সিলের মাধ্যমে জাতীয় পার্টির (একাংশের) চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এ পদে দায়িত্ব পালন করেন। জাতীয় পার্টির দায়িত্ব নেয়ার পর ২০১৪ সালের ২৫শে জানুয়ারি তিনি ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর