হাওর বার্তা ডেস্কঃ দিনাজপুর-৬ (বিরামপুর, নবাবগঞ্জ, ঘোড়াঘাট ও হাকিমপুর) আসনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অস্থিরতা বাড়ছে আওয়ামী লীগে। দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে মাঠে নেমেছেন একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী। তাদের ঘিরে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় রাজনীতিতে ছড়িয়ে পড়েছে কোন্দল। নির্বাচন সামনে রেখে বর্তমান আওয়ামী লীগ এমপি শিবলী সাদিকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন স্থানীয় পর্যায়ের একাধিক শীর্ষ নেতা। প্রকাশ্যেই তারা নিজ দলীয় এমপির বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করছেন, তুলেছেন অনিয়মের অভিযোগও। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীকে আগামী নির্বাচনেও অগ্রাধিকার দেওয়া হতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে। বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরা আগামী নির্বাচনে জামায়াতকে ছাড় দিতে নারাজ। ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে জোটের সমর্থন নিয়ে জামায়াতের প্রার্থীরা এই আসনে প্রার্থিতা করেছেন।
এমপি শিবলী সাদিক নবাবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। সাবেক এই উপজেলা চেয়ারম্যান নৌকা প্রতীক নিয়ে ২০১৪ সালের নির্বাচনে প্রার্থিতা করে এমপি হন। তার বাবা প্রয়াত মোস্তাফিজুর রহমান ফিজুও এই আসনের এমপি ছিলেন। আগামী নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থিতার প্রস্তুতি নিচ্ছেন শিবলী সাদিক। দলীয় মনোনয়ন দৌড়ে তাকে টেক্কা দিতে মাঠে আছেন সাবেক এমপি আজিজুল হক চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আলতাফুজ্জামান মিতা এবং নবাবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান। সম্ভাব্য এই প্রার্থীদের মধ্যে আলতাফুজ্জামান এবং আতাউর রহমান বর্তমান এমপির বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে সরব বহুদিন ধরে। তবে এমপি শিবলী সাদিকের দাবি, মনোনয়ন পাওয়ার আশায় এ দু’জন তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আলতাফুজ্জামান মিতার অভিযোগ, এমপি শিবলী সাদিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে হাইব্রিড নেতাদের নিয়ে স্থানীয় রাজনীতিতে নিজস্ব বলয় তৈরি করেছেন। এতে যোগ্য ও ত্যাগী নেতারা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর শিবলী সাদিক নিয়োগ বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ ছাড়া উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দ টাকাও আত্মসাৎ করেছেন। প্রয়োজনের সময় স্থানীয় নেতাকর্মী বা বাসিন্দারা এমপিকে পাশে পান না বলেও অভিযোগ করেন মিতা।
আরেক সম্ভাব্য প্রার্থী নবাবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান এর আগে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রার্থিতা করে পরাজিত হয়েছেন। তার অভিযোগ, এমপি শিবলী সাদিকের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তার মদদে জামায়াতের প্রার্থীকে বিজয়ী করা হয়। নেতাকর্মীরা এখন তার সঙ্গে নেই। তাই তিনি আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন চাইবেন।
এমপি শিবলী সাদিক এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরাই তার বিরুদ্ধে বলছেন। এতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। কিন্তু দায়িত্বশীল পদে থাকায় অভিযোগকারীদের নিয়ে তাদের মতো করে সমালোচনা করতে পারছেন না বলেও মন্তব্য করেন শিবলী সাদিক। এমপি হয়ে এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, গত চার বছরে ৮৬ হাজার পরিবারে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছেন। চারটি কলেজ ও চারটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সরকারীকরণ, ২৬টি নতুন ভবন নির্মাণ এবং ১২৩ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা পাকা করেছেন। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে তিনি দলের মনোনয়ন চাইবেন।
১৯৯১ সালে একক প্রার্থী হয়ে এবং ২০০১ সালে চারদলীয় জোটের মনোনয়ন নিয়ে এই আসনের এমপি নির্বাচিত হন জামায়াতের অধ্যক্ষ আজিজুর রহমান চৌধুরী। ২০০৮ সালে তার মৃত্যুর পর প্রার্থী হন জেলা জামায়াতের আমির আনোয়ারুল ইসলাম। আগামী নির্বাচনেও তিনি প্রার্থিতার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে স্থানীয় বিএনপি এবার জামায়াতকে সুযোগ দিতে চায় না। জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক লুৎফর রহমান মিন্টু জানান, একাদশ জাতীয় নির্বাচনে এই আসনে বিএনপি থেকেই ধানের শীষের প্রার্থী দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে। জামায়াতকে ছাড় না দেওয়ার ব্যাপারেও স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা একাট্টা। ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে জামায়াতের কাউকে কেন্দ্রীয়ভাবে মনোনয়ন দেওয়া হলে স্থানীয়ভাবে এ সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া হবে না বলেও জানান জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মিন্টু। আগামী নির্বাচনে তিনি ধানের শীষ নিয়ে এই আসনে প্রার্থিতা করতে চান। এ প্রসঙ্গে মিন্টু বলেন, ২০০১ সাল থেকে মনোনয়ন চেয়ে আসছি। আগামীবারও চাইব। মনোনয়ন পেলে বিজয়ী হওয়ার ব্যাপারেও আশাবাদী তিনি।
বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছে ডা. জেড এম জাহিদ হোসেনের নাম। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের এই সাবেক মহাসচিব বেশিরভাগ সময় রাজধানীতে অবস্থান করেন। তবে নির্বাচন সামনে রেখে ইদানীং এলাকায় যোগাযোগ বেড়েছে তার।
বড় দুই দলের পাশাপাশি জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে দেলোয়ার হোসেনও প্রার্থিতার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি এমপি শিবলী সাদিকের চাচা। এর আগে ২০০৮ সালেও তিনি প্রার্থিতা করেছেন। আগামীবারও লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হতে চান তিনি।