হাওর বার্তা ডেস্কঃ লক্ষ্ণীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক প্রার্থী। দলীয় মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর মাথাব্যথার কারণ হতে পারে তরীকত ফেডারেশন। একইভাবে বিএনপির দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে এলডিপি। প্রধান দুই দলের নেতাকর্মীরা বলছেন, জোটের প্রার্থীদের ওপর আস্থা রাখতে গেলে আগামী নির্বাচনে কপাল পুড়তে পারে আওয়ামী লীগ-বিএনপির।
এই আসনের বর্তমান এমপি তরীকত ফেডারেশনের মহাসচিব লায়ন এমএ আউয়াল। মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে গত নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন তিনি। রামগঞ্জ উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের এই আসনে দলগতভাবে অন্যদের চেয়ে শক্ত অবস্থান বিএনপির। ১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত টানা তিন মেয়াদে এই আসনের এমপি নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত জিয়াউল হক জিয়া। বিএনপির প্রার্থী হিসেবে তৃতীয় মেয়াদে এমপি হওয়ার পর তাকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ সময় তিনি নিজের নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেন।
কিন্তু ২০০৮ সালে তাকে বাদ দিয়ে ধানের শীষ দেওয়া হয় নাজিম উদ্দিন আহমদকে। আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে অল্প ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে নাজিম এমপি নির্বাচিত হন। বিরোধী দলের এমপি হয়ে এলাকায় তেমন কোনো উন্নয়ন তিনি করতে পারেননি। এ সময় বিএনপির স্থানীয় রাজনীতিতে কোন্দল বৃদ্ধি পায়। আওয়ামী লীগেও ছড়িয়ে পড়ে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পেয়ে এমপি হন তরীকত ফেডারেশনের এমএ আউয়াল। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই এখন অভিযোগ করছেন, এমপি আউয়াল এলাকার উন্নয়ন করতে পারেননি। তার অনুসারীরা ইচ্ছামতো অনিয়ম ও দুর্নীতি করছেন। এমপি আউয়াল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, এসব তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার। আগামী নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিতের লক্ষ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি হাওর বার্তাকে বলেন, ‘এমপি হয়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুতায়ন, কৃষি, সড়কসহ সব ক্ষেত্রে উন্নয়ন করেছি। মহাজোটের প্রার্থী হলে আবারও এ আসনটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে পারব। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ঠেকাতে হলেও এখানে দরকার তরীকত ফেডারেশনকে।’ হাইকমান্ডের সবুজ সংকেত পেয়েই আগামী নির্বাচনে প্রার্থিতার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও দাবি করেন এমপি আউয়াল।
তবে আগামী নির্বাচনে জোটের শরিক কোনো দলকে ছাড় দিতে নারাজ আওয়ামী লীগ। এ আসনে নৌকার মাঝি হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছেন রামগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সফিক মাহমুদ পিন্টু, সিনিয়র সহসভাপতি ড. আনোয়ার হোসেন খান, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সফিকুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক নেতা এমএ মমিন পাটওয়ারী এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মহিউদ্দিন মাইনু।
ড. আনোয়ার হোসেন খান বলেন, রামগঞ্জে আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ রেখে আসন ধরে রাখতে চাই। এজন্য স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়ন ও উদ্যোগে ব্যক্তিগতভাবে সহায়তা করে যাচ্ছি। আশা করছি প্রধানমন্ত্রী এর মূল্যায়ন করবেন। তিনি আস্থা রাখলে এই আসনে আওয়ামী লীগের বিজয় পতাকা উড়বে।
মনোনয়নপ্রত্যাশী এমএ মমিন পাটওয়ারী বলেন, ছাত্রজীবন থেকে সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করছি। রাজপথে থেকে আন্দোলন-সংগ্রাম করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আদর্শ বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছি। এর আগেও মনোনয়ন চেয়েছি। আগামীবারও চাইব। আশা করি, নেত্রী মূল্যায়ন করবেন।
সম্ভাব্য আরেক প্রার্থী সফিক মাহমুদ পিন্টু বলেন, ৪০ বছর ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছি। স্থানীয় রাজনীতিতে নিজেকে ‘সবচেয়ে সিনিয়র’ দাবি করে তিনি আরও বলেন, গত জুলাই মাসে সম্মেলনের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছি। এর আগের নির্বাচনে জোটের শরিক দলের প্রার্থীকে সহযোগিতা করে জিতিয়েছি; এবার এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রয়োজন। বর্তমান এমপি বিরুদ্ধে স্থানীয় আওয়ামী লীগ এখন একাট্টা। মনোনয়নপ্রত্যাশী আরেক নেতা সফিকুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সততার সঙ্গে রাজনীতি করছি। নেতাকর্মীদের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। আগামী নির্বাচনে তাই মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী তিনি। সম্ভাব্য প্রার্থী মহিউদ্দিন মাইনু বলেন, দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে এবং এলাকার উন্নয়নে আগামীবার আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীই প্রয়োজন। নৌকা মার্কা যাকে দেওয়া হবে তার পক্ষেই কাজ করব।
বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি নাজিম উদ্দিন আহমেদ, ঢাকার সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার হারুন অর রশিদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াছিন আলী এবং যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা ইমাম হোসেন। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব সাহাদাত হোসেন সেলিমও নির্বাচনের আগাম তৎপরতা শুরু করেছেন। আগামী নির্বাচনে বিএনপি ও এলডিপি একই জোটে থাকলে সাহাদাত হোসেন সেলিমের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে গুঞ্জন রয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নিজ দল থেকে প্রার্থিতার ব্যাপারে গ্রিন সিগনাল পেয়েছি। জোট রক্ষার্থে এ আসনটি বিএনপি এলডিপিকে ছাড় দেবে বলে আশাবাদী আমি। স্থানীয় বাসিন্দা ও নেতাকর্মীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছেন জানিয়ে সম্ভাব্য প্রার্থী সেলিম বলেন, বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের মুখে এ আসনটি দখলে নিতে হলে এলডিপির ওপরই ভরসা রাখতে হবে।
তবে আসন পুনরুদ্ধারে কেন্দ্র থেকে যথাযথ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে- এমনটাই আশা বিএনপির নেতাকর্মীদের। আগামী নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক এমপি নাজিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, এ আসনটি বিএনপির। এখানে ধানের শীষের বিকল্প নেই। এমপি হয়ে এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। এরই ধারাবাহিকতায় আবারও মনোনয়ন পাবো বলে আশাবাদী। তবে বিএনপির আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর হারুন অর রশিদের অভিযোগ, এমপি হয়ে নাজিম উদ্দিন আহমেদ নির্বাচনী এলাকায় যাননি ঠিকমতো। তাই উন্নয়নও হয়নি। এ ছাড়া স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগের জনসমর্থন নেই বলে দাবি করে সম্ভাব্য এই প্রার্থী বলেন, ভোট সুষ্ঠু হলে বিএনপির প্রার্থী জিতবেন। তাই দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন।
বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ইয়াছিন আলী জানান, দুর্দিনে তিনি নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন। এই বিবেচনায় দল তাকে মনোনয়ন দেবে বলে আশা করেন তিনি। মনোনয়ন পেলে বিজয়ী হওয়ার লক্ষ্যে সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে চান ইয়াছিন। সম্ভাব্য আরেক প্রার্থী ইমাম হোসেন জানান, আগামী নির্বাচনে এই আসনটি পুনরুদ্ধার করতে দলীয় প্রার্থী হিসেবে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তার ওপর আস্থা রাখবেন।