হাওর বার্তা ডেস্কঃ কক্সবাজারে আমরা যখন শুটিং করেছিলাম, তখন শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বৃষ্টির কারণে পুরো শুটিং শেষ করতে পারিনি। তবে এবার শেষ হবে। এই সিনেমার শুটিংয়ের কারণে লন্ডন থেকে ঢাকায় ফিরতে হয়েছে।
আবার লন্ডন যাচ্ছেন?
হ্যাঁ। লন্ডনে নতুন একটি সিনেমার শুটিং শুরু করব। সিনেমার নাম ‘ইন পারসু অব লাভ—ভালোবাসার খোঁজে’। পরিচালক গোলাম মাবুদ ফুরুখ।
সিনেমার গল্পটি কী রকম?
এটা আসলে যুক্তরাজ্য, ইউরোপ আর আমেরিকার নতুন প্রজন্মের বাঙালিদের জীবনযাপনের গল্প। যাঁরা ভালোবাসা চায়, কিন্তু কনফিউজড। তাঁরা আসলে কী চায়? সম্পর্কগুলো ভেঙে যাচ্ছে কেন? আমি যে ধরনের গল্প খুঁজি, এটা তেমনই।
এই সিনেমায় আপনার নায়িকা কে?
সেলিন বেরান। সে এরই মধ্যে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড ও চেক প্রজাতন্ত্রে নিয়মিত কাজ করছেন। স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা আর গানের ভিডিওতে বেশি কাজ করেছেন। হলিউডের সিনেমায়ও কাজ করেছেন। এবার আমরা ১৫ দিন শুটিং করব। আবার জানুয়ারিতে শুটিং হবে। দুই লটে পুরো কাজ শেষ হবে।
দেশের বাইরে নিয়মিত কাজ করছেন। আচ্ছা আমাদের দেশের সিনেমা গুণগত মান নিয়ে আপনার বক্তব্য কী?
আমাদের গোড়ায় গলদ। আমাদের বেসিক সমস্যা হচ্ছে, শুটিংয়ের যে সময় ঠিক করা হয়, সেটাই আমরা মানি। সিনেমার কাজের ক্ষেত্রে সময়টাই তো প্রধান। এই জটিলতায় আমরা আটকে আছি। আমার কাছে এটা বড় অন্তরায়। এরপর আমাদের কোনো বিভাগের কিন্তু সেভাবে উন্নতি হয়নি। আমি বলতে চাইছি, আমাদের এখানে এখনো যে মেকআপ করছে, সে-ই চুল করছে, সে-ই আবার কস্টিউম করছে—এভাবে হয় না। কোনো স্টাইলিশ থাকে না, একটা সিনেমায় কিন্তু একজন স্টাইলিশ থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা শুটিংয়ের দিন সকালেও কনফিউজড থাকি কী পরব। আমরা আবেগ দিয়ে চলছি, পেশাদার হতে পারিনি।
যে বাজেটে কাজ হয়, তা পর্যাপ্ত?
বাজেট যা আছে, তা দিয়ে সিনেমা নির্মাণ করা যায়। এ ক্ষেত্রে বলব, পরিচালকেরা উদাসীন। আমরা এখনো শুটিংয়ের আগের দিন নায়িকাদের বলতে শুনি, ‘আচ্ছা ম্যাডাম, দুইটা শাড়ি নিয়ে আইসেন।’ কিন্তু কেন? কেন আমি দুইটা রেডি করে রাখতে পারলাম না। আমি যে ‘ইয়েতি অভিযান’ সিনেমায় অতিথি চরিত্রে কাজ করলাম, সেখানে কিন্তু আমাকে এমনিতেই কাজটি করিয়ে নিতে পারত। কিন্তু তাঁরা তা করেননি। তাঁরা আমার লুক টেস্ট করেছে, এরপর সবকিছু তাঁরা ঠিক করল, আমি সুইজারল্যান্ড গেলাম, সব রেডি পেলাম। সুন্দরভাবে শুটিং করে চলে এলাম।
কিন্তু আমাদের এখানে নিজেদের পেশাদার বলতে শুনি।
পুরোপুরি পেশাদার বললেও আমরা এখনো তা না। এককভাবে কারও দোষ দিয়ে লাভ নেই। আমরা কেউ নিয়ম মানি না। সঠিক জায়গায় যোগ্য মানুষটাকে যুক্ত করি না। দু-একটা সিনেমায় যাও করি, তা সঠিকভাবে হয় না। একটা সিনেমার জন্য ভালো মানের একজন হেয়ার ড্রেসার লাগে। চুল কিন্তু লুক সেট করার ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মেকআপ, গেটআপ, চুলের স্টাইল, কস্টিউম—এই ব্যাপারগুলোতেও প্রত্যেক পরিচালককে সচেতন থাকতে হবে।
এফডিসি এখন সংগঠনমুখর। তাতে চলচ্চিত্রের কী লাভ হচ্ছে?
সংগঠনের কাজ সংগঠিত করা। একটা সংগঠন যদি সবাইকে সংগঠিত করতে না পারে, স্বাধীন দেশে সবারই তো সংগঠন করার অধিকার আছে। সংগঠন কখনো চলচ্চিত্র এগিয়ে দিতে পারবে না। এটা সংগঠনের দায়িত্বও না। সংগঠন বড়জোর সমস্যার কথা শুনতে পারে, সমস্যাকে তুলে ধরতে পারে। আমি আসলে সাংগঠনিক জটিলতার বিষয়টি তত বুঝি না। আমি আমার গতিতে চলি। আমার নিজের একটা গতি আছে, এর বাইরে কখনো যাই না। আমার মতের সঙ্গে যে শামিল হয়, তাঁর সঙ্গে চলি, যাঁর হয় না তাঁর সঙ্গে চলি না।
গত কয়েক মাসে চলচ্চিত্রের কিছু শিল্পী একে অন্যকে নিয়ে পাল্টাপাল্টি মন্তব্য করেছেন। অনেকে এমনও বলেছেন, শিল্পীরা অসহিষ্ণুতার পরিচয় দিচ্ছে।
আমরা যত দিন পর্যন্ত ব্যক্তিস্বার্থ বড় করে দেখব, তত দিন পর্যন্ত সংগঠিত হতে পারব না। বৃহত্তর স্বার্থে ব্যক্তিস্বার্থকে ছাড় দিতে হবেই। বৃহত্তর স্বার্থ হচ্ছে, চলচ্চিত্রকে ভালোর দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। নিজেদের মধ্যে ছোট কোনো সমস্যা যদি হয়েও থাকে, তা মানিয়ে নিয়ে সামনের দিকে এগোতে হবে আমাদের। তা না করে অসহিষ্ণু হলে তাহলে কীভাবে হবে! একটা কথা কি জানেন, আমাদের সবার কাছে নিজের সমস্যাটাই সবচেয়ে বড়। সবকিছু ইতিবাচক ভাবতে হবে। আমাদের যুদ্ধ হবে পর্দায়, বাকি সময়টাতে সবাই বন্ধু ও পরিবার হয়ে থাকব। এটাই আমার চাওয়া।