হাওর বার্তা ডেস্কঃ আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে চাঁদপুর-২ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা কৌশলী প্রচারণায় ব্যস্ত। সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়ন পেতে তৎপর। অংশ নিচ্ছেন দলীয় সভা-সমাবেশ ও ঘরোয়া বৈঠকে। এমনকি সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানেও যোগ দিয়ে চালাচ্ছেন গণসংযোগ।
২০০১ সাল পর্যন্ত চাঁদপুর-২ আসনটি ছিল মতলব উত্তর উপজেলা নিয়ে। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে সীমানা পুনর্বিন্যাস করে মতলব দক্ষিণ উপজেলাও এই আসনের আওতায় আনা হয়। দুই উপজেলার অন্তর্ভুক্তির মধ্য দিয়ে এ আসনের ভোটের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন স্থানীয় রাজনীতিক ও সচেতন মহল।
সীমানা পরিবর্তনের পরের ভোটের ফল পর্যবেক্ষণের পর দেখা যায়, মতলব উত্তর উপজেলায় আওয়ামী লীগের ভোট তুলনামূলকভাবে বেশি। আবার মতলব দক্ষিণে ভোটের হিসাবে এগিয়ে রয়েছে বিএনপি। এ আসনে নানাবিদ সমস্যা রয়েছে। চারদিকে নদীবেষ্টিত হওয়ার পরও গড়ে উঠেনি কোনো শিল্প-কারখানা। তৈরি হয়নি ঢাকার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ। এছাড়া নেই কারিগরি ও উচ্চশিক্ষার কোনো ব্যবস্থা। সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার জন্য বিশেষায়িত কোনো হাসপাতালও গড়ে উঠেনি। সড়ক যোগাযোগও অত্যন্ত নাজুক। তাই আগামী নির্বাচনে এই সমস্যাগুলো ভোটারদের কাছে বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়াতে পারে।
চাঁদপুর-২ আসনের বর্তমান এমপি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী। তার তত্ত্বাবধানে আওয়ামী লীগের স্থানীয় রাজনীতি আগের চেয়ে চাঙ্গা হয়েছে বলে জানান তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। একই সঙ্গে এলাকার উন্নয়নে অবদান রেখেছেন তিনি। দীর্ঘ প্রতীক্ষিত মতলব সেতু ও এই এলাকায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার উদ্যোগে তার অবদানের কারণে আগামী নির্বাচনেও তিনি দলের টিকিট এবং ভোটারদের সমর্থন পাবেন। এমন ধারণা তার সমর্থকদের। মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী আগামী নির্বাচনেও দলের মনোনয়ন চাইবেন। যদি কোনো কারণে দল মনোনয়ন না দেয় তা হলে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া তার ছেলে সাজেদুল হাসান দিপু চৌধুরীকে মনোনয়ন দেয়ার জন্য চেষ্টা করবেন। সেই অনুযায়ী মায়া চৌধুরী তার ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে মাঠ গুছিয়ে রেখেছেন। এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি কোনো ঘোষণা না দিলেও এমপি মায়া চৌধুরী যতবার এলাকায় এসেছেন ততোবারই তার ছেলে দিপু চৌধুরীকে সঙ্গে নিয়ে স্থানীয় বিভিন্ন সভা-সমাবেশ থেকে শুরু করে প্রতিটি উন্নয়ন কাজ করছেন। তবে ক্ষমতাসীন দল থেকে বর্তমান এমপির পাশাপাশি সাবেক এক এমপিসহ অন্তত ৪ জন আগামী নির্বাচনে প্রার্থিতার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তারা হচ্ছেন- সাবেক সংসদ সদস্য এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এম রফিকুল ইসলাম, মুক্তিযুদ্ধে সাহসী ভূমিকা পালনকারী জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এম এ ওয়াদুদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট নুরুল আমিন রুহুল ও আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির মহিলাবিষয়ক সম্পাদক জাকিয়া সুলতানা শেফালী। তারা প্রত্যেকে তৎপরতা চালাচ্ছেন এলাকায় গণসংযোগ এবং কেন্দ্রীয় পর্যায়ে লবিং করে। এছাড়া জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এম এ ওয়াদুদ দুঃসময়েও দলের সঙ্গে ছিলেন। আগামী নির্বাচনে মূল্যায়ন পাবেন বলে তিনি আশা করছেন। মহানগর আওয়ামী লীগের (দক্ষিণ) সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট নূরুল আমিন রুহুলও এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ চালিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে আস্থা তৈরি করেছেন। একমাত্র নারী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপ্রত্যাশী জাকিয়া সুলতানা শেফালী জানান, ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতি করছেন। দুঃসময়েও দলের সঙ্গে ছিলেন। আগামী নির্বাচনে মূল্যায়ন পাবেন বলে মনে করছেন তিনি।
এদিকে বিএনপির বেশ কয়েকজন প্রার্থী নির্বাচনী তৎপরতা শুরু করেছেন। তারা হলেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক ছাত্রনেতা আতাউর রহমান ঢালী, বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য ড. জালাল উদ্দিন, সাবেক এমপি আলম খান, সাবেক এমপি নুরুল হুদার ছেলে তানবীর হুদা, জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি এম এ শুক্কুর পাটওয়ারী।
সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে ড. জালাল উদ্দিন ২০০৮ সালের নির্বাচনে ধানের শীষের টিকিট না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন। বিপুল অর্থ খরচ করে ৭ হাজার ভোট পান। পরে তিনি বিএনপিতে ভিড়েন। আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের টিকিট চাইবেন বলে তার অনুসারী নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এছাড়া দলের সর্বোচ্চ মহলে যোগাযোগ আছে- এমন দাবি করে দলের মনোনয়ন পাবেন বলে আশা করছেন। এদিকে বিএনপিতে যোগ দেয়ার পরপর সাবেক ছাত্রনেতা আতাউর রহমান ঢালী বিএনপির হাইকমান্ডের আস্থাভাজন নেতাদের তালিকায় ঠাঁই পান। তাকে দেয়া হয় দলের সংগঠন গোছানোর দায়িত্ব। করা হয় ফেনী জেলার টিম লিডার। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের সমন্বয়ের দায়িত্ব দেয়া হয় তাকে। সর্বশেষ বিএনপি জাতীয় ত্রাণ সমন্বয় কমিটির অন্যতম সদস্য করা হয়। এলাকার তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার রয়েছে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ।
ওদিকে প্রয়াত নুরুল হুদার ছেলে তানভীর হুদা পিতার জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে নির্বাচনী মাঠে থাকার চেষ্টা করছেন। বয়সে নবীন ও রাজনৈতিক অপরিক্বতার কারণে ভোটের মাঠে কতটুকু সুবিধা করতে পারবেন তা নিয়ে সন্দিহান তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
এ বিষয়ে আতাউর রহমান ঢালী বলেন, মনোনয়ন দেয়া না দেয়া দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত। সেক্ষেত্রে দলের সিদ্ধান্ত কার্যকর করাই হচ্ছে আমার কর্তব্য। তবে আমি বিশ্বাস করি- এলাকার রাজনৈতিক অবস্থান বিবেচনা করে দল আমাকেই মনোনয়ন দেবে।
এদিকে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন জেলা জাপার সভাপতি মিজানুর রহমান খান। ২০০১ সালে তিনি জাপার প্রার্থী ছিলেন। ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে মহাজোটের কারণে জাপা থেকে কোনো প্রার্থী ছিল না।