হাওর বার্তা ডেস্কঃ আঁখি আলমগীরের বসার ঘরটা বেশ বড়সড়। এক পাশে পিয়ানো রাখা। শিল্পীর বাড়ির বসার ঘর এটা সহজেই বোঝা যায়। সাজানো-গোছানো ঘরটায় বসতে হলো অল্প সময়। দেয়ালে রাখা চিত্রকর্ম থেকে চোখ না ফেরাতেই আঁখি এসে হাজির। কথা শুরু করি।
গান তো অনেক দিন ধরে করছেন। কোনো পুরস্কারের জন্য মন টানে?
প্রশ্ন শুনে হাসেন তিনি। বলেন, ‘আমি কিন্তু জাতীয় পুরস্কার পেয়েছি। তবে গানের জন্য নয়, ছোটবেলায় শিশুশিল্পী হিসেবে (ভাত দে ছবিতে) অভিনয়ের জন্য। সত্যি কথা কী জানেন, আমার কিন্তু কোনো পুরস্কারের লোভ নেই। আমি আসলে কাজটাই করে যেতে চাই।’
‘সবাই আমার যে কাজটা দেখেন, ঠিক সমপরিমাণ কাজ আমি ছেড়ে দিই। ইচ্ছে করেই করি না। আসলে আমি একটু ঘরকুনো মানুষ। পরিবারের সবাইকে নিয়ে সময় কাটাতে পছন্দ করি।’
আঁখি আরও অনেক কিছু করেন। হুটহাট ঘুরতে বেরিয়ে পড়েন। মধ্যরাতে টেনে নেন কবিতার খাতা। সেই কবিতা খাতা থেকে উঠে আসে ফেসবুকে। মঞ্চ জমিয়ে তোলা আঁখি নীরব-নিস্তব্ধ রাতে কবিতায় ডুবে যান।
প্রসঙ্গটা তুলতেই মুখ লুকানোর জায়গা খোঁজেন তিনি—‘আরে, ওগুলো কবিতা হয় কি না, জানি না। আসলে মনের অভিব্যক্তিগুলো লিখে ফেলি। একটু কবিতার ঢঙে লেখা, এই আর কী।’
আমাদের আড্ডা চলতে থাকে। এক ফাঁকে দরজা ঠেলে ঢোকে দুজন কিশোরী। পরিচয় করিয়ে দেন, ‘আমার মেয়ে’।
‘জানেন, আমার মেয়ে দুটি দারুণ লক্ষ্মী। এই বাসায় কিন্তু মা আর দুই মেয়ে থাকে না। তিন বন্ধু থাকে, বলতে পারেন।’
আঁখি কথায় কথায় হাসেন। সেই হাসি গমগম করে ওঠে। ওপাশ থেকে মেয়েদের হাসিও শোনা যায়।
দুই মেয়ে কি আপনার মতোই শিল্পী হবে?
‘না, না। ওরা যা হতে চায় তা-ই হবে। আমি কিছুই চাপিয়ে দিতে চাই না। আমার বাবা (অভিনেতা আলমগীর) যেমন চায়নি।’
আলমগীর পরিচালিত একটি সিনেমার গল্প চলচ্চিত্রে গান গেয়েছেন আঁখি। সেই গানের সুর করেছেন কিংবদন্তি শিল্পী রুনা লায়লা।
বাবা দাপুটে অভিনেতা এটা নিশ্চয় আপনাকে শিল্পী হতে সহযোগিতা করেছে? আঁখির ত্বরিত উত্তর, ‘এটার সুযোগ একেবারেই কম। আপনার ভেতরে যদি মেধা না থাকে তাহলে আপনি যার ছেলে বা মেয়ে হন, সামনে এগোতে পারবেন না। দর্শক বা শ্রোতা কখনোই গ্রহণ করবে না। তবে এটা সত্যি আমাকে হয়তো অনেক মানুষ ছোটবেলা থেকেই চেনেন।’
যুদ্ধটা সহজ নয়, বরং কঠিন হয়েছিল। কারণ, নায়ক আলমগীরের ছায়া থেকে বের হয়ে নিজের মতো করে হয়ে ওঠা সহজ ছিল না মোটেই। ‘১৯৯৪ সালের দিকে আমি প্রথম স্টেজ শো করার অফার পাই। বাবাকে বলি।’
বাবা জানতে চান, ‘তুমি যে স্টেজে গান করবে তোমার নিজের কোনো গান আছে?’
আঁখি বলেন, ‘কেন, সাধের লাউ?’
বাবা বলেন, ‘ওটা কি তোমার গান?’
আঁখি কোনো উত্তর দিতে পারেননি। ‘তারও তিন বছর পর আমার অ্যালবাম হিট হয়। তখন থেকেই আসলে মঞ্চে গান শুরু করি। বাবা আমাকে সেদিন বলেছিলেন, “শোনো, এখন তুমি প্রফেশনালি গান গাইছ গাও। কিন্তু পড়াশোনা যেন না থামে। আমি তোমার জন্য কোথাও ফোন করব না। এটা জেনে রাখবা।”’
শিল্পী আঁখির ওপর বাবা কি এখন সন্তুষ্ট? এমন সহজ প্রশ্নে খানিকটা লজ্জা পেলেন যেন—‘বাবাকে সন্তুষ্ট করা খুব কঠিন।’
ভক্তদের আঁখি মন থেকে ভালোবাসেন। ‘তাঁদের জন্যই আমি আজকের আঁখি। মাঝেমধ্যে ভাবি, এত কিছু কী আমার প্রাপ্য!’
অনেক দূর তো এলেন। কী ভাবেন জীবন নিয়ে?
‘আমার মনে হয়, জীবন মানে আনন্দ। জীবন মানে নিজেকে সময় দেওয়া। উপভোগ করা। হতে চাই পরিপূর্ণ মানুষ, এই আমার চাওয়া।