বারোমাসি সবজিতে লাভবান কৃষক

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বছর পাঁচেক আগেও রাজশাহীতে দুই মৌসুমভিত্তিক সবজি চাষ করা হতো। গ্রীষ্মকালে ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউসহ শীতকালীন সবজি পাওয়াই যেত না। তবে এখন আর শীত-গ্রীষ্মকালীন সবজি বলে কিছু নেই। রাজশাহীতে বারোমাসই মিলছে প্রায় সব ধরনের তরতাজা সবজি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলায় এখনই শীতের সবজি চাষ হচ্ছে। এরই মধ্যে বাজারে উঠেছে পুঁইশাক, লালশাক, ঢ্যাঁড়শ, মুলা, গাজর, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম ও পালংশাকসহ শীতকালের অনেক সবজি। কৃষক বলছেন, অমৌসুমে এসব সবজির উৎপাদন কিছুটা কম হলেও দাম বেশি। এতে তারা লাভবান হচ্ছেন। রাজশাহীর অন্যতম প্রধান কাঁচাপণ্যের পাইকারি বাজার পবার নওহাটা। এখানকার ব্যবসায়ী আবুল কালাম জানান, ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ বিভিন্ন সবজি গ্রীষ্মকালে আমদানিনির্ভর ছিল। কোল্ড স্টোর থেকেও কিছু আসত। কিন্তু মান তেমন ভালো হতো না। এখন সব তরতাজা। রাজশাহীর পবা ও দুর্গাপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে এখনই এ বাজারে শীতের সবজি আসছে।

পাশেই থাকা ২০ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সবজির পাইকার সাবিয়ার রহমান জানালেন, এ বাজারে বছরের প্রতিটি সময়ই সব ধরনের সবজি ওঠে। বেশিরভাগ সবজিই ট্রাক ভর্তি করে চলে যায় রাজধানী ঢাকায়। কিছু কিছু অমৌসুমি সবজি যায় স্থানীয় বাজারেও। সেখান থেকে ক্রেতারা কিনতে পারেন। অমৌসুমে দু-একটা বাদে প্রায় সব সবজিই এখন পাওয়া যাচ্ছে। কয়েক বছরে সবজির বাজারের বিরাট পরিবর্তন হয়েছে। সোমবার রাজশাহী মহানগরীর শালবাগানের সবজির পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা যায়, শীতকালীন সবজি ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, মুলা বিক্রিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ব্যবসায়ীরা। এর পাশাপাশি অন্যান্য সবজি করলা, পটোল, কাঁকরোল, চিচিঙ্গা, ঝিঙাসহ বিভিন্ন সবজি রয়েছে বাজারে।
আগে বছরে একবার লাউ বিক্রি করতেন জেলার মোহনপুর থেকে আসা লাউ চাষি কুরবান আলী। ৪ বছর ধরে সারা বছরই লাউ বিক্রি করে যাচ্ছেন তিনি। তিনি বলেন, শীতকালে পরিমাণে অনেক বেশি এবং ভালো মানের লাউ চাষ হয়। গরমের সময়ে তুলনামূলক কম ভালো হয়, কিন্তু দাম বেশি। আর বারোমাস লাউ বিক্রি করতে পারায় আগের চেয়ে অনেক বেশি আয়ও বেড়েছে তার। তিনি বলেন, কৃষক এখন গ্রীষ্ম এবং বর্ষাকালে বিশেষভাবে পলিথিন দিয়ে বৃষ্টির আড়াল করে শীতকালীন প্রায় সব সবজিই উৎপাদন করছেন। পাইকারি বাজারে এসব সবজির খুব চাহিদা। ভালো দামও পাওয়া যায়। এবার বন্যায় অনেকের সবজি ক্ষেত নষ্ট হওয়ায় দাম বেড়েছে আরও বেশি। ফলে যেসব কৃষকের সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, তারা এবার অধিক পরিমাণে লাভের হিসাব করছেন।
দুই যুগ ধরে সবজির ব্যবসা করেন রাজশাহীর এমন অন্তত ১৫ জন পাইকার ও খুচরা সবজি বিক্রেতা জানান, ক্রেতাদের মাঝে সবজি কেনার আগ্রহও অনেক বেড়েছে। দাম একটু বেশি হলেও নতুন সবজি কমবেশি সবাই কেনেন। এখন আর আমদানি করা বা কোল্ড স্টোরের পুরনো সবজির দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় না।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীতে এখন ১ হাজার ১৯২ হেক্টর জমিতে সবজি রয়েছে। এর মধ্যে পুঁইশাক ৭৫ হেক্টর, লালশাক ১৬৯, মিষ্টিকুমড়া ২৫, ডাঁটাশাক ৫৭, কলমিশাক ৭, চালকুমড়া ৭২, লাউ ৬২, ঝিঙা ২০, বেগুন ২৩২, বাঁধাকপি ১৮, ফুলকপি ৫, মুলা ৩৭, শিম ১১৪, লতিরাজ কচু ১২ ও পালংশাক ৮ হেক্টর।
জেলার পবা উপজেলার দামকুড়া এলাকায় ৩ বিঘা জমিতে বাঁধাকপি আর ২ বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষ করেছেন কৃষক আফসার আলী। তিনি জানান, শীতের এ সবজি চাষে খরচ একটু বেশি। কিন্তু বাজারে সবজির দাম দ্বিগুণ। ফলে হিসাব করে দেখা যায়, শীতকালে ২ বিঘা জমিতে বাঁধাকপি চাষে যে লাভ হয়, গ্রীষ্মে ১ বিঘা চাষেই তার চেয়ে বেশি লাভ হয়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) আবদুল আউয়াল বলেন, কয়েক বছরে রাজশাহীর সবজি চাষে একটা বৈচিত্র্য এসেছে। কৃষক এখন অমৌসুমি সবজি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। কারণ এ সবজির দাম ভালো পাওয়া যায়। এজন্য কৃষককেও প্রশিক্ষণ দিয়ে অমৌসুমি সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এখন জেলার বেশকিছু কৃষক মৌসুম ছেড়ে অমৌসুমেই সবজি চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। তবে অমৌসুমি সবজি চাষে ঝুঁকির কথাও জানালেন এ দফতরের উপপরিচালক দেব দুলাল ঢালী। তিনি বলেন, খুব সতর্কতার সঙ্গে অমৌসুমি সবজি চাষ করতে হয়। একটু অসতর্ক হলেই ফসল নষ্টের ভয় থাকে। তাই তারা অমৌসুমে চাষ করা সবজি ক্ষেতগুলোর দিকে সব সময় নজর রাখেন। স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারাও সপ্তাহে অন্তত তিন দিন সেসব ক্ষেত পরিদর্শন করেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর