হাওর বার্তা ডেস্কঃ কিশোরগঞ্জে চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরের প্রথম দিনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, জনপ্রতিনিধি হয়ে নিজেকে সাধারণ ভাবতে হবে। কখনো নিজেকে ক্ষমতাবান দেখানো উচিত নয়। যদিও নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় গিয়ে অনেকে ক্ষমতাবান বনে যান।
রোববার বিকেল সাড়ে ৩টায় জেলার মিঠামইন উপজেলা সদরে ডাক বাংলোয় আবদুল হামিদ মিলনায়তনে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন রাষ্ট্রপতি।
এ সময় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ আরো বলেন, দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে আপনাদের ভোটে আটবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। নির্বাচিত হয়ে এলাকার সার্বিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে গেছি এবং এখনো অত্র এলাকার জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। ক্ষমতায় থেকেও নিজেকে কখনো ক্ষমতাবান ভাবিনি। আপনারা যারা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি তাদের নিজেদেরকে সাধারণ মানুষ ভাবতে হবে। নিজেকে জনকল্যাণে নিয়োজিত করে মানুষের আস্থা অর্জন করে করতে হবে।
রাষ্ট্রপতি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, বর্তমানে জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচনের আগের ও পরের চরিত্র বদলে ফেলেন।
এদিকে বার্তা সংস্থা বাসসের খবরে বলা হয়েছে, অনুষ্ঠানে তৃণমূলে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ঐক্যবদ্ধভাবে ভোটারদের প্রতি ন্যায়বিচার ও কল্যাণ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি স্থানীয় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বলেন, ‘ভোটারদের প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে, তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে হবে।’
প্রকৃত রাজনৈতিক নেতার আচরণ সর্বদাই জনবান্ধব- এ কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘জনগণ তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আপনাদের নির্বাচিত করেছে এবং আপনাদের অবশ্যই তা মনে রাখতে হবে। অন্যথায় ক্ষমতা হারানোর পর তারা আপনাদের এমনকি সালাম দিয়েও সম্মান জানাবে না।’
রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, ‘আপনি জনপ্রতিনিধি এমনকি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য কিংবা এমপি হিসেবে নির্বাচিত হন, তাহলে আপনার কিছু দায়িত্ব চলে আসে এবং আপনার তাতে জবাবদিহিতা থাকে। আপনার ইতিবাচক মনোভাব তাদের রাজনীতিতে আকর্ষণ করে।’ তিনি তাদের সবাইকে দেশের ও জনগণের কল্যাণে কাজ করার আহ্বান জানান এবং বলেন, জনগণ তা আশা করে এবং মনে-প্রাণে চায়।
হাওরাঞ্চলে সাম্প্রতিক বন্যার কারণে সরকার ও অন্যান্য উন্নয়ন সংস্থা থেকে প্রদত্ত ত্রাণসামগ্রী বিতরণে কিছু সংখ্যক নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি অনিয়ম ও দুর্নীতি করায় রাষ্ট্রপতি সংশ্লিষ্টদের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি কিছু অভিযোগ পেয়েছি যে, কিছু সদস্য ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিসহ কয়েকজন নির্বাচিত প্রতিনিধি এখানে যথাযথভাবে বন্যা-উত্তর ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেননি। কিন্তু এটা কারো কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।’ রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘এমন নেতিবাচক কর্ম বা দুর্নীতি পরিহার করা এবং জনগণের কল্যাণে কাজ করার জন্যই ভোটাররা আপনাদের ক্ষমতায় এনেছিল।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, জনগণ মনে তাদের অধিকার (হক) ধারণ করে রাখে, যার জন্য তারা বিশ্বাস করে আপনাদের ভোট দিয়েছে। তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে ভালো কাজ করার পরামর্শ দেন, যার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনে সাহায্য করবে।
মিঠামইন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ আবদুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রপতির জ্যেষ্ঠ পুত্র কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহমেদ তৌফিক, রাষ্ট্রপতির একান্ত সচিব সম্পদ বড়ুয়া, প্রেসসচিব জয়নাল আবেদীন, পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জিল্লুর রহমান, জেলা প্রশাসক মো. আজিমুদ্দিন বিশ্বাস, জেলা পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন খান, জেলা ও দায়রা জজ মুহাম্মদ মাহবুব উল ইসলামসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এর আগে রোববার বিকেল পৌনে ৩টায় ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে মিঠামইন উপজেলা হেলিপ্যাডে অবতরণ করেন রাষ্ট্রপতি। এরপর তিনি অটোরিকশায় করে ডাকবাংলোয় যাওয়ার পর সেখানে তাঁকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।
মতবিনিময় সভা শেষে রাষ্ট্রপতি মিঠামইন বাজার পরিদর্শন শেষে ইঞ্জিনচালিত নৌযানে (ট্রলার) বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ পরিদর্শন করেন।
চার দিনব্যাপী সফরের দ্বিতীয় দিনে সোমবার রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ মিঠামইন থেকে হেলিকপ্টারে করে বাজিতপুর উপজেলা সদরে যাবেন এবং পূর্ব নির্ধারিত বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। পরের দিন মঙ্গলবার তিনি কটিয়াদি উপজেলায় বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেবেন।
এ ছাড়া সফরকালে রাষ্ট্রপতি কিশোরগঞ্জ সার্কিট হাউস মিলনায়তনে স্থানীয় গণ্যমান্য ও পেশাজীবী নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। বুধবার তিনি কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন।