ঢাকা ০৩:৪৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
সৌদির কনসার্টে গাইবেন পড়শী আসছে নতুন গান আ.লীগের রাজনীতি করা নিয়ে যা বললেন মান্না দোসরদের গ্রেফতার করা না গেলে মুক্তি পাবে না পুরান ঢাকার সাধারণ মানুষ সেলিমের চেয়েও ভয়ঙ্কর দুই পুত্র সোলায়মান ও ইরফান বাতাসে ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি, ঢাকার অবস্থা কি শাকিবের ‘দরদ’ নিয়ে যা বললেন অপু বিশ্বাস ‘ড. ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সফল হলেই ভারতের স্বার্থ রক্ষিত’ ভারতীয় ব্যবসায়ীর সাক্ষাৎকার আইপিএল নিলামের চূড়ান্ত তালিকায় ১২ বাংলাদেশি ফিলিপাইনের দিকে ধেয়ে আসছে সুপার টাইফুন আগামীর বাংলাদেশ হবে ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও বাক-স্বাধীনতার: প্রধান উপদেষ্টা আজিমপুরে ডাকাতির সময় অপহৃত সেই শিশু উদ্ধার

হাওরবাসির উন্নয়নের সমন্বিত গ্রামের সৃজন অপরিহার্য

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:৫৭:০৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ অক্টোবর ২০১৭
  • ২৭৪ বার

জাকির হোসাইন : প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ হাওরবাসির জন জীবন নাগরিক সুবিধা হতে বঞ্চিত । গুচ্ছ গ্রামের মতো সংকীর্ণ, পরস্পর হতে বিচ্ছিন্ন, বিশাল হাওর/সায়রের মাঝে কচুরি পানার মতো ভাসমান এবং দ্বীপসম ছোট ছোট গ্রামে হাওরবাসিকে স্বল্প পরিসরে অনেক মানুষকে একত্রে গাদাগাদি করে কাদা জলে মাখামাখি করে নারকীয় অবস্থায় বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে । কারন, হাওরে নতুন গ্রাম সৃজন বা রক্ষা, এ দু’টোই অত্যন্ত কষ্টসাধ্য এবং ব্যয় সাপেক্ষ কাজ । তাই, হাওরে এক খন্ড শুকনো উঁচুঁ জায়গা, বসত বাড়ি সোনার মতো দামী । এসব গ্রামে নূন্যতম নাগরিক সুবিধা নাই । বসবাসের স্থান-স্বস্থি নাই, ঝুঁকিপূর্ণ, বেঁচে থাকাই কষ্টের কাজ, নাগরিক সুবিধা সেখানে বড়ই দুর্লভ । বিদ্যুত নাই, সুপেয় পানি নাই, নাই স্বাস্থ্যকর সেনিটেশান, ভাল যোগাযোগ ব্যবস্থা । অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে, অপুষ্টি, অশিক্ষা, নিরক্ষর আর রোগ বালাইকে সঙ্গী করেই তাঁদেরকে জীবন যাপন করতে হচ্ছে ।
হাওরের গ্রামগুলো দেশের অন্য দশটি গ্রাম হতে সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে তৈরী করা হয় । গ্রামগুলো সাধারণ সমতল ভূমি হতে ১০-১৫ ফুট উচুঁ করে বানানো হয় । আমারা জানি যে, বর্ষার ৬-৭ মাস হাওর অথৈ পানিতে সয়লাব থাকে । পানিতে ডুবে যাওয়া থেকে রক্ষা পেতেই এ কৌশল । ‘হাওর মহা পরিকল্পণা’র হিসাব মোতাবেক হাওর-ভাটি বাংলায় ৭টি জেলার ৩৯টি উপজেলায় ৩৭৩ টি হাওরে এ রকম ১৫,৩৭৪টি গ্রাম আছে । এ সব গ্রামে ৩২, ৪,৩৯০ পরিবারে (Haousehold) প্রায় ১৯.৩৭ মিলিয়ন লোক, দেশের মোট লোকের ১২%, বসবাস করে । এ সব বসত ভিটার আয়তন ৩,০৩,১২০ হেক্টর।
‘আফালের তাফালিং’ এ্ ঢেউ এর আঘাতে গ্রামগুলো ভেঙ্গে লন্ড-ভন্ড এবং ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় । খড় কুটা দিয়ে রক্ষার চেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবেশিত হয় । মানুষ বাড়ছে, কিন্ত সেই অনুপাতে হাওরে বসত ভিটা বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না । দেশের অন্য এলাকার মতো ইচ্ছে করলেই পাশের জায়গায় বাড়ির অংশ বাড়ানোর সুযোগ খুবই কম । পর্যাপ্ত বসত বাড়ির অভাবে একই ঘরে রান্নার ব্যবস্থাসহ গরু বাছুরের সাথে ২-৩ প্রজন্মকে এক সাথে মানবেতরভাবে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন । চর্ম চুক্ষে না দেখেল তাঁদের দুর্গতি লিখে বুঝানো সম্ভব নয় । মাটি কেটে উচুঁ ভিটাবাড়ি তৈরী এবং ঢেউ আর স্রোত থেকে রক্ষা করাই বড় চেলেঞ্জ । প্রতি বছর হাওরের গ্রামে বসত ভিটা ভাঙ্গণ হতে রক্ষা এবং মেরামতে তাঁদের আয়ের একটা বিরাট অংশ ব্যয় করতে হচ্ছে । তারপরও বিচ্ছিন্নভাবে সর্বত্র কিছু কিছু গ্রাম গড়ে তোলার চেষ্টা পরিলক্ষিত হয় । তাঁরা আরো বড়, বেশী নারকীয় সমস্যার সস্মুখিণ হতে হচ্ছে । এতে করে একটা ছন্দে, পছন্দে তৈরী গ্রামগুলোর বৈশিষ্ট্য এবং সৌন্দর্য হারাচ্ছে । প্রতি বছর নতুন বসত ভিটা, রাস্তাঘাট, হাটবাজার, স্কুল কলেজসহ বিভিন্ন কাজে হাওরাঞ্চলের শতকরা প্রায় ০.৩৩ ভাগ হারে মূল্যবান কৃষি জমি চলে যাচ্ছে । এটাও আমাদের দ্রুত বর্ধনশীল জন সংখ্যার খাদ্য উতপাদন ঝুঁকির মুখে ফেলবে ।

এমতাবস্থায়, হাওরের ১৫,৩৭৪টি গ্রামকে যতটা সম্ভব একটি সমন্বিত ব্যবস্থাপণার মাধ্যমে একটা শৃংখলার মধ্যে আনতে হবে । নাগরিক সুবিধাদি প্রদাণের ব্যবস্থা নিতে হবে । এ গ্রামগুলো সৃজন কালে চারি পার্শ্ব হতে মাটি তোলে ১০-১৫ লাখ পুকুর/গর্ত সৃষ্টি করা হয়েছিল । কালের বিবর্তনে তার অধিকাংশই ভরাট বা মুজে গেছে । ফালগুণ-চৈত্র মাসে কর্মসৃজন কর্মসূচির আওতায় এ ভরাট হওয়া পুকুর/গর্ত গুলো পূনঃখনন করে বসত বাড়ির আয়তন বাড়ানো সম্ভব । এর পানি মাছ, মুক্তার চাষ, গৃহস্থালী এবং শুষ্ক সময়ে সম্পূরক সেচ কাজে ব্যবহার ও পরিবেশ রক্ষায় নিমায়ক হিসাবে কাজ করবে । সবচেয়ে বড় যে কাজটি হবে তা হচ্ছে, বর্ষার শুরুতেই চারিদিকের বৃষ্টির পানি ধারণ করে, নদীতে পতিতি হতে না দিয়ে আগাম বন্যাকে প্রলম্বিত করে ফসল রক্ষা করবে । হাওরাবচলে ৩,০০০ টিরও অধিক জলমহাল আছে, এগুলোতে সারা বছর পানি থাকে, যদি শুকিয়ে না ফেলে, যার আয়তন ৮, ৬৯, ০০০ হেক্টর । তাছাড়া প্রায় ৬ হাজারেরও অধিক জলাশয় আছে, যেগুলো শুষ্ক সময়ে শুকিয়ে যায় । এগুলোও খনন করে গভীরতা বৃদ্ধির মাধ্যমে মাছের উতপাদন বাড়ানো এবং জনবসতি গড়ে তোলা সম্ভব ।
হাওরের মূল্যবান কৃষি জমিতে নতুন করে, বিচ্ছিন্নভাবে, যত্রতত্র, ইচ্ছে মতো বাড়ি ঘর তৈরী করতে দেয়া যাবে না । তাই বলে তো মানুষের এই মৌলিক চাহিদাকে কোনভাবেই দমিয়ে রাখা সম্ভব নয়, উচিতও নয় । আমার স্বপ্নের এ সমন্বিত গ্রামটি সর্ব যোগাযোগ সুবিধা সম্বলিত, সুবিধাজনক স্থানে, পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলতে হবে । এতে বিছিন্নভাবে নতুন গ্রাম সৃজন এবং ভাঙ্গণ প্রতিরোধ খরচ অনেক কমে যাবে । কমে যাবে এ খাতে মূল্যবান কৃষি জমি দখলের । নাগরিক সুবিধা প্রদাণ সহজতর হবে । এ গ্রামের সাথে আবাদি জমি ও জলাশয়ের ভাল যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলতে হবে ।
প্রস্তাবিত এ সমন্বিত গ্রাম হবে অনেক বড় । স্কুল-কলেজ, স্বাস্থ্য সেবা, মসজিদ, মন্দির, ব্যাংক, বীমা, খেলার মাঠ, আন্তঃ এবং আভ্যন্তরিণ যোগাযোগ, বাজার, চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা, সমাজ-সংগঠন ও বহুমূখী মিলনায়তন থাকবে । গ্রামের এক পাশে বা মাঝে থাকবে বহু পুকুর । পুকুর বা নদী খননের মাটি দিয়েই এ গ্রাম তৈরী হবে । পুকুরের পানির বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন প্রজাতির দামী হাঁস-মাছ, মুক্তা চাষ হবে । পাড়ে থাকবে মূল্যমান বহু স্তর বিশিষ্ট ফলফলাদির গাছ, শাক সব্জী, গবাদি পশু, পালনের ব্যবস্থা । এর ফলে জলবায়ূ পরিবর্তন সকল পেশার আর ধর্মের মানুষের সমন্বিত সহবাস হতে পারে সমন্বিত এ গ্রামে । উপার্জনের ব্যবস্থা না করে দূরে বিরান ভূমিতে ‘আবাসন প্রকল্প বা গুচ্ছ গ্রাম‘ সৃজন মানুষের তেমন উপকারে আসে না । সমন্বিত গ্রামে পরিকল্পিত এবং সুবিন্যস্থ বহুতলা বিশিষ্ট আবাসন গড়ে তোলা যেতে পারে । একটি বিল্ডিং এ অনেকগুলো পরিবার; কুটির শিল্পের ব্যবস্থা থাকবে । সমন্বিত গ্রামের পাশে থাকতে পারে ‘বিসিক শিল্প’ এলাকা । এতে হাওরের চারিপাড় হতে আহরিত প্রাকৃতিক গ্যাস সংযোগের ব্যবস্থা থাকতে হবে । এ গ্রামকে পর্যটনের ‘স্বপ্নপুরী’তেও রুপদান সম্ভব । সারা বছর ব্যাপী এ গ্রামে কর্মসংস্থানের বিরাট-বিশাল মহা-কর্মযজ্ঞের সূচনা হবে । আসবে হাওরের রুপ সাগরে অবগাহণে শত শহস্র পর্যটক বা কর্মোপলক্ষ্যে বইবে হাওর মূখী অভিবাসনের স্রোত ।
হাওর মহা-পরিকল্পণায় আছে, নদীগুলোর খননকৃত মাটি দিয়ে এ রকম তিন শতাধিক উচুঁ ভূমি তৈরীর । এগুলোকে একটু পরিকল্পিতভাবে পুকুররে ব্যবস্থা রেখে প্রতিরক্ষা দেয়াল দিয়ে বানালে খুবই কাজের লাগবে বলে আমার বিশ্বাস । কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তা আমাকে জানিয়েছিলেন যে, কিশোরগঞ্জের হাওরে উচুঁ বসত ভিটা/গ্রাম তৈরী করা হবে । এনজিও গুলোর হাওরে ‘আফালের তাফালিং’ হতে গ্রাম রক্ষায় বিভিন্নমূখী কার্যক্রম পরিলক্ষিত হচ্ছে । আমার প্রস্তাব হচ্ছে, সরকারী বা বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে খাস জমিতে বা সুবিধা জনক স্থানে এ রকম ‘সস্মন্বিত গ্রাম’ সৃজন করতে পারে । তাঁরা মাটি কেটে পুকুর তৈরী, ভরাট করে বসত ভিটা সৃজন, অবাসন ব্যবস্থা, অবকাঠামো এবং প্রতিরক্ষা দেয়াল তৈরী করে দেবেন । সরকার নাগরিক সুবিধাদি সৃজন করে দেবেন । আগ্রহী এবং উপযুক্ত পরিবারের কাছে ভূর্তকী মূল্যে লাগোয়া পুকুরসহ আবাসন ব্যবস্থা সম্বলিত প্লট হস্থান্তর করা যেতে পারে । কিছু প্লট গরীব এবং কিছু পেশাজীবীদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা যেতে পারে । আবাসন ব্যবসায়ীদের কাছে এটি একটি লাভজনক ব্যবসা খাত হবে, এটি আমি হলপ করে বলতে পারি । মিঠা পানিকে কেন্দ্র করে হাওরে পর্যটনের সুস্থ্য ‘বিনোদণ কেন্দ্র’ এর অবকাঠামোও গড়ে উঠতে পারে। আমাদের দাবী, সব মিলে ‘সমন্বিত গ্রাম’ হবে হাওরবাসির ‘স্বস্থি আর শান্তির নীড়’ প্রতিষ্ঠায় কার্যকর পদক্ষেপ ।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

সৌদির কনসার্টে গাইবেন পড়শী আসছে নতুন গান

হাওরবাসির উন্নয়নের সমন্বিত গ্রামের সৃজন অপরিহার্য

আপডেট টাইম : ০৯:৫৭:০৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ অক্টোবর ২০১৭

জাকির হোসাইন : প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ হাওরবাসির জন জীবন নাগরিক সুবিধা হতে বঞ্চিত । গুচ্ছ গ্রামের মতো সংকীর্ণ, পরস্পর হতে বিচ্ছিন্ন, বিশাল হাওর/সায়রের মাঝে কচুরি পানার মতো ভাসমান এবং দ্বীপসম ছোট ছোট গ্রামে হাওরবাসিকে স্বল্প পরিসরে অনেক মানুষকে একত্রে গাদাগাদি করে কাদা জলে মাখামাখি করে নারকীয় অবস্থায় বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে । কারন, হাওরে নতুন গ্রাম সৃজন বা রক্ষা, এ দু’টোই অত্যন্ত কষ্টসাধ্য এবং ব্যয় সাপেক্ষ কাজ । তাই, হাওরে এক খন্ড শুকনো উঁচুঁ জায়গা, বসত বাড়ি সোনার মতো দামী । এসব গ্রামে নূন্যতম নাগরিক সুবিধা নাই । বসবাসের স্থান-স্বস্থি নাই, ঝুঁকিপূর্ণ, বেঁচে থাকাই কষ্টের কাজ, নাগরিক সুবিধা সেখানে বড়ই দুর্লভ । বিদ্যুত নাই, সুপেয় পানি নাই, নাই স্বাস্থ্যকর সেনিটেশান, ভাল যোগাযোগ ব্যবস্থা । অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে, অপুষ্টি, অশিক্ষা, নিরক্ষর আর রোগ বালাইকে সঙ্গী করেই তাঁদেরকে জীবন যাপন করতে হচ্ছে ।
হাওরের গ্রামগুলো দেশের অন্য দশটি গ্রাম হতে সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে তৈরী করা হয় । গ্রামগুলো সাধারণ সমতল ভূমি হতে ১০-১৫ ফুট উচুঁ করে বানানো হয় । আমারা জানি যে, বর্ষার ৬-৭ মাস হাওর অথৈ পানিতে সয়লাব থাকে । পানিতে ডুবে যাওয়া থেকে রক্ষা পেতেই এ কৌশল । ‘হাওর মহা পরিকল্পণা’র হিসাব মোতাবেক হাওর-ভাটি বাংলায় ৭টি জেলার ৩৯টি উপজেলায় ৩৭৩ টি হাওরে এ রকম ১৫,৩৭৪টি গ্রাম আছে । এ সব গ্রামে ৩২, ৪,৩৯০ পরিবারে (Haousehold) প্রায় ১৯.৩৭ মিলিয়ন লোক, দেশের মোট লোকের ১২%, বসবাস করে । এ সব বসত ভিটার আয়তন ৩,০৩,১২০ হেক্টর।
‘আফালের তাফালিং’ এ্ ঢেউ এর আঘাতে গ্রামগুলো ভেঙ্গে লন্ড-ভন্ড এবং ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় । খড় কুটা দিয়ে রক্ষার চেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবেশিত হয় । মানুষ বাড়ছে, কিন্ত সেই অনুপাতে হাওরে বসত ভিটা বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না । দেশের অন্য এলাকার মতো ইচ্ছে করলেই পাশের জায়গায় বাড়ির অংশ বাড়ানোর সুযোগ খুবই কম । পর্যাপ্ত বসত বাড়ির অভাবে একই ঘরে রান্নার ব্যবস্থাসহ গরু বাছুরের সাথে ২-৩ প্রজন্মকে এক সাথে মানবেতরভাবে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন । চর্ম চুক্ষে না দেখেল তাঁদের দুর্গতি লিখে বুঝানো সম্ভব নয় । মাটি কেটে উচুঁ ভিটাবাড়ি তৈরী এবং ঢেউ আর স্রোত থেকে রক্ষা করাই বড় চেলেঞ্জ । প্রতি বছর হাওরের গ্রামে বসত ভিটা ভাঙ্গণ হতে রক্ষা এবং মেরামতে তাঁদের আয়ের একটা বিরাট অংশ ব্যয় করতে হচ্ছে । তারপরও বিচ্ছিন্নভাবে সর্বত্র কিছু কিছু গ্রাম গড়ে তোলার চেষ্টা পরিলক্ষিত হয় । তাঁরা আরো বড়, বেশী নারকীয় সমস্যার সস্মুখিণ হতে হচ্ছে । এতে করে একটা ছন্দে, পছন্দে তৈরী গ্রামগুলোর বৈশিষ্ট্য এবং সৌন্দর্য হারাচ্ছে । প্রতি বছর নতুন বসত ভিটা, রাস্তাঘাট, হাটবাজার, স্কুল কলেজসহ বিভিন্ন কাজে হাওরাঞ্চলের শতকরা প্রায় ০.৩৩ ভাগ হারে মূল্যবান কৃষি জমি চলে যাচ্ছে । এটাও আমাদের দ্রুত বর্ধনশীল জন সংখ্যার খাদ্য উতপাদন ঝুঁকির মুখে ফেলবে ।

এমতাবস্থায়, হাওরের ১৫,৩৭৪টি গ্রামকে যতটা সম্ভব একটি সমন্বিত ব্যবস্থাপণার মাধ্যমে একটা শৃংখলার মধ্যে আনতে হবে । নাগরিক সুবিধাদি প্রদাণের ব্যবস্থা নিতে হবে । এ গ্রামগুলো সৃজন কালে চারি পার্শ্ব হতে মাটি তোলে ১০-১৫ লাখ পুকুর/গর্ত সৃষ্টি করা হয়েছিল । কালের বিবর্তনে তার অধিকাংশই ভরাট বা মুজে গেছে । ফালগুণ-চৈত্র মাসে কর্মসৃজন কর্মসূচির আওতায় এ ভরাট হওয়া পুকুর/গর্ত গুলো পূনঃখনন করে বসত বাড়ির আয়তন বাড়ানো সম্ভব । এর পানি মাছ, মুক্তার চাষ, গৃহস্থালী এবং শুষ্ক সময়ে সম্পূরক সেচ কাজে ব্যবহার ও পরিবেশ রক্ষায় নিমায়ক হিসাবে কাজ করবে । সবচেয়ে বড় যে কাজটি হবে তা হচ্ছে, বর্ষার শুরুতেই চারিদিকের বৃষ্টির পানি ধারণ করে, নদীতে পতিতি হতে না দিয়ে আগাম বন্যাকে প্রলম্বিত করে ফসল রক্ষা করবে । হাওরাবচলে ৩,০০০ টিরও অধিক জলমহাল আছে, এগুলোতে সারা বছর পানি থাকে, যদি শুকিয়ে না ফেলে, যার আয়তন ৮, ৬৯, ০০০ হেক্টর । তাছাড়া প্রায় ৬ হাজারেরও অধিক জলাশয় আছে, যেগুলো শুষ্ক সময়ে শুকিয়ে যায় । এগুলোও খনন করে গভীরতা বৃদ্ধির মাধ্যমে মাছের উতপাদন বাড়ানো এবং জনবসতি গড়ে তোলা সম্ভব ।
হাওরের মূল্যবান কৃষি জমিতে নতুন করে, বিচ্ছিন্নভাবে, যত্রতত্র, ইচ্ছে মতো বাড়ি ঘর তৈরী করতে দেয়া যাবে না । তাই বলে তো মানুষের এই মৌলিক চাহিদাকে কোনভাবেই দমিয়ে রাখা সম্ভব নয়, উচিতও নয় । আমার স্বপ্নের এ সমন্বিত গ্রামটি সর্ব যোগাযোগ সুবিধা সম্বলিত, সুবিধাজনক স্থানে, পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলতে হবে । এতে বিছিন্নভাবে নতুন গ্রাম সৃজন এবং ভাঙ্গণ প্রতিরোধ খরচ অনেক কমে যাবে । কমে যাবে এ খাতে মূল্যবান কৃষি জমি দখলের । নাগরিক সুবিধা প্রদাণ সহজতর হবে । এ গ্রামের সাথে আবাদি জমি ও জলাশয়ের ভাল যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলতে হবে ।
প্রস্তাবিত এ সমন্বিত গ্রাম হবে অনেক বড় । স্কুল-কলেজ, স্বাস্থ্য সেবা, মসজিদ, মন্দির, ব্যাংক, বীমা, খেলার মাঠ, আন্তঃ এবং আভ্যন্তরিণ যোগাযোগ, বাজার, চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা, সমাজ-সংগঠন ও বহুমূখী মিলনায়তন থাকবে । গ্রামের এক পাশে বা মাঝে থাকবে বহু পুকুর । পুকুর বা নদী খননের মাটি দিয়েই এ গ্রাম তৈরী হবে । পুকুরের পানির বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন প্রজাতির দামী হাঁস-মাছ, মুক্তা চাষ হবে । পাড়ে থাকবে মূল্যমান বহু স্তর বিশিষ্ট ফলফলাদির গাছ, শাক সব্জী, গবাদি পশু, পালনের ব্যবস্থা । এর ফলে জলবায়ূ পরিবর্তন সকল পেশার আর ধর্মের মানুষের সমন্বিত সহবাস হতে পারে সমন্বিত এ গ্রামে । উপার্জনের ব্যবস্থা না করে দূরে বিরান ভূমিতে ‘আবাসন প্রকল্প বা গুচ্ছ গ্রাম‘ সৃজন মানুষের তেমন উপকারে আসে না । সমন্বিত গ্রামে পরিকল্পিত এবং সুবিন্যস্থ বহুতলা বিশিষ্ট আবাসন গড়ে তোলা যেতে পারে । একটি বিল্ডিং এ অনেকগুলো পরিবার; কুটির শিল্পের ব্যবস্থা থাকবে । সমন্বিত গ্রামের পাশে থাকতে পারে ‘বিসিক শিল্প’ এলাকা । এতে হাওরের চারিপাড় হতে আহরিত প্রাকৃতিক গ্যাস সংযোগের ব্যবস্থা থাকতে হবে । এ গ্রামকে পর্যটনের ‘স্বপ্নপুরী’তেও রুপদান সম্ভব । সারা বছর ব্যাপী এ গ্রামে কর্মসংস্থানের বিরাট-বিশাল মহা-কর্মযজ্ঞের সূচনা হবে । আসবে হাওরের রুপ সাগরে অবগাহণে শত শহস্র পর্যটক বা কর্মোপলক্ষ্যে বইবে হাওর মূখী অভিবাসনের স্রোত ।
হাওর মহা-পরিকল্পণায় আছে, নদীগুলোর খননকৃত মাটি দিয়ে এ রকম তিন শতাধিক উচুঁ ভূমি তৈরীর । এগুলোকে একটু পরিকল্পিতভাবে পুকুররে ব্যবস্থা রেখে প্রতিরক্ষা দেয়াল দিয়ে বানালে খুবই কাজের লাগবে বলে আমার বিশ্বাস । কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তা আমাকে জানিয়েছিলেন যে, কিশোরগঞ্জের হাওরে উচুঁ বসত ভিটা/গ্রাম তৈরী করা হবে । এনজিও গুলোর হাওরে ‘আফালের তাফালিং’ হতে গ্রাম রক্ষায় বিভিন্নমূখী কার্যক্রম পরিলক্ষিত হচ্ছে । আমার প্রস্তাব হচ্ছে, সরকারী বা বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে খাস জমিতে বা সুবিধা জনক স্থানে এ রকম ‘সস্মন্বিত গ্রাম’ সৃজন করতে পারে । তাঁরা মাটি কেটে পুকুর তৈরী, ভরাট করে বসত ভিটা সৃজন, অবাসন ব্যবস্থা, অবকাঠামো এবং প্রতিরক্ষা দেয়াল তৈরী করে দেবেন । সরকার নাগরিক সুবিধাদি সৃজন করে দেবেন । আগ্রহী এবং উপযুক্ত পরিবারের কাছে ভূর্তকী মূল্যে লাগোয়া পুকুরসহ আবাসন ব্যবস্থা সম্বলিত প্লট হস্থান্তর করা যেতে পারে । কিছু প্লট গরীব এবং কিছু পেশাজীবীদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা যেতে পারে । আবাসন ব্যবসায়ীদের কাছে এটি একটি লাভজনক ব্যবসা খাত হবে, এটি আমি হলপ করে বলতে পারি । মিঠা পানিকে কেন্দ্র করে হাওরে পর্যটনের সুস্থ্য ‘বিনোদণ কেন্দ্র’ এর অবকাঠামোও গড়ে উঠতে পারে। আমাদের দাবী, সব মিলে ‘সমন্বিত গ্রাম’ হবে হাওরবাসির ‘স্বস্থি আর শান্তির নীড়’ প্রতিষ্ঠায় কার্যকর পদক্ষেপ ।