হাওর বার্তা ডেস্কঃ নেদারল্যান্ডসের এনজিওসমূহ বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে। গত শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) দ্য হেগের বাংলাদেশ দূতাবাস প্রাঙ্গণে এনজিও নেটওয়ার্ক ও সুহৃদ সভা: একটি প্রগতিশীল বাংলাদেশের জন্য শীর্ষক সভায় এ সমর্থন জানানো হয়। স্থানীয় এনজিও নিকেতনের সহযোগিতায় বাংলাদেশ দূতাবাস এই সভার আয়োজন করে। এতে বাংলাদেশে সক্রিয় ছোট-বড় প্রায় ৩৫টি ডাচ এনজিওর প্রায় ৫০ জন প্রতিনিধি যোগ দেন। স্থানীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিও এতে উপস্থিত ছিলেন।
নেদারল্যান্ডসে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ মুহম্মদ বেলাল সভার উদ্বোধন এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। বক্তব্যে তিনি বাল্য-বিবাহ, নারীর ক্ষমতায়ন, আয়-বৈষম্য ইত্যাদি বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ডাচ সরকার ও এনজিওদের সমর্থন কামনা করেন। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের মতো দেশের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য প্রয়োজন আন্তর্জাতিক সহযোগিতা। এ জন্য তিনি সকল স্টেকহোল্ডারের অংশগ্রহণ এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের ওপর জোর দেন এবং বাংলাদেশে চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ডাচ এনজিওদের সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানান। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে সরকার কর্তৃক গৃহীত বিশেষায়িত অর্থনৈতিক এলাকা সম্পর্কে সকলকে অবহিত করেন। শেখ মুহম্মদ বেলাল উপস্থিত এনজিওসমূহকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সর্বশেষ অবস্থা ও সরকারের পদক্ষেপসমূহ বর্ণনা করেন এবং সকলের নৈতিক সমর্থন কামনা করেন।
দূতাবাসের কাউন্সেলর কাজী রাসেল পারভেজ তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশ কাজের পরিবেশ, নিরাপত্তা ও সরকারের নীতি সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করেন। তিনি বাংলাদেশে বর্তমানে বিদ্যমান রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কথা তুলে ধরেন এবং সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
ডাচ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র পলিসি অফিসার ইয়ান ডি বোয়ের দূতাবাসের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানান। ঢাকায় ডাচ দূতাবাসের সাবেক প্রথম সচিব এলা ডি ফুকত বাংলাদেশ সক্রিয় ডাচ উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানসমূহের কাজে আরও সমন্বয় আনার আহ্বান জানান। তিনি বাংলাদেশে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ডাচ দূতাবাসের সুসম্পর্কের কথা জানান এবং ডাচ এনজিওদের দূতাবাসের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেন।
এরপর নিকেতনের বোর্ড সদস্য এস্ট্রিড ফ্রে একটি ব্যতিক্রমধর্মী সংলাপের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীদের সাফল্য, অভিজ্ঞতা, কাজের সুবিধা ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে মতামত আহ্বান করেন। ডায়াসপোরা উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান বাসুগের প্রতিনিধি বিকাশ বড়ুয়া চৌধুরী বলেন, তাঁরা অভিবাসী কর্মীদের মধ্যে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রেরণ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করছেন। জেডব্লিউ সাপোর্টের (গোলপাতা ইকো ট্যুর) জোয়ান্না বলেন তাঁর প্রতিষ্ঠান এতিমদের শিক্ষা ও পরবর্তীতে কর্ম অন্বেষণে সাহায্য করে যাচ্ছে। ডিভা ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের মার্টেন জানান, তার প্রতিষ্ঠান ঢাকায় তরুণ তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীদের মাধ্যমে ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরির কাজ করছে। হাঙ্গার প্রজেক্টের প্রতিনিধি ক্যাটেলিয়ন বাল্যবিবাহ রোধে এবং মেয়েদের নেতৃত্ব উন্নয়নে তাদের কার্যক্রম তুলে ধরেন। সেভ দ্য চিলড্রেনের মহুয়া করিম শিশু অধিকার ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ওপর তাদের কার্যক্রম আছে বলে জানান। বোয়েন আন বাংলাদেশের জে ইউ লিটন শিক্ষা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় তাঁর অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। ব্লু-গোল্ড প্রোগ্রামের ব্রুইন বাংলাদেশে তাদের কর্মকাণ্ডের একটি বিবরণ দেন।
অংশগ্রহণকারীরা দূতাবাসের এই উদ্যোগের আন্তরিক প্রশংসা করেন এবং একে বাংলাদেশ সরকার এবং ডাচ উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে সেতুবন্ধ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তাঁরা সকলে বাংলাদেশিদের বিদেশি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান বান্ধব হিসেবে প্রশংসা করেন। তাঁরা উদীয়মান তরুণ প্রজন্মের প্রতি ইঙ্গিত করে বাংলাদেশকে সম্ভাবনার দেশ হিসেবে অভিহিত করেন।
সবশেষে শেখ মুহম্মদ বেলাল উন্নত দেশসমূহের উন্নত কর্মপন্থা বিশেষ করে কৃষি ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহারসমূহ বাংলাদেশেও পরিচিত করার উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি ডাচ সরকারের সহযোগিতায় ডেলটা প্ল্যান ২১০০ বাস্তবায়নের জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
সভায় সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন দূতাবাসের প্রথম সচিব ইশতিয়াক আহমেদ। বছরে অন্তত একবার এ ধরনের একটি সভার মাধ্যমে ডাচ উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানসমূহের সঙ্গে মতবিনিময়ের সুযোগ দূতাবাস তৈরি করবে বলে তিনি জানান। বিজ্ঞপ্তি