ঢাকা ০৬:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মিয়ানমারের হেলিকপটার চড়ুই পাখি নয়

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৭:০৬:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭
  • ৩২৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ গত বৃহস্পতিবার তৃতীয়বারেরমতো বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হেলিকপ্টার ও সামরিক বাহিনীর ড্রোন। বারবার মিয়ানমারের আকাশসীমা লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অনেকেই যুদ্ধ ঘোষণা করছে।

আবার অনেকেই এই পরিস্থিতির বাস্তবতাও আন্দাজ করতে পারছেন। আকাশসীমা লঙ্ঘন যে মিয়ানমারের এক ধরনের উস্কানি বলেও মন্তব্য করছেন অনেকে।

ধৈর্য দেখিয়ে বাংলাদেশ কূটনৈতিকভাবে পরিপক্কতা দেখিয়েছে তা না হলে রোহিঙ্গা শরণার্থীর ইস্যুটাই ঘুরে যেত বলেও মনে করছেন বিশিষ্টজনেরা। এ বিষয়ে সাংবাদিক মোস্তফা মল্লিক তার ফেসবুকে লিখেছেন: ফেসবুক জেনারেলদের বলছি-

মিয়ানমারের হেলিকপ্টার এবং ড্রোন দফায় দফায় আমাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করার ঘটনায় আমি নিশ্চিত দেশরক্ষায় জনগণের সঙ্গে আমাদের নিজস্ব যে বাহিনী রয়েছে, সেখানে অনেক ওয়ান স্টার, দু’স্টার থ্রি স্টার এমনকি ফোর স্টার জেনারেল’ও আছেন; যারা আমাদের মতোই চিন্তিত। তাদের ভাবতে দিন।

‘আমরাও ফেসবুক জেনারেল হিসেবে অনেক অংক কষতেই পারি, নিজস্ব ভাবনা জানাতে পারি– তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু কিছু না জেনে, না বুঝে কিংবা ফেসবুকে আমরা যেমন সক্রিয়, তেমনি আমাদের বাহিনীর সদস্যরা দেশের চিন্তা বাদ দিয়ে নাকে তেলে দিয়ে ঘুমাচ্ছেন– এমন ভাবনা দেশের জন্য ক্ষতিকর।’

ভারী অস্ত্র নিয়ে রাখাইনের বিভিন্ন স্থানে টহল দিচ্ছে পুলিশ ও সেনাবাহিনী। তিনি বলেন, ‘আমরা যেমন আমাদের নিজস্ব যার যার জগতে কাজ করছি, তেমনি বাহিনীগুলো কিংবা সরকারেরও নিজস্ব একটা ভাবনা আছে মিয়ানমার ইস্যুতে। সেই ভাবনার বাস্তবায়ন করতে দিন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শেখ আদনান ফাহাদ ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন: মিয়ানমার এতবার আমাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করল, আমাদের বিজিবি, আর্মি কিছু করল না কেন? কমপক্ষে ১০ বার এই অপরাধ করেছে (১৭ বারও বলেছে অনেকে) মিয়ানমারের হেলিকপটার। কিন্তু আমাদের বিমানবাহিনী আছে, সেনাবাহিনী আছে, নৌবাহিনী আছে।

সীমান্তে কাজ করে অত্যন্ত দক্ষ ও সাহসী বিজিবি বাহিনী। হেলিকপটার তো আর চড়ুই পাখি নয় যে, কখন আসবে, কখন যাবে বোঝা যাবে না। হেলিকপ্টার অনেক দূর থেকে আসে। উড়তে উড়তে বিকট শব্দ করতে করতে আসে। অনেক দূর থেকেই বিজিবি, আর্মির বা বিমানবাহিনীর রাডারে ধরা পড়ার কথা। এমনকি বাইনোকোলার দিয়েও দেখা যাওয়ার কথা।

‘প্রথম বার মাফ করলেন, দ্বিতীয় বার মাফ করলেন, তৃতীয়বার মাফ করলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিবাদ করলেন, ঠিক আছে। কিন্তু এরা তো মন্ত্রীর কথামতই ১০/১২ বার অনুপ্রবেশ করল। কেন এর সামরিক জবাব দেয়া হচ্ছে না!’

রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং কলামিস্ট-লেখক মাসুদা ভাট্টি তার ফেসবুকে লিখেছেন: যারা যুদ্ধের ডাক দিচ্ছেন, যারা রোহিঙ্গাদের জন্য এদেশের বৌদ্ধ কিংবা আদিবাসী নাগরিকের ওপর হামলা করছেন – তারা সকলেই কেবল পরিস্থিতির অবনতি চাইছেন, মিয়ানমারও একটি যুদ্ধাবস্থা তৈরি করে আন্তর্জাতিকভাবে আসা চাপকে আরো ঘনীভূত করতে চাইছে, ফলে মিয়ানমারের সঙ্গে এদেশীয় যুদ্ধবাজ বা হামলাবাজদের পার্থক্য কিছুই নেই।

মিয়ানমারের সৈন্যদের মহড়া নিয়ে তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার গায়ের জোরে একটি ভয়ঙ্কর মানবিক বিপরর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি করেছে, বাংলাদেশ এখানে মানবিকতার পরিচয় দিয়েছে এবং প্রাজ্ঞ রাষ্ট্রের আচরণ করছে কূটনৈতিকভাবে বিষয়টি মোকাবিলার মাধ্যমে, এর বাইরে বাংলাদেশও উস্কানিমূলক যুদ্ধংদেহী অবস্থানে গেলে এই ভূ-খণ্ডে নতুন খাণ্ডবদাহন শুরু হবে, তাতে কি এই যুদ্ধের উস্কানিদাতারা বাঁচতেন?,’ বলে তিনি উল্লেখ করেন।

মাসুদা ভাট্টি বলেন: প্রেসক্লাব বা ফেইসবুকের পাতায় যুদ্ধের ডাক দেয়া আর রণাঙ্গণে যুদ্ধ করা দু’টো ভিন্ন বিষয়, একই সঙ্গে মানববন্ধনে দাঁড়াবেন আবার যুদ্ধেরও ডাক দেবেন, সেটা সিনেমায় হতে পারে, বাস্তবে একে যেমন খুশি তেমন সাজো বড়জোর বলা যেতে পারে, যেমন বছর বছর স্কুলে স্কুলে বার্ষিক প্রতিযোগিতায় শিশুরা মুক্তিযোদ্ধা সাজে, তেমনই।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

মিয়ানমারের হেলিকপটার চড়ুই পাখি নয়

আপডেট টাইম : ০৭:০৬:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ গত বৃহস্পতিবার তৃতীয়বারেরমতো বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হেলিকপ্টার ও সামরিক বাহিনীর ড্রোন। বারবার মিয়ানমারের আকাশসীমা লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অনেকেই যুদ্ধ ঘোষণা করছে।

আবার অনেকেই এই পরিস্থিতির বাস্তবতাও আন্দাজ করতে পারছেন। আকাশসীমা লঙ্ঘন যে মিয়ানমারের এক ধরনের উস্কানি বলেও মন্তব্য করছেন অনেকে।

ধৈর্য দেখিয়ে বাংলাদেশ কূটনৈতিকভাবে পরিপক্কতা দেখিয়েছে তা না হলে রোহিঙ্গা শরণার্থীর ইস্যুটাই ঘুরে যেত বলেও মনে করছেন বিশিষ্টজনেরা। এ বিষয়ে সাংবাদিক মোস্তফা মল্লিক তার ফেসবুকে লিখেছেন: ফেসবুক জেনারেলদের বলছি-

মিয়ানমারের হেলিকপ্টার এবং ড্রোন দফায় দফায় আমাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করার ঘটনায় আমি নিশ্চিত দেশরক্ষায় জনগণের সঙ্গে আমাদের নিজস্ব যে বাহিনী রয়েছে, সেখানে অনেক ওয়ান স্টার, দু’স্টার থ্রি স্টার এমনকি ফোর স্টার জেনারেল’ও আছেন; যারা আমাদের মতোই চিন্তিত। তাদের ভাবতে দিন।

‘আমরাও ফেসবুক জেনারেল হিসেবে অনেক অংক কষতেই পারি, নিজস্ব ভাবনা জানাতে পারি– তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু কিছু না জেনে, না বুঝে কিংবা ফেসবুকে আমরা যেমন সক্রিয়, তেমনি আমাদের বাহিনীর সদস্যরা দেশের চিন্তা বাদ দিয়ে নাকে তেলে দিয়ে ঘুমাচ্ছেন– এমন ভাবনা দেশের জন্য ক্ষতিকর।’

ভারী অস্ত্র নিয়ে রাখাইনের বিভিন্ন স্থানে টহল দিচ্ছে পুলিশ ও সেনাবাহিনী। তিনি বলেন, ‘আমরা যেমন আমাদের নিজস্ব যার যার জগতে কাজ করছি, তেমনি বাহিনীগুলো কিংবা সরকারেরও নিজস্ব একটা ভাবনা আছে মিয়ানমার ইস্যুতে। সেই ভাবনার বাস্তবায়ন করতে দিন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শেখ আদনান ফাহাদ ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন: মিয়ানমার এতবার আমাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করল, আমাদের বিজিবি, আর্মি কিছু করল না কেন? কমপক্ষে ১০ বার এই অপরাধ করেছে (১৭ বারও বলেছে অনেকে) মিয়ানমারের হেলিকপটার। কিন্তু আমাদের বিমানবাহিনী আছে, সেনাবাহিনী আছে, নৌবাহিনী আছে।

সীমান্তে কাজ করে অত্যন্ত দক্ষ ও সাহসী বিজিবি বাহিনী। হেলিকপটার তো আর চড়ুই পাখি নয় যে, কখন আসবে, কখন যাবে বোঝা যাবে না। হেলিকপ্টার অনেক দূর থেকে আসে। উড়তে উড়তে বিকট শব্দ করতে করতে আসে। অনেক দূর থেকেই বিজিবি, আর্মির বা বিমানবাহিনীর রাডারে ধরা পড়ার কথা। এমনকি বাইনোকোলার দিয়েও দেখা যাওয়ার কথা।

‘প্রথম বার মাফ করলেন, দ্বিতীয় বার মাফ করলেন, তৃতীয়বার মাফ করলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিবাদ করলেন, ঠিক আছে। কিন্তু এরা তো মন্ত্রীর কথামতই ১০/১২ বার অনুপ্রবেশ করল। কেন এর সামরিক জবাব দেয়া হচ্ছে না!’

রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং কলামিস্ট-লেখক মাসুদা ভাট্টি তার ফেসবুকে লিখেছেন: যারা যুদ্ধের ডাক দিচ্ছেন, যারা রোহিঙ্গাদের জন্য এদেশের বৌদ্ধ কিংবা আদিবাসী নাগরিকের ওপর হামলা করছেন – তারা সকলেই কেবল পরিস্থিতির অবনতি চাইছেন, মিয়ানমারও একটি যুদ্ধাবস্থা তৈরি করে আন্তর্জাতিকভাবে আসা চাপকে আরো ঘনীভূত করতে চাইছে, ফলে মিয়ানমারের সঙ্গে এদেশীয় যুদ্ধবাজ বা হামলাবাজদের পার্থক্য কিছুই নেই।

মিয়ানমারের সৈন্যদের মহড়া নিয়ে তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার গায়ের জোরে একটি ভয়ঙ্কর মানবিক বিপরর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি করেছে, বাংলাদেশ এখানে মানবিকতার পরিচয় দিয়েছে এবং প্রাজ্ঞ রাষ্ট্রের আচরণ করছে কূটনৈতিকভাবে বিষয়টি মোকাবিলার মাধ্যমে, এর বাইরে বাংলাদেশও উস্কানিমূলক যুদ্ধংদেহী অবস্থানে গেলে এই ভূ-খণ্ডে নতুন খাণ্ডবদাহন শুরু হবে, তাতে কি এই যুদ্ধের উস্কানিদাতারা বাঁচতেন?,’ বলে তিনি উল্লেখ করেন।

মাসুদা ভাট্টি বলেন: প্রেসক্লাব বা ফেইসবুকের পাতায় যুদ্ধের ডাক দেয়া আর রণাঙ্গণে যুদ্ধ করা দু’টো ভিন্ন বিষয়, একই সঙ্গে মানববন্ধনে দাঁড়াবেন আবার যুদ্ধেরও ডাক দেবেন, সেটা সিনেমায় হতে পারে, বাস্তবে একে যেমন খুশি তেমন সাজো বড়জোর বলা যেতে পারে, যেমন বছর বছর স্কুলে স্কুলে বার্ষিক প্রতিযোগিতায় শিশুরা মুক্তিযোদ্ধা সাজে, তেমনই।