হাওর বার্তা ডেস্কঃ কবি জন কিটসের বাড়ি কিটস মিউজিয়ামে সৌধ আয়োজিত তিন মাসব্যাপী বাংলা সংগীত উৎসবের শুভ উদ্বোধনের পর আগামীকাল শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) পূর্ব লন্ডনের ব্রাডি সেন্টারে বসছে এর দ্বিতীয় অধিবেশন। এতে বাংলা লোকসংগীতের ঐতিহ্যবাহী পরিবেশনা নিয়ে আসছেন সুফি আমির মোহাম্মদ, দুই বাংলার দর্শক-নন্দিত শিল্পী সাহানা বাজপেয়ি ও সব্যসাচী শিল্পী সঞ্জয় দে।
এ বছর পঞ্চমবারের মতো এই উৎসব লন্ডনেও লিডসের বিভিন্ন ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে।
সাহানা বাজপেয়ি ও সঞ্জয় দে এর আগেও তিনবার বাংলা সংগীত উৎসবে গাইলেও সুফি আমির মোহাম্মদের জন্য এটিই প্রথম। মাটির গানের ঐতিহ্যবাহী পরিবেশনার জন্য আমির মোহাম্মদ লন্ডনে বিপুলভাবে জনপ্রিয়।
সাহানা বাজপেয়ি দুই বাংলাতেই সমানভাবেই জনপ্রিয়। রবীন্দ্রনাথ ও লোকসংগীতের নিরীক্ষাধর্মী পরিবেশনার জন্য দুই বাংলাতেই তাঁর অ্যালবাম চার্টের শীর্ষে থেকেছে। গানের বাইরেও সাহানা লন্ডনের বিখ্যাত সোয়াস ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত আছেন।
সঞ্জয় দে গান শিখেছেন বর্ষীয়ান রবীন্দ্রশিল্পী প্রমিতা মল্লিকের কাছে। রবীন্দ্রনাথ ছাড়াও আধুনিক গান, বলিউডের গান ও হারানো দিনের গান করে তিনি লন্ডনে বিপুলভাবে জনপ্রিয়। এবারই প্রথম লোকসংগীত গাইছেন সৌধ মঞ্চে।
গত সপ্তাহে কিটস হাউসে উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলা ক্ল্যাসিক্যাল, সেমি-ক্ল্যাসিক্যাল সংগীত পরিবেশন করেন শীর্ষ শাস্ত্রীয় সংগীত শিল্পী চন্দ্রা চক্রবর্তী। এতে তবলা সংগত করেন পশ্চিমবাংলার চলমান প্রজন্মের প্রখ্যাত তবলা বাদক বিপ্লব ভট্টাচার্য। কিবোর্ডে ছিলেন মেধাবী সংগীত শিল্পী ও বাদক অমিত দে।
কিটস হাউসের অধিকাংশ দর্শকই ছিলেন অবাঙালি এবং শিল্পী চন্দ্রা চক্রবর্তীর গান সত্যিকার অর্থেই বাংলা সংগীতের বিশ্বস্ত ও চূড়ান্ত শক্তিশালী পরিবেশনা বলে দর্শকেরা মন্তব্য করেন। এমন জাদুময় পরিবেশনা এই সংগীতের প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে তুলেছে বলে উল্লেখ করে কিটস হাউসের কিউরেটর এমি বার্জেস বলেন, এমন সংগীত শোনার জন্য আমি রিচমিক্সসহ অন্যান্য ভেন্যুতে উপস্থিত থাকার পরিকল্পনা করেছি।
চন্দ্রা চক্রবর্তী শুরু করেন একটা নিরীক্ষাধর্মী বাংলা খেয়ালের পরিবেশনা দিয়ে। ভীমপালশ্রী রাগে রচিত খেয়ালের পরিবেশনায় চন্দ্রা যোগ করেছেন তাঁর নিজস্ব চমক। অপূর্ব সব মিড়, গমক, মড়কি আর তান সরগমের দ্রুতি-সব মিলিয়ে ছিল এক শ্বাসরুদ্ধকর অভিজ্ঞতা।
পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত দর্শক সুজা শাহ জানান, শাস্ত্রীয় সংগীতের এমন সুরেলা আর জাদুময় পরিবেশনা খোদ ভারত-পাকিস্তানে খুব একটা হচ্ছে বলে মনে হয় না। আমি ব্যক্তিগতভাবে চন্দ্রাজির কোনো শাস্ত্রীয় সংগীতের সেশনই মিস করি না। আজ বাংলা সংগীতের এই অনুষ্ঠানে এসেও একটা সুরভরা মন নিয়ে বাসায় ফিরছি।
সৌধের পরিচালক টি এম আহমেদ কায়সার বলেন, কিটস হাউসে আমরা মোটামুটি আমাদের সংগীতের দর্শন ও সংগীতের শক্তির একটা সংক্ষিপ্ত মঞ্চায়ন করেছি। আমরা যারপরনাই গর্বিত যে, চন্দ্রা চক্রবর্তীর মতো একজন গুণী শিল্পী নিজের গানের পাশাপাশি সৌধের শিল্প পরিচালকের দায়িত্বও পালন করছেন। কমিউনিটিতে যারা সংগীত না বুঝেই গানবাজনা করছেন, তারা এসব অনুষ্ঠানে আসতে পারতেন, বিশেষ করে চন্দ্রা চক্রবর্তীর গানের সেশনে, তাতে অন্তত বাংলা গান কীভাবে সুরে গাইতে হয়, সেটা তারা জানতে পারতেন। আর যেকোনো বিচারেই সংগীতের যে তালিম, সংগীতের যে সৌকর্য, সংগীতের যে শিখরস্পর্শী উচ্চতা থেকে চন্দ্রা এসেছেন, এ দেশে বসে এই গান শুনতে পারা, নেহাত সংগীত-মূর্খ না হলে, যেকোনো গাইয়ে-বাজিয়েদের কাছে একটা মোক্ষম সুযোগ। এটা দুঃখজনক যে, এই সব গাইয়ে বাজিয়েদের সৌধ তো বটেই কোনো একটা ভালো গানের অনুষ্ঠানে দেখা যায় না। ফলে মূর্খতা তো বাড়ছে, আর শুধু পাঁচ-দশটা গান শিখে শিল্পী হয়ে যাওয়া মানুষেরা দিকে দিকে সুর-দূষণ করে যাচ্ছেন।
কায়সার আরও বলেন, ব্রাডি সেন্টারে লোকসংগীত পর্বের পর রিচমিক্সে আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর, কবি নজরুল সেন্টারে ৩০ সেপ্টেম্বর, ৭ অক্টোবর পপলার ইউনিয়ন, ১২ অক্টোবর বিখ্যাত হাউস অব কমন্স, ১৪ অক্টোবর পপলার ইউনিয়ন, ২১ অক্টোবর কবি নজরুল সেন্টার, ৪ নভেম্বর উইম্বলডন লাইব্রেরি এবং ৫ নভেম্বর লিডসে অনুষ্ঠিত হবে উৎসবের অন্যান্য সেশনগুলো অনুষ্ঠিত হবে। বাংলা গান নিয়ে যেকোনো আগ্রহী দর্শকদের কাছে বিভিন্ন থিম আর বর্গের ওপর এই বিভিন্ন সেশনগুলো যেকোনো অর্থেই হবে বিরল আর চমৎকার অভিজ্ঞতার অংশ।