ঢাকা ১২:২০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কেরানির চাকরির রেট ৫০ লাখ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৩৩:০২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ অগাস্ট ২০১৫
  • ৩৯২ বার

নিয়োগ পরীক্ষার আগেই চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে উচ্চমান সহকারী পদে চাকুরি মোটা অঙ্কের টাকায় বেচাকেনার গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিটি পদের বিপরীতে টাকার অঙ্ক ৫০ লাখ পর্যন্ত উঠার বিষয়টি এখন প্রার্থীদের মুখে মুখে!

প্রার্থীরা বলছেন, চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস প্রায় এক বছর আগে তৃতীয় শ্রেণির পদ মর্যাদার উচ্চমান সহকারীর ৩৬টি পদে নিয়োগের জন্য বিভিন্ন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। যার পরীক্ষা আগামী শুক্রবার (২১ আগস্ট) নগরীর বিভিন্ন কলেজ কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে।

কিন্তু পরীক্ষার আগেই কাস্টমস হাউসের কর্মকর্তা, স্থানীয় ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতাদের প্রভাব এবং সুপারিশে নিয়োগের বিষয়টি প্রায় চুড়ান্ত হয়ে গেছে বলে বলাবলি হচ্ছে। বিশেষ করে সুপারিশের ক্ষেত্রে নিয়োগের অঙ্ক প্রায় ৫০ লাখ টাকায় উঠেছে বলে জানা গেছে।

অঙ্কের দৌড়ে মানদন্ড পূরণে ব্যর্থ হয়ে হতাশ মনে ফিরেছেন এমন প্রার্থীদের অনেকে বিষয়টি ফাঁস করে দিয়েছেন বলে জানা গেছে। প্রার্থীদের অভিযোগ, পরীক্ষা নেওয়াটা হচ্ছে আইওয়াশ! পরীক্ষা নেওয়ার মাত্র কয়েক ঘন্টা পর (রাত ১০টা) ফলাফল প্রকাশ করার কথা! পরদিন সকালে তড়িঘড়ি করে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার বিধান থাকাটাও খুবই সন্দেহজনক।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার ও বিভাগীয় নির্বাচন কমিটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ রেজাউল হক জানান, ৩৬ পদের বিপরীতে ২৩ হাজার ৪০০ প্রার্থী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই শেষে এসব প্রার্থীকে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য প্রবেশপত্র পাঠানো হয়েছে।

প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরীক্ষা এমসিকিউ পদ্ধতিতে ১০০ নম্বরে হবে। কষ্ট হলেও ওইদিন রাত ১০ টায় ফলাফল প্রকাশ করা হবে। পরদিন শনিবার লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হবে।

নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কারচুপি ও দুর্নীতির বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, কারচুপির ও দুর্নীতির সুযোগ যাতে কেউ না পায় সে কারনেই তো অতি অল্প সময়ে ফলাফল প্রকাশ ও মৌখিক পরীক্ষা সম্পন্নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

কাস্টমস সূত্র জানায়, কাস্টমস হাউসে মোট ৮১টি উচ্চমান সহকারী পদ রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে কর্মরত আছে ৩৫ জন। ৪৬টি পদ দীর্ঘদিন ধরে খালি রয়েছে। তবে রাজস্ব আদায়ের ধারা অব্যাহত রাখতে এবং কাস্টমস হাউসকে গতিশীল করতে সাবেক তৎকালীন কমিশনার মাসুদ সাদিক উচ্চমান সহকারীসহ তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণীর কয়েকটি পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেন। যার অংশ হিসেবে ৩৬টি উচ্চমান সহকারী পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

সূত্র জানায়, নগরীর চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ, হাজী মুহম্মদ মহসিন কলেজ, ওমর গণি এমইএস কলেজসহ বিভিন্ন কলেজে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য যাবতীয় প্রস্তুতি ইতোমধ্যে স¤পন্ন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির মঞ্জুরীকৃত পদ ১ হাজার ২৪৮টি। এরমধ্যে ৫৪১জন কর্মরত আছেন। ৭০৭টি পদ খালি রয়েছে। প্রথম শ্রেণির ২১০ পদের মধ্যে ১১৮টি, দ্বিতীয় শ্রেণির ৪৯৭ পদের মধ্যে ২৯১টি, তৃতীয় শ্রেণির ৪২৩ পদের মধ্যে ২৫৪টি এবং চতুর্থ শ্রেণির ১১৮ পদের মধ্যে ৪৩টি পদ খালি রয়েছে।

চট্টগ্রাম কাস্টমসে রাজস্ব আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি পদ রাজস্ব ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা পদে সবচেয়ে বেশি সংকট রয়েছে। ১১৯ জন রাজস্ব কর্মকর্তার মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ৪৮জন। ৪৮৭ সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা পদের বিপরীতে কাজ করছেন ২০৩ জন। বাকি ২৮৪ পদ খালি রয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

কেরানির চাকরির রেট ৫০ লাখ

আপডেট টাইম : ১১:৩৩:০২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ অগাস্ট ২০১৫

নিয়োগ পরীক্ষার আগেই চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে উচ্চমান সহকারী পদে চাকুরি মোটা অঙ্কের টাকায় বেচাকেনার গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিটি পদের বিপরীতে টাকার অঙ্ক ৫০ লাখ পর্যন্ত উঠার বিষয়টি এখন প্রার্থীদের মুখে মুখে!

প্রার্থীরা বলছেন, চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস প্রায় এক বছর আগে তৃতীয় শ্রেণির পদ মর্যাদার উচ্চমান সহকারীর ৩৬টি পদে নিয়োগের জন্য বিভিন্ন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। যার পরীক্ষা আগামী শুক্রবার (২১ আগস্ট) নগরীর বিভিন্ন কলেজ কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে।

কিন্তু পরীক্ষার আগেই কাস্টমস হাউসের কর্মকর্তা, স্থানীয় ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতাদের প্রভাব এবং সুপারিশে নিয়োগের বিষয়টি প্রায় চুড়ান্ত হয়ে গেছে বলে বলাবলি হচ্ছে। বিশেষ করে সুপারিশের ক্ষেত্রে নিয়োগের অঙ্ক প্রায় ৫০ লাখ টাকায় উঠেছে বলে জানা গেছে।

অঙ্কের দৌড়ে মানদন্ড পূরণে ব্যর্থ হয়ে হতাশ মনে ফিরেছেন এমন প্রার্থীদের অনেকে বিষয়টি ফাঁস করে দিয়েছেন বলে জানা গেছে। প্রার্থীদের অভিযোগ, পরীক্ষা নেওয়াটা হচ্ছে আইওয়াশ! পরীক্ষা নেওয়ার মাত্র কয়েক ঘন্টা পর (রাত ১০টা) ফলাফল প্রকাশ করার কথা! পরদিন সকালে তড়িঘড়ি করে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার বিধান থাকাটাও খুবই সন্দেহজনক।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার ও বিভাগীয় নির্বাচন কমিটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ রেজাউল হক জানান, ৩৬ পদের বিপরীতে ২৩ হাজার ৪০০ প্রার্থী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই শেষে এসব প্রার্থীকে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য প্রবেশপত্র পাঠানো হয়েছে।

প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরীক্ষা এমসিকিউ পদ্ধতিতে ১০০ নম্বরে হবে। কষ্ট হলেও ওইদিন রাত ১০ টায় ফলাফল প্রকাশ করা হবে। পরদিন শনিবার লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হবে।

নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কারচুপি ও দুর্নীতির বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, কারচুপির ও দুর্নীতির সুযোগ যাতে কেউ না পায় সে কারনেই তো অতি অল্প সময়ে ফলাফল প্রকাশ ও মৌখিক পরীক্ষা সম্পন্নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

কাস্টমস সূত্র জানায়, কাস্টমস হাউসে মোট ৮১টি উচ্চমান সহকারী পদ রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে কর্মরত আছে ৩৫ জন। ৪৬টি পদ দীর্ঘদিন ধরে খালি রয়েছে। তবে রাজস্ব আদায়ের ধারা অব্যাহত রাখতে এবং কাস্টমস হাউসকে গতিশীল করতে সাবেক তৎকালীন কমিশনার মাসুদ সাদিক উচ্চমান সহকারীসহ তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণীর কয়েকটি পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেন। যার অংশ হিসেবে ৩৬টি উচ্চমান সহকারী পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

সূত্র জানায়, নগরীর চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ, হাজী মুহম্মদ মহসিন কলেজ, ওমর গণি এমইএস কলেজসহ বিভিন্ন কলেজে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য যাবতীয় প্রস্তুতি ইতোমধ্যে স¤পন্ন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির মঞ্জুরীকৃত পদ ১ হাজার ২৪৮টি। এরমধ্যে ৫৪১জন কর্মরত আছেন। ৭০৭টি পদ খালি রয়েছে। প্রথম শ্রেণির ২১০ পদের মধ্যে ১১৮টি, দ্বিতীয় শ্রেণির ৪৯৭ পদের মধ্যে ২৯১টি, তৃতীয় শ্রেণির ৪২৩ পদের মধ্যে ২৫৪টি এবং চতুর্থ শ্রেণির ১১৮ পদের মধ্যে ৪৩টি পদ খালি রয়েছে।

চট্টগ্রাম কাস্টমসে রাজস্ব আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি পদ রাজস্ব ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা পদে সবচেয়ে বেশি সংকট রয়েছে। ১১৯ জন রাজস্ব কর্মকর্তার মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ৪৮জন। ৪৮৭ সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা পদের বিপরীতে কাজ করছেন ২০৩ জন। বাকি ২৮৪ পদ খালি রয়েছে।