হাওর বার্তা ডেস্কঃ কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলায় বন্যার পানি নেমে গেলেও বেশ কিছু এলাকা এখনো জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে আছে। এই এলাকার কৃষিতে নেমে এসেছে বিপর্যয়। ক্ষেতের পর ক্ষেত জুড়ে রোপা আমনসহ অন্যান্য ফসল বন্যার কারণে পরিণত হয়েছে শুধু আগাছায়। রোপা আমন ও বীজতলা পচে গন্ধের কারণে চারদিকের পরিবেশেও বিপর্যয় নেমে এসেছে। ফসলের ব্যাপক ক্ষতিতে কৃষকরা এখন দিশেহারা। মাছ ভেঁসে যাওয়ায় মৎস্য চাষীরাও হতাশ। সর্বহারা প্রায় ২৭ হাজার কৃষক ২ হাজার মৎস্য চাষী ও মৎস্য জীবির অনেকেই বাড়ি ছেড়েছেন পাওনাদারের ভয়ে।
শরিফের হাটের কৃষক কাচুয়া বলেন, ‘কি আর কমো দুঃখের কথা দুই বার গারলাম (রোপন করা) দুই বারে নষ্ট করে দিছে বন্যা এহন কি করমু তাও আর কইতে পারোচি না।’
মাছাবান্দা এলাকার কৃষক জোবায়ের জানায়, এবারে বন্যার রোপা আমন, পাটক্ষেত, সবজি, ডাল ও মাছ চাষে তার প্রায় লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে। ঠগের হাটের কৃষক নজির হোসেন জানান, বোরো মৌসুমে ভালো ফলন পাওয়ার পর এবার ২ একর জমিতে প্রায় ২৫ হাজার টাকা খরচ করে আমন রোপণ করেছিলাম। নিড়ানি, সার সবই দেওয়া ছিল জমিতে। বন্যায় সব নষ্ট হয়ে গেছে, এখন ঋণে জর্জরিত হয়ে পাওনাদারের জন্য বাড়িতেও থাকতে পারছি না।
সূত্র মতে চিলমারী উপজেলার রোপা আমন, বীজতলা, সবজিক্ষেতে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। উপজেলা কৃষি সূত্রে জানা যায়, বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কম সময়ে ফলন হয় এমন কিছু রবি ফসলের বীজ সরবরাহ ও কৃষি পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। ইতি মধ্যে কিছু এলাকায় আমন চারা বিতরণ করা হয়েছে, তবে তা খুবই সামান্য।
এছাড়াও বন্যায় ৮০৩টি পুকুর ও ১৮টি বড়পিট/নালা ডুবে যাওয়ায় প্রায় ২ হাজার মাৎস্য চাষী ও মৎস্য জীবি নিঃস্ব। ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি কমলেও এখনো বিভিন্ন এলাকার জলাবদ্ধতা থাকায় গবাদি পশুর খাদ্য সংকট এখনও কাটেনি। বন্যা ও বাঁধ ভাঙ্গা পানিতে মাঠের পর মাঠ তলিয়ে যাওয়ায় নষ্ট হয়ে গেছে গোচারণ ভূমি। বন্যার পানিতে ডোবা কিছু মাঠে ঘাস দেখা গেলেও ওসব ঘাসে লেগে আছে কাদা ও পলিমাটি। বন্যাকবলিত এলাকায় কৃষকরা গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করছেন তাদের মজুদকৃত খড়। যাদের একটু সম্বল আছে তারা বাজার থেকে ভুষি ও ধানের কুঁড়া কিনে গবাদি পশুর খাবারের জোগান দিচ্ছেন।