ঢাকা ০৮:৪৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ১০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

১০ বছরেও শেষ হয়নি ৫৮ মামলার বিচার

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:১৫:৪২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ অগাস্ট ২০১৫
  • ২৮২ বার

২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) মুন্সীগঞ্জ বাদে দেশের ৬৩ জেলার সাড়ে চার শতাধিক স্থানে একযোগে বোমা হামলা চালায়। এ হামলার মধ্য দিয়েই জঙ্গিদের উত্থান ঘটে দেশে।

এ ঘটনায় সারাদেশে ১৬১টি মামলা দায়ের করা হয়। সারা দেশে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে ৫৮টির বিচার গত ১০ বছরেও শেষ হয়নি।

জেএমবি নিজেদের অস্তিত্ব ও শক্তির জানান দিতেই ৬৩ জেলার সাড়ে চার শতাধিক স্থানে ৫০০ বোমার বিষ্ফোরণ ঘটায়। নারকীয় এ সিরিজ বোমা হামলায় ২ জন নিহত ও শতাধিক ব্যক্তি আহত হন।

র্যাবের দেওয়া তথ্যমতে, সারাদেশে দায়ের হওয়া ১৬১ মামলার মধ্যে তদন্তাধীন কোনো মামলা নেই। সব মামলারই চার্জশিট কিংবা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। তবে দেশের বিভিন্ন আদালতে এখনও ৫৮টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। নিষ্পত্তি হয়েছে ১০৩টি মামলার।

র্যাব সূত্র জানায়, এসব মামলায় ৬৬০ জনকে আসামি করা হয়েছিল। ৪৫৫ জন আসামিকে গ্রেফতার করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আসামিদের মধ্যে ৩৫ জন জামিনে আছেন, মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন ১২১ জন। ২৬৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে আর ফাঁসির দণ্ড দেওয়া হয়েছে মোট ১৫ জনকে। ফাঁসির দণ্ড পাওয়া ৬ জনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। এখনো পলাতক রয়েছেন ৫০ আসামি।

২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট ঢাকার ৩৩টি স্থানেও একযোগে বোমা হামলা চালানো হয়।

বোমা হামলা হয় সুপ্রিম কোর্ট, জেলা আদালত, বিমানবন্দর, বাংলাদেশে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়, প্রেসক্লাব ও সরকারি-আধা সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায়।

ঢাকা মহানগর পিপি আব্দুল্লাহ আবু বাংলানিউজকে জানান, এসব ঘটনায় ১৮টি মামলা দায়ের করা হয়। বোমা হামলাকারী শনাক্ত করতে না পারায় ৯টি মামলায়ই চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। একটি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। আর বাকি ৮টি মামলা ঢাকার বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন আছে।

আদালত সূত্র জানায়, ঢাকার আদালতে বিচারাধীন মামলাগুলোতে সাধারণ সাক্ষীদের জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা ও পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় সমন জারি করেও আদালতে সাক্ষ্য দিতে আনা যাচ্ছে না। সাক্ষীর অভাবেই মামলার কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে।

সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় তৎকালীন জেএমবি’র শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাই, আতাউর রহমান সানি, খালেদ সাইফুল্লাহ, আবদুল আউয়াল, হাফেজ মাহমুদসহ ৪৫৫ জঙ্গি সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।

ঝালকাঠিতে দুই বিচারক হত্যা মামলায় জেএমবি প্রধান শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাইসহ সাতজনের ফাঁসির আদেশ দেন আদালত।

২০০৭ সালের ২৯ মার্চ রাতে শীর্ষ জঙ্গি নেতা শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম, খালেদ সাইফুল্লাহ, আতাউর রহমান সানি, আবদুল আউয়াল, ইফতেখার হাসান আল মামুনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত অপর জঙ্গি আসাদুর রহমান আরিফ পলাতক থাকায় তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা যায়নি।

জেএমবি’র শীর্ষ ৬ জঙ্গির পরে আর কোনো জঙ্গির ফাঁসি কার্যকর হয়নি।

এসব মামলার মধ্যে সর্বশেষ রায় হয় গত ১০ আগস্ট। গাজীপুর জেলা প্রশাসকের রাজস্ব কার্যালয়ে বোমা হামলার মামলায় ১৭ জেএমবি সদস্যের প্রত্যেককে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেন ঢাকার একটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল।

দণ্ড পাওয়া আসামিরা হলেন, রোকনুজ্জামান ওরফে রোকন, মামুনুর রশিদ ওরফে মামুন, আরিফুর রহমান আরিফ ওরফে হাসিব ওরফে আকাশ, নিজাম উদ্দিন ওরফে রেজা, আসাদ ওরফে জাহাঙ্গীর, দুরুল হুদা ওরফে হাসান, মাহবুবুল আলম ওরফে মাহবুব, জহিরুল ইসলাম ওরফে জহির, আদম, কাওছার, রাসেল, আবদুল কাফি, এমএ সিদ্দিক বাবলু, ওমর ফারুক, রানা ওরফে আব্দুস সাত্তার, মাসুম ওরফে আব্দুর রউফ এবং রায়হান ওরফে ওবায়েদ।

দণ্ডিতদের মধ্যে প্রথম ১০ জন কারাগারে এবং অপর ৭ জন পলাতক রয়েছেন।

২০০৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি জেএমবি নিষিদ্ধ করে সরকার। কিন্তু নিষিদ্ধ ঘোষিত সেই জঙ্গি সংগঠনটি এখনো গোপনে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জঙ্গিবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানের পরও থেমে নেই জেএমবি’র কার্যক্রম। গত ৫ বছরে জেএমবি’র কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হলেও তাদের নির্মূল করা যায়নি।

আত্মগোপনে থেকে জেএমবি তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। নামে-বেনামে, ছদ্মনামে জঙ্গিরা এখনও তৎপরতা চালাচ্ছে। জেএমবি’র বর্তমান আমির মাওলানা সাইদুর রহমান কারাগারে বসে বাইরে থাকা জঙ্গিদের মাধ্যমে এখনো কলকাঠি নাড়ছেন।

তাছাড়া পলাতক এবং জামিনে মুক্ত জঙ্গিদের নিয়ে আত্মগোপনে থাকা মধ্যস্তরের নেতারা এখনো গোপনে দাওয়াতি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবি পুলিশের ডিসি মনিরুল ইসলাম জানান, জঙ্গি তৎপরতা সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা সম্ভব নয়। তবে বর্তমানে তা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

পুলিশের দাবি, জেএমবি’র মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। তাদের পক্ষে বড় ধরনের জঙ্গি তৎপরতা চালানো সম্ভব নয়। তবে নামে-বেনামে ও বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনে যোগ দিয়ে তারা এখনও জঙ্গি তৎপরতা চালাচ্ছে।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, দেশে নামে-বেনামে অন্তত ৪০টি জঙ্গি সংগঠন রয়েছে। তবে অধিকাংশ সংগঠনই অকার্যকর। ইতোমধ্যে আরও কিছু সংগঠনকে নিষিদ্ধ করেছে সরকার। আর সক্রিয় সংগঠনগুলোও চাপের মধ্যে রয়েছে।

সূত্রটি আর জানিয়েছে, আগে জঙ্গিরা হামলা চালিয়ে সীমান্ত দিয়ে পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে পালিয়ে যেত। কিন্তু সম্প্রতি বর্ধমানে বোমা বিস্ফোরণের পর ভারতের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনআইএ) বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করে। তাদের তৎপরতার কারণে জঙ্গিরা ভারতের অভ্যন্তরে সীমান্ত এলাকায় অবস্থান করতে পারছে না।

র‌্যাবের গোয়েন্দা সূত্র জানায়, এনআইএ’র সঙ্গে জঙ্গি দমন ইস্যুতে তারা নিয়মিত তথ্য আদান–প্রদান করছেন। জঙ্গি তৎপরতা নিয়ন্ত্রণে দু’দেশ পরস্পর পরস্পরকে সহযোগিতা করছে।

র‌্যাব জানায়, জেএমবি’র সিরিজ বোমা হামলার পর শীর্ষস্থানীয় নেতাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসে র‌্যাব। ওই হামলার ৭ মাসের মধ্যেই জেএমবির তৎকালীর প্রধান ও সামরিক প্রধানকে তারা গ্রেফতার করে তারা।

র‌্যাবের তথ্য মতে, , ২০০৬ সালের ২ মার্চ জেএমবির প্রধান শায়খ আব্দুর রহমানকে সিলেট থেকে গ্রেফতার করা হয়। এর ঠিক চারদিন পর ৬ মার্চ ময়মনসিংহ থেকে সংগঠনটির সামরিক শাখার প্রধান সিদ্দিকুর রহমান বাংলা ভাইকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

এরপর ২০১০ সালের ২৫ মে এ রাজধানীর সবুজবাগ ও নারায়নগঞ্জ এলাকা থেকে জেএমবির পরবর্তী প্রধান মাওলানা সাইদুর রহমান, তার স্ত্রী নাইমা আকতার, সামরিক শাখার প্রধান আনোয়ার আলম শিবলু ও মজলিসে সুরা সদস্য সোহেল মাহফুজকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

সর্বশেষ গত ২৭ জুলাই রাতে জিহাদি বই, লিফলেট, সিডি, জঙ্গি প্রশিক্ষণের ভিডিওসহ নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) ভারপ্রাপ্ত আমির আবু তালহা মোহাম্মদ ফাহিম ওরফে পাখিসহ গ্রেফতার করা হয় ৮ জঙ্গিকে। ২৮ জুলাই ঢাকার সিএমএম আদালত তাদের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

ফাহিম বর্তমানে কারাবন্দি জেএমবি’র আমির মাওলানা সাইদুর রহমানের ছেলে। বাবার অবর্তমানে ছেলে ফাহিম জেএমবি’র ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

ফাহিম ছাড়া আটককৃত অন্য সদস্যরা হলেন- শফিকুল ইসলাম, রুহুল আমিন, ইমদাদুল হক, রফিক আহম্মেদ ওরফে রয়েল, মো. মোস্তফা, শাখাওয়াত উল্লাহ ও আলী আশরাফ রাজীব।

র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্নেল মো. আবুল কালাম আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে কাজ করছে র‌্যাব।

তিনি বলেন, পলাতক আসামিদের কেউ পরিবারের সঙ্গে থাকেন না। তারা বিভিন্ন শহরে ছোট ছোট কারখানায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। পরিবারের সঙ্গে তাদের তেমন যোগাযোগ নেই।

তিনি বলেন, আমরা তথ্য পেয়েছি পলাতকদের কেউ কেউ এখনো জঙ্গি সংগঠনকে জিয়িয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। ত্রিশালে পুলিশের প্রিজন ভ্যান থেকে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটিয়েছেন পলাতক জেএমবি সদস্যরা।

আবুল কালাম আজাদ আরও বলেন, জঙ্গি সংগঠনগুলোকে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। জঙ্গি তৎপরতা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) নজরুল ইসলাম বলেন, সবগুলো মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। মামলার অধিকাংশ আসামিকে গ্রেফতার করেছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

১০ বছরেও শেষ হয়নি ৫৮ মামলার বিচার

আপডেট টাইম : ০৯:১৫:৪২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ অগাস্ট ২০১৫

২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) মুন্সীগঞ্জ বাদে দেশের ৬৩ জেলার সাড়ে চার শতাধিক স্থানে একযোগে বোমা হামলা চালায়। এ হামলার মধ্য দিয়েই জঙ্গিদের উত্থান ঘটে দেশে।

এ ঘটনায় সারাদেশে ১৬১টি মামলা দায়ের করা হয়। সারা দেশে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে ৫৮টির বিচার গত ১০ বছরেও শেষ হয়নি।

জেএমবি নিজেদের অস্তিত্ব ও শক্তির জানান দিতেই ৬৩ জেলার সাড়ে চার শতাধিক স্থানে ৫০০ বোমার বিষ্ফোরণ ঘটায়। নারকীয় এ সিরিজ বোমা হামলায় ২ জন নিহত ও শতাধিক ব্যক্তি আহত হন।

র্যাবের দেওয়া তথ্যমতে, সারাদেশে দায়ের হওয়া ১৬১ মামলার মধ্যে তদন্তাধীন কোনো মামলা নেই। সব মামলারই চার্জশিট কিংবা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। তবে দেশের বিভিন্ন আদালতে এখনও ৫৮টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। নিষ্পত্তি হয়েছে ১০৩টি মামলার।

র্যাব সূত্র জানায়, এসব মামলায় ৬৬০ জনকে আসামি করা হয়েছিল। ৪৫৫ জন আসামিকে গ্রেফতার করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আসামিদের মধ্যে ৩৫ জন জামিনে আছেন, মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন ১২১ জন। ২৬৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে আর ফাঁসির দণ্ড দেওয়া হয়েছে মোট ১৫ জনকে। ফাঁসির দণ্ড পাওয়া ৬ জনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। এখনো পলাতক রয়েছেন ৫০ আসামি।

২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট ঢাকার ৩৩টি স্থানেও একযোগে বোমা হামলা চালানো হয়।

বোমা হামলা হয় সুপ্রিম কোর্ট, জেলা আদালত, বিমানবন্দর, বাংলাদেশে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়, প্রেসক্লাব ও সরকারি-আধা সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায়।

ঢাকা মহানগর পিপি আব্দুল্লাহ আবু বাংলানিউজকে জানান, এসব ঘটনায় ১৮টি মামলা দায়ের করা হয়। বোমা হামলাকারী শনাক্ত করতে না পারায় ৯টি মামলায়ই চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। একটি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। আর বাকি ৮টি মামলা ঢাকার বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন আছে।

আদালত সূত্র জানায়, ঢাকার আদালতে বিচারাধীন মামলাগুলোতে সাধারণ সাক্ষীদের জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা ও পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় সমন জারি করেও আদালতে সাক্ষ্য দিতে আনা যাচ্ছে না। সাক্ষীর অভাবেই মামলার কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে।

সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় তৎকালীন জেএমবি’র শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাই, আতাউর রহমান সানি, খালেদ সাইফুল্লাহ, আবদুল আউয়াল, হাফেজ মাহমুদসহ ৪৫৫ জঙ্গি সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।

ঝালকাঠিতে দুই বিচারক হত্যা মামলায় জেএমবি প্রধান শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাইসহ সাতজনের ফাঁসির আদেশ দেন আদালত।

২০০৭ সালের ২৯ মার্চ রাতে শীর্ষ জঙ্গি নেতা শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম, খালেদ সাইফুল্লাহ, আতাউর রহমান সানি, আবদুল আউয়াল, ইফতেখার হাসান আল মামুনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত অপর জঙ্গি আসাদুর রহমান আরিফ পলাতক থাকায় তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা যায়নি।

জেএমবি’র শীর্ষ ৬ জঙ্গির পরে আর কোনো জঙ্গির ফাঁসি কার্যকর হয়নি।

এসব মামলার মধ্যে সর্বশেষ রায় হয় গত ১০ আগস্ট। গাজীপুর জেলা প্রশাসকের রাজস্ব কার্যালয়ে বোমা হামলার মামলায় ১৭ জেএমবি সদস্যের প্রত্যেককে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেন ঢাকার একটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল।

দণ্ড পাওয়া আসামিরা হলেন, রোকনুজ্জামান ওরফে রোকন, মামুনুর রশিদ ওরফে মামুন, আরিফুর রহমান আরিফ ওরফে হাসিব ওরফে আকাশ, নিজাম উদ্দিন ওরফে রেজা, আসাদ ওরফে জাহাঙ্গীর, দুরুল হুদা ওরফে হাসান, মাহবুবুল আলম ওরফে মাহবুব, জহিরুল ইসলাম ওরফে জহির, আদম, কাওছার, রাসেল, আবদুল কাফি, এমএ সিদ্দিক বাবলু, ওমর ফারুক, রানা ওরফে আব্দুস সাত্তার, মাসুম ওরফে আব্দুর রউফ এবং রায়হান ওরফে ওবায়েদ।

দণ্ডিতদের মধ্যে প্রথম ১০ জন কারাগারে এবং অপর ৭ জন পলাতক রয়েছেন।

২০০৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি জেএমবি নিষিদ্ধ করে সরকার। কিন্তু নিষিদ্ধ ঘোষিত সেই জঙ্গি সংগঠনটি এখনো গোপনে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জঙ্গিবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানের পরও থেমে নেই জেএমবি’র কার্যক্রম। গত ৫ বছরে জেএমবি’র কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হলেও তাদের নির্মূল করা যায়নি।

আত্মগোপনে থেকে জেএমবি তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। নামে-বেনামে, ছদ্মনামে জঙ্গিরা এখনও তৎপরতা চালাচ্ছে। জেএমবি’র বর্তমান আমির মাওলানা সাইদুর রহমান কারাগারে বসে বাইরে থাকা জঙ্গিদের মাধ্যমে এখনো কলকাঠি নাড়ছেন।

তাছাড়া পলাতক এবং জামিনে মুক্ত জঙ্গিদের নিয়ে আত্মগোপনে থাকা মধ্যস্তরের নেতারা এখনো গোপনে দাওয়াতি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবি পুলিশের ডিসি মনিরুল ইসলাম জানান, জঙ্গি তৎপরতা সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা সম্ভব নয়। তবে বর্তমানে তা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

পুলিশের দাবি, জেএমবি’র মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। তাদের পক্ষে বড় ধরনের জঙ্গি তৎপরতা চালানো সম্ভব নয়। তবে নামে-বেনামে ও বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনে যোগ দিয়ে তারা এখনও জঙ্গি তৎপরতা চালাচ্ছে।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, দেশে নামে-বেনামে অন্তত ৪০টি জঙ্গি সংগঠন রয়েছে। তবে অধিকাংশ সংগঠনই অকার্যকর। ইতোমধ্যে আরও কিছু সংগঠনকে নিষিদ্ধ করেছে সরকার। আর সক্রিয় সংগঠনগুলোও চাপের মধ্যে রয়েছে।

সূত্রটি আর জানিয়েছে, আগে জঙ্গিরা হামলা চালিয়ে সীমান্ত দিয়ে পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে পালিয়ে যেত। কিন্তু সম্প্রতি বর্ধমানে বোমা বিস্ফোরণের পর ভারতের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনআইএ) বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করে। তাদের তৎপরতার কারণে জঙ্গিরা ভারতের অভ্যন্তরে সীমান্ত এলাকায় অবস্থান করতে পারছে না।

র‌্যাবের গোয়েন্দা সূত্র জানায়, এনআইএ’র সঙ্গে জঙ্গি দমন ইস্যুতে তারা নিয়মিত তথ্য আদান–প্রদান করছেন। জঙ্গি তৎপরতা নিয়ন্ত্রণে দু’দেশ পরস্পর পরস্পরকে সহযোগিতা করছে।

র‌্যাব জানায়, জেএমবি’র সিরিজ বোমা হামলার পর শীর্ষস্থানীয় নেতাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসে র‌্যাব। ওই হামলার ৭ মাসের মধ্যেই জেএমবির তৎকালীর প্রধান ও সামরিক প্রধানকে তারা গ্রেফতার করে তারা।

র‌্যাবের তথ্য মতে, , ২০০৬ সালের ২ মার্চ জেএমবির প্রধান শায়খ আব্দুর রহমানকে সিলেট থেকে গ্রেফতার করা হয়। এর ঠিক চারদিন পর ৬ মার্চ ময়মনসিংহ থেকে সংগঠনটির সামরিক শাখার প্রধান সিদ্দিকুর রহমান বাংলা ভাইকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

এরপর ২০১০ সালের ২৫ মে এ রাজধানীর সবুজবাগ ও নারায়নগঞ্জ এলাকা থেকে জেএমবির পরবর্তী প্রধান মাওলানা সাইদুর রহমান, তার স্ত্রী নাইমা আকতার, সামরিক শাখার প্রধান আনোয়ার আলম শিবলু ও মজলিসে সুরা সদস্য সোহেল মাহফুজকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

সর্বশেষ গত ২৭ জুলাই রাতে জিহাদি বই, লিফলেট, সিডি, জঙ্গি প্রশিক্ষণের ভিডিওসহ নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) ভারপ্রাপ্ত আমির আবু তালহা মোহাম্মদ ফাহিম ওরফে পাখিসহ গ্রেফতার করা হয় ৮ জঙ্গিকে। ২৮ জুলাই ঢাকার সিএমএম আদালত তাদের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

ফাহিম বর্তমানে কারাবন্দি জেএমবি’র আমির মাওলানা সাইদুর রহমানের ছেলে। বাবার অবর্তমানে ছেলে ফাহিম জেএমবি’র ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

ফাহিম ছাড়া আটককৃত অন্য সদস্যরা হলেন- শফিকুল ইসলাম, রুহুল আমিন, ইমদাদুল হক, রফিক আহম্মেদ ওরফে রয়েল, মো. মোস্তফা, শাখাওয়াত উল্লাহ ও আলী আশরাফ রাজীব।

র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্নেল মো. আবুল কালাম আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে কাজ করছে র‌্যাব।

তিনি বলেন, পলাতক আসামিদের কেউ পরিবারের সঙ্গে থাকেন না। তারা বিভিন্ন শহরে ছোট ছোট কারখানায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। পরিবারের সঙ্গে তাদের তেমন যোগাযোগ নেই।

তিনি বলেন, আমরা তথ্য পেয়েছি পলাতকদের কেউ কেউ এখনো জঙ্গি সংগঠনকে জিয়িয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। ত্রিশালে পুলিশের প্রিজন ভ্যান থেকে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটিয়েছেন পলাতক জেএমবি সদস্যরা।

আবুল কালাম আজাদ আরও বলেন, জঙ্গি সংগঠনগুলোকে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। জঙ্গি তৎপরতা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) নজরুল ইসলাম বলেন, সবগুলো মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। মামলার অধিকাংশ আসামিকে গ্রেফতার করেছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।