ঢাকা ১২:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ২২ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাত খুন মামলার আপিলের রায়

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:৪০:৪৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ অগাস্ট ২০১৭
  • ২৮৭ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বহুল আলোচিত নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের রায় ঘোষণা করা হয়েছে গতকাল মঙ্গলবার। বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন। এর আগে হত্যাকাণ্ডের তিন বছর পর নারায়ণগঞ্জের জজ আদালত ২৬ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২৬ আসামির মধ্যে ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়েছে। বাকি ১১ জনের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। অন্য যে ৯ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল তাদের সাজা বহাল রাখা হয়েছে। রায়ে ১১ জনের সাজা মৃত্যুদণ্ড থেকে যাবজ্জীবন করায় নিহতদের পরিবারের কেউ কেউ অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। উভয় পক্ষেই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার কথা বলা হয়েছে। সাধারণ মানুষ এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেখার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ফতুল্লার লামাপাড়া থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণ করা হয়। এর তিন দিন পর নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে তাঁদের লাশ পাওয়া যায়।

একসঙ্গে সাতজনকে হত্যা করা এবং তাঁদের পেট কেটে নদীতে ডুবিয়ে দেওয়ার যে নৃশংস বর্ণনা ও দৃশ্য গণমাধ্যমে উঠে আসে, তা সারা দেশে ব্যাপক আলোড়ন তোলে। ক্রমে এর সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যোগসাজশ উঠে আসতে থাকলে মানুষ রীতিমতো স্তম্ভিত হয়ে পড়ে। এ ঘটনায় নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী বিউটি এবং চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল দুটি মামলা করেন। অভিযোগপত্রে বলা হয়, কাউন্সিলর নজরুল ইসলামকে হত্যার পরিকল্পনা করেন সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন। বিপুল অর্থের বিনিময়ে তিন কর্মকর্তাসহ র‌্যাব সদস্যরা এ হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন। তদন্ত চলাকালে নূর হোসেন ভারতে পালিয়ে গেলেও পরে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেন মামলার রায়ে ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন। এই রায়ে অনেকেই সন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। এরপর আসামিদের পক্ষে হাইকোর্টে আপিল করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের রায় ঘোষণা করা হলো।

সাম্প্রতিক সময়ে দেশে খুন-সন্ত্রাস অনেক বেড়ে গেছে। এসব অপরাধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগও ক্রমেই প্রবল হচ্ছে। ফলে মানুষের নিরাপত্তাবোধ ক্রমে তলানিতে গিয়ে ঠেকছে। আমাদের বিশ্বাস, সাত খুন মামলার রায় অপরাধীদের যেমন নিরুৎসাহী করবে, তেমনি বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের মধ্যেও অপরাধ করার বিরুদ্ধে বিশেষ বার্তা দেবে। আমরা আশা করি, দ্রুততম সময়ে এই রায় কার্যকর করা হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

সাত খুন মামলার আপিলের রায়

আপডেট টাইম : ০৪:৪০:৪৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ অগাস্ট ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বহুল আলোচিত নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের রায় ঘোষণা করা হয়েছে গতকাল মঙ্গলবার। বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন। এর আগে হত্যাকাণ্ডের তিন বছর পর নারায়ণগঞ্জের জজ আদালত ২৬ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২৬ আসামির মধ্যে ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়েছে। বাকি ১১ জনের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। অন্য যে ৯ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল তাদের সাজা বহাল রাখা হয়েছে। রায়ে ১১ জনের সাজা মৃত্যুদণ্ড থেকে যাবজ্জীবন করায় নিহতদের পরিবারের কেউ কেউ অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। উভয় পক্ষেই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার কথা বলা হয়েছে। সাধারণ মানুষ এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেখার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ফতুল্লার লামাপাড়া থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণ করা হয়। এর তিন দিন পর নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে তাঁদের লাশ পাওয়া যায়।

একসঙ্গে সাতজনকে হত্যা করা এবং তাঁদের পেট কেটে নদীতে ডুবিয়ে দেওয়ার যে নৃশংস বর্ণনা ও দৃশ্য গণমাধ্যমে উঠে আসে, তা সারা দেশে ব্যাপক আলোড়ন তোলে। ক্রমে এর সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যোগসাজশ উঠে আসতে থাকলে মানুষ রীতিমতো স্তম্ভিত হয়ে পড়ে। এ ঘটনায় নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী বিউটি এবং চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল দুটি মামলা করেন। অভিযোগপত্রে বলা হয়, কাউন্সিলর নজরুল ইসলামকে হত্যার পরিকল্পনা করেন সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন। বিপুল অর্থের বিনিময়ে তিন কর্মকর্তাসহ র‌্যাব সদস্যরা এ হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন। তদন্ত চলাকালে নূর হোসেন ভারতে পালিয়ে গেলেও পরে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেন মামলার রায়ে ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন। এই রায়ে অনেকেই সন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। এরপর আসামিদের পক্ষে হাইকোর্টে আপিল করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের রায় ঘোষণা করা হলো।

সাম্প্রতিক সময়ে দেশে খুন-সন্ত্রাস অনেক বেড়ে গেছে। এসব অপরাধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগও ক্রমেই প্রবল হচ্ছে। ফলে মানুষের নিরাপত্তাবোধ ক্রমে তলানিতে গিয়ে ঠেকছে। আমাদের বিশ্বাস, সাত খুন মামলার রায় অপরাধীদের যেমন নিরুৎসাহী করবে, তেমনি বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের মধ্যেও অপরাধ করার বিরুদ্ধে বিশেষ বার্তা দেবে। আমরা আশা করি, দ্রুততম সময়ে এই রায় কার্যকর করা হবে।