হাওর বার্তা ডেস্কঃ শিল্পী খুরশিদ আলমের গাওয়া অসংখ্য গানে কণ্ঠ মিলিয়েছেন নায়করাজ রাজ্জাক। সিনেমার গান জনপ্রিয় হওয়ার পেছনে শিল্পীর পাশাপাশি যিনি অভিনয় করছেন তার ভূমিকাও কম নয়। খুরশিদ আলমের অনেক গানের খ্যাতি এনে দিয়েছেন বাংলা সিনেমার কিংবদন্তি রাজ্জাক। আজ তিনি চলে গেছেন না ফেরার দেশে। এই খবরে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে খুরশিদ আলমের।
খবর শুনে ছুটেছেন নায়কের বাসভবনে। মুঠোফোনে বলছিলেন হাওর বার্তাকে। ‘চলচ্চিত্রের বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে গেল। আমার সব শেষ হয়ে গেল।’ ভার আর বইতে পারছিলেন না। কেঁদে উঠলেন। এপাশ থেকে কান্নার নীরব শ্রোতা হয়ে থাকা ছাড়া কী-বা করার আছে!
‘বাবা’ হারা অপু তাকাসের কাছে বাবার মতোই ছিলেন নায়করাজ রাজ্জাক। মৃত্যুর সংবাদ তাকেও ছুঁয়েছে গভীরে। আপ্লুত হয়ে পড়ছিলেন কথা বলতে গিয়ে। নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে বললেন, ‘আমার বাবা নেই। তাঁকে আমি বাবা বলে জানতাম। বিপদে-আপদে বাবার মতো্হতা করতেন। পাশে থাকতেন। সাহস দিতেন। অনেক খারাপ সময়ে তিনি পাশে ছিলেন। মেয়ের মতো দেখতেন। আমার অভিভাবকরা কেন এভাবে চলে যাচ্ছেন, আমি জানি না।’
সহকর্মী নায়ক উজ্জল মুঠোফোন তুলেই বললেন, ‘চলচ্চিত্র জগতের একটি প্রতিষ্ঠানের মৃত্যু হয়েছে। আমি রাজ্জাক ভাইকে শুধু মানুষ নয় একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখি। তিনি শুরু থেকে শেষদিন পর্যন্ত মনেপ্রাণে চলচ্চিত্রেই ছিলেন। অনেকে নিজে অভিনয় করলেও পরিবারকে এই জগতে আনেন না। তিনি সেটা করেননি। নিজের পরিবারের সদস্যদের চলচ্চিত্রে এনেছেন। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে নায়ক রাজ্জাকের অবদান কখনো মুছে যাবে না। আমি তার আত্মার শান্তি কামনা করছি।’ জানলেন তিনিও যাচ্ছেন নায়করাজের নিথর শরীরের পাশে।’
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের টেলিভিশন অ্যান্ড ফিল্ম স্ট্যাডিজের শফিউল আলম ভূইয়া বললেন, ‘এটা অনেক বড় দুঃসংবাদ। অপূরণীয় ক্ষতি। নায়করাজের মতো অভিনেতা শতাব্দীতে খুবই কম পাওয়া যায়।
সোমবার বিকেলে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রাজ্জাক। তিনি দীর্ঘদিন ধরেন নিউমোনিয়াসহ বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। তাঁর বয়স ৭৭ বছর।
একনজরে নায়করাজ
নাম: আবদুর রাজ্জাক।
উপাধী: নায়করাজ (উপাধী দিয়েছিলেন চিত্রালি সম্পাদক আহমেদ জামান চৌধুরী।)
জন্ম: ২৩ জানুয়ারি, ১৯৪২।
জন্মস্থান: নাকতলা, দক্ষিণ কলকাতা, ভারত।
জাতীয়তা: বাংলাদেশি।
বাবা: আকবর হোসেন।
মা: নিসারুননেছা।
স্ত্রী: খাইরুন্নেছ।
সন্তান: বাপ্পারাজ (রেজাউল করিম), নাসরিন পাশা শম্পা, রওশন হোসেন বাপ্পি, আফরিন আলম ময়না, খালিদ হোসেইন স¤্রাট।
অভিনয়ের শুরু: কলকাতার খানপুর হাইস্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়াকালীন স্বরসতী পূজায় মঞ্চ নাটকে। গেম টিচার রবীন্দ্রনাথ চক্রবর্তী তাঁকে বেছে নিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় চরিত্রে। প্রথম অভিনীত নাটক ‘বিদ্রোহী’।
কলেজজীবনে ‘রতন লাল বাঙালি’ সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে সিনেমায় যাত্রা।
১৯৬৪ সালৈ কলকাতার হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার কারণে পরিবার নিয়ে ঢাকায় আসেন। ঢালিউডে নায়ক হিসেবে প্রথম চলচ্চিত্র: জহির রায়হানের বেহুলা। নায়করাজের শেষ ছবি ১৯৯০ সালে মুক্তি পাওয়া ‘মালামতি’।