ঢাকা ১০:৪১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২৫, ২৫ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

টিফিনের টাকা জমিয়ে ত্রাণ বিতরণ করছে বীরগঞ্জের শিশুরা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৫:০১:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ অগাস্ট ২০১৭
  • ৫৩৮ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ টানা বর্ষণে সবার মতো গৃহবন্দি দিনাজপুরের বীরগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী উম্মে সুমাইয়া সৌমিকা, পুজা সাহা, মাহ্ফুজা ইসলাম মুন ও অষ্টম শ্রেণির সাদিয়া আফরোজ। কিন্তু কিছুতেই ঘরে মন বসছে না তাদের। বারবার মনে পড়ছিল প্রাণপ্রিয় স্কুলের কথা। তাই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে তারা।

উদ্দেশ্য বন্যার পানিতে স্কুলের কী দশা তা দেখা। কিন্তু স্কুলে গিয়ে বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে তারা। সিদ্ধান্ত নেয় অসহায় বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। কিন্তু কীভাবে? তাদের হাতে তেমন কোনো টাকা নেই। সবাই পরামর্শ করে তাদের জমানো টিফিনের টাকা দিয়ে বানভাসিদের পাশে দাঁড়াবে- এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে। সবার টিফিনের টাকা একসঙ্গে করে বিস্কুট কিনে তা উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে বিতরণ শুরু করে। তাদের এই উদ্যোগে উপজেলায় ব্যাপক সাড়া পড়ে। সাধারণ মানুষ তাদের এই ক্ষুদ্র উদ্যোগকে অভিনন্দন জানায়। এ ব্যাপারে উম্মে সুমাইয়া সৌমিকা বলেন, ‘আশ্রয়কেন্দ্রে অসহায় মানুষের আর্তনাদ আমাদের বেশ পীড়া দিয়েছে। বিশেষ করে শিশুরা যখন খাবার জন্য কাঁদছিল। আমরা প্রথম দিনেই ১ হাজার ৫৮০ টাকা দিয়ে শিশুদের জন্য বিস্কুট কিনে বিতরণ শুরু করি। পরে টাকার পরিমাণ বাড়তে থাকে।’

পুজা সাহা বলেন, ‘আমাদের উদ্যোগের বিষয়টি জানতে পেরে বাবা-মাও আমাদের টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেন। পরে আমাদের অনেক শিক্ষক আমাদের আর্থিক সহযোগিতা করেন। এরপর আমরা সবার প্রচেষ্টায় প্রতিদিন ৫ হাজার টাকার বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করতে সমর্থ হয়েছি।’

বীরগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রের পারুল রায় বলেন, ‘স্কুলে আশ্রয় নেয়ার পর রান্না করার সুযোগ হয়নি। তাই ক্ষুধায় আমার ৫ বছরের ছেলে অমিত কাঁদছিল। দুপুর ১২টায় মেয়েরা এসে এখানে সব বাচ্চাকে বিস্কুট দিয়ে যায়। আমরা সেদিন না খেতে পারলেও ছেলে সেই বিস্কুট খেয়ে দিন পার করেছে। রাতে বীরগঞ্জ সমিতি খিচুরি দিয়ে যাওয়ার পর সবাই মিলে খেতে পেরেছি। সেদিন তাদের উপকার আমার আজীবন মনে থাকবে।’

এ ব্যাপারে বীরগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ খয়রুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আমি কলেজের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি। তখন দেখলাম কয়েকজন মেয়ে এসে বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করছে। এত ছোট শিশুরা ত্রাণ বিতরণ করছে আমার বেশ কৌতূহল হয়। এগিয়ে গিয়ে নিজেই তাদের সঙ্গে কথা বলি। তাদের উদ্যোগ আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। আমি সেদিনেই সিদ্ধান্ত নেই কলেজের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ করা হবে এবং শিক্ষকদের বিষয়টি জানালে তাদের সম্মতিক্রমে পরদিন কলেজে আশ্রয় গ্রহণকারীদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। সত্যি আমাদের শিশুদের এই মহৎ উদ্যোগ মানুষ মনে রাখবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

টিফিনের টাকা জমিয়ে ত্রাণ বিতরণ করছে বীরগঞ্জের শিশুরা

আপডেট টাইম : ০৫:০১:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ অগাস্ট ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ টানা বর্ষণে সবার মতো গৃহবন্দি দিনাজপুরের বীরগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী উম্মে সুমাইয়া সৌমিকা, পুজা সাহা, মাহ্ফুজা ইসলাম মুন ও অষ্টম শ্রেণির সাদিয়া আফরোজ। কিন্তু কিছুতেই ঘরে মন বসছে না তাদের। বারবার মনে পড়ছিল প্রাণপ্রিয় স্কুলের কথা। তাই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে তারা।

উদ্দেশ্য বন্যার পানিতে স্কুলের কী দশা তা দেখা। কিন্তু স্কুলে গিয়ে বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে তারা। সিদ্ধান্ত নেয় অসহায় বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। কিন্তু কীভাবে? তাদের হাতে তেমন কোনো টাকা নেই। সবাই পরামর্শ করে তাদের জমানো টিফিনের টাকা দিয়ে বানভাসিদের পাশে দাঁড়াবে- এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে। সবার টিফিনের টাকা একসঙ্গে করে বিস্কুট কিনে তা উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে বিতরণ শুরু করে। তাদের এই উদ্যোগে উপজেলায় ব্যাপক সাড়া পড়ে। সাধারণ মানুষ তাদের এই ক্ষুদ্র উদ্যোগকে অভিনন্দন জানায়। এ ব্যাপারে উম্মে সুমাইয়া সৌমিকা বলেন, ‘আশ্রয়কেন্দ্রে অসহায় মানুষের আর্তনাদ আমাদের বেশ পীড়া দিয়েছে। বিশেষ করে শিশুরা যখন খাবার জন্য কাঁদছিল। আমরা প্রথম দিনেই ১ হাজার ৫৮০ টাকা দিয়ে শিশুদের জন্য বিস্কুট কিনে বিতরণ শুরু করি। পরে টাকার পরিমাণ বাড়তে থাকে।’

পুজা সাহা বলেন, ‘আমাদের উদ্যোগের বিষয়টি জানতে পেরে বাবা-মাও আমাদের টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেন। পরে আমাদের অনেক শিক্ষক আমাদের আর্থিক সহযোগিতা করেন। এরপর আমরা সবার প্রচেষ্টায় প্রতিদিন ৫ হাজার টাকার বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করতে সমর্থ হয়েছি।’

বীরগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রের পারুল রায় বলেন, ‘স্কুলে আশ্রয় নেয়ার পর রান্না করার সুযোগ হয়নি। তাই ক্ষুধায় আমার ৫ বছরের ছেলে অমিত কাঁদছিল। দুপুর ১২টায় মেয়েরা এসে এখানে সব বাচ্চাকে বিস্কুট দিয়ে যায়। আমরা সেদিন না খেতে পারলেও ছেলে সেই বিস্কুট খেয়ে দিন পার করেছে। রাতে বীরগঞ্জ সমিতি খিচুরি দিয়ে যাওয়ার পর সবাই মিলে খেতে পেরেছি। সেদিন তাদের উপকার আমার আজীবন মনে থাকবে।’

এ ব্যাপারে বীরগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ খয়রুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আমি কলেজের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি। তখন দেখলাম কয়েকজন মেয়ে এসে বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করছে। এত ছোট শিশুরা ত্রাণ বিতরণ করছে আমার বেশ কৌতূহল হয়। এগিয়ে গিয়ে নিজেই তাদের সঙ্গে কথা বলি। তাদের উদ্যোগ আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। আমি সেদিনেই সিদ্ধান্ত নেই কলেজের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ করা হবে এবং শিক্ষকদের বিষয়টি জানালে তাদের সম্মতিক্রমে পরদিন কলেজে আশ্রয় গ্রহণকারীদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। সত্যি আমাদের শিশুদের এই মহৎ উদ্যোগ মানুষ মনে রাখবে।