হাওর বার্তা ডেস্কঃ জনপ্রিয় নাট্যাভিনেতা আরফান আহমেদ। অভিনেতা হওয়ার আগে নাটকের নেপথ্যে কাজ করেছেন। প্রায় ১০০টি নাটকের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন তিনি। বিজ্ঞাপনের মডেল হয়ে ১৯৯৪ সালে প্রথম মিডিয়ায় আসেন। তার অভিনীত প্রথম একক নাটক ছিল ‘পুরস্কার’। শামসুদ্দোহা তালুকদারের প্রযোজনায় এটি ১৯৯৫ সালে বিটিভিতে প্রচার হয়। প্রথম ধারাবাহিক নাটক ‘আকালি’ প্রচার হয় ১৯৯৬ সালে।
অভিনয়ের পাশাপাশি আরফান আহমেদের ক্যামেরার পেছনে কাজ করার অভিজ্ঞতা বেশ। সে সঙ্গে তিনি অনেক নাটক লিখেছেনও। তার লেখা প্রথম নাটক নির্মাণ করেন সকাল আহমেদ। এটি এনটিভিতে প্রচার হয়। আরফান আহমেদ অভিনীত জনপ্রিয় ধারাবাহিক নাটক সালাহ উদ্দিন লাভলু পরিচালিত ‘ভিলেজ ইঞ্জিনিয়ার’ আরটিভিতে, আল হাজেন পরিচালিত ‘লড়াই’ বাংলাভিশনে, ‘অলসপুর’ আরটিভিতে, রায়হান খান পরিচালিত ‘অর্কিড’ চ্যানেল আইতে প্রচার হয়। দুই যুগের পথচলায় আরফান আহমেদ দেশের শোবিজে বেশ শক্ত অবস্থানই তৈরি করে নিয়েছেন। সব মিলিয়ে এখন দিনকাল কেমন যাচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশ ভালো। অভিনয় করতে করতে সময় চলে যায়। এছাড়া সামনে ঈদ। তাই কাজও বেশি। বর্তমান ব্যস্ততা কী নিয়ে? আরফান আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেন, অবশ্যই নাটক নিয়ে।
এবার ঈদে বেশিরভাগ সিরিজ নাটকে অভিনয় করেছি। সাগর জাহানের ৭ পর্বের ‘মেরিড লাইফে অ্যাভারেজ আসলাম’, একই নির্মাতার ৭ পর্বের ‘নবাবের প্রেম’ ও রুমান রুনির ৭ পর্বের ‘গোঁফ’ নাটকের শুটিং করেছি। এছাড়া বেশ কিছু একক নাটকের শুটিং শেষ করেছি। সামনে আরো করবো। গত ঈদে অনেক নাটকে অভিনয় করেছেন। সাড়া কেমন মিলেছে? উত্তরে আরফান বলেন, বেশ ভালো। প্রত্যাশার চেয়ে বেশিই সাড়া পেয়েছি। সাগর জাহানের ‘অ্যাভারেজ আসলাম ইস নট এ ব্যাচেলর’ ও মারুফ মিঠুর ‘নাসু ভিলেন’ করে বেশি সাড়া পেয়েছি। অভিনয়ের পাশাপাশি আরফানকে পরিচালনায়ও দেখা যায়। তার প্রথম নির্দেশনায় ২০১৬ সালে ‘সে কথা গোপন ছিল’ নাটকটি প্রচার হয়।
গত ঈদে তিনি নির্মাণ করেছেন টেলিফিল্ম ‘বিগ শট’। সে সূত্রেই তার কাছেপ্রশ্ন ছিল- আপনার নির্দেশনার নাটক-টেলিফিল্মগুলোতে সাড়া কেমন মিলেছে? আরফান বলেন, অভিনয়ের পাশাপাশি মাঝে মাঝে নির্মাণের ইচ্ছা জাগে। সেই ইচ্ছা থেকেই নাটক তৈরি করেছি। নির্মাণ কাজে সবার কাছ থেকে ভালো সাড়াও পেয়েছি। সিনেমায় অভিনয়ের কি খবর জানতে চাইলে আরফান বলেন, আপাতত কোনো সিনেমায় অভিনয় করছি না। তবে পর্যাপ্ত অফার আসে। কিন্তু সিনেমায় অভিনয় করতে আমার ইচ্ছা করে না। কারণ এ মাধ্যমটিতে কাজ করতে গেলে অনেক সময় ব্যয় হয়। এতে আমার অনেক শিডিউল নষ্ট করতে হয়।
প্রসঙ্গত, আরফান একটি সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন। সেটি হচ্ছে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত ‘কৃষ্ণপক্ষ’। এটি নির্মাণ করেছেন মেহের আফরোজ শাওন। বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া প্রসঙ্গে এই অভিনেতা বলেন, আমি সবশেষ ওয়ালটন ও বেঙ্গল চেয়ারের বিজ্ঞাপনে মডেল হয়েছি। এ যাবৎ মোট ৭-৮টি বিজ্ঞাপন করেছি আমি। তবে আপাতত করছি না। মিডিয়ার বর্তমান অবস্থা কেমন মনে হচ্ছে জানতে চাইলে আরফান বলেন, এখন তো একটু অস্থিরতা যাচ্ছে। আগে ভালো বাজেটে নাটক বানানো হতো। সেটা এখন হচ্ছে না। বাজেটের বাইরেও বিভিন্ন সমস্যা তো আছেই। ভালো নাটক হচ্ছে না বলে অভিযোগ অনেকের।
এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ভালো নাটক হলেও দর্শক তৃপ্তি নিয়ে উপভোগ করতে পারছেন না। কারণ ভালো গল্পের নাটক কিংবা কমেডি নাটক প্রচার করা হলে টিভি এজেন্সিরা ব্যস্ত হয়ে পড়ে বেশি বিজ্ঞাপন প্রচারে। দর্শক তখন রিমোটের বাটন টিপে অন্য চ্যানেলে চলে যায়। এদিকে মানহীন কাজও হচ্ছে। কারণ সেসব কাজে বাজেট দেয়া হয় কম।
এছাড়া অনেক নাটকেই অভিনেতা-অভিনেত্রীদের ঠিক করে দেয় চ্যানেল কর্তৃপক্ষ। তাদের পছন্দের আর্টিস্টদের নিয়ে কাজ করতে হয়। যার ফলে বাজেট যা দেয়, তা দিয়ে স্বল্প সময়ে কাজ সম্পন্ন করতে হয়। এ কারণে নাটকটি তৈরি করতে পরিচালকের হুমড়ি খেতে হয়। এছাড়া অতিরিক্ত টিভি চ্যানেলের কারণে নাটকের গুণগতমান নষ্ট হচ্ছে। আমাদের দেশে সর্বোচ্চ চ্যানেল থাকার কথা ৫টি। এখন চ্যানেল ৩০টি। নাটকের মান বাড়াতে হলে আগে পরিকল্পনা ঠিক করতে হবে। সবশেষে আরফানের কাছে জানতে চাওয়া হয় সংসার কেমন চলছে? উত্তরে তিনি বলেন, দাম্পত্য জীবনে খুব সুখী একজন মানুষ আরফান আহমেদ।