হাওর বার্তা ডেস্কঃ চলমান বন্যা এরই মধ্যে প্রায় এক শ জনের প্রাণই শুধু নেয়নি, ১০০ কিলোমিটারের বেশি রেলপথ ক্ষতিগ্রস্ত করেছে; বিধ্বস্ত হওয়া সড়কপথের দৈর্ঘ্য দুই হাজার ৮০০ কিলোমিটার। যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় সরাসরি আক্রান্ত এলাকার লাখ লাখ মানুষের চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে; এর চেয়েও বড় বিপদ হচ্ছে সামনের দিনগুলোর খোরাকির কোনো নিশ্চয়তা তাদের অনেকেরই নেই। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের তথ্য মতে, বন্যাকবলিত ২৭ জেলায় ছয় লাখ ১৮ হাজার ৭০৯ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মাত্র চার মাস আগে হাওরাঞ্চলের সাত জেলায় অতিবৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পানিতে ২০ লাখ টন ধান হারিয়েছিল কৃষক। সেই ধাক্কা কাাটিয়ে না উঠতেই এবার কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, লালমনিরহাট, জামালপুর, দিনাজপুরসহ উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের ২৭ জেলায় দেখা দিয়েছে বন্যা। ফলে বোরোর পর এবার আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রায় বড় ধরনের ঘাটতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে যেসব খামারি নিজের পকেটের টাকা খরচ করে গরু মোটাতাজা করেছিলেন, তাঁদেরও মাথায় হাত। গোখাদ্যের অভাবে অনেকে কম দামে গরু বিক্রি করে দিচ্ছেন। উত্তরাঞ্চলে পুকুর কিংবা জলাশয়ে যাঁরা মাছ চাষ করেছিলেন, পুকুর-জলাশয়ের পানি আর বন্যার পানি একাকার হয়ে চাষের মাছ সব চলে গেছে। বন্যাকবলিত ২৭ জেলায় কলা, শসা, চিচিঙ্গা, পটোলসহ সব ধরনের সবজি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। শস্যভাণ্ডার খ্যাত রংপুরে সবজিক্ষেতের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ফলে রাজধানী ঢাকায় সবজির বাজারে দাম বেড়েছে কয়েক গুণ। বন্ধ রয়েছে তিন হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। গতকাল শনিবার বিকেলে সচিবালয়ের ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে ২৭ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে আন্ত মন্ত্রণালয় সভায় জানানো হয়, এ পর্যন্ত বন্যায় ২৭ জেলার ১৫৪টি উপজেলার ছয় হাজার ৬৬৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১৭৯ কিলোমিটার বাঁধ আংশিক ও ৩৫ কিলোমিটার বাঁধ সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুই হাজার ৭৭৯ কিলোমিটার সড়ক আংশিক ও ৩১ কিলোমিটার সড়ক সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৫৭ লাখ আট হাজার ৭৫০ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সভায় স্ব স্ব মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলোকে তাদের ক্ষয়ক্ষতি সুচারুরূপে নিরূপণ করে ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
দেশের বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির হিসাব যথার্থভাবে করা হয় না। অবশ্য বহুজাতিক সংস্থা ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বিচ্ছিন্নভাবে কিছু জরিপ করেছে। বিবিএসের এক জরিপে দেখা গেছে, ২০০৯ থেকে ২০১৪—এই ছয় বছরে দেশে যদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হতো, তাহলে প্রতিবছর গড়ে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির আকার ০.৩০ শতাংশ বাড়ত। ছয় বছরে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাংলাদেশের দুর্যোগপ্রবণ এলাকাগুলোর পরিবারের আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ১৮ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। আর বিশ্বব্যাংক বলছে, একেকটি দুর্যোগে ক্ষতি হয় তিন হাজার কোটি টাকার মতো।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর বন্যাকবলিত ২৭ জেলায় ছয় লাখ ১৮ হাজার ৭০৯ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা বললেও এর মধ্যে কত হেক্টর আমনের ক্ষতি হয়েছে, সে তথ্য নেই। এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আলহাজউদ্দিন হাওর বার্তাকে বলেন, মাঠপর্যায় থেকে যে তথ্য এসেছে, তাতে দেখা গেছে, এখন পর্যন্ত সাড়ে তিন লাখ হেক্টর আমন ধানের জমি প্লাবিত হয়েছে। তিনি বলেন, এটা শুধু প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে সেটা এখনই বলা যাবে না। তবে যেসব কৃষক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের তালিকা তৈরি করে পরবর্তী সময়ে সহযোগিতা করা হবে বলে জানান তিনি।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, বন্যায় এখন পর্যন্ত প্রাণ গেছে ৯৮ জনের। ২৭ জেলার ১৩৩ উপজেলা এখন পর্যন্ত বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫০ লাখ ১৮ হাজার মানুষ। ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার। আর আংশিক ঘরবাড়ি ক্ষতি হয়েছে আড়াই লাখের মতো।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষক ড. আসাদুজ্জামান হাওর বার্তাকে বলেন, এপ্রিলে আগাম বন্যায় হাওরাঞ্চলে বোরোর বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছিল। এবার আমন ধান ক্ষতির মুখে পড়ল। তিনি বলেন, সরকারি গুদামে এখন সোয়া দুই লাখ টন চাল মজুদ আছে। বাজারে চালের দাম কমাতে সরকারের কাছে যে শক্তি থাকার কথা, সেটি নেই। এই সুযোগে ব্যবসায়িরা চালের দাম আরো বাড়াতে পারে। তিনি বলেন, এ বছর চীনে ধান উৎপাদন কম হয়েছে। চীনও আন্তর্জাতিক বাজারে ঢুকছে। চাল আমদানির বিষয়ে সরকারের আগাম প্রস্তুতি ছিল না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন বিনা দরপত্রে চাল আমদানির সুযোগ করে দেওয়া উচিত।
মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, এ বছর ঈদুল আজহায় এক কোটি ১৫ লাখ পশুর চাহিদা রয়েছে। এখন পর্যন্ত পশু প্রস্তুত আছে এক কোটি ১৫ লাখ ৫৭ হাজার। বন্যায় উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে কোরবানি পশুর কিছুটা ক্ষয়ক্ষতি হলেও তাতে কোনো সংকট হবে না বলে দাবি করেছেন মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। গত বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠান শেষে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘চাহিদার চেয়ে বেশি পশু রয়েছে আমাদের। আর বাইরে থেকে গরু আমদানি হোক, সেটা আমরা চাই না। বাংলাদেশ গরু উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হোক; আমরা সেটাই চাই। ’
বিধ্বস্ত সড়ক ও রেলপথ : বন্যায় দিনাজপুর, জামালপুর, গাইবান্ধা, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারসহ বিভিন্ন জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। দিনাজপুর সড়ক সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল হালিম বলেন, দিনাজপুরের সঙ্গে ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, রংপুর এবং ঢাকা রুটের প্রায় ১২০ কিলোমিটার এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী ওই সব অংশ মেরামত এবং পুনর্নির্মাণ করতে ১১৫ কোটি টাকা প্রয়োজন পড়বে। এ জন্য তিনটি স্তর নির্ধারণ করা হয়েছে। তাত্ক্ষণিক প্রকল্পের আওতায় ছোটখাটো খানাখন্দ মাটি ও খোয়া দিয়ে ভরাট করে সড়ক চলাচলের উপযোগী করা হচ্ছে। মধ্য মেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পে মূল কাজ করা হবে। সড়ক এবং সেতু মন্ত্রী গত শুক্রবার দিনাজপুরের বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করতে এসে অচল সড়ক দ্রুত সচল করার তাগিদ দিয়ে গেছেন। অর্থ বরাদ্দ পাওয়া মাত্র মধ্যমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি কাজে হাত দেওয়া হবে।
ঢাকা থেকে দিনাজপুর সরাসরি সড়ক ও রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। দিনাজপুর ও কুড়িগ্রামের মধ্যেও রেল যোগাযোগ বন্ধ। পশ্চিমাঞ্চলীয় রেলওয়ের প্রধান পরিবহন কর্মকর্তা বেলাল উদ্দিন জানান, বন্যার কারণে দুটি আন্তনগরসহ প্রায় ১১ জোড়া ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে ঈদের আগে রেল পরিবহন স্বাভাবিক হবে বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দিনাজপুর, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও ও কুড়িগ্রাম জেলার রেলপথ। লালমনিরহাটের হাতিবান্ধায় ১২০ ফুট রেললাইন নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। সেখানে এখন নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এই পথে রেললাইন পুনঃস্থাপন করা সম্ভব কি না, তা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বলা যাবে না। কুড়িগ্রাম জেলায় রেলের সেতু ভেঙে গেছে। কুড়িগ্রামের সঙ্গে রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। রংপুরের কাউনিয়া-তিস্তা-মহেন্দ্রনগর পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার রেলপথের ২০টি স্থানে স্লিপার সরে ২০ থেকে ২৫ ফুট গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
দিনাজপুরের চিরিরবন্দর থেকে মন্মথপুর পর্যন্ত ২২ কিলোমিটারের ৪৮টি স্থানে স্লিপার সরে রেলপথের নিচে পাঁচ ফুট করে মাটি সরে গেছে। পাথরের কোনো অস্তিত্ব নেই এই রেলপথে। দিনাজপুরের ১৩ এম ব্রিজের দুই পাশের ৫০ ফুট জায়গায় পাঁচ ফুট গভীর গর্ত হয়েছে। রেলওয়ে কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানা গেছে, দিনাজপুরের কাঞ্চন থেকে বাজনাহার পর্যন্ত চার কিলোমিটারজুড়ে স্লিপার সরে গিয়ে আট ফুট গভীর গর্ত হয়েছে। কাঞ্চন থেকে বিরল পর্যন্ত এক কিলোমিটার রেললাইনে ১২ ফুট গভীর গর্ত হয়েছে। দিনাজপুর সদরের কাউগাঁ এলাকার এক কিলোমিটার রেললাইনে হয়েছে আট ফুট গভীর গর্ত।
পশ্চিমাঞ্চলীয় রেলের প্রধান প্রকৌশলী রমজান আলী জানান, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, ঠাকুরগাঁওসহ রংপুর বিভাগের ১০০ কিলোমিটারের বেশি রেলপথ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসবের মেরামতকাজ চলছে।
রেলওয়ের সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল হানিফ জানান, দিনাজপুর জেলা সদরের কাউগাঁ, চিরিরবন্দরের মন্মথপুর, বিরলের কাঞ্চন এবং বাজনাহার পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার রেলপথ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগামী দুই দিনের মধ্যে পার্বতীপুর থেকে চিরিরবন্দর পর্যন্ত রেলপথ চালু করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। চিরিরবন্দর থেকে দিনাজপুর পর্যন্ত অংশ ঈদের আগেই সচলের চেষ্টা চলছে। ঢাকা থেকে কুড়িগ্রাম জেলা শহরে অবস্থানকালে গতকাল বিকেলে অভিজিৎ রায় হাওর বার্তাকে জানান, এখানে সব পথ যেন বন্ধ, রেলপথ ঝুলে গেছে। জেলা শহর থেকে চার কিলোমিটার পশ্চিমে টগরাইহাটে রেল সেতুর গার্ডারটি গত ১৪ আগস্ট ভেঙে পড়ে।
মৌলভীবাজার জেলায় বন্যায় সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রায় ২০০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অতিবর্ষণে সওজ অধিদপ্তরের প্রায় ৯৮ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুই সপ্তাহের বেশি বন্যার পানি ছিল জেলার হাকালুকি, কাউয়াদীঘি, হাইল হাওর ও এর পাশের এলাকাগুলোয়। মৌলভীবাজার-কুলাউড়া-বড়লেখা, কুলাউড়ার ভুকশিমইল ইউনিয়নের পুশাইনগর-নবাবগঞ্জ সড়কের পিচ ও খোয়া উঠে গেছে। সওজ অধিদপ্তরের রাজনগর-কুলাউড়া-বড়লেখা-বিয়ানীবাজার আঞ্চলিক মহাসড়ক, জুড়ী-লাঠিটিলা আঞ্চলিক মহাসড়ক, মৌলভীবাজার-শমসেরনগর-চাতলা সড়ক, জুড়ী-ফুলতলা-বটুলী সড়ক স্থানে স্থানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মৌলভীবাজার সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মিন্টু রঞ্জন দেবনাথ বলেন, ‘আপাতত ইট ফেলে গর্ত ভরাট করছি, যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছি। ’
জামালপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, জেলায় ৪৮ হাজার হেক্টর ফসলি জমি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুকুরের মাছ চলে গেছে। সব কলাগাছ পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পটল, চিচিঙ্গা, করলাসহ সব ধরনের সবজি এখন পানির নিচে। এখন পর্যন্ত জেলায় বন্যায় প্রাণ হারিয়েছে ১৩ জন। জামালপুর জেলার ইসলামপুর উপজেলার বাসিন্দা রমিজ উদ্দিনের গরুটির বন্যা শুরুর আগেও ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম উঠেছিল। তখন বিক্রি করেননি বাড়তি দামের আশায়। সেই গরুটি গত মঙ্গলবার তিনি নিরুপায় হয়ে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন। কারণ পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গোখাদ্যের দাম। পুরো জামালপুরে একই চিত্র। গরুর দাম পড়ে গেছে।
জেলা মত্স্য অফিস সূত্রে জানা যায়, বন্যায় রংপুর জেলায় সাত হাজার ২৩৫টি পুকুর ও জলাশয়ের মাছ ভেসে গেছে। আলমবিদিতর ইউনিয়নের বড়াইবাড়ী যুব মত্স্য চাষ সমবায় সমিতির সভাপতি আবু ছাইয়েদ চাঁদ জানান, ২০১২ সাল থেকে প্রায় ১০ একর জমির চারটি জলাশয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে। এবার ৫০ লাখ টাকার বিভিন্ন জাতের মাছ চাষ করা হয়। হঠাৎ বন্যায় এসব মাছ ভেসে যাওয়ায় সমিতির সদস্যরা পথে বসেছেন। সমিতির সাধারণ সম্পাদক আহসানুল কবীর বকুল বলেন, অষ্টম শ্রেণি থেকে বিএ পাস পর্যন্ত ২৫ জন শিক্ষিত বেকার যুবক যুব উন্নয়ন ও মত্স্য বিভাগে প্রশিক্ষণ নিয়ে মাছ চাষকে আয়ের পথ হিসেবে বেছে নেন। কিন্তু বন্যায় সব শেষ হয়ে গেল। রংপুর কৃষি বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বন্যার পানিতে তলিয়ে যায় এক লাখ ৭৪ হাজার ১৫ হেক্টর জমির আমনক্ষেত। সবজিক্ষেত তলিয়ে যায় তিন হাজার ৩১৭ হেক্টর।
রংপুর জেলা মত্স্য কর্মকর্তা ড. জিল্লুর রহমান জানান, ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের তালিকা করে পুনর্বাসনের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া ক্ষতির হাত থেকে রক্ষায় মাছ চাষিদের পুকুর বা জলাশয়ের পাড়ে বানা অথবা জাল ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে এবং বন্যা-পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হচ্ছে।
বন্যায় কুড়িগ্রামে ৫০ হাজার হেক্টর জমি প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে ৪৭ হাজার হেক্টর জমি আমনের। বাকিটা সবজি ও বীজতলা। কুড়িগ্রামেও বন্যায় পুকুর থেকে সব মাছ চলে গেছে। গরুর দাম কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে। ধান লাগানোর শেষে বন্যা এসে ফসল ও বীজতলা ডুবিয়ে নেওয়ায় এবং বিএডিসির কাছে আমনের কোনো বীজ না থাকায় স্থানীয় কৃষকদের কাছে থাকা ‘নাবিজাত’ (বিলম্বে ফলে স্থানীয় জাত) বীজই এখন ভরসা।
দিনাজপুরের পাঁচবাড়ী থেকে আমবাড়ী পর্যন্ত প্রায় ১৩ কিলোমিটার মহাসড়কের বিভিন্ন অংশ ভেসে বা ধসে গেছে। কোথাও গর্ত তৈরি হয়েছে। ফলে ৫০ কিলোমিটার ঘুরে সড়কপথে হাতে গোনা কিছু বাস চলাচল করছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল হাওর বার্তাকে বলেন, গতকালের বৈঠকে স্থানীয় সরকার বিভাগকে বলা হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট পুনর্নির্মাণের ব্যবস্থা করতে। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কৃষি বিভাগকে বলা হয়েছে, কৃষি পুনর্বাসন, বীজ প্রদান, সার সংরক্ষণ ও মজুদ করতে। ঈদ সামনে রেখে যাতে জনদুর্ভোগ না হয়, সেটি নিশ্চিত করতে রেল ও সড়ক সংস্কারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।