ঢাকা ০৮:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কী দিয়া বাড়ি বানাইম

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৫:৫৭:৪৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ অগাস্ট ২০১৭
  • ২৭৪ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ হামরা কাইল (শুক্রবার) পানি নামার পর বাড়িত সেন্দাইছি (ঢুকেছি)। বাড়িতো হামার ভাঙ্গি গেইছে। কামকাজ নাই কী খাইম? কী দিয়া বাড়ি বানাইম?’ কথাগুলো বলছিলেন সৈয়দপুর শহররক্ষা বাঁধে আশ্রয় নেওয়া মাসুদা। এ রকমই সমস্যার কথা বলেন মোমেনা বেগম নামের আরেক বৃদ্ধ। তিনি বলেন, ‘একবার বানের পানিত তলে গেনু, এ্যালা ড্যানডারাত তলে গেছি হামরা।’ (একবার বন্যার পানির নিচে তলিয়ে গেছি, এখন সমস্যায় তলিয়ে গিয়েছি আমরা।)

আজ শনিবার সরেজমিনে সৈয়দপুর উপজেলার বন্যাদুর্গত এলাকায় কথা হয় এই দুজনের সঙ্গে। সেখানে মাসুদা ও মোমেনার মতো বন্যাদুর্গত আরও অনেকে রয়েছেন।

সৈয়দপুর পৌরসভা এলাকার কুন্দল, পাটোয়ারীপাড়া, কাজীপাড়া, নতুন বাবুপাড়া, বাঁশবাড়ী, মিস্ত্রিপাড়া, বানিয়াপাড়া, হাতিখানা, মুন্সিপাড়া, খাতামুধুপুর ইউনিয়নের মুশরত, ময়দানপুর, খালিশা, কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের চওড়া, তিনপাই, ডাঙ্গি, কামারপুকুর ইউনিয়নের নিজবাড়ী, কুজিপুকুর, কামারপুকুর, বাঙালিপুর ইউনিয়নের চৌমুহনী, লক্ষণপুর, বয়েতপাড়া, বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের শ্বাষকান্দর, জানেরপাড় ও বসুনিয়াপাড়া গ্রামগুলোতে বন্যার ভয়াল চিত্র দেখা গেছে। এসব এলাকায় বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর জেগে উঠেছে বিধ্বস্ত জনপদ।

সৈয়দপুর শহররক্ষা বাঁধ ভেঙে গত ১৩ আগস্ট প্রথম প্লাবিত হয় শহরের পশ্চিম পাটোয়ারীপাড়ার গ্রামটি। গ্রামটির পুরোটাই পানির নিচে তলিয়ে যায়। ওই গ্রামের বেশির ভাগ বাসিন্দাই পাশের খড়খড়িয়া নদীর উঁচু বাঁধে আশ্রয় নেয়। কোনো রকমে তাঁবু টানিয়ে বাঁধেই আশ্রয় নেয় তারা।

দিনমজুর হোসেন আলী বলেন, ‘এখন আমাদের কে খাওয়াবে? কে বানিয়ে দেবে ঘরবাড়ি?’ ঘর মেরামতের জন্য তিনি সরকারের কাছে সহায়তা চান।

সৈয়দপুর উপজেলা চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিন বলেন, বন্যায় এখানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ৫০০ হেক্টর জমির রোপা আমনের খেত তলিয়ে গেছে। ১৫ কিলোমিটার সড়ক বিধ্বস্ত হয়েছে। শহররক্ষা বাঁধের দুই জায়গা ও কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের তিনটি স্থানে বাঁধ ভেঙে গেছে। সব মিলিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ২৫ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২৩টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছিল। এখানে ২ হাজার ৫০০ মানুষ আশ্রয় নেয়। তবে গোটা উপজেলায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে অবর্ণনীয় ক্ষতির শিকার হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বজলুর রশীদ বলেন, এরই মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বেশির ভাগ মানুষ বাড়ি ফিরেছে। অন্যরা আগামীকাল রোববারের মধ্যে বাড়ি ফিরে যাবে। এবার সামনে আসছে পুনর্বাসন নিয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি আরও বলেন, বন্যায় যাদের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সরকার তা নির্মাণ করে দেবে। প্রশাসনের একটি দল ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে কাজ করছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

কী দিয়া বাড়ি বানাইম

আপডেট টাইম : ০৫:৫৭:৪৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ অগাস্ট ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ হামরা কাইল (শুক্রবার) পানি নামার পর বাড়িত সেন্দাইছি (ঢুকেছি)। বাড়িতো হামার ভাঙ্গি গেইছে। কামকাজ নাই কী খাইম? কী দিয়া বাড়ি বানাইম?’ কথাগুলো বলছিলেন সৈয়দপুর শহররক্ষা বাঁধে আশ্রয় নেওয়া মাসুদা। এ রকমই সমস্যার কথা বলেন মোমেনা বেগম নামের আরেক বৃদ্ধ। তিনি বলেন, ‘একবার বানের পানিত তলে গেনু, এ্যালা ড্যানডারাত তলে গেছি হামরা।’ (একবার বন্যার পানির নিচে তলিয়ে গেছি, এখন সমস্যায় তলিয়ে গিয়েছি আমরা।)

আজ শনিবার সরেজমিনে সৈয়দপুর উপজেলার বন্যাদুর্গত এলাকায় কথা হয় এই দুজনের সঙ্গে। সেখানে মাসুদা ও মোমেনার মতো বন্যাদুর্গত আরও অনেকে রয়েছেন।

সৈয়দপুর পৌরসভা এলাকার কুন্দল, পাটোয়ারীপাড়া, কাজীপাড়া, নতুন বাবুপাড়া, বাঁশবাড়ী, মিস্ত্রিপাড়া, বানিয়াপাড়া, হাতিখানা, মুন্সিপাড়া, খাতামুধুপুর ইউনিয়নের মুশরত, ময়দানপুর, খালিশা, কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের চওড়া, তিনপাই, ডাঙ্গি, কামারপুকুর ইউনিয়নের নিজবাড়ী, কুজিপুকুর, কামারপুকুর, বাঙালিপুর ইউনিয়নের চৌমুহনী, লক্ষণপুর, বয়েতপাড়া, বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের শ্বাষকান্দর, জানেরপাড় ও বসুনিয়াপাড়া গ্রামগুলোতে বন্যার ভয়াল চিত্র দেখা গেছে। এসব এলাকায় বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর জেগে উঠেছে বিধ্বস্ত জনপদ।

সৈয়দপুর শহররক্ষা বাঁধ ভেঙে গত ১৩ আগস্ট প্রথম প্লাবিত হয় শহরের পশ্চিম পাটোয়ারীপাড়ার গ্রামটি। গ্রামটির পুরোটাই পানির নিচে তলিয়ে যায়। ওই গ্রামের বেশির ভাগ বাসিন্দাই পাশের খড়খড়িয়া নদীর উঁচু বাঁধে আশ্রয় নেয়। কোনো রকমে তাঁবু টানিয়ে বাঁধেই আশ্রয় নেয় তারা।

দিনমজুর হোসেন আলী বলেন, ‘এখন আমাদের কে খাওয়াবে? কে বানিয়ে দেবে ঘরবাড়ি?’ ঘর মেরামতের জন্য তিনি সরকারের কাছে সহায়তা চান।

সৈয়দপুর উপজেলা চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিন বলেন, বন্যায় এখানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ৫০০ হেক্টর জমির রোপা আমনের খেত তলিয়ে গেছে। ১৫ কিলোমিটার সড়ক বিধ্বস্ত হয়েছে। শহররক্ষা বাঁধের দুই জায়গা ও কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের তিনটি স্থানে বাঁধ ভেঙে গেছে। সব মিলিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ২৫ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২৩টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছিল। এখানে ২ হাজার ৫০০ মানুষ আশ্রয় নেয়। তবে গোটা উপজেলায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে অবর্ণনীয় ক্ষতির শিকার হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বজলুর রশীদ বলেন, এরই মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বেশির ভাগ মানুষ বাড়ি ফিরেছে। অন্যরা আগামীকাল রোববারের মধ্যে বাড়ি ফিরে যাবে। এবার সামনে আসছে পুনর্বাসন নিয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি আরও বলেন, বন্যায় যাদের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সরকার তা নির্মাণ করে দেবে। প্রশাসনের একটি দল ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে কাজ করছে।