হাওর বার্তা ডেস্কঃ উত্তরাঞ্চলে লাখ লাখ বানভাসি মানুষ দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে। বাঁধ, উঁচু রাস্তা ও স্কুল-কলেজে আশ্রয় পেলেও দুর্গতরা অর্ধহারে-অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। কারো পাতে সামান্য খাবার জুটলেও অনেকেই অনাহারে থাকছে। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ত্রাণ তত্পরতা থাকলেও তা খুব সামান্য বলে জানিয়েছে ক্ষুধার্ত বন্যাকবলিতরা। যে এলাকায় ত্রাণ তত্পরতা রয়েছে সেখানকার জনপ্রতিনিধি, প্রভাবশালী নেতারা অনিয়ম করছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
দুর্গত অনেক এলাকায় এখনো ত্রাণ পৌঁছায়নি। এর মধ্যে রয়েছে রংপুরের বদরগঞ্জ। সেখানে গতকাল বুধবার বন্যাকবলিত দুই শতাধিক নারী-পুরুষ ত্রাণের জন্য বিক্ষোভ মিছিল করেছে। ত্রাণ বিতরণে অব্যবস্থাপনার নমুনা দেখা গেছে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছি ইউনিয়নে। সাজিরন নামের এক বৃদ্ধা ত্রাণ আনতে গিয়ে পা ভেঙে খালি হাতে আশ্রয়কেন্দ্রে ফিরেছেন; যদিও সরকার জোরালোভাবে দুর্গত এলাকায় ত্রাণ তত্পরতা চালাচ্ছে।
গতকাল সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিবের চলতি দায়িত্বে থাকা মো. গোলাম মোস্তফা জানান, দেশের ২১ জেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩২ লাখ ৮৭ হাজার মানুষ।
প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত প্রায় সাত লাখ ৫২ হাজার পরিবার আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এক হাজার ৫৯৯টি। এগুলোতে আশ্রয় নেওয়া মানুষের সংখ্যা চার লাখ ১১ হাজার।
ওই কর্মকর্তা আরো জানান, ৯ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত তিন হাজার ২৫৫ মেট্রিক টন চাল ত্রাণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে। নগদ অর্থ দেওয়া হয়েছে প্রায় এক কোটি ৩২ লাখ টাকা। আর ১৬ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে।
এদিকে বন্যাকবলিত এলাকার স্বাস্থ্য বিভাগীয় ছুটি বাতিল করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গতকাল নিজ দপ্তরে এক প্রেসব্রিফিংয়ে মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ জানান, দেশে বন্যায় ১ জুলাই থেকে গতকাল পর্যন্ত মারা গেছে ১০৭ জন। বন্যাকবলিত এলাকার স্বাস্থ্য বিভাগীয় ছুটি বাতিল করা হয়েছে। মাঠে নামানো হয়েছে এক হাজার ৮২৪টি মেডিক্যাল টিম। বন্যা নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গতকাল বলেছেন, বন্যার কারণে দেশে যে বিপত্তি হচ্ছে, তা খুবই সাময়িক। সরকার অতি সহজেই সংকট মোকাবেলায় সক্ষম হবে। অন্যদিকে খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেছেন, ‘সরকার চলতি অর্থবছরে ১৫ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি বিবেচনা করে চালের আমদানি শুল্ক বিদ্যমান ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা হচ্ছে। ’ যদিও বন্যাকবলিত এলাকার দুর্গত মানুষের জন্য ‘সরকারের ত্রাণ তত্পরতা নেই’ বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী।
উত্তরাঞ্চলে ত্রাণ তত্পরতা অপ্রতুল : সিরাজগঞ্জে বন্যাকবলিত পাঁচটি উপজেলার ৪৮টি ইউনিয়নের প্রায় তিন শ গ্রামের ৫০ হাজারেরও বেশি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব পরিবারের প্রায় পৌনে তিন লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যাকবলিতরা ত্রাণের অভাবে অসহায় দিন কাটাচ্ছে। বেশির ভাগ মানুষই পাউবোর বাঁধ, উঁচু রাস্তাঘাট ও স্থানীয় স্কুল-কলেজের আশ্রয়কেন্দ্রে উঠতে শুরু করেছে। তিন শতাধিক ঘরবাড়ি পুরোপুরি এবং এক হাজার আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর এখন পর্যন্ত ১৭৫ মেট্রিক টন চাল এবং নগদ প্রায় আট লাখ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কাজীপুর, বেলকুচি ও শাহজাদপুর উপজেলার দুর্গত এলাকায় এখন পর্যন্ত ত্রাণ পৌঁছায়নি।
কুড়িগ্রামের ৯ উপজেলার ৮২০টি গ্রাম বন্যাকবলিত হয়েছে। মোট এক লাখ ১৭ হাজার পরিবারের চার লাখ ৬৯ হাজার মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত ৮৫১ মেট্রিক টন চাল এবং ২৩ লাখ টাকা উপজেলা পর্যায়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বানভাসি এলাকার শ্রমজীবী মানুষ বেকার সময় কাটাচ্ছে। এসব পরিবারে খাদ্যের জন্য হাহাকার শুরু হয়েছে। সরকারি ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় কম হওয়ায় সবাই ত্রাণ পাচ্ছে না। বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। তবে দুর্গম এলাকার অনেকেই অভুক্ত রয়েছে।
সদর উপজেলার পাঁচগাছি ইউনিয়নের শুলকুর বাজার এলাকায় রাস্তায় আশ্রিতরা জানায়, তারা এখনো কোনো সরকারি সহায়তা পায়নি। মঙ্গলবার এ ইউনিয়নে এক হাজার পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। সবার ভাগ্যে তা জোটেনি। হুড়াহুড়িতে অনেকেই আহত হয়েছে। তাদের একজন বৃদ্ধা সাজিরন। তিনি ত্রাণ তো পানইনি, উল্টো পা ভেঙে পড়ে আছেন রাস্তার ওপর। কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান জানান, সুষ্ঠুভাবে ত্রাণ বিতরণের কাজ চলছে। সেনাবাহিনী বুধবার থেকে মেডিক্যাল টিমের সাহায্যে চিকিৎসা প্রদান ও ত্রাণ বিতরণে সহায়তা করছে। রৌমারীর বানভাসিদের কাছে চার দিনেও কোনো ত্রাণ পৌঁছায়নি বলে অভিযোগ করেছে দুর্গতরা। ব্রহ্মপুত্র নদ বিচ্ছিন্ন চরের ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরা জানান, চেয়ারম্যানকে বারবার তাঁদের এই তিন চরে ত্রাণ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন। কিন্তু তিনি তা না করে অন্য এলাকায় ত্রাণ দিচ্ছেন। জরুরিভাবে ত্রাণ না দিলে না খেয়ে মারা যাবে মানুষ।
নীলফামারীর বানভাসি মানুষের মাঝে রয়েছে ত্রাণের জন্য হাহাকার। সরকারিভাবে ত্রাণ তত্পরতা থাকলেও তা অপ্রতুল বলে দাবি করেছে দুর্গতরা। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত নীলফামারীতে ১৯৬ মেট্রিক টন চাল, ৯ লাখ টাকা ও দুই হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, পরিস্থিতি মোকাবেলায় আরো ৩০৭ দশমিক ৭৯০ মেট্রিক টন চাল এবং পাঁচ লাখ ৬৫ হাজার টাকার ত্রাণ মজুদ রয়েছে। প্রয়োজন অনুসারে ওই মজুদ থেকে বিতরণের জন্য বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়নে বরাদ্দ প্রদান করা হবে।
গাইবান্ধায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের তুলনায় এবার ত্রাণের বরাদ্দ একেবারে কম। ত্রাণ মন্ত্রণালয় এ পর্যন্ত ২০০ মেট্রিক টন চাল এবং ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এ নিয়ে বানভাসি মানুষের মধ্যে কিছুটা হতাশা রয়েছে বলে জনপ্রতিনিধিরা জানান। ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে ট্যাগ অফিসারের উপস্থিতিতে ত্রাণ বিতরণ করার কথা থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই আওয়ামী লীগ নেতাদের হস্তক্ষেপ করতে দেখা যাচ্ছে। তাঁরা ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে তাঁদের নিজস্ব পছন্দের লোকদের প্রাধান্য দিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
দিনাজপুরের বন্যাকবলিত ছয় লক্ষাধিক মানুষ। পাঁচ দিন ধরে বানের পানিতে ভাসা ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য পাওয়া গেছে প্রায় ১৬ লাখ টাকা, সঙ্গে ৪০০ মেট্রিক টন চালসহ দুই হাজার প্যাকেটজাত খাবার। প্রাপ্ত তথ্য মতে, মৃত ২৩ জনের পরিবারের হাতে দাফন-কাফনে একটি টাকাও তুলে দিতে পারেনি দিনাজপুরের জেলা প্রশাসন। বন্যাকবলিতদের জন্য বরাদ্দের ওই তথ্য গতকাল উপস্থাপন করা হয়েছে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায়।
জামালপুর জেলার ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, সরিষাবাড়ী, মেলান্দহ ও মাদারগঞ্জের পাঁচ লক্ষাধিক বন্যার্তের মাঝে ত্রাণের জন্য হাহাকার চলছে। ইসলামপুরের সাতটি ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৪৮ হাজার পরিবারের এক লাখ ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। এসব পানিবন্দি মানুষের মাঝে ২৭ মেট্রিক টন চাল ও ৬০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ইসলামপুরের ১৮টি পয়েন্টে খিচুড়ি রান্না করে বন্যার্তদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, জেলার পাঁচ উপজেলার ৩৫টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভার এক লাখ দুই হাজার ৭৫০টি পরিবার বন্যাকবলিত। এসব মানুষের মাঝে বিতরণের জন্য প্রতিটি উপজেলা ও পৌরসভাকে এ পর্যন্ত ২৪২ মেট্রিক টন চাল, আট লাখ ৯৫ হাজার নগদ টাকা ও এক হাজার ৭০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়। নওগাঁ জেলার প্রশাসক ড. মো. আমিনুর রহমান জানিয়েছেন, জেলায় খাদ্য মজুদ আছে সাড়ে ৭৪ মেট্রিক টন এবং নগদ টাকা মজুদ আছে চার লাখ ৪৮ হাজার টাকা। প্রয়োজনীয় চাহিদা সরকারের কাছে দাখিল করা হয়েছে। তাত্ক্ষণিকভাবে উপদ্রুতদের মধ্যে ৩৩ মেট্রিক টন চাল এবং ৫২ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
ত্রাণের জন্য হাহাকার : রংপুরের বদরগঞ্জে আশ্রয়কেন্দ্রে বন্যাকবলিতদের কেউ খোঁজ নিচ্ছে না বলে দাবি করেছে দুর্গতরা। ফলে গতকাল উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের হিন্দুপাড়ার দুই শতাধিক নারী-পুরুষ ত্রাণের জন্য বিক্ষোভ মিছিল করেছে। তারা ইউএনওর কাছে মৌখিক অভিযোগ করে পৌর শহরের প্রধান সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেছে।
নীলফামারী সানারায় ইউনিয়নের জয়চণ্ডী মাঝাপাড়া গ্রামের মনিজা বেগম (৪৫)। তিনি বলছিলেন, ‘তিন দিন বাড়ি ছাড়িয়া বাবুর হাটের স্কুলোত (সোনারায় সংগলশি স্কুল ও কলেজ) থাকিনো। ওমরা হামাক একেনা চিড়া, মুড়ি, কিছিরি (খিচুড়ি) খাওয়াইল। পেটভরি খাবার নাপায়া ছাওয়ালা ভাতের বাদে নেলাইল (ব্যস্ত হওয়া), ভাত পাইনো না। এলা বাড়িত আসিনো, তাহো ভাতের একেনা চাউল ইলিপ পানোনা না বাহে। ’
রৌমারীর ব্রহ্মপুত্র নদ বিচ্ছিন্ন শিখারপুর স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন গৃহবধূ দীপালি। তিনি বলছিলেন, ‘চার দিন থিকা স্কুলে আশ্রয় নিয়া আছি। আমরা খাইলাম কি না, ঘরে খাওন আছে কি না। কেউ খোঁজ নিল না। পাঁচ সন্তান নিয়া বড় বিপদে আছি। মাইনসের কাছে হুনি সরকার বানভাসিদের নানান রকম ত্রাণ দিচ্ছে। খাওন দিচ্ছে। আমগর ঘরবাড়িও তো ডুইবা গেছে। বাড়ি ছাইড়া আছি। কামাই রোজগার বন্ধ। সরকার তো আমগর সাহায্য দিল না, দেখপারও আইল না কেউ। ’
শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরি এলাকার কৃষক মিজান। তিনি বলেন, ‘বন্যার পানি বাড়িতে উঠার কারণে উচ্চু বাঁধে আশ্রয় নিয়েছি আজ চার দিন ধরে। এখন পর্যন্ত আমাদের দেখতে কোনো চেয়ারম্যান বা মেম্বারও আসেনি ত্রাণ তো দূরের কথা। ’
বদরগঞ্জ পৌর শহরের ভাটিয়াপাড়া গ্রামের বানভাসি মিছিরন নেছা (৫০)। তিনি বলেন, ‘শনিবার থাকি ঘরবাড়ি ছাড়ি পড়ি আছি। কায়ো খবর নেওচে না। নদীর পানি খালি বাড়োচে। কপালোত কী হইবে আল্লায় জানে। ’ হেলেনা বেগম (৬৫) বলেন, ‘বাহে গত সমবার অ্যাটে কোনা আলচি। কায়ো হামার পাকে তাকাওচেনা। ’
বন্যা কোথাও অপরিবর্তিত কোথাও অবনতি : রংপুরের বদরগঞ্জে পৃথক দুটি ঘটনায় বানের পানিতে ডুবে হৃদয় বাবু (১২) ও দুলাল মিয়া নামের (৪৫) এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। গতকাল সকালের দিকে উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের বুজরুকবাগবাড় এলাকায় বানের পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে মারা যান দুলাল মিয়া। এদিকে উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের নাগেরহাট গাছুয়াপাড়া এলাকায় বানের পানি দেখতে গিয়ে অসাবধানবশত পানিতে পড়ে মারা যান হৃদয় বাবু। জামালপুরের মেলান্দহে বন্যার পানিতে ডুবে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলো নলবাড়িয়া গ্রামের সজীব মিয়া (১৪) এবং নাগেরপাড় গ্রামের জিল্লুর রহমান (১৪)। কুলিয়া গ্রামের কমল সেখ (২১) মাহমুদপুর ইউনিয়নের আটাবাড়ী গ্রামের আজিবর মোল্লা (৩২)। মেলান্দহ থানার ওসি মাজহারুল করিম ঘটনাগুলোর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। এ নিয়ে গত পাঁচ দিনে বন্যায় শিশু ও নারীসহ ৪২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেল।
নওগাঁয় ১১টি উপজেলার মধ্যে আটটি উপজেলার মানুষ এখন বন্যাকবলিত। জেলার ছয়টি নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপৎসীমার ওপর দিয়ে এখনো প্রবাহিত হচ্ছে। জয়পুরহাটে বন্যার পানি আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। জেলার তুলসীগঙ্গা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বেশ কয়েকটি জায়গায় ফাটল দেখা দেওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে পুরো বাঁধ। সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীতে পানি দিনদিন বেড়েই চলেছে। পাঁচটি উপজেলার পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষ এখন দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে। জেলার অভ্যন্তরীণ করতোয়া, গুমানী, হুরাসাগর, ফুলজোড় নদীর পানিও বৃদ্ধি পেয়েছে। কুড়িগ্রামে পানি সামান্য কমতে শুরু করেছে। তবে এখনো ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গাইবান্ধায় কোনো কোনো নদীর পানি সামান্য কমলেও সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে।
স্বাস্থ্য বিভাগীয় ছুটি বাতিল : দেশে বন্যায় ১ জুলাই থেকে গতকাল বুধবার পর্যন্ত মারা গেছে ১০৭ জন। বন্যাকবলিত এলাকার স্বাস্থ্য বিভাগীয় ছুটি বাতিল করা হয়েছে। মাঠে নামানো হয়েছে এক হাজার ৮২৪টি মেডিক্যাল টিম। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ গতকাল বুধবার বিকেলে নিজ দপ্তরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।
মহাপরিচালক বলেন, বন্যাকবলিত এলাকায় পর্যাপ্ত ওষুধ, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, খাবার স্যালাইন ও আইভি ফ্লুইডসহ সরবরাহ আছে। বন্যাকবিলত এলাকার সর্বস্তরের স্বাস্থ্য বিভাগীয় কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিজ নিজ স্থানে অবস্থান করে দুর্যোগ মোকাবেলায় কাজ করতে হবে।