ঢাকা ০৮:৪৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ১০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নির্বাচনকালীন সরকারের নতুন দুটি ফর্মুলা দিয়েছে হাইকোর্ট

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৪৬:১৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ অগাস্ট ২০১৫
  • ৩২০ বার

আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর অধীনে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনসহ নতুন দুটি ফর্মুলা দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ।

দশম সংসদে অর্ধেকের বেশি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের বৈধতার বিষয়ে এক মামলায় আদালত একটি পর্যবেক্ষণে এই ফর্মুলা দেয়।

এতে নির্বাচনকালে প্রধানমন্ত্রীসহ যেকোনো মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত নাকচ করার ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনকে দেওয়ার পক্ষেও যুক্তি দিয়েছে আদালত।
?

এক্ষেত্রে প্রথম ফর্মুলায় বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হবেন প্রধানমন্ত্রী। নতুন ৫০ জন মন্ত্রী নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভা গঠন করবেন। সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা দলগুলো থেকে ভোটের হারের অনুপাতে মন্ত্রী নেয়া হবে।

আর দ্বিতীয় ফর্মুলায় রাষ্ট্রক্ষমতা ভাগাভাগির তত্ত্ব দেয়া হয়েছে। এতে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল প্রথম চার বছর ক্ষমতায় থাকবে। আর সংসদের প্রধান বিরোধী দল সর্বশেষ এক বছর ক্ষমতায় থাকবে।

প্রথম ফর্মুলার জন্য সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হবে না। তবে দ্বিতীয় ফর্মুলার জন্য সংবিধান সংশোধন করতে হবে।

২০১৩ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনে ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে দুটি পৃথক রিট হয়েছিল।

২০১৪ সালের ১৯ জুন ওই দুটি রিট খারিজ করে দেন বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বেঞ্চ।

সম্প্রতি তার পূর্ণাঙ্গ রায় বেরিয়েছে। এই মামলায় অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে ছিলেন- জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, মাহমুদুল ইসলাম, রোকন উদ্দিন মাহমুদ ও বদিউল আলম মজুমদার।

‘খন্দকার আবদুস সালাম বনাম বাংলাদেশ’ এবং ‘শাহরিয়ার মজিদ বনাম বাংলাদেশ’ শীর্ষক দুটি রিট নিষ্পত্তি করে আগামী নির্বাচন কীভাবে হতে পারে সে বিষয়ে পর্যবেক্ষণ প্রদানকে হাইকোর্ট তাদের ভাষায় ‘অন্তর্গতভাবে প্রাসঙ্গিক’ বিবেচনা করেছে।

তবে হাইকোর্ট একই সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে জটিলতা নিরসনে বিভিন্ন সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে।

এক পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলেছে, নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়ে অসীম বিরোধ সমাধানে কোনো ফর্মুলাই জাতির উপকারে আসবে না যতদিন না/যদি না রাজনৈতিক দলগুলো সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থা গড়ে তুলতে আন্তরিক ও ঐকান্তিক হয়।

২০১১ সালে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। এর ফলে গত বছর ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচন বয়কট করে বিএনপিসহ বেশিরভাগ দল।

ওই নির্বাচনে ১৫৩ জন এমপি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনের বিধানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে জাতীয় পার্টির নেতা খোন্দকার আবদুস সালাম হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন দায়ের করেন।

চূড়ান্ত শুনানি শেষে আদালত রিট আবেদনটি খারিজ করে দেয়। ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত এমপিদের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো সুযোগ নেই বলেও অভিমত দেয় আদালত।

ফর্মুলা-১: হাইকোর্টের দেয়া প্রথম ফর্মুলা মোতাবেক, ৫০ জন নতুন মন্ত্রী নিয়ে ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একাদশ সংসদ নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা গঠিত হবে। সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিন আগে অথবা সংসদ ভেঙে যাওয়ার পরে এ মন্ত্রিসভা গঠন করা হবে।

বর্তমান সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলের এমপিরা মন্ত্রী হবেন। রাজনৈতিক দলের মন্ত্রী থাকার অনুপাত নির্ধারণ করা হবে দশম জাতীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো কত শতাংশ ভোট পেয়েছে তার উপর ভিত্তি করে।

তবে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য সংবিধানের ৫৬(২) অনুচ্ছেদ অনুসারে ৫ জন টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী দশম সংসদ নির্বাচন বয়কটকারী দলগুলো থেকে নেয়া যেতে পারে। হাইকোর্ট গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়, যেমন: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ, আইন, পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বণ্টন নিয়েও কথা বলেছেন।

বিতর্ক এড়াতে লটারির মাধ্যমে এ মন্ত্রণালয়গুলো বণ্টনের প্রস্তাব দিয়েছে হাইকোর্ট। একাদশ সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি দ্বাদশ এবং এরপরের নির্বাচনগুলোও এ ফর্মুলায় হতে পারে।

ফর্মুলা-২: হাইকোর্টের দ্বিতীয় ফর্মুলায় মূলত উঠে এসেছে সরকারি দল ও বিরোধী দলের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন নিয়ে। এ ফর্মুলা মোতাবেক, সংখ্যাগরিষ্ঠ দল প্রথম চার বছর দেশ শাসন করবে। এরপরের এক বছরের জন্য দেশের ক্ষমতা যাবে প্রধান বিরোধী দলের হাতে।

তবে প্রধান বিরোধী দলকে দেশ পরিচালনার ভার দেয়া যাবে শুধু যদি দলটি সর্বশেষ নির্বাচনে বিজয়ী দলের চেয়ে কমপক্ষে অর্ধেক ভোট পেয়ে থাকে। এরপর প্রথম ফর্মুলা অনুযায়ী সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতার নেতৃত্বে গঠিত হবে অন্তর্বর্তীকালীন মন্ত্রিসভা। আর যদি প্রধান বিরোধী দল ক্ষমতাসীন দলের অর্ধেক ভোটও না পেয়ে থাকে, তবে ৫ বছরই দেশ চালাবে ক্ষমতাসীন দল।

হাইকোর্ট আরো বলেন, দ্বিতীয় ফর্মুলা বাস্তবায়নের জন্য সংবিধান সংশোধন করতে হবে। তবে প্রথম ফর্মুলার জন্য সংশোধনের প্রয়োজন হবে না।

উপরের দুটি ফর্মুলা ছাড়াও হাইকোর্ট আরো কিছু প্রস্তাব রেখেছে। হাইকোর্ট বলেন, একটি মুক্ত, ন্যায্য ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান আয়োজন রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক দায়িত্ব। হোক সেটা সংসদের ৫ বছরের মেয়াদ পূরণ হওয়ার আগে বা পরে।

অনেক সাংবিধানিক কার্যাবলির মধ্যে, যেমনটি আমাদের সংবিধানের বিভিন্ন অনুচ্ছেদে লেখা আছে, জাতীয় নির্বাচন ব্যতীত কেউই গণতন্ত্র বা আইনের শাসন পরিচালনা ধারণ করতে পারে না।

তাই, দেশের সব রাজনৈতিক দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো, নির্বাচনের পূর্বে একটি নির্বাচন-বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করা ও নির্বাচন শেষ হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখা এবং একইভাবে নির্বাচন কমিশনকে তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেয়া। এজন্য সকল রাজনৈতিক দলকে রাস্তায় আন্দোলন বা সহিংস রাজনৈতিক পন্থা অবলম্বন থেকে বিরত থাকতে হবে।

নিজেদের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট আরো বলেছেন, উপরের ফর্মুলাগুলো হয়তো বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর চর্চিত আক্রমণাত্মক রাজনীতি থেকে বেরিয়ে এসে গণতন্ত্রের পথে অগ্রসর হওয়ার উপায়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

নির্বাচনকালীন সরকারের নতুন দুটি ফর্মুলা দিয়েছে হাইকোর্ট

আপডেট টাইম : ১১:৪৬:১৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ অগাস্ট ২০১৫

আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর অধীনে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনসহ নতুন দুটি ফর্মুলা দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ।

দশম সংসদে অর্ধেকের বেশি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের বৈধতার বিষয়ে এক মামলায় আদালত একটি পর্যবেক্ষণে এই ফর্মুলা দেয়।

এতে নির্বাচনকালে প্রধানমন্ত্রীসহ যেকোনো মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত নাকচ করার ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনকে দেওয়ার পক্ষেও যুক্তি দিয়েছে আদালত।
?

এক্ষেত্রে প্রথম ফর্মুলায় বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হবেন প্রধানমন্ত্রী। নতুন ৫০ জন মন্ত্রী নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভা গঠন করবেন। সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা দলগুলো থেকে ভোটের হারের অনুপাতে মন্ত্রী নেয়া হবে।

আর দ্বিতীয় ফর্মুলায় রাষ্ট্রক্ষমতা ভাগাভাগির তত্ত্ব দেয়া হয়েছে। এতে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল প্রথম চার বছর ক্ষমতায় থাকবে। আর সংসদের প্রধান বিরোধী দল সর্বশেষ এক বছর ক্ষমতায় থাকবে।

প্রথম ফর্মুলার জন্য সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হবে না। তবে দ্বিতীয় ফর্মুলার জন্য সংবিধান সংশোধন করতে হবে।

২০১৩ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনে ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে দুটি পৃথক রিট হয়েছিল।

২০১৪ সালের ১৯ জুন ওই দুটি রিট খারিজ করে দেন বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বেঞ্চ।

সম্প্রতি তার পূর্ণাঙ্গ রায় বেরিয়েছে। এই মামলায় অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে ছিলেন- জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, মাহমুদুল ইসলাম, রোকন উদ্দিন মাহমুদ ও বদিউল আলম মজুমদার।

‘খন্দকার আবদুস সালাম বনাম বাংলাদেশ’ এবং ‘শাহরিয়ার মজিদ বনাম বাংলাদেশ’ শীর্ষক দুটি রিট নিষ্পত্তি করে আগামী নির্বাচন কীভাবে হতে পারে সে বিষয়ে পর্যবেক্ষণ প্রদানকে হাইকোর্ট তাদের ভাষায় ‘অন্তর্গতভাবে প্রাসঙ্গিক’ বিবেচনা করেছে।

তবে হাইকোর্ট একই সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে জটিলতা নিরসনে বিভিন্ন সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে।

এক পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলেছে, নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়ে অসীম বিরোধ সমাধানে কোনো ফর্মুলাই জাতির উপকারে আসবে না যতদিন না/যদি না রাজনৈতিক দলগুলো সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ সংস্থা গড়ে তুলতে আন্তরিক ও ঐকান্তিক হয়।

২০১১ সালে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। এর ফলে গত বছর ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচন বয়কট করে বিএনপিসহ বেশিরভাগ দল।

ওই নির্বাচনে ১৫৩ জন এমপি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনের বিধানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে জাতীয় পার্টির নেতা খোন্দকার আবদুস সালাম হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন দায়ের করেন।

চূড়ান্ত শুনানি শেষে আদালত রিট আবেদনটি খারিজ করে দেয়। ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত এমপিদের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো সুযোগ নেই বলেও অভিমত দেয় আদালত।

ফর্মুলা-১: হাইকোর্টের দেয়া প্রথম ফর্মুলা মোতাবেক, ৫০ জন নতুন মন্ত্রী নিয়ে ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একাদশ সংসদ নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা গঠিত হবে। সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিন আগে অথবা সংসদ ভেঙে যাওয়ার পরে এ মন্ত্রিসভা গঠন করা হবে।

বর্তমান সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলের এমপিরা মন্ত্রী হবেন। রাজনৈতিক দলের মন্ত্রী থাকার অনুপাত নির্ধারণ করা হবে দশম জাতীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো কত শতাংশ ভোট পেয়েছে তার উপর ভিত্তি করে।

তবে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য সংবিধানের ৫৬(২) অনুচ্ছেদ অনুসারে ৫ জন টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী দশম সংসদ নির্বাচন বয়কটকারী দলগুলো থেকে নেয়া যেতে পারে। হাইকোর্ট গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়, যেমন: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ, আইন, পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বণ্টন নিয়েও কথা বলেছেন।

বিতর্ক এড়াতে লটারির মাধ্যমে এ মন্ত্রণালয়গুলো বণ্টনের প্রস্তাব দিয়েছে হাইকোর্ট। একাদশ সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি দ্বাদশ এবং এরপরের নির্বাচনগুলোও এ ফর্মুলায় হতে পারে।

ফর্মুলা-২: হাইকোর্টের দ্বিতীয় ফর্মুলায় মূলত উঠে এসেছে সরকারি দল ও বিরোধী দলের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন নিয়ে। এ ফর্মুলা মোতাবেক, সংখ্যাগরিষ্ঠ দল প্রথম চার বছর দেশ শাসন করবে। এরপরের এক বছরের জন্য দেশের ক্ষমতা যাবে প্রধান বিরোধী দলের হাতে।

তবে প্রধান বিরোধী দলকে দেশ পরিচালনার ভার দেয়া যাবে শুধু যদি দলটি সর্বশেষ নির্বাচনে বিজয়ী দলের চেয়ে কমপক্ষে অর্ধেক ভোট পেয়ে থাকে। এরপর প্রথম ফর্মুলা অনুযায়ী সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতার নেতৃত্বে গঠিত হবে অন্তর্বর্তীকালীন মন্ত্রিসভা। আর যদি প্রধান বিরোধী দল ক্ষমতাসীন দলের অর্ধেক ভোটও না পেয়ে থাকে, তবে ৫ বছরই দেশ চালাবে ক্ষমতাসীন দল।

হাইকোর্ট আরো বলেন, দ্বিতীয় ফর্মুলা বাস্তবায়নের জন্য সংবিধান সংশোধন করতে হবে। তবে প্রথম ফর্মুলার জন্য সংশোধনের প্রয়োজন হবে না।

উপরের দুটি ফর্মুলা ছাড়াও হাইকোর্ট আরো কিছু প্রস্তাব রেখেছে। হাইকোর্ট বলেন, একটি মুক্ত, ন্যায্য ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান আয়োজন রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক দায়িত্ব। হোক সেটা সংসদের ৫ বছরের মেয়াদ পূরণ হওয়ার আগে বা পরে।

অনেক সাংবিধানিক কার্যাবলির মধ্যে, যেমনটি আমাদের সংবিধানের বিভিন্ন অনুচ্ছেদে লেখা আছে, জাতীয় নির্বাচন ব্যতীত কেউই গণতন্ত্র বা আইনের শাসন পরিচালনা ধারণ করতে পারে না।

তাই, দেশের সব রাজনৈতিক দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো, নির্বাচনের পূর্বে একটি নির্বাচন-বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করা ও নির্বাচন শেষ হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখা এবং একইভাবে নির্বাচন কমিশনকে তাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেয়া। এজন্য সকল রাজনৈতিক দলকে রাস্তায় আন্দোলন বা সহিংস রাজনৈতিক পন্থা অবলম্বন থেকে বিরত থাকতে হবে।

নিজেদের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট আরো বলেছেন, উপরের ফর্মুলাগুলো হয়তো বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর চর্চিত আক্রমণাত্মক রাজনীতি থেকে বেরিয়ে এসে গণতন্ত্রের পথে অগ্রসর হওয়ার উপায়।