ঢাকা ১১:৪০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হিজড়া বানিয়ে ব্যবসা করে কোটিপতি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:১৫:২৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ অগাস্ট ২০১৫
  • ৩৯৮ বার

সাভার, ১০ আগষ্ট- সাভারের আশুলিয়ায় জোর করে অনেক পুরুষকে হিজড়া সাজিয়ে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র। প্রকাশ্যে এমন ব্যবসা করা হলেও প্রশাসন অনেকটা নীরব ভূমিকা পালন করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে হত-দরিদ্র পরিবারের পুরুষদের কাজ দেয়ার কথা বলে ঢাকায় নিয়ে আসে গাজীরচট এলাকার হিজড়াদের সরদার নয়নতারা ও রাশেদা। এরপর তাদের নারী হিজড়ার পোশাক পরিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে টাকা আদায় করতে বাধ্য করা হয়। এজন্য প্রতিদিনের আয়ের তিন ভাগের দুই ভাগ সরদারদের দিতে হয় বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন হিজড়া জানান।

এভাবে ছয় মাস পার হলে অপারেশনের মাধ্যমে তাদের পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলা হয়। এমনকি এই পেশা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাদের প্রাণনাশের হুমকি দেয়া বলে অভিযোগ করেন চাকরির খোঁজে আসা এসব লোকজন।

সোমবার সকালে আশুলিয়ার দক্ষিণ গাজীরচটের রশিদ মার্কেট এলাকায় এ ধরনের একটি চক্রের তিন পুরুষকে হিজড়া সেজে চাঁদাবাজিকালে আটক করে গণপিটুনি দিলে তারা এসব তথ্য দেয়। পরে নয়নতারা নামে ওই হিজড়া সরদারের হস্তক্ষেপে তাদের পুলিশে না দিয়ে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় এলাকাবাসী।
আটক ভুয়া হিজড়ারা হলেন- আতিকুল রহমান (৩০) ওরফে সাজেদা, মমিন উদ্দিন (২৬) ওরফে মাহি এবং মো. অন্তর (২১) ওরফে অন্তরা।

ভুয়া হিজড়া মমিন উদ্দিন ওরফে সাজেদা জানান, ‘সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থেকে কাজের সন্ধানে তিনি আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকার কাঁচাবাজারের আড়তে আসেন। এরপর থেকেই নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে হিজড়া সর্দার নয়নতারা তাকে এই পেশায় আসতে বাধ্য করেন।’

আটক অপর এক ভুয়া হিজড়া আতিকুল রহমান ওরফে সাজেদা জানান, ‘দেশের বাড়িতে তার এক ছেলে ও মেয়ে রয়েছে। শুধু কথাবার্তায় মেয়েলি ভাব থাকায় সংসারে অভাব-অনটনের সুযোগে তাকে কাজ দেবে বলে এখানে এনেছে আরেক সরদার রাশেদা হিজড়া। এরপর তাকে জোর করে এই কাজে নামিয়েছে। যেন পালিয়ে যেতে না পারি সেজন্য সরদাররা একজনকে তাদের সঙ্গে সবসময় পাহারার জন্য বাইরে পাঠায়। ইচ্ছে থাকলেও এখন তিনি বাড়ি যেতে পারছেন না বলে জানান।’

আট বছর আগে এই কাজে যোগ দিয়েছিলেন বগুড়া থেকে আসা অন্তরা। মো. অন্তর (আগের নাম) জানান, যৌন অক্ষমতার কারণে তাকে জোর করে এখানে নিয়ে এসেছে হিজড়া সরদার নয়নতারা। পরে উত্তরার একটি ক্লিনিক থেকে অপারেশনের মাধ্যমে তার পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলা হয়। এরপর থেকেই শুরু হয় তার হিজড়া জীবন। তবে মানুষকে হয়রানি করে এভাবে টাকা নিতে আর তার ভালো লাগেনা বলে জানান।

স্থানীয় মো. কাজল নামে (২৮) এক হিজড়া জানান, গাজীরচটের বটতলা এলাকার হিজড়াদের সরদার নয়নতারা নিজেও অনেক দিন আগে নিজের পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলে এই পেশায় ঢুকেছেন। তাছাড়া সরকার হিজড়াদের ট্রাফিক পুলিশের চাকরি দেবে এমন কথায় নিজের ব্যবসা নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে এভাবে অসহায় পুরুষদের দারিদ্রতার সুযোগ নিচ্ছে সরদার। তার দলে মোটামুটি শতাধিক হিজড়া রয়েছে। তাদের তোলা চাঁদার টাকায় নয়নতারা ইতোমধ্যে নিজ এলাকায় একটি পাঁচ তলা ভবনের মালিক হয়েছেন বলেও জানায় কাজল।

তবে এসব অভিযোগের ব্যাপারে হিজড়া সরদার নয়নতারার সঙ্গে যোগযোগ করা হলে তিনি বলেন, এমন ঘটনার সঙ্গে তিনি জড়িত নন।

জানতে চাইলে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তফা কামাল জানান, এমন কোনো ঘটনা তার জানা নাই। তবে কেউ এ ব্যাপারে অভিযোগ করলে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দিন দিন হিজড়াদের চাঁদাবাজি, চুরি ও টাকার জন্য নবজাতক শিশু ছিনিয়ে নেয়ার মত ঘটনায় অতিষ্ট হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী। এসব চাঁদাবাজ হিজড়াদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করলে হয়রানি বাড়ার আশঙ্কা থাকায় আতঙ্ক নিয়েই দিন পার করছেন এলাকার বাসিন্দারা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

হিজড়া বানিয়ে ব্যবসা করে কোটিপতি

আপডেট টাইম : ১২:১৫:২৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ অগাস্ট ২০১৫

সাভার, ১০ আগষ্ট- সাভারের আশুলিয়ায় জোর করে অনেক পুরুষকে হিজড়া সাজিয়ে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র। প্রকাশ্যে এমন ব্যবসা করা হলেও প্রশাসন অনেকটা নীরব ভূমিকা পালন করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে হত-দরিদ্র পরিবারের পুরুষদের কাজ দেয়ার কথা বলে ঢাকায় নিয়ে আসে গাজীরচট এলাকার হিজড়াদের সরদার নয়নতারা ও রাশেদা। এরপর তাদের নারী হিজড়ার পোশাক পরিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে টাকা আদায় করতে বাধ্য করা হয়। এজন্য প্রতিদিনের আয়ের তিন ভাগের দুই ভাগ সরদারদের দিতে হয় বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন হিজড়া জানান।

এভাবে ছয় মাস পার হলে অপারেশনের মাধ্যমে তাদের পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলা হয়। এমনকি এই পেশা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাদের প্রাণনাশের হুমকি দেয়া বলে অভিযোগ করেন চাকরির খোঁজে আসা এসব লোকজন।

সোমবার সকালে আশুলিয়ার দক্ষিণ গাজীরচটের রশিদ মার্কেট এলাকায় এ ধরনের একটি চক্রের তিন পুরুষকে হিজড়া সেজে চাঁদাবাজিকালে আটক করে গণপিটুনি দিলে তারা এসব তথ্য দেয়। পরে নয়নতারা নামে ওই হিজড়া সরদারের হস্তক্ষেপে তাদের পুলিশে না দিয়ে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় এলাকাবাসী।
আটক ভুয়া হিজড়ারা হলেন- আতিকুল রহমান (৩০) ওরফে সাজেদা, মমিন উদ্দিন (২৬) ওরফে মাহি এবং মো. অন্তর (২১) ওরফে অন্তরা।

ভুয়া হিজড়া মমিন উদ্দিন ওরফে সাজেদা জানান, ‘সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থেকে কাজের সন্ধানে তিনি আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকার কাঁচাবাজারের আড়তে আসেন। এরপর থেকেই নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে হিজড়া সর্দার নয়নতারা তাকে এই পেশায় আসতে বাধ্য করেন।’

আটক অপর এক ভুয়া হিজড়া আতিকুল রহমান ওরফে সাজেদা জানান, ‘দেশের বাড়িতে তার এক ছেলে ও মেয়ে রয়েছে। শুধু কথাবার্তায় মেয়েলি ভাব থাকায় সংসারে অভাব-অনটনের সুযোগে তাকে কাজ দেবে বলে এখানে এনেছে আরেক সরদার রাশেদা হিজড়া। এরপর তাকে জোর করে এই কাজে নামিয়েছে। যেন পালিয়ে যেতে না পারি সেজন্য সরদাররা একজনকে তাদের সঙ্গে সবসময় পাহারার জন্য বাইরে পাঠায়। ইচ্ছে থাকলেও এখন তিনি বাড়ি যেতে পারছেন না বলে জানান।’

আট বছর আগে এই কাজে যোগ দিয়েছিলেন বগুড়া থেকে আসা অন্তরা। মো. অন্তর (আগের নাম) জানান, যৌন অক্ষমতার কারণে তাকে জোর করে এখানে নিয়ে এসেছে হিজড়া সরদার নয়নতারা। পরে উত্তরার একটি ক্লিনিক থেকে অপারেশনের মাধ্যমে তার পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলা হয়। এরপর থেকেই শুরু হয় তার হিজড়া জীবন। তবে মানুষকে হয়রানি করে এভাবে টাকা নিতে আর তার ভালো লাগেনা বলে জানান।

স্থানীয় মো. কাজল নামে (২৮) এক হিজড়া জানান, গাজীরচটের বটতলা এলাকার হিজড়াদের সরদার নয়নতারা নিজেও অনেক দিন আগে নিজের পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলে এই পেশায় ঢুকেছেন। তাছাড়া সরকার হিজড়াদের ট্রাফিক পুলিশের চাকরি দেবে এমন কথায় নিজের ব্যবসা নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে এভাবে অসহায় পুরুষদের দারিদ্রতার সুযোগ নিচ্ছে সরদার। তার দলে মোটামুটি শতাধিক হিজড়া রয়েছে। তাদের তোলা চাঁদার টাকায় নয়নতারা ইতোমধ্যে নিজ এলাকায় একটি পাঁচ তলা ভবনের মালিক হয়েছেন বলেও জানায় কাজল।

তবে এসব অভিযোগের ব্যাপারে হিজড়া সরদার নয়নতারার সঙ্গে যোগযোগ করা হলে তিনি বলেন, এমন ঘটনার সঙ্গে তিনি জড়িত নন।

জানতে চাইলে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তফা কামাল জানান, এমন কোনো ঘটনা তার জানা নাই। তবে কেউ এ ব্যাপারে অভিযোগ করলে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দিন দিন হিজড়াদের চাঁদাবাজি, চুরি ও টাকার জন্য নবজাতক শিশু ছিনিয়ে নেয়ার মত ঘটনায় অতিষ্ট হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী। এসব চাঁদাবাজ হিজড়াদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করলে হয়রানি বাড়ার আশঙ্কা থাকায় আতঙ্ক নিয়েই দিন পার করছেন এলাকার বাসিন্দারা।