ঢাকা ০৫:৪৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মরিচের ঝালে কৃষকের হাসি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:৪৭:২৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ অগাস্ট ২০১৭
  • ৬৫২ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ১০-১২ দিন আগে প্রতিমণ কাঁচা মরিচ বিক্রি হতো দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত। গত দুইদিন ধরে তা বিক্রি হচ্ছে ৩ থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা প্রতিমণ। কাঁচা মরিচের দামের ঝাল বেড়ে যাওয়ায় লালমনিরহাটের কৃষকরা বেশ খুশি। এবার মরিচের ভালো ফলন হওয়ায় কৃষকরাও লাভবান। গত দুই বছরের ক্ষতি তারা এবার পুষিয়ে নিয়েছে।

লালমনিরহাটের মরিচ ও সবজি এলাকা বলে খ্যাত আদিতমারী উপজেলার বড় কমলাবাড়ি গ্রাম। এ গ্রামে মাঠের পর মাঠ মরিচ আর সবজি ক্ষেত। গত দুই বছর টানা বৃষ্টির কারণে অকালে গাছ মরে যাওয়ায় মরিচে কিছুটা লোকসান গুনতে হলেও এ বছর লোকসান পুষিয়ে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা।

বড় কমলাবাড়ি গ্রামের মরিচ চাষি হেকমত আলী জানান, গত বছর ৭০ শতাংশ জমিতে মরিচ চাষ করেছিলাম। কিন্ত ঘন বৃষ্টিতে গাছ মরে যাওয়ায় তেমন লাভবান হননি। এ বছর ১০ হাজার টাকা খরচে মাত্র ৩০ শতাংশ জমিতে মরিচ চাষ করে এ পর্যন্ত ২৫ হাজার টাকা পেয়েছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ১০ দিন পর পর ৪/৫ মণ করে আরো এক মাস মরিচ তুলতে পারবেন তিনি। ওই জমি থেকেই আরো ৫০ হাজার টাকার মরিচ বিক্রির আশা তার।

বড় কমলাবাড়ি পশ্চিম পাড়ার চাষি আব্দুর রহিম জানান, চৈত্রি মাসের মাঝামাঝি সময়ে পানি জমে না এমন জমিতে মরিচের চারা রোপণ করতে হয়। এরপর সার কীটনাশক ও পরিচর্যা করলে মরিচে লাভবান হওয়া যায়। জ্যেষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি থেকে শ্রাবন মাস পর্যন্ত ১০/১২ দিন পর পর মরিচ সংগ্রহ করা যায়। বৃষ্টি কম হলে ভাদ্র মাসেও মরিচ সংগ্রহ করা সম্ভব। এ বছর চাহিদা বেশি থাকায় বিক্রিতে যেন ঝামেলা নেই। অনুরূপভাবে মুনাফাও অনেক বেশি। এলাকার বেপারিরা ক্ষেত থেকে মরিচ কিনে সারাদেশে বিক্র করেন। এমন দাম থাকলে তার ৪০ শতাংশ জমি থেকে লক্ষাধিক টাকার মরিচ সংগ্রহ করার আশা করছেন তিনি।

মরিচ চাষকে কেন্দ্র করে দিনমজুর কৃষি শ্রমিকরাও বেশ খুশি। কারণ গাছ থেকে এক মণ মরিচ তুলে দিলে মজুরি মিলছে ২শত টাকা। এ কাজে বেশি সম্পৃক্ত হচ্ছেন নারীরা। তারা সংসারের কাজ শেষে বাড়তি আয়ের জন্য ছুটছেন মরিচ ক্ষেত।

মৌসুমি শ্রমিক জরিনা ও সাহারা বেগম জানান, সংসারের কাজ শেষ করেও প্রতিদিন এক থেকে দেড় মণ মরিচ তোলা যায়। এভাবে সংসারে বাড়তি আয় করছেন তারা।

মরিচের বেপারি রফিকুল ইসলাম জানান, সারাদিন ক্ষেত থেকে মরিচ কিনে ট্রাকে রাতে কুমিল্লা শহরে পাঠান। পারদিন সকালে মরিচ বিক্রি হলে ট্রাক চালকের মাধ্যমেই চলে আসে টাকা। কোন ঝামেলা ছাড়াই কয়েক বছর ধরে চলছে তার এ ব্যবসা।

মূলত এ মরিচ চাষের মাধ্যমে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি আয় বেড়েছে এ জনপদের। মরিচ আর সবজি চাষে ভাগ্যের পরিবর্তন করেছেন অনেকেই। কাঁচা মরিচের ঝাল বাড়ায় হাসি ফুটেছে চাষিদের মুখে।

আদিতমারী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার জানান, এ বছর উপজেলায় ১২০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। মরিচের বাজার ভালো থাকায় বেশ মুনাফা পাচ্ছে চাষিরা

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

মরিচের ঝালে কৃষকের হাসি

আপডেট টাইম : ০৪:৪৭:২৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ অগাস্ট ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ১০-১২ দিন আগে প্রতিমণ কাঁচা মরিচ বিক্রি হতো দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত। গত দুইদিন ধরে তা বিক্রি হচ্ছে ৩ থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা প্রতিমণ। কাঁচা মরিচের দামের ঝাল বেড়ে যাওয়ায় লালমনিরহাটের কৃষকরা বেশ খুশি। এবার মরিচের ভালো ফলন হওয়ায় কৃষকরাও লাভবান। গত দুই বছরের ক্ষতি তারা এবার পুষিয়ে নিয়েছে।

লালমনিরহাটের মরিচ ও সবজি এলাকা বলে খ্যাত আদিতমারী উপজেলার বড় কমলাবাড়ি গ্রাম। এ গ্রামে মাঠের পর মাঠ মরিচ আর সবজি ক্ষেত। গত দুই বছর টানা বৃষ্টির কারণে অকালে গাছ মরে যাওয়ায় মরিচে কিছুটা লোকসান গুনতে হলেও এ বছর লোকসান পুষিয়ে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা।

বড় কমলাবাড়ি গ্রামের মরিচ চাষি হেকমত আলী জানান, গত বছর ৭০ শতাংশ জমিতে মরিচ চাষ করেছিলাম। কিন্ত ঘন বৃষ্টিতে গাছ মরে যাওয়ায় তেমন লাভবান হননি। এ বছর ১০ হাজার টাকা খরচে মাত্র ৩০ শতাংশ জমিতে মরিচ চাষ করে এ পর্যন্ত ২৫ হাজার টাকা পেয়েছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ১০ দিন পর পর ৪/৫ মণ করে আরো এক মাস মরিচ তুলতে পারবেন তিনি। ওই জমি থেকেই আরো ৫০ হাজার টাকার মরিচ বিক্রির আশা তার।

বড় কমলাবাড়ি পশ্চিম পাড়ার চাষি আব্দুর রহিম জানান, চৈত্রি মাসের মাঝামাঝি সময়ে পানি জমে না এমন জমিতে মরিচের চারা রোপণ করতে হয়। এরপর সার কীটনাশক ও পরিচর্যা করলে মরিচে লাভবান হওয়া যায়। জ্যেষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি থেকে শ্রাবন মাস পর্যন্ত ১০/১২ দিন পর পর মরিচ সংগ্রহ করা যায়। বৃষ্টি কম হলে ভাদ্র মাসেও মরিচ সংগ্রহ করা সম্ভব। এ বছর চাহিদা বেশি থাকায় বিক্রিতে যেন ঝামেলা নেই। অনুরূপভাবে মুনাফাও অনেক বেশি। এলাকার বেপারিরা ক্ষেত থেকে মরিচ কিনে সারাদেশে বিক্র করেন। এমন দাম থাকলে তার ৪০ শতাংশ জমি থেকে লক্ষাধিক টাকার মরিচ সংগ্রহ করার আশা করছেন তিনি।

মরিচ চাষকে কেন্দ্র করে দিনমজুর কৃষি শ্রমিকরাও বেশ খুশি। কারণ গাছ থেকে এক মণ মরিচ তুলে দিলে মজুরি মিলছে ২শত টাকা। এ কাজে বেশি সম্পৃক্ত হচ্ছেন নারীরা। তারা সংসারের কাজ শেষে বাড়তি আয়ের জন্য ছুটছেন মরিচ ক্ষেত।

মৌসুমি শ্রমিক জরিনা ও সাহারা বেগম জানান, সংসারের কাজ শেষ করেও প্রতিদিন এক থেকে দেড় মণ মরিচ তোলা যায়। এভাবে সংসারে বাড়তি আয় করছেন তারা।

মরিচের বেপারি রফিকুল ইসলাম জানান, সারাদিন ক্ষেত থেকে মরিচ কিনে ট্রাকে রাতে কুমিল্লা শহরে পাঠান। পারদিন সকালে মরিচ বিক্রি হলে ট্রাক চালকের মাধ্যমেই চলে আসে টাকা। কোন ঝামেলা ছাড়াই কয়েক বছর ধরে চলছে তার এ ব্যবসা।

মূলত এ মরিচ চাষের মাধ্যমে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি আয় বেড়েছে এ জনপদের। মরিচ আর সবজি চাষে ভাগ্যের পরিবর্তন করেছেন অনেকেই। কাঁচা মরিচের ঝাল বাড়ায় হাসি ফুটেছে চাষিদের মুখে।

আদিতমারী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার জানান, এ বছর উপজেলায় ১২০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। মরিচের বাজার ভালো থাকায় বেশ মুনাফা পাচ্ছে চাষিরা