হাওর বার্তা ডেস্কঃ সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠা একধরনের হ্যাপা। তার ওপর রান্নাঘরে ঢুকে তেল-কালি মেখে খাবার বানানোর ঝামেলা তো থাকছেই। ব্যস্ত জীবনে এত সময় কোথায়? এসব করতে করতে দেরি হয় অফিস যেতে। বসের বকুনি সামলে বাড়ি ফিরে আবারও রান্নাঘরের ঝামেলা। উন্নত বিশ্বে তো আর বুয়া নেই। সবার শেফ রাখার সাধ্যও থাকে না। তাহলে সমাধান?
মহাকাশে অভিযান থেকে রান্নাঘর, জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠের দায়িত্বে আসছে রোবটের দল। এবার তাদের ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে রান্নাঘরেও। সে চেষ্টায় এসেছে বলার মতো সাফল্যও। জার্মানির হ্যানোভারে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক রোবোটিকস মেলা। দুই বছর আগে সেখানে রান্নাঘরের জন্য বিশেষভাবে বানানো রোবটের পরীক্ষামূলক প্রদর্শন করেন নির্মাতারা। কিছুদিনের মধ্যেই তা বাণিজ্যিকভাবে চলে আসছে বাজারে।
লন্ডনভিত্তিক মোলে রোবোটিকস নামের একটি প্রতিষ্ঠান ‘প্রোটোটাইপ’ এ রোবোট তৈরি করেছে, যার নাম ‘রোবো শেফ’। যন্ত্রটি বানানো হয়েছে মূলত রান্নার জন্য। রান্নার সময় মানুষের হাত পায়ের নড়াচড়া আর শিখে নেয় রোবটটি। ছবি তোলার মাধ্যমে মানুষের সেই নড়াচড়াকে ‘প্রোগ্রাম’ হিসেবে ধারণ করা হয় রোবটে। এরপর তা পরিণত হয় নির্দেশ বা কমান্ডে। সেই নির্দেশ মেনেই পরিচালিত হয় বিশেষভাবে বানানো রোবটের দুটি হাত।
খুব সহজ করে এভাবে বলা যায়: ধরুন একজন খুব ভালো মাংস ভুনা রাঁধেন। সেই রান্নার সময় তিনি কোন কাজটা কীভাবে করছেন, মাংস কুটছেন, ধুচ্ছেন, তেল-মসলা মেখে চুলোয় বসিয়ে দিচ্ছেন, মাংস কষছেন…সব একেবারে নিখুঁতভাবে শিখে নেবে সেই রোবট। তারপর নিজেই করবে সেই কাজ। যেভাবে মায়েদের কাছ থেকে মেয়েরা রান্না শেখেন।
আর এখানে এই রোবো শেফকে রান্না শিখিয়েছেন ২০১১ সালে বিবিসি মাস্টারশেফ চ্যাম্পিয়ন টিম অ্যান্ডারসন। এই রোবটের সঙ্গে কাজ করে দারুণ মুগ্ধ অ্যান্ডারসন, ‘মূল শেফের সহকারী হিসেবে এর চেয়ে ভালো কিছু আমি দেখিনি। আপনি তাকে যা করতে বলবেন, সেটাই করবে। সেটি খাবার তৈরির শুরু থেকে পরিবেশনা পর্যন্ত।’
রোবটটির শরীরে পরে বসানো হয় একটি বিল্ট-ইন রেফ্রিজারেটর ও ডিশওয়াশার। ‘রোবো শেফে’র মূলত আছে এক জোড়া হাত। এটা দিয়েই তার সব কাজ।
দুটি হাত দিয়ে চুলা জ্বালানো, পাত্রে খাবার নাড়া, এমনকি ময়লা পাত্রগুলো ধোয়ার জন্য আলাদা করেও রাখতে পারবে। খাবার তৈরিতে বিভিন্ন উপাদান একসঙ্গে নিয়ে মাখানো ছাড়াও নাশতা তৈরিতে যা যা দরকার, মোটামুটি সবই করতে পারবে। ধীরে ধীরে নিজের ভুল থেকে শিখতে পারবে। হয়ে উঠবে আরও ভালো রাঁধুনি। তাঁর প্রোগ্রাম হালনাগাদ করে আরও উন্নত করা যাবে। শেখানো যাবে নতুন রান্নাও। আর এই শেখার অনেক কিছু সে করবে নিজে থেকে।
রোবো শেফের সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক ব্যাপার হলো তার দুটি হাত। শ্যাডো রোবোট কোম্পানির বানানো এ হাত দুটিতে রয়েছে ২০টি মোটর, ২৪টি জয়েন্ট এবং ১২৯টি সেন্সর। মানুষের হাতের নড়াচড়াকে বিশেষভাবে অনুকরণের জন্যই এত সব আয়োজন।
রোবো শেফের দাম হতে পারে ১০ হাজার পাউন্ড। বিবিসি।