আওয়ামী লীগের দুজন এমপি সেদিন অফিসে এলেন। এর মধ্যে একজন এলেন প্রকাশিত একটি সংবাদের প্রতিবাদ জানাতে। আরেকজন আমার বন্ধু, তিনি এলেন আড্ডা দিতে। বন্ধু এমপির বাড়ি নোয়াখালী। আর প্রতিবাদ জানাতে আসা এমপি ঢাকার পার্শ্ববর্তী এলাকার। কাকতালীয়ভাবে দুজনের একই সময়ে আসা। ঢাকার পাশের এলাকার এমপি বললেন, তার পার্টনার মসজিদের জমি দখল করেছেন বলে যে খবর বের হয়েছে তা ঠিক নয়। আমি বললাম, রিপোর্টে আপনার পার্টনারের বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে। এবার এমপি বললেন, দেখুন জমিটি মসজিদের বলে দাবি করা হচ্ছে। অথচ ওয়াকফ রেজিস্ট্রি নয়। তাই পাওয়ার অব অ্যাটর্নির জোরেই আমার পার্টনার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন। এতক্ষণ এমপি সাহেবের কথায় সায় দিচ্ছিলাম। এবার আমার যা বোঝার বুঝলাম। বললাম, মাননীয় এমপি বাংলাদেশের ৯৫ শতাংশ মসজিদের জমির দলিল নেই। কাগজপত্র নেই। ওয়াকফ রেজিস্ট্রি নেই। তারপরও মসজিদগুলো চলছে। আপনি এমপি। আপনার জানার কথা। আমি নিজেও একটি মসজিদ পরিচালনার সঙ্গে জড়িত। আমাদের পূর্বপুরুষরা এই জমি দান করেছিলেন। মসজিদটি আমি নতুন করে নির্মাণ করেছি। আমার ভাই আরেকটি মসজিদ পরিচালনা করেন। দলিল দিয়ে মসজিদ হয় না। আওয়ামী লীগের আগের মেয়াদেও মসজিদের জমি আপনার পার্টনার বুঝে নেননি। এবার কেন নিলেন? কাজটি কি ঠিক হলো? যদি আপনার পার্টনার সঠিকভাবে মালিকও হন আপনার উচিত ছিল জমিটি মসজিদকে ফেরত দেওয়া। এমপি সাহেব একটি প্রতিবাদ পাঠালেন। আমরা তা প্রকাশ করলাম। তিনি তাতেও খুশি হলেন না। এরপর নিজে এলাকায় গিয়ে সংবাদ সম্মেলন করলেন। ভালো কথা। তিনি করতেই পারেন। পরে খবর নিলাম সেই এমপির দখল সংস্কৃতি নিয়ে। কিছুই লিখতে চাই না। অনেক কিছু লিখলে দেশে দাঙ্গাও লেগে যেতে পারে। আমরা চাই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধন। এটা রক্ষা করতে হবে এমপি সাহেবদেরই।
এবার আসি দ্বিতীয় ফোন নিয়ে। ফোন করলেন এমপি দবিরুল ইসলাম। তাকে নিয়ে প্রকাশিত সংবাদে লেখা হয়েছে, তিনি সংখ্যালঘুদের সম্পদ দখল করেছেন। খবরটি শুধু আমাদের নয়, দেশের বেশির ভাগ কাগজেই প্রকাশিত। দবিরুল ইসলাম বললেন, তিনি এক সময় কমিউনিস্ট পার্টি করতেন। তিনি এমন কাজ করেননি। অকারণে ভুল বোঝাবুঝি। তার পুত্রবধূ হিন্দু। তাই হিন্দু সম্প্রদায় নিয়ে তার বিরূপ ধারণা থাকার কোনো কারণ নেই। তার কথায় খোঁজ নিলাম। পুরো এলাকা জানে এমপি এবং তার পুত্র কাহিনী। এখানেও আমার বলার কিছুই নেই। কিছু এমপি, প্রভাবশালী নেতা বাড়াবাড়ি করছেন। এই এমপি, নেতারা ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে এলাকায় যেতে ভয় পেতেন। ৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসার পর তারা মাঠে নেমেছেন। দল গোছানোতে তাদের মন নেই। মন শুধু কামাই রোজগারে। যে যেমন পারছেন করছেন। খাচ্ছেন, দাচ্ছেন। কোনো রাখঢাক নেই। মানুষ বিরক্ত হচ্ছে। তাতে দখলবাজ, সন্ত্রাসবাজ, মাদকবাজ, গডফাদারদের কিছু যায় আসে না। এই বিতর্কিতদের লাগাম টানতে হবে। অন্যথায় হুমকিতে পড়বে সরকারের ইমেজ। কিছু এমপি, কিছু মন্ত্রী, কিছু নেতার অন্যায় ও ব্যর্থতার দায় আওয়ামী লীগ কেন নেবে? দল শুধু ক্ষমতা আর অর্থ বানানোর মেশিন নয়, যে যেমনি খুশি ব্যবহার করবে। সময় থাকতে সাবধান হতে হবে। কারণ পরকালের অপেক্ষার দরকার নেই, জবাবদিহিতা ইহকালেই করতে হবে। প্রকৃতি বড়ই নিষ্ঠুর।
এক বন্ধু বললেন, ইহকাল, পরকালের কথা বলছেন কেন? দোষ শুধু মন্ত্রী-এমপি আর নেতা-কর্মীদের নয়। এখন যা খুশি হয় সবাই মিলেমিশে হয়। আমি জানতে চাই এটা কেমন? তখন ভদ্রলোক একটা গল্প শোনালেন। সরকারের একটি বিভাগের নতুন প্রকল্প পরিচালক যোগ দিয়েছেন জেলা শহরে। গুরুত্বের সঙ্গে আগের ফাইলপত্র দেখছেন। অধীনস্থরা তটস্থ। কারণ নতুন পিডি বেশ কড়া মেজাজি। কথায় কথায় অনিয়মের বিপক্ষে বলেন। এর মধ্যে তিনি বড় একটা অনিয়ম ধরেও ফেলেছেন। শহরে বড় জলাশয় কাটার জন্য পাঁচশ টন গম বরাদ্দ হয়েছিল গেল বছর। সব গম লোপাট। কিন্তু কোনো জলাশয় কাটাই হয়নি। সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীকে ডাকলেন প্রকল্প পরিচালক। বললেন, জলাশয় খননের জন্য কোনো গম বরাদ্দ হয়েছিল কি? প্রকৌশলী উত্তর দিলেন, স্যার মাত্র পাঁচশ টন বরাদ্দ হয়েছিল। পিডি বললেন, চলুন সেই জলাশয় দেখে আসি। প্রকৌশলী উত্তর দিলেন, স্যার জলাশয় তো নেই। পিডি বললেন, নেই মানে কি? প্রকৌশলীর উত্তর, নেই মানে কাটা হয়নি। তবে স্যার আমি দোষী নই। আগের পিডির নির্দেশে ঠিকাদার সাহেব কোনো জলাশয়ই কাটেননি। পিডি এত বড় অনিয়মে অসন্তোষ ব্যক্ত করেন। তারপর জানতে চান, ঠিকাদার কে? জবাব এলো ঠিকাদার হচ্ছেন আগের পিডির শ্যালক। এবার পিডি বললেন, আপনি কি করেছেন, এত বড় অন্যায় ধরলেন না কেন? প্রকৌশলী এবার জবাব দিলেন, স্যার আগের পিডি সাহেব বললেন, বাড়াবাড়ি না করতে। আমি করিনি। কারণ পিডি স্যার মানুষ ভালো। আমার ভাগ আমাকে দিয়েছেন। এলাকার জনপ্রতিনিধিও তার ভাগ পেয়েছেন। সবাইকে নিয়ে মিলেঝিলে কাজ করেছেন। তাই কারও কোনো অভিযোগ নেই। নতুন পিডি বললেন, আপনাদের করা এই অনিয়ম এখন রোধ করতে হবে। অন্যথায় মামলা-মোকদ্দমা হবে। প্রকৌশলী জানতে চান কীভাবে করব স্যার? প্রকল্প পরিচালক বললেন, নতুন করে আরেকটি প্রকল্প নিন। এবার দেখান জলাশয়ে কচুরিপানা জমে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। নগরীতে বেড়েছে মশার উপদ্রব। জনস্বার্থে অবিলম্বে জলাশয়টি ভরাট করা দরকার। বোকার ভাব নিয়ে প্রকৌশলী বললেন, স্যার ভরাট কীভাবে করব? জলাশয় তো কাটিনি। বাস্তবে তেমন কিছু নেই। পিডির সাফ কথা, ভরাটের দরকার নেই। দরকার অনিয়ম দূর করা। তাই আগের স্টাইলেই গম বরাদ্দ নিন। তারপর যার যার শেয়ার তাকে দিয়ে দিন। জলাশয় ভরাট দেখিয়ে নোট পাঠান। কেউ জানবে না এখানে কখনো জলাশয়ের নামে গম বরাদ্দের পর কোনো কাজই হয়নি। মামলা-মোকদ্দমা থেকে বেঁচে যাবেন সবাই। অন্যথায় মামলা-মোকদ্দমায় পড়বেন আপনারা। আমার কি?
বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে অনেক গল্প চালু আছে। তবে গম নিয়ে আরেকটা গল্প শুনেছি এবার। গল্পটা ব্রাজিলের গম নিয়ে দেশজুড়ে তুমুল বিতর্কের সময়কার। এক পক্ষ বলছে, এই গম খারাপ। তাই মন্ত্রীকে বিদায় নিতে হবে। আরেক পক্ষ বলছে, এই গম ভালো। সেদিন এক আড্ডায় রসিকতা করে এক পুষ্টিবিদ বললেন, ব্রাজিল থেকে গম আমদানি সঠিক সিদ্ধান্ত। কারণ এই গমে যে পোকা আছে তা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। কারণ এই গম খেয়েই ব্রাজিল ফুটবলে বারবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। তাদের খেলোয়াড়দের শক্তি বেড়েছে গম খেয়ে। আমাদের দেশের মানুষ পুষ্টিহীনতায় ভোগে। তাই ব্রাজিল থেকে এমন গম আমদানির দরকার ছিল। ব্রাজিলকে আমরা সব বিষয়ে ফলো করতে পারি। আর ভবিষ্যতে খেলাধুলায় আমাদের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের ফুটবলার, ক্রিকেটাররা এই গম খেলে ভালো খেলবেন। পুলিশ, আনসার এই গম ফেরত পাঠিয়ে কাজটা ভালো করেনি। তাদেরও এই গম খাওয়া দরকার। এতে তাদের শরীর, মন ভালো থাকবে। জীবনের জন্য দরকার পুষ্টির। পচা গমের পোকায় অনেক পুষ্টি। দেশে চাটুকারিতার যুগ চলছে। পাশে বসা একজন অর্থনীতিবিদ ভাবলেন তিনি পিছিয়ে পড়ছেন। তিনি বললেন, ব্রাজিলের গম দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে। কারণ এই গমের সঙ্গে পোকা ফ্রি পাওয়া গেছে। গমের জন্য আমরা অর্থ দিয়েছি। কিন্তু পোকার জন্য দিইনি। ফ্রি পোকা খেয়ে স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে আমাদের বিভিন্ন বাহিনীর। গম যখন আটা হবে তখন পোকা বোঝা যাবে না। খেতেও অরুচিকর মনে হবে না। আর্থিক দিক চিন্তা করতে হবে। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্যই এই গম আমদানি। তাই যারা এই গমের সমালোচনা করবেন তারা দেশের অর্থনীতির বিরুদ্ধে কথা বলবেন।
আসলে আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলেই অনেক কথা ছড়াচ্ছে। সেবাখাতগুলো কিছু ব্যক্তির কারণে এখন পথে বসার উপক্রম। অথচ দক্ষতা, ক্ষিপ্ততা নিয়ে চালালে সেবাখাতকে বদলে দেওয়া সম্ভব। বাংলাদেশ বিমানের কথাই বলি। যদিও ভেবেছিলাম বাংলাদেশ বিমান নিয়ে আর কথা বলব না। লিখব না কিছু। শুধু দোয়া করে যাব রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থাটি রক্ষার জন্য। কিন্তু বিমান সেই সুযোগ দিল না।
আমার কলামে ড্যাশ-৮ নিয়ে লিখেছিলাম মাত্র কয়েক লাইন। তারা প্রতিবাদ জানালেন দুই পাতার। বিমানের মহাব্যবস্থাপক জনসংযোগ খান মোশাররফ হোসেন (অনুমান করছি নির্দেশিত হয়ে) লিখলেন, সর্বজনীন এবং বাণিজ্যিক স্বার্থ বিবেচনায় ব্যবসায়িক কৌশল হিসেবে তারা লিজ নিয়েছেন ড্যাশ-৮। জাহাজ কিনতে এককালীন অনেক অর্থ লাগে এই কারণে ক্রয় করেননি। লিজ নিলে মাসে মাসে শোধ করা যায়। কিনলে টাকা দিতে হয় এককালীন। মিসরের বিমান বলেই ভিতরের লেখা আরবি ভাষায়। তারা আরও বললেন, বিমান শুধু একজনের কথায় নয় বিশাল পর্ষদের কথায় চলে। এই পর্ষদে রয়েছেন ওরা ১১ জন। খুব ভালো কথা। প্রতিবাদপত্রে আরও বললেন, বিমান ছাড়তে দেরি হবে তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল যাত্রীদের। সব গৎবাঁধা কথাবার্তা। খুব ভালো। তবে তারা কোনো জবাব দেননি সাবেক বিমানমন্ত্রী জি এম কাদেরের প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠি সম্পর্কে। আমিও এর আগে লিখিনি বিমানের সাবেক এমডি কেভিনের করুণ বিদায় নিয়ে। বিমানকে মোটামুটি স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে এসেছিলেন এই ব্রিটিশ দক্ষ-অভিজ্ঞ মানুষটি। কিন্তু তাকে থাকতে দেওয়া হয়নি। ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিল। কারণ তিনি অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। বিমানের টাইম শিডিউল তিনি ঠিক করে ফেলেছিলেন। বেসরকারি বিমানগুলো টাইম ঠিক রাখতে পারলে বিমান কেন পারবে না? একটা এমবিএ পাস তরুণকে দায়িত্ব দিলে সেও পারবে এ কাজটি দক্ষতার সঙ্গে করতে। না পারলে অন্য এয়ারলাইনসগুলো কীভাবে পারছে? তাদের বিরুদ্ধে যাত্রীদের অভিযোগ নেই। শুধু অভিযোগ বিমানের বিরুদ্ধে। কেন? একবারও এ নিয়ে ভাবনার সময় কি আছে? আমি লিখেছিলাম, ড্যাশ-৮ এর দরজা বন্ধ করতে পারছিলেন না কেবিন ক্রু। তাকে সহায়তা করছিলেন বিদেশি প্রকৌশলী। দরজা বন্ধ করতে না পারা নিয়ে কোনো জবাব নেই বিমানের জি এম সাহেবের। এত ভাঙাচোরা বিমান ভাড়ায় আনতে হবে কেন? টাকা কি লিজের বিপরীতে কম দেওয়া হচ্ছে? সোমবার দৈনিক যুগান্তরে পড়লাম, মিসরের এই উড়োজাহাজগুলো এনে বিপাকে বিমান। মাসে ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা মাসিক ভাড়ায় বিমান দুটি আনা হয়েছিল। যারা সাপ্লাই দিয়েছিলেন সেই স্ম্যার্ট এভিয়েশন এখন লাপাত্তা। তাই বিমানকে আরও ২ কোটি ২০ লাখ টাকা অতিরিক্ত খরচ করতে হচ্ছে। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আরও ৫০ লাখ। এই ভয়াবহ পরিস্থিতি কেন তৈরি করলেন? কার স্বার্থে রাষ্ট্রীয় একটি সংস্থাকে নিয়ে যা খুশি তা করা হচ্ছে? কার্গো হ্যান্ডেলিং নিয়ে লিখেছিলাম। তার জবাব দেননি বিমান কর্তৃপক্ষ। গত ঈদে থাইল্যান্ড গিয়েছিলাম পরিবার-পরিজন নিয়ে। ব্যাংকক এয়ারওয়েজে বিজনেস ক্লাস ব্যবহার করার কারণে ব্যাংকক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনে লাইন ধরতে হয়নি। দ্রুত নেমে সরাসরি ইমিগ্রেশন শেষ করেই দেখলাম, আমাদের লাগেজ ঘুরছে। তখনো অন্য যাত্রীরা আসেননি। এরপর এয়ারলাইনসের গাড়িতে করে আমাদের পাঠানো হলো হোটেলে। আমরা দেখেও শিখি না। বাংলাদেশ বিমানের তত্ত্বাবধানে শাহজালালে কী হচ্ছে? আপনি যে ক্লাসের যাত্রী হোন না কেন লাগেজ কখন পাবেন তার ঠিক নেই।
সেই দিন ফেসবুকে দেখলাম, একজন যাত্রী বিমানের অভ্যন্তরের ছবি দিয়ে লিখেছে, যখন টিকিট কাটতে গেলাম বলা হলো টিকিট নেই। অনেক অনুরোধ করে টিকিট পেলাম। ভিতরে প্রবেশ করে দেখি মাত্র ১৫ জন যাত্রী। বিমানের নিত্যদিনের চিত্র এটাই। কেন এমন হচ্ছে? পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ বিমানে সব সময় দেখানো হয় যাত্রী বোঝাই, টিকিট নেই। কিন্তু যাত্রীরা ভিতরে প্রবেশ করে টের পান সব খালি। কারণ গোপন অাঁতাত থাকে বিদেশি এয়ারলাইনসের সঙ্গে। বিমানে টিকিট না থাকলে যাত্রীরা যান অন্য এয়ারলাইনস। কী অদ্ভুত সিস্টেম! বিমানের নিউইয়র্ক রুট বন্ধ। কোনো দিন চালু হবে কিনা জানি না। আগে নিউইয়র্ক জেএফকে বিমানবন্দরে বিমানের ফ্ল্যাগ দেখে আমাদের ভালো লাগত। গর্ব হতো বিমানকে নিয়ে। বড় বড় বিমান কোম্পানি বিমানের স্থানটুকু ব্যবহার করত ভাড়ায়। জেএফকে থেকে বাংলাদেশের ফ্ল্যাগ নেমে গেছে। আকাশ গুটিয়ে আসছে বলাকার। যাত্রীরা হতাশ, ক্ষুব্ধ, ব্যথিত। বিমানের দক্ষ বেশির ভাগ কর্মী অখুশি। তারপরও কারও কিছু বলার নেই। করার নেই। একজন ব্যক্তির কাছে জিম্মি সবকিছু।
বিমান নিয়ে জি এম কাদের মন্ত্রী থাকাকালে প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে উল্লেখ করেছিলেন, ‘বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনার প্রতিটি স্তরেই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব তীব্রভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। বোর্ড সদস্যরাও এ ব্যাপারে কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছেন বলে প্রতীয়মান হয় না। বর্তমান ব্যবস্থায় সম্পূর্ণ সরকারি মালিকানাধীন একটি কোম্পানি হয়েও সরকারের কাছে বিমানের জবাবদিহি কোনো আইনি দায়বোধ নেই। কেননা সরকার নির্বাচিত বোর্ডকে এখানে আইনগত মালিকের ভূমিকা দেওয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষে মন্ত্রণালয় কোনো নির্দেশ দিলেও প্রায়শ সেগুলো উপেক্ষিত হয়। মন্ত্রণালয়ের দিকনির্দেশকে অযাচিত হস্তক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।’ এই সারসংক্ষেপে শুধু মন্ত্রী নন, তৎকালীন সচিবও স্বাক্ষর করেছিলেন। জি এম কাদেরের সঙ্গে তখন আমার কথা হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, বিমান মানে জামাল উদ্দিন। আর জামাল উদ্দিন মানে বিমান। সেই জামাল উদ্দিন এখনো ক্ষমতায়। আমার আর কিছু বলার নেই। আমি আবারও প্রার্থনা করছি বিমানের জন্য। পাঠকদেরও অনুরোধ করছি, আসুন আমরা দোয়া করি। জিম্মি, অসহায় মানুষের এর বাইরে করার কিছুই নেই।