ঢাকা ০২:২৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
সাদপন্থীদের নিষিদ্ধ ও বিচারের দাবিতে মদনে আবারও বিক্ষোভ মিছিল পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বর্ডারে দুর্নীতির কারণে ঠেকানো যাচ্ছে না ‘রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ আব্রাম না থাকলে তাকে আমার যোগ্য বলেও মনে করতাম না ওমরাহ শেষে গ্রামে ফিরে খেজুর-জমজমের পানি বিতরণ করল শিশু রিফাত বিদেশে প্রশিক্ষণে ঘুরে-ফিরে একই ব্যক্তি নয়, জুনিয়রদের অগ্রাধিকার কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়ে সড়ক ছাড়লেন চিকিৎসকরা রেমিট্যান্সে জোয়ার, ২১ দিনে এলো ২ বিলিয়ন ডলার গণমাধ্যমের পাঠক-দর্শক-শ্রোতার মতামত জরিপ জানুয়ারিতে বুয়েট শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩ আসামি রিমান্ডে বিয়ের আগে পরস্পরকে যে প্রশ্নগুলো করা জরুরি

উন্নতি-ঐতিহ্যের দ্বন্দ্বে ঝুলছে পোগোজ স্কুলের ভবিষ্যৎ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:০৫:৪১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ অগাস্ট ২০১৫
  • ৪২১ বার

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে পোগোজ স্কুলের একীভূত হওয়ার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে হয়ে গেছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সময়ের অপেক্ষা কেবল। ফলে দেশের প্রথম বেসরকারী বিদ্যালয়টির ১৬৭ বছরের ইতিহাসের সমাপ্তি ঘটছে দ্রুতই।

তবে এ সিদ্ধান্ত নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় শাঁখারীবাজারের বাসিন্দারা। এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী মানববন্ধন করাসহ মামলার হুমকি দিলেও নিজেদের সিদ্ধান্তকে স্কুলের জন্য ইতিবাচকই ভাবছে কর্তৃপক্ষ।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সম্মেলন কক্ষে গত ৬ আগস্ট স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বৈঠকে প্রতিষ্ঠান দুটির একীভূত হওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়।

বৈঠকে স্কুলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ল্যাবরেটরি স্কুল হিসেবে ‘পোগোজ ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে পরিচালিত হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়।

চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যেমন গভর্নিং বডির অনুমোদন নেবে, তেমনি স্কুল কর্তৃপক্ষও অভিভাবকদের মতামত নিয়েই একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেবে।

এ বিষয়ে স্কুলের দিবা শাখার প্রধান শিক্ষক শরীফুল আলম দ্য রিপোর্টকে বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাব পেয়েছি। স্থানীয় অভিভাবকরাও এতে ইতিবাচক মত দিচ্ছেন। তাদের মতামত নিয়েই আমরা একীভূত হব।

পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষসহ অসংখ্য কৃতি শিক্ষার্থীর জন্ম দিয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু বর্তমানে স্কুলটির শিক্ষার মান এতটাই অবনমন হয়েছে যে চলতি বছর এসএসসির ফলাফলে কোন শিক্ষার্থী এ প্লাস পায়নি।

একারণেই শিক্ষার মান বাড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে একীভূত হওয়ার প্রস্তাবে সায় দিচ্ছেন জানিয়ে শরীফুল আলম বলেন, আশেপাশের স্কুলে যারা চান্স পায় না তারা এসে এ স্কুলে ভর্তি হয়। শিক্ষার্থীর পরিমাণও খুবই কমে গেছে। ম্যানেজিং কমিটিও ঠিকমতো তদারকি করে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে পরিচালিত হলে শিক্ষার মান বাড়বে।

শিক্ষার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি শিক্ষকদের সুবিধার বিষয়টিও যোগ করেছেন ২৭ বছর ধরে এ স্কুলে শিক্ষকতা করা শরীফুল। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামো অনুযায়ী শিক্ষকদের চাকরির বয়স বাড়বে। স্কুল থেকেও কয়েকজন শিক্ষক কলেজের শিক্ষক হতে পারবেন। এছাড়া আমাদের ৩০ জন অনিয়মিত শিক্ষক-কর্মচারী থাকলেও সরকারী জনবল কাঠামোর কারণে তাদের নিয়মিত করতে পারছি না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যুক্ত হলে তাদের চাকরি স্থায়ী হবে।

স্থানীয়রা এর বিরোধিতা করছে জানালে তিনি বলেন, অভিভাবকরা বিরোধিতা করছে না। যারা করছে তাদের সন্তানরা এ স্কুলে পড়ে না। তারা না বুঝে আন্দোলন করছেন। বিশ্ববিদ্যালযের সাথে যুক্ত হলে এখানকার ৩৬ ও ৩৭ নং ওয়ার্ডের শিক্ষার্থীরা শতভাগ আসনে ভর্তি হতে পারবে। এছাড়া তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কোটাও পাবে।

আর্মেনীয় জমিদার নিকোলাস পিটার পোগোজ ১৮৪৮ সালের ১২ জুন আরমানিটোলায় নিজ বাসার নিচতলায় ‘পোগোজ অ্যাংলো-ভারনাকুলার স্কুল’ নামে স্কুলটি চালু করেছিলেন। পরে ১৮৫৫ সালে গ্রিক জমিদার জেসি পেনিওটির আরমানিটোলার বাসায় স্কুলটি স্থানান্তরিত হয়। ১৮৬০ সালে এটি সদরঘাট এলাকার একটি দোতলা ভবনে স্থানান্তরিত হয়। পরে বর্তমান ঠিকানা শাঁখারীবাজারের চিত্তরঞ্জন এভিনিউতে জমিদার মোহিনী মোহন দাসের দানকৃত জায়গায় স্কুলটি স্থানান্তরিত হয়।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমে আসার পর থেকেই মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদানসহ বিভিন্নভাবে এর প্রতিবাদ করছে পোগোজ স্কুল রক্ষা কমিটি।

ঐতিহাসিক কারণেই স্কুলটি রক্ষায় আন্দোলন চলছে জানিয়ে এ কমিটির আহ্বায়ক এ্যাডভোকেট কিশোর কুমার বসু দ্য রিপোর্টকে বলেন, আমরা স্কুলের উন্নতি চাই। কিন্তু সে কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে একীভূত হয়ে স্কুলটি ধ্বংস হতে দিতে পারি না। স্কুলটিকে তার স্বকীয়তার মধ্যে কীভাবে উন্নত করা যায়, সে চেষ্টা না করে যারা তা ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করছেন তাদের প্রতিহত করা হবে। কারণ যারা বলছে স্কুলের মান খারাপ, তাহলে তারা দায়িত্বে থেকে কি করছে?

তিনি বলেন, জেলা প্রশাসন, স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ সবাইকে অবগত করা হচ্ছে। যতদিন এর সমাধান না হবে ততদিন আন্দোলন চলবে। প্রয়োজনে মামলা করে স্কুলের অস্তিত্ব রক্ষা করা হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

সাদপন্থীদের নিষিদ্ধ ও বিচারের দাবিতে মদনে আবারও বিক্ষোভ মিছিল

উন্নতি-ঐতিহ্যের দ্বন্দ্বে ঝুলছে পোগোজ স্কুলের ভবিষ্যৎ

আপডেট টাইম : ১২:০৫:৪১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ অগাস্ট ২০১৫

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে পোগোজ স্কুলের একীভূত হওয়ার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে হয়ে গেছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সময়ের অপেক্ষা কেবল। ফলে দেশের প্রথম বেসরকারী বিদ্যালয়টির ১৬৭ বছরের ইতিহাসের সমাপ্তি ঘটছে দ্রুতই।

তবে এ সিদ্ধান্ত নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় শাঁখারীবাজারের বাসিন্দারা। এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী মানববন্ধন করাসহ মামলার হুমকি দিলেও নিজেদের সিদ্ধান্তকে স্কুলের জন্য ইতিবাচকই ভাবছে কর্তৃপক্ষ।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সম্মেলন কক্ষে গত ৬ আগস্ট স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বৈঠকে প্রতিষ্ঠান দুটির একীভূত হওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়।

বৈঠকে স্কুলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ল্যাবরেটরি স্কুল হিসেবে ‘পোগোজ ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে পরিচালিত হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়।

চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যেমন গভর্নিং বডির অনুমোদন নেবে, তেমনি স্কুল কর্তৃপক্ষও অভিভাবকদের মতামত নিয়েই একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেবে।

এ বিষয়ে স্কুলের দিবা শাখার প্রধান শিক্ষক শরীফুল আলম দ্য রিপোর্টকে বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাব পেয়েছি। স্থানীয় অভিভাবকরাও এতে ইতিবাচক মত দিচ্ছেন। তাদের মতামত নিয়েই আমরা একীভূত হব।

পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষসহ অসংখ্য কৃতি শিক্ষার্থীর জন্ম দিয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু বর্তমানে স্কুলটির শিক্ষার মান এতটাই অবনমন হয়েছে যে চলতি বছর এসএসসির ফলাফলে কোন শিক্ষার্থী এ প্লাস পায়নি।

একারণেই শিক্ষার মান বাড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে একীভূত হওয়ার প্রস্তাবে সায় দিচ্ছেন জানিয়ে শরীফুল আলম বলেন, আশেপাশের স্কুলে যারা চান্স পায় না তারা এসে এ স্কুলে ভর্তি হয়। শিক্ষার্থীর পরিমাণও খুবই কমে গেছে। ম্যানেজিং কমিটিও ঠিকমতো তদারকি করে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে পরিচালিত হলে শিক্ষার মান বাড়বে।

শিক্ষার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি শিক্ষকদের সুবিধার বিষয়টিও যোগ করেছেন ২৭ বছর ধরে এ স্কুলে শিক্ষকতা করা শরীফুল। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামো অনুযায়ী শিক্ষকদের চাকরির বয়স বাড়বে। স্কুল থেকেও কয়েকজন শিক্ষক কলেজের শিক্ষক হতে পারবেন। এছাড়া আমাদের ৩০ জন অনিয়মিত শিক্ষক-কর্মচারী থাকলেও সরকারী জনবল কাঠামোর কারণে তাদের নিয়মিত করতে পারছি না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যুক্ত হলে তাদের চাকরি স্থায়ী হবে।

স্থানীয়রা এর বিরোধিতা করছে জানালে তিনি বলেন, অভিভাবকরা বিরোধিতা করছে না। যারা করছে তাদের সন্তানরা এ স্কুলে পড়ে না। তারা না বুঝে আন্দোলন করছেন। বিশ্ববিদ্যালযের সাথে যুক্ত হলে এখানকার ৩৬ ও ৩৭ নং ওয়ার্ডের শিক্ষার্থীরা শতভাগ আসনে ভর্তি হতে পারবে। এছাড়া তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কোটাও পাবে।

আর্মেনীয় জমিদার নিকোলাস পিটার পোগোজ ১৮৪৮ সালের ১২ জুন আরমানিটোলায় নিজ বাসার নিচতলায় ‘পোগোজ অ্যাংলো-ভারনাকুলার স্কুল’ নামে স্কুলটি চালু করেছিলেন। পরে ১৮৫৫ সালে গ্রিক জমিদার জেসি পেনিওটির আরমানিটোলার বাসায় স্কুলটি স্থানান্তরিত হয়। ১৮৬০ সালে এটি সদরঘাট এলাকার একটি দোতলা ভবনে স্থানান্তরিত হয়। পরে বর্তমান ঠিকানা শাঁখারীবাজারের চিত্তরঞ্জন এভিনিউতে জমিদার মোহিনী মোহন দাসের দানকৃত জায়গায় স্কুলটি স্থানান্তরিত হয়।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমে আসার পর থেকেই মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদানসহ বিভিন্নভাবে এর প্রতিবাদ করছে পোগোজ স্কুল রক্ষা কমিটি।

ঐতিহাসিক কারণেই স্কুলটি রক্ষায় আন্দোলন চলছে জানিয়ে এ কমিটির আহ্বায়ক এ্যাডভোকেট কিশোর কুমার বসু দ্য রিপোর্টকে বলেন, আমরা স্কুলের উন্নতি চাই। কিন্তু সে কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে একীভূত হয়ে স্কুলটি ধ্বংস হতে দিতে পারি না। স্কুলটিকে তার স্বকীয়তার মধ্যে কীভাবে উন্নত করা যায়, সে চেষ্টা না করে যারা তা ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করছেন তাদের প্রতিহত করা হবে। কারণ যারা বলছে স্কুলের মান খারাপ, তাহলে তারা দায়িত্বে থেকে কি করছে?

তিনি বলেন, জেলা প্রশাসন, স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ সবাইকে অবগত করা হচ্ছে। যতদিন এর সমাধান না হবে ততদিন আন্দোলন চলবে। প্রয়োজনে মামলা করে স্কুলের অস্তিত্ব রক্ষা করা হবে।