ঢাকা ০৭:১৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
ভারতে ১৩ বাংলাদেশি নাগরিক গ্রেপ্তার কবরের পাশে দিন-রাত বসে থাকি, ছেলে ফিরে আসে না সংস্কার না করলে শহীদদের রক্তের সঙ্গে অন্যায় করা হবে : উপদেষ্টা সাখাওয়াত কাকে ‘ননসেন্স’ বললেন বুবলী ভোটার হওয়ার ন্যূনতম বয়সসীমা প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে আপত্তি বিএনপি মহাসচিবের সচিবালয়ে প্রবেশে অস্থায়ী পাসের ব্যাপারে বিশেষ সেল গঠন জর্জিনাকে ‘স্ত্রী’ সম্বোধন, তবে কি বিয়েটা সেরেই ফেলেছেন রোনালদো ৩১ ডিসেম্বর আসছে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণা মহাখালীতে আবাসিক ভবনে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ২ ইউনিট ভোটার হওয়ার ন্যূনতম বয়সসীমা প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে আপত্তি বিএনপি মহাসচিবের

পরের তরে একজন রফিকুল ইসলাম

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৫:১২:৪৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ জুলাই ২০১৭
  • ৩৭০ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  টাকা বহু মানুষেরই আছে। কিন্তু কয়জন পারে সব বিলিয়ে দিতে? মানিকগঞ্জে রফিকুল ইসলাম এদেরই একজন রফিকুল ইসলাম। থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে অঢেল টাকার মালিক হয়েছেন। কিন্তু ভুলে যাননি নিজের এলাকাকে, এলাকার গরিব মানুষকে। তাদেরকে সহায়তা করতে প্রায়ই তিনি ছুটে আসেন মানিকগঞ্জে।

 নিঃসন্তান রফিকুল জানিয়েছেন, জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যয় রেখে আয়ের বাকি অংশ তিনি সব সময় অন্যের কল্যাণে ব্যয় করেন। মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার উপজেলার জায়গায় জায়গায় তার দানের চিন্ত হয়েছে। তিনি কারও মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছেন, কাউকে দিচ্ছেন চলার খরচ, কাউকে দিচ্ছেন পড়াশোনার টাকা, কাউকে পাঠাচ্ছেন হজে।

রফিকুল ইসলাম সাংবাদিককে বলেন, ‘একটি এনজিওতে কাজ করার সময় দুঃস্থ নারীদের একটা মিটিং আমার জীবনকে পরিবর্তন করে দেয়। যার জন্য আজও আমি আমার আয়ের একটি অংশ গরিব মানুষের মাধ্যে বিলিয়ে দেই।’

ওই বৈঠকের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে রফিকুল বলেন, ‘আমাদের মিটিংয়ে একজন গরিব নারী ছিলেন। যিনি সারাদিন অন্যের বাড়িতে কাজ করে দুটি রুটি নিয়ে আসেন। আমি দেখলাম তিনি দুটি রুটির মধ্যে একটি নিজে খেয়ে অপরটি তার মেয়ের জন্য কাপড়ের আঁচলে বেধে রাখলেন। সেদিন এই দৃশ্য দেখে আমার এত খারাপ লাগছিল যে আমি চোঁখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। সেই দিন আমি সিদ্ধান্ত নেই আল্লাহ যদি আমাকে কোনদিন টাকা পয়সা কামানোর সামর্থ দেন তাহলে প্রয়োজনের বেশি টাকাগুলো আমি আমার এলাকার গরিব-দুখি মানুষের মাঝে বিলিয়ে দেব।’

নবীরনদের আশার আলো রফিকুল

সারাদিন মানুষের বাড়ি বাড়ি ঘুরে যতটুকু সহযোগিতা পান বিকেলবেলা তাই নিয়ে নিজের ঘরে ফিরেন নবীরন বেগম। এই ঘরটি নবীরন বেগমের নিজ হাতে গড়ে তোলা। প্রথমদিকে ঘরটি দেখে কেউ   বুঝতেই পাড়বে না যে, এমন একটি কুড়ে ঘরে কোন মানুষ থাকতে পারে।
ঘরের উপরে যেখানে টিনের চাল থাকে সেখানে দেওয়া হয়েছে পলিথিন। ঝড় বৃষ্টিতে এই পলিথিন যেন আবার উড়ে যেতে না পারে সে জন্য সবজির লতা বসিয়ে রাখা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এই ঘরের চারদিকে বেড়ার বদলে সারিবদ্ধ করে রাখা হয়েছে বাঁশের কঞ্চি। দরজাটিও নড়বড়ে। তালার বদলে আটকে রাখা হয়েছে চিকন রশি দিয়ে পেঁচিয়ে।

সাটুরিয়া উপজেলার ফকুরহাটি ইউনিয়নের কৃষ্টপুর এলাকায় মৃত হোসেন আলীর বাড়ির রান্না ঘরের সাথে ছোট্ট কুড়ে ঘর উঠিয়ে শেষ জীবন কাটানো নবীরন বেগমের সংসার এমন ছিল না। সরকারি চাকরি করা স্বামী ছিল পুলিশ সদস্য। দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া নবীরন বেগমকে প্রায় ৫৩ বছর আগে বাবা, মা বিয়ে দেন উপজেলার ধুল্লা এলাকায় সরকারি চাকরীজীবী ছেলের কাছে বিয়ে দেন। কিন্তু সন্তান না হওয়ায় বিয়ের কয়েক বছর যেতে না যেতে স্বামী সামসুদ্দিন অন্য একটি মেয়ের প্রেমে পড়ে নবীরনকে ছেড়ে দেন। এরপর আর বিয়ের কথা চিন্তা করেননি নবীরন। মন ভরা অভিমান নিয়ে তিনি আর ফিরে যাননি বাবার ঘরেও।

গত ২০ বছর ধরে একই ঘরে বসবাস করা নবীরন বেগমের ভাগ্য অবশেষে বদলাতে শুরু করেছে। নবীরন বেগমকে খুঁজে বের করেছে ‘সাটুরিয়া ফাস্ট’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপের সদস্যরা। এই ফেসবুক গ্রুপের অ্যাডমিন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী রফিকুল ইসলাম তার ভাইয়ের পরিত্যক্ত জমিতে বাড়ি করে দিয়েছেন নবীরন বেগমকে। এখন থেকে প্রতিমাসে নবীরন বেগমকে খাদ্য সামগ্রী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রফিকুল ইসলাম।

শুধু নবীরন বেগম নন, রফিকুল গত পাঁচ বছরে সাটুরিয়া উপজেলার ৮০টি গৃহহীন নারী, পুরুষদের থাকার বাসস্থান করে দিয়েছেন। দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থী যারা টাকার অভাবে লেখা পড়া করতে পারে না তাদের আর্থিক সহযোগিতা করে লেখা পড়ার সুযোগ করে দেন রফিকুল ইসলাম।

যেসব গৃহহীন, হত-দরিদ্র মানুষদের হজ করার বাসনা আছে, লটারির মাধ্যমে প্রতি বছর তাদের একজনকে হজে পাঠান এই দানবীর। গত ১৭ বছর ধরে এই কাজ করে আসছেন তিনি।

এ ছাড়া গত ২০ বছর ধরে রফিকুল ইসলাম উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ক্লাব, মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির ও কবরস্থানে সাহায্য সহযোগিতা করে আসছেন।

সাটুরিয়া উপজেলায় মাদকের বিস্তার ঠেকাতেও উদ্যোগী হয়েছেন রফিকুল। মাদক থেকে যুব সমাজকে দূরে রাখতে চলতি মাস থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন তিনি। মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমানের অনুরোধে স্থানীয় যুব সমাজকে খেলার মাঠে নিতে এবং খেলাধুলায় যুব সমাজকে উৎসাহ যোগাতে খেলার সামগ্রী বিতরণ করছেন তিনি।

পাশাপাশি মাদকের ভয়াবহতা ও মাদক থেকে রক্ষায় করণীয় সর্ম্পকে সচেতনা বাড়াতে সাটুরিয়া ফার্স্ট ফেসবুক গ্রুপের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে মাদকবিরোধী সমাবেশ করে উপজেলার ক্লাব সংগঠনের কর্মীদের হাতে খেলার সামগ্রী তুলে দিচ্ছেন তিনি। এ পযন্ত সাটুরিয়া উপজেলার ১০০টির বেশি ক্লাব সংগঠনের সদস্যদের হাতে নিজ অর্থায়নে ফুটবল সহ নানা ধরনের খেলার সামগ্রী  দিয়েছেন রফিকুল ইসলাম।
পারিবারিক জীবন

১৯৫৪ সালে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার দরগ্রাম ইউনিয়নের নওঁগা গ্রামে জন্ম নেন রফিকুল ইসলাম। তার বাবার নাম আশেক খান এবং মাতার নাম রাবেয়া খানম। তারা দুজনই মারা গেছেন। ব্যক্তিগত জীবনে রফিকুল বিবাহিত কিন্তু নিঃসন্তান।

১৯৭০ সালে সাটুরিয়া মডেল হাই স্কুল থেকে এস এস সি পাস করেন। ১৯৭২ সালে সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ থেকে পাস করেন এইচএসসি। একই কলেজ থেকে দুই বছর পর পাস করেন ডিগ্রি।

পরে নেদারল্যান্ডসে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ-এ এম এস এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট-এ এম এস করেন। এরপর সোশ্যাল প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট-এ পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

রফিকুলের রাজনৈতিক পরিচয়ও আছে। ১৯৭২ সালে সাটুরিয়া উপজেলার ছাত্রলীগের প্রথম সভাপতি এবং সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৭৪ সাল থেকে মানিকগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। পরে জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন তিনি। তবে এখন রাজনীতি থেকে দূরে থাকছেন তিনি।

রফিকুল ইসলাম প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র ও গণকল্যাণ ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তিনি তার মায়ের নামে রাবেয়া ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ এবং থাইল্যান্ডে কনসার্ন ইন্টারন্যাশনালে চাকরি করেন। তিনি ১৯৭২ সালে সার্ভিস সিভিল ইন্টারন্যাশনালে সদস্য হন এবং পরবর্তীতে তিনি যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

রফিকুল যা বলেন

রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সেবাই মানুষের পরম ধর্ম। অসহায় মানুষের জন্য কাজ করতে পারাটা সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার। যা অনেকের মাধ্যমে সম্ভব হয় না। তাই পৃথিবীতে যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন নিঃস্বার্থভাবে নিজ এলাকার অসহায় গরিব, দুখী ভূমিহীন মানুষের কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দেব।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ভারতে ১৩ বাংলাদেশি নাগরিক গ্রেপ্তার

পরের তরে একজন রফিকুল ইসলাম

আপডেট টাইম : ০৫:১২:৪৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ জুলাই ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  টাকা বহু মানুষেরই আছে। কিন্তু কয়জন পারে সব বিলিয়ে দিতে? মানিকগঞ্জে রফিকুল ইসলাম এদেরই একজন রফিকুল ইসলাম। থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে অঢেল টাকার মালিক হয়েছেন। কিন্তু ভুলে যাননি নিজের এলাকাকে, এলাকার গরিব মানুষকে। তাদেরকে সহায়তা করতে প্রায়ই তিনি ছুটে আসেন মানিকগঞ্জে।

 নিঃসন্তান রফিকুল জানিয়েছেন, জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যয় রেখে আয়ের বাকি অংশ তিনি সব সময় অন্যের কল্যাণে ব্যয় করেন। মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার উপজেলার জায়গায় জায়গায় তার দানের চিন্ত হয়েছে। তিনি কারও মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছেন, কাউকে দিচ্ছেন চলার খরচ, কাউকে দিচ্ছেন পড়াশোনার টাকা, কাউকে পাঠাচ্ছেন হজে।

রফিকুল ইসলাম সাংবাদিককে বলেন, ‘একটি এনজিওতে কাজ করার সময় দুঃস্থ নারীদের একটা মিটিং আমার জীবনকে পরিবর্তন করে দেয়। যার জন্য আজও আমি আমার আয়ের একটি অংশ গরিব মানুষের মাধ্যে বিলিয়ে দেই।’

ওই বৈঠকের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে রফিকুল বলেন, ‘আমাদের মিটিংয়ে একজন গরিব নারী ছিলেন। যিনি সারাদিন অন্যের বাড়িতে কাজ করে দুটি রুটি নিয়ে আসেন। আমি দেখলাম তিনি দুটি রুটির মধ্যে একটি নিজে খেয়ে অপরটি তার মেয়ের জন্য কাপড়ের আঁচলে বেধে রাখলেন। সেদিন এই দৃশ্য দেখে আমার এত খারাপ লাগছিল যে আমি চোঁখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। সেই দিন আমি সিদ্ধান্ত নেই আল্লাহ যদি আমাকে কোনদিন টাকা পয়সা কামানোর সামর্থ দেন তাহলে প্রয়োজনের বেশি টাকাগুলো আমি আমার এলাকার গরিব-দুখি মানুষের মাঝে বিলিয়ে দেব।’

নবীরনদের আশার আলো রফিকুল

সারাদিন মানুষের বাড়ি বাড়ি ঘুরে যতটুকু সহযোগিতা পান বিকেলবেলা তাই নিয়ে নিজের ঘরে ফিরেন নবীরন বেগম। এই ঘরটি নবীরন বেগমের নিজ হাতে গড়ে তোলা। প্রথমদিকে ঘরটি দেখে কেউ   বুঝতেই পাড়বে না যে, এমন একটি কুড়ে ঘরে কোন মানুষ থাকতে পারে।
ঘরের উপরে যেখানে টিনের চাল থাকে সেখানে দেওয়া হয়েছে পলিথিন। ঝড় বৃষ্টিতে এই পলিথিন যেন আবার উড়ে যেতে না পারে সে জন্য সবজির লতা বসিয়ে রাখা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এই ঘরের চারদিকে বেড়ার বদলে সারিবদ্ধ করে রাখা হয়েছে বাঁশের কঞ্চি। দরজাটিও নড়বড়ে। তালার বদলে আটকে রাখা হয়েছে চিকন রশি দিয়ে পেঁচিয়ে।

সাটুরিয়া উপজেলার ফকুরহাটি ইউনিয়নের কৃষ্টপুর এলাকায় মৃত হোসেন আলীর বাড়ির রান্না ঘরের সাথে ছোট্ট কুড়ে ঘর উঠিয়ে শেষ জীবন কাটানো নবীরন বেগমের সংসার এমন ছিল না। সরকারি চাকরি করা স্বামী ছিল পুলিশ সদস্য। দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া নবীরন বেগমকে প্রায় ৫৩ বছর আগে বাবা, মা বিয়ে দেন উপজেলার ধুল্লা এলাকায় সরকারি চাকরীজীবী ছেলের কাছে বিয়ে দেন। কিন্তু সন্তান না হওয়ায় বিয়ের কয়েক বছর যেতে না যেতে স্বামী সামসুদ্দিন অন্য একটি মেয়ের প্রেমে পড়ে নবীরনকে ছেড়ে দেন। এরপর আর বিয়ের কথা চিন্তা করেননি নবীরন। মন ভরা অভিমান নিয়ে তিনি আর ফিরে যাননি বাবার ঘরেও।

গত ২০ বছর ধরে একই ঘরে বসবাস করা নবীরন বেগমের ভাগ্য অবশেষে বদলাতে শুরু করেছে। নবীরন বেগমকে খুঁজে বের করেছে ‘সাটুরিয়া ফাস্ট’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপের সদস্যরা। এই ফেসবুক গ্রুপের অ্যাডমিন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী রফিকুল ইসলাম তার ভাইয়ের পরিত্যক্ত জমিতে বাড়ি করে দিয়েছেন নবীরন বেগমকে। এখন থেকে প্রতিমাসে নবীরন বেগমকে খাদ্য সামগ্রী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রফিকুল ইসলাম।

শুধু নবীরন বেগম নন, রফিকুল গত পাঁচ বছরে সাটুরিয়া উপজেলার ৮০টি গৃহহীন নারী, পুরুষদের থাকার বাসস্থান করে দিয়েছেন। দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থী যারা টাকার অভাবে লেখা পড়া করতে পারে না তাদের আর্থিক সহযোগিতা করে লেখা পড়ার সুযোগ করে দেন রফিকুল ইসলাম।

যেসব গৃহহীন, হত-দরিদ্র মানুষদের হজ করার বাসনা আছে, লটারির মাধ্যমে প্রতি বছর তাদের একজনকে হজে পাঠান এই দানবীর। গত ১৭ বছর ধরে এই কাজ করে আসছেন তিনি।

এ ছাড়া গত ২০ বছর ধরে রফিকুল ইসলাম উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ক্লাব, মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির ও কবরস্থানে সাহায্য সহযোগিতা করে আসছেন।

সাটুরিয়া উপজেলায় মাদকের বিস্তার ঠেকাতেও উদ্যোগী হয়েছেন রফিকুল। মাদক থেকে যুব সমাজকে দূরে রাখতে চলতি মাস থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন তিনি। মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমানের অনুরোধে স্থানীয় যুব সমাজকে খেলার মাঠে নিতে এবং খেলাধুলায় যুব সমাজকে উৎসাহ যোগাতে খেলার সামগ্রী বিতরণ করছেন তিনি।

পাশাপাশি মাদকের ভয়াবহতা ও মাদক থেকে রক্ষায় করণীয় সর্ম্পকে সচেতনা বাড়াতে সাটুরিয়া ফার্স্ট ফেসবুক গ্রুপের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে মাদকবিরোধী সমাবেশ করে উপজেলার ক্লাব সংগঠনের কর্মীদের হাতে খেলার সামগ্রী তুলে দিচ্ছেন তিনি। এ পযন্ত সাটুরিয়া উপজেলার ১০০টির বেশি ক্লাব সংগঠনের সদস্যদের হাতে নিজ অর্থায়নে ফুটবল সহ নানা ধরনের খেলার সামগ্রী  দিয়েছেন রফিকুল ইসলাম।
পারিবারিক জীবন

১৯৫৪ সালে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার দরগ্রাম ইউনিয়নের নওঁগা গ্রামে জন্ম নেন রফিকুল ইসলাম। তার বাবার নাম আশেক খান এবং মাতার নাম রাবেয়া খানম। তারা দুজনই মারা গেছেন। ব্যক্তিগত জীবনে রফিকুল বিবাহিত কিন্তু নিঃসন্তান।

১৯৭০ সালে সাটুরিয়া মডেল হাই স্কুল থেকে এস এস সি পাস করেন। ১৯৭২ সালে সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ থেকে পাস করেন এইচএসসি। একই কলেজ থেকে দুই বছর পর পাস করেন ডিগ্রি।

পরে নেদারল্যান্ডসে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ-এ এম এস এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট-এ এম এস করেন। এরপর সোশ্যাল প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট-এ পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

রফিকুলের রাজনৈতিক পরিচয়ও আছে। ১৯৭২ সালে সাটুরিয়া উপজেলার ছাত্রলীগের প্রথম সভাপতি এবং সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৭৪ সাল থেকে মানিকগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। পরে জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন তিনি। তবে এখন রাজনীতি থেকে দূরে থাকছেন তিনি।

রফিকুল ইসলাম প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র ও গণকল্যাণ ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তিনি তার মায়ের নামে রাবেয়া ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ এবং থাইল্যান্ডে কনসার্ন ইন্টারন্যাশনালে চাকরি করেন। তিনি ১৯৭২ সালে সার্ভিস সিভিল ইন্টারন্যাশনালে সদস্য হন এবং পরবর্তীতে তিনি যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

রফিকুল যা বলেন

রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সেবাই মানুষের পরম ধর্ম। অসহায় মানুষের জন্য কাজ করতে পারাটা সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার। যা অনেকের মাধ্যমে সম্ভব হয় না। তাই পৃথিবীতে যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন নিঃস্বার্থভাবে নিজ এলাকার অসহায় গরিব, দুখী ভূমিহীন মানুষের কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দেব।